Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সমুদ্রের আতঙ্ক জলদস্যুদের জীবন বাস্তবে কেমন ছিল?

জলদস্যু বা পাইরেট শব্দটাই যেন রহস্যে মোড়া। জলদস্যুদের বিচিত্র কাহিনী পড়ে ছোটবেলায় আমরা অনেকেই জলদস্যু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। তাদের দুর্ধর্ষ সব অভিযানের কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে কত কত বই, গাঁথা হয়েছে কত কত গান, নির্মিত হয়েছে দুর্দান্ত সব সিনেমা। জীবনে অন্তত একদিন তাদের মতো জীবন কাটানোর সাধ কার না হয়! নীল সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো, জাহাজে জাহাজে লড়াই করা, গুপ্তধন উদ্ধার করা, পাল তুলে দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া, দুঃসাহসিক অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়া… সবকিছুই বেশ রোমাঞ্চকর, তাই না?

কিন্তু জলদস্যুদের জীবন কি আসলেই এত রঙিন আর প্রাণবন্ত ছিল? গল্প-কাহিনী কি আমাদের সবটা সত্যি বলে এসেছে এতদিন? নাকি এর আড়ালে রয়েছে ভিন্ন কোনো গল্প? চলুন তবে, আপনাদের দেখিয়ে আনি ‘জলদস্যুদের স্বর্ণযুগ’-এর সময়ে তাদের জাহাজের দৈনন্দিন জীবন ঠিক কেমন ছিল। যা জানার পর হয়তো আপনি জলদস্যু হওয়ার চিন্তা এখনই বাতিল করে দেবেন!

খাওয়াদাওয়া

খাবার দিয়েই শুরু করা যাক। জলদস্যুরা সাধারণত মাসের পর মাস সমুদ্রে থাকত। সেসময় রেফ্রিজারেটর বা খাবার সংরক্ষণ করে রাখতে পারে এমন কিছু ছিল না। ফলে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তাই তাদেরকে এমন খাবার নিতে হতো যা অনেকদিন টিকতে পারে। তাদের সেই খাবারের তালিকায় থাকত লবণযুক্ত মাংস, সবজি, বোন স্যুপ, ব্রেড ইত্যাদি। তবু প্রায়ই খাবার নষ্ট বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যেত আর তাদের সেগুলোই খেতে হতো।

জলদস্যুদের মধ্যে আরেকটি খাবার বেশ প্রচলিত ছিল, যা হার্ডট্যাক বা সী বিস্কুট নামে পরিচিত। ময়দা, পানি আর লবণ দিয়ে তৈরি করা হয় এই বিস্কুট। অত্যন্ত শক্ত ও খড়খড়ে শুকনো এই খাবার কেউই শখ করে খেতে চাইবে না। এগুলো খাবার হিসেবে জাহাজে নেয়ার প্রধান কারণ এগুলো বহুদিন টিকে থাকে। এমনকি আজকের দিনেও সেই ১৮৫০ সালে তৈরি দুই-একটা হার্ডট্যাক বিস্কুট বহাল তবিয়তেই আছে। তবে এই খাবারের একটা বড়সড় খারাপ দিক হলো এতে পোকা ধরে খুব। নাবিকেরা তো এই খাবারের একটা নামই দিয়ে ফেলেছে ‘Worm Castle‘, অর্থাৎ পোকাদের দুর্গ! জলদস্যুরা এই হার্ডট্যাক পোকাসমেতই খেয়ে নিত।

Hardtack Biscuit
হার্ডট্যাক বিস্কুট; Image Courtesy: Grunge

এসব শুনে মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে- সমুদ্রে থাকে তো মাছ ধরে খায় না কেন? আসলে জলদস্যুদের মানসিকতা এরকম ছিল না যে শুধু এক কামড় খাবার খাওয়ার জন্য সারাদিন বঁড়শি নিয়ে বসে থাকবে। তবে কথায় আছে, খারাপ সময় আসলে বাঘও ঘাস খায়। তাদেরও সেই পরিস্থিতি আসলে হয়তো এ কাজই করতে হতো।

পানীয়

জলদস্যুরা খুব বেশি পরিমাণে অ্যালকোহলিক পানীয় পান করত। ক্যারিবিয়ান জলদস্যুদের মধ্যে রাম পানীয় হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া বিয়ার, এইল, মিড, ব্রান্ডি, ওয়াইন এসবও ভালোই চলতো। সবসময়ই যে তারা এগুলো কিনত, তা না। প্রায়ই বিভিন্ন জাহাজ যখন লুট করত, তখন অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি এসব পানীয়ও তারা জাহাজে তুলে নিত।

দীর্ঘদিন জাহাজে থেকে সময় কাটানোর জন্য মদ ছিল তাদের পরম বন্ধু। খাবার পানির সাথেও জলদস্যুরা খানিকটা রাম বা ব্রান্ডি মিশিয়ে দিত পানির স্বাদ একটু মিষ্টি করার জন্য। রামের সাথে এভাবে পানি মিশালে যা তৈরি হয় সেটার নাম গ্রগ। এর একটা ভালো দিক হলো রাম বা ব্রান্ডির মতো কড়া অ্যালকোহল পানিতে মেশানোর ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত পানি ব্যাকটেরিয়ামুক্ত থাকত। এছাড়া দীর্ঘদিন জাহাজে থাকতে হতো বলে খাওয়ার জন্য সংরক্ষিত করে রাখা পানিতে পুরনো গন্ধ চলে আসতো। রাম বা বিয়ার মেশানোতে সেই গন্ধ দূর হতো।

জাহাজের পরিবেশ

সাধারণত জলদস্যুরা যেসকল জাহাজ ব্যবহার করতো সেগুলো অতটা আরামদায়ক ছিল না। সেখানে ছিল না কোনো ভালো ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। জাহাজের গায়ে বড় বড় ছিদ্রগুলো ব্যবহৃত হতো কামানের মুখ বের করে রাখার জন্য। সারাদিন প্রখর রৌদ্রে আবদ্ধ জাহাজে গুমোট পরিবেশ বিরাজ করত। এছাড়া জাহাজের এখানে-সেখানে সবসময়ই বিকট দুর্গন্ধ পাওয়া যেত। বিশেষ করে জাহাজের তলায়, যেখানে সবসময়ই পানি জমে থাকত। জাহাজের গায়ে ক্ষুদ্র কোনো ছিদ্র দিয়ে আসা পানি বা বৃষ্টির পানি ছিল এর উৎস। তেল, ময়লা, ধূলোবালি ইত্যাদি মিশে সেই পানিতে ভয়ানক দুর্গন্ধ হতো। এছাড়া প্রায়ই সী-সিকনেসের জন্য কেউ কেউ জাহাজে বমি করলে সেগুলো ধোয়ার পরে এখানে এসে তা যুক্ত হতো।

Image Courtesy: Line

জাহাজে টয়লেটের ব্যবস্থাও খুব সুবিধার ছিল না। বেশিরভাগ জাহাজেই কোনো একটা চারকোণা কাঠের মাঝখানে একটা ছিদ্র থাকত, যেটাকে টয়লেট ধরে নেয়া হতো। ছিদ্র দিয়ে বর্জ্য সোজা গিয়ে সমুদ্রে পড়ত। এই টয়লেটকে হেড বলে ডাকা হতো, কারণ এটি বেশিরভাগ জাহাজের সামনের দিকে থাকতো। কোনো কোনো জাহাজে কেবল দড়ি থাকত, যেখানে ধরে প্রাকৃতিক কর্ম সার‍তে হতো। সেসময় টয়লেট পেপারও আবিষ্কৃত হয়নি। জলদস্যুরা সাধারণত কাপড়ের টুকরো, দড়ি বা স্পঞ্জ ব্যবহার করতো টয়লেট পেপার হিসেবে।

ঘুমানোর জায়গা

শুধুমাত্র জাহাজের ক্যাপ্টেন বা উচ্চপদস্থ কেউই কেবিন পেত। বাকিদের জাহাজের ডেকে বা ভেতরে কোথাও জায়গা করে নিতে হতো। গোপনীয়তার কোনো বালাই নেই। লোক সমাগম বেশি হওয়ার জন্য সবাইকেই সামান্য জায়গা নিয়ে পাশাপাশি শুতে হতো। অনেকে হ্যামক বা ঝুলন্ত বিছানা ব্যবহার করত ঘুমানোর জন্য। সমুদ্রে এটিই সুবিধাজনক, কারণ এতে জাহাজের দুলুনির জন্য ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে না।

প্রায় জাহাজেই আরশোলার উপদ্রব থাকত। ঘুমানোর সময় কারো গায়ে আরশোলা হেঁটে বেড়ানোর ভালো সম্ভাবনা থাকে। আরশোলা ছাড়াও ইঁদুর, মাকড়সা, অন্যান্য সাধারণ ও বিষাক্ত পোকা জাহাজে থাকার সম্ভাবনাও থাকে। ঘুমের মধ্যে কোনো পোকার কামড় খাওয়া আশ্চর্যের কিছু না। আর এমন উদাহরণও আছে বৈকি।

নোংরা থাকার অভ্যাস

জলদস্যুরা দীর্ঘদিন সমুদ্রে ভেসে বেড়াত বলে খাবার পানির সংকট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সেজন্য পরিষ্কার পানি শুধু খাওয়া ও রান্না করা ছাড়া আর কোনো কাজে ব্যবহার হতো না। ফলে জলদস্যুদের গোসল না করেই থাকতে হতো। কারণ সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেই পানিতে কেউ গোসল করত না। তবে তীব্র গরমে কদাচিৎ কেউ কেউ পানিতে শরীর খানিকটা ডুবিয়ে একটু ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করতো। জলদস্যুরা সাগরে থাকা দৈত্যদানোতে বিশ্বাস করত বলে সাধারণত পানিতে নামতে ভয় পেত। অনেকে হাঙরের ভয়েও নামতো না। আবার বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, অনেক জলদস্যুই সাঁতার জানত না বলে পানিতে নামতো না। এছাড়া পানিতে নেমে গোসল করলে ভুল করে পেটে লবণাক্ত পানি চলে গেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।

Image Courtesy: Wallpaper Tip

গোসল করা হতো না বলে জলদস্যুরা কাপড় ধোয়ার ঝামেলাতেও যেত না। সাধারণত এক কাপড় পরেই মাসের পর মাস কাটিয়ে দিত। স্বাভাবিকভাবেই তাদের পরনের কাপড় নোংরা হয়ে থাকত। এছাড়া বিভিন্ন ছোটখাট লড়াইয়ের ফলে রক্তের দাগ, ঘাম, খাওয়ার সময় পড়ে যাওয়া খাবারের অংশ বা রাম ইত্যাদি পোশাকে লেগে থাকত। নোংরা কাপড় আর গোসল না করে থাকার জন্য তাদের গায়ে বিশ্রী গন্ধ সবসময়ই লেগে থাকতো।

অসুস্থতা

নোংরা জীবনযাপন, বাসি খাবার ও পানীয় পান ইত্যাদি কারণে জলদস্যুরা বিভিন্ন রোগে ভুগত। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার জন্যও অনেকে অসুস্থ হয়ে যেত। জলদস্যুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতো স্কার্ভি রোগে। দীর্ঘদিন সমুদ্রে থেকে ভিটামিন সি-র অভাবে এই রোগ হতো। এ রোগে চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যেত বা চামড়ায় অদ্ভুত দাগ ফুটে উঠত। সাথে মাড়ি ফুলে যাওয়া, চুল-দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিত। এ রোগে ভুগে বহু লোক মারা যেত। এছাড়া আমাশয়, কলেরা, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের সাথেও জলদস্যুদের প্রায়ই মোকাবেলা করতে হতো। সপ্তদশ শতকের দিকে রোগে ভুগে মারা যাওয়া জলদস্যুদের সংখ্যা লড়াই করে মারা যাওয়ার চেয়েও বেশি ছিল।

তীরে ভীড়লে জলদস্যুরা পতিতালয় থেকেও বিভিন্ন যৌনরোগ সাথে করে নিয়ে আসত। কখনো কখনো সেগুলোও মৃত্যু ঘটাত।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

জলদস্যুদের বিপজ্জনক জীবন ব্যবস্থার জন্য জাহাজে ডাক্তারের প্রয়োজন দেখা দেবে- সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন ডাক্তারই বা এত পড়াশোনার পর নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জলদস্যুদের দলে ভিড়বে! তাই তাদের জাহাজে ডাক্তার থাকা মোটামুটি দুর্লভই ছিল। মোটামুটি দুর্লভ বলার কারণ, সব জাহাজে না থাকলেও কোনো কোনো বড়সড় জলদস্যুদের দলে আসলে ডাক্তার বা সার্জন থাকত! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব ডাক্তারকে অপহরণ করে আনা হতো। জন ডেভিড নামে একজন সার্জন জলদস্যু-ক্যাপ্টেন হেনরি এভরির জাহাজে কাজ করেছিলেন। আর্চিবাল্ড মারে পরপর তিনটি জলদস্যুর জাহাজে সার্জন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরকম গুটিকয়েক উদাহরণ আছে।

সময় কাটানো

জলদস্যুরা সারাদিন যে শুধু শিকার ধরে বেড়াত তা না। মাঝেমধ্যে দিনের পর দিন শিকারের দেখা ছাড়াই কাটাতে হতো। সাধারণত এসব সময়ে জাহাজের বিভিন্ন কাজ করা হতো। এসব ছাড়াও লড়াইয়ে মাঝেমধ্যে জাহাজের ক্ষতি হলে অবসর সময়ে সেগুলো মেরামত করা হতো। বিভিন্ন জাহাজ লুট করার সময় জাহাজ মেরামতে কাজে লাগে এমন কিছু পেলেও জলদস্যুরা নিয়ে নিত যাতে নিজেদের জাহাজে কাজে লাগে। ফলে তাদের জাহাজের অবস্থা বেশ ভালোই থাকতো।

এসব কাজ না থাকলে সাধারণত মদই ছিল তাদের সময় কাটানোর প্রধান উপকরণ। রাম খেয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থেকে দিন কাটাত। মদ ছাড়াও ধূমপান, জুয়া খেলা, গল্প করা, তলোয়ার বা ছুরিতে শান দেয়া, পিস্তলে তেল দেয়া, টার্গেট প্র‍্যাকটিস ইত্যাদি করে সময় কাটাত। তবে অনেক সময় জাহাজে ক্যাপ্টেন ধূমপান নিষিদ্ধ করে দিতেন, কারণ আগুনের শিখা থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জলদস্যুদের গান গেয়ে কিংবা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সময় কাটাতেও দেখা যেত। অনেক দস্যুজাহাজে গায়কও থাকত। শিকার ধরার সময়েও তুমুল শব্দে বাদ্যযন্ত্র বাজাত অনেকে। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক কৌশলও বটে। ঢোলের তুমুল আওয়াজ তুলে শিকারের দিকে এগিয়ে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিকার জাহাজের লোকজন ভীত হয়ে যেত। আর জলদস্যুরাও সবসময় চাইত শিকার যেন আত্মসমর্পণ করে। কারণ লড়াই মানেই রক্তক্ষয়, লোকবল ক্ষয়।

সমুদ্রে শিকার না পেলে উপকূলীয় গ্রামেও জলদস্যুদের হানা দিতে দেখা গেছে। তবে কখনো কখনো তারা এ কাজ করত শুধু মজা করার উদ্দেশ্যে।

মৃত্যু

A short life and a merry one.

কথাটা জলদস্যুদের জন্য একেবারেই সত্যি। তাদের জীবনকাল খুবই ছোট। দস্যুতার খাতায় নাম লেখানো মানে আয়ু অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেয়া। নোংরা জীবনযাপন, রোগে আক্রান্ত হওয়া, লড়াইয়ে নিহত হওয়া, সামুদ্রিক ঝড়ে ডুবে মরা, খাবার-পানির অভাবে মারা যাওয়া ইত্যাদি কারণে জলদস্যুরা কম দিনই বাঁচতে পারে। জাহাজ লুট করার সময় যুদ্ধে মারা না গেলেও অনেকে তলোয়ার বা পিস্তলের গুলিতে জখম হয়। রক্তপাতে না মরলেও ইনফেকশনের জন্য মরতেই হতো অনেককে।

Image Courtesy: Amazon

এসব ছাড়াও জলদস্যুদের জন্য আইন খুবই কড়া ছিল। কোনো জলদস্যু ধরা পড়লে তার একটাই শাস্তি- মৃত্যুদন্ড। জলদস্যুকে প্রকাশ্যে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে লাশ সেখানেই রেখে দেয়া হতো সবাইকে সতর্ক করে দিতে যে জলদস্যু হওয়ার শাস্তি কী হতে পারে।

জলদস্যুদের এমন ভয়াবহ জীবনযাপনের কথা শুনে আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে তাহলে লোকজন কেন জলদস্যুদের দলে যোগ দিত? আসলে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন কারণ ছিল। চাকরিচ্যুত নাবিকেরা বেকারত্বে ভুগে অভাবে পড়ে জলদস্যুর জাহাজে উঠে আসত। বেকারত্বের সমস্যা এখন যেমন আছে, সেই সময়েও ছিল। এছাড়া জলদস্যুদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল দাস। তারা জাহাজ লুট করার সময় সেখানে থাকা দাসদের জলদস্যু হওয়ার প্রস্তাব দিত। দাসদের জন্য প্রস্তাবটা যথেষ্ট লোভনীয়। বিশেষ করে যেসব কৃতদাসের কপালে আজীবন দাসত্ব লেখা ছিল, তাদের জন্যে তো বটেই। কারণ জলদস্যুর দলে বেতন এবং স্বাধীনতা দুটোই পাওয়া যায়।

একইভাবে জাহাজে থাকা ছোটখাট পদের নাবিককেও ভালো বেতন ও খাবারের লোভ দেখিয়ে প্রস্তাব দিত জলদস্যুরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব নাবিকেরা স্বেচ্ছায় দস্যুজাহাজে উঠে আসত। কারণ ছোটখাট নাবিকদের প্রায়ই বিভিন্ন অত্যাচার সইতে হতো। যেমন- ভালো খাবার না পাওয়া, অল্প বেতন পাওয়া, সারাদিন খাটুনি ইত্যাদি।

নাবিকরা ছাড়া অনেক অপরাধী, যাদের পেছনে পুলিশ লেগে আছে, তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই জলদস্যুদের দলে ভিড়ে যেত। এছাড়া জলদস্যুদের সন্তানও বড় হয়ে জলদস্যুই হতো। অনেক ক্ষেত্রে অপহরণ করে বা জোর করে কাউকে জলদস্যুরা দলে নিয়ে নিত। বিশেষ করে যাদের কোনো বিশেষ কাজে দক্ষতা আছে। যেমন- ডাক্তার, মিস্ত্রি ইত্যাদি।

জলদস্যুদের এমন অন্ধকারময় জীবনের কথা সাধারণত আমরা গল্প-কাহিনীতে পাই না। সেখানে লেখকদের কল্পনায় আঁকা ছবিই দেখা যায় কেবল।

Related Articles