Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-১): প্রাচীন প্রুশিয়া

আমরা আজ জার্মানি বলে যে দেশকে চিনি তা একসময় ছিল বিচ্ছিন্ন অনেকগুলো গোত্রের সমষ্টি, যারা নিজ নিজ এলাকা বা রাজ্যে বিভক্ত ছিল। রোমান আমলে জার্মানিতে বসবাসকারী গোত্রগুলোকে রোমানরা অসভ্য বর্বর দাবি করলেও জার্মানদের ছিল নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

টিউটোবার্গের যুদ্ধে রোমান সেনাবাহিনীকে তাদের ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী পরাজয় উপহার দেয় জার্মান জাতিগুলো। রোম কখনোই জার্মানিকে সম্পূর্ণ বশীভূত করতে সমর্থ হয়নি, বরং সম্রাটদের সময় রোমান সেনাবাহিনী এবং প্রাসাদের ক্ষমতার ষড়যন্ত্রে বিভিন্ন জার্মান গোত্র থেকে উঠে আসা লোকদের মুখ্য ভূমিকা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। রোমানদের পরে সময়ের পরিক্রমায় জার্মানি কয়েকটি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্য থেকে উৎপত্তি হয় প্রুশিয়ান সাম্রাজ্যের, যা নিজেকে জার্মানির প্রধানতম শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। প্রুশিয়ার নেতৃত্বে আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে জার্মান কনফেডারেশন, শুরু হয় একীভূত একটি জার্মান রাষ্ট্রের দিকে পথচলার।

হলি রোমান এম্পায়ার

প্রুশিয়ার উৎপত্তির পূর্বে আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। সেটি হলো হলি রোমান এম্পায়ার। এর কারণ প্রুশিয়ার জন্মলগ্ন থেকে প্রতিবেশী অস্ট্রিয়ান আর পোলিশ সাম্রাজ্যের সাথে রাজনীতির খেলায় হলি রোমান এম্পায়ার ছিল এক দাবার ঘুঁটি। মধ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের বিস্তীর্ণ ভুখন্ড নিয়ে হলি রোমান এম্পায়ারের সীমানা, যা ৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮০৬ সাল পর্যন্ত প্রথমে ফ্রাঙ্কিশ এবং পরে নানা জার্মান সম্রাট শাসন করেছে। হলি রোমান এম্পায়ার কোনো একক সাম্রাজ্য ছিল বলাটা সঠিক হবে না, কারণ এর ভূখণ্ডের মধ্যে ছিল কয়েকটি আলাদা আলাদা রাজ্য, যার শাসকেরা ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন স্বাধীনভাবে। তাদের নামেমাত্র জবাবদিহিতা ছিল নির্বাচিত হলি রোমান এম্পেররের সামনে।

ষষ্ঠ চার্লসের সময় হলি রোমান এম্পায়ারের পতাকা; Image Source: flagsonline.it

৮০০ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ লাভ করলেও শাসকদের ক্ষেত্রে প্রথম হলি রোমান এম্পায়ার পদবীর উল্লেখ পাওয়া যায় ১২৫৪ সাল থেকে (Sacrum Romanum Imperium)। এর আগে ১০৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ফ্রাঙ্কিশ সম্রাট দ্বিতীয় কনরাড তার অধীনস্থ এলাকাকে রোমান এম্পায়ার দাবি করতেন। সম্রাট দ্বিতীয় অটো ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসে নিজেকে রোমান এম্পেরর ঘোষণা করেন। হলি রোমান এম্পায়ারের প্রথম সম্রাট শার্লেম্যাগনে (Charlemagne/Charles I) থেকে প্রথম অটো অবধি কেউই কিন্তু হলি রোমান এম্পায়ার উপাধি ধারন করেননি। তারা নিজেদের বলতেন অগাস্টাস এম্পেরর (imperator augustus /“august emperor”)। 

রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাংশ হাতছাড়া হয়ে যাবার পরেও এখানকার জনগণের কাছে রোম ছিল পবিত্র এক সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের উৎকর্ষের সময়ের শান্তি সমৃদ্ধির কথা মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিল। পশ্চিম অংশে টিকে থাকা রোমান সম্রাট এখানকার ক্ষমতার পরিচালক না হলেও তার প্রতি জনতার আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। ফলে ওডোকার, অ্যালারিক থেকে শুরু করে ইতালি বা প্রাক্তন পূর্ব রোমের অধিভুক্ত অঞ্চলের শাসকেরা পশ্চিম রোমের থেকে শাসন পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি প্রার্থনা করতেন।

অনুমিতভাবেই পশ্চিম রোম থেকে সবসময়েই সেই অনুমতি এসে পৌঁছত যাতে পূর্বাংশের সাথে সদ্ভাব বজায় থাকে এবং প্রয়োজনে একজন মিত্র পাওয়া যায়। আস্তে আস্তে বেশিরভাগ লোকেই রোমকে খ্রিস্টান ক্ষমতার প্রতিভূ হিসেবে দেখতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও চার্চ অনেকটা একাকার হয়ে গেলে রোমে থাকা পোপ রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এ সময় তাদের চলতে হচ্ছিল খুব সাবধানে, কারণ পশ্চিমে বাইজান্টাইন সম্রাট আর পশ্চিমে ফ্রাঙ্কিশ সাম্রাজ্য উভয়ের সাথেই তাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে হত। অষ্টম শতাব্দীতে ইতালির অনেক অঞ্চলেই বাইজান্টাইন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের প্রেরিত গভর্নর (exarch) র‍্যাভেনা নগরীকে কেন্দ্র করে শাসন করতেন। ইত্যবসরে লম্বার্ড জাতি ইতালিতে নতুন করে আগ্রাসনের সূচনা করলে পোপের ক্ষমতা হুমকির সম্মুখীন হয়।

৭৫১ খ্রিস্টাব্দে লম্বার্ডরা র‍্যাভেনা দখল করে নেয়। পোপ বারংবার বাইজান্টাইনদের সাহায্য প্রার্থনা করে সাড়া পেলেন না। তারা তখন নব্য ইসলামি শক্তির ধাক্কা সামলাতেই ব্যস্ত। ফলে তিনি অভূতপূর্বভাবে পশ্চিমে ফ্রাঙ্কিশ রাজার থেকে সহায়তা চেয়ে বসেন। তার ডাকে তৃতীয় পেপিন (Pippin the Short) ঝড়ের গতিতে ইতালিতে প্রবেশ করে তিন বছরের মধ্যেই লম্বার্ডদের পরাস্ত করেন। পেপিন পূর্ববর্তী বাইজান্টাইন অধিকারে থাকা ইতালির অঞ্চলগুলো নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত না করে ছেড়ে দেন রোমের পোপের হাতে। তৎকালীন পোপ দ্বিতীয় স্টিফেন তাকে প্যাট্রিশিয়ান (patricius Romanorum) খেতাব দিলেন। যদিও রোমান সম্রাটের (তৎকালীন পশ্চিম রোম) অনুমতি ছাড়া এই খেতাব প্রদান ছিল অবৈধ।

তৃতীয় পেপিন © Encyclopedia Britannica

 

পেপিনের সময় থেকেই রোমান ক্যাথলিক চার্চের সাথে ফ্রাঙ্কিশ রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এদিকে ৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে পেপিনের ছেলে শার্লেম্যাগনে (Charlemagne) লম্বার্ডদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন। অন্যদিকে স্বাধীনচেতা পোপ অ্যাড্রিয়ান রোমান চার্চের প্রধান হিসেবে নিজেকে কন্সট্যান্টিনোপোল থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে থাকেন। ৭৮১ খ্রিস্টাব্দে পোপের নামে অঙ্কিত মুদ্রা চালু হয়। পশ্চিমে রোমান সম্রাটের অভিষেকের ক্ষণ থেকে চার্চের নথিপত্রে তারিখ গণনার ঐতিহ্যও পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু কন্সট্যান্টিনোপোলে ৭৯৭ সালে সম্রাজ্ঞি আইরিন সিংহাসন দখল করলে সেই সুযোগে রোমান অভিজাতেরা পোপ তৃতীয় লিওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলে। তিনি ৭৯৯-এ পালিয়ে যান শার্লেম্যাগনের দরবারে। তার সহায়তায় লিও নিজ ক্ষমতা ফিরে পেলে রোমে এক অনুষ্ঠানে তিনি শার্লেম্যাগনেকে মুকুট পরিয়ে দেন। উপস্থিত জনতা তাকে অগাস্টাস এবং এম্পেরর বলে সম্বোধন করতে থাকে।সূচনা হয় হলি রোমান এম্পায়ারের।

পোপ শার্লেম্যাগনেকে মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন © G. Garitan

 

হলি রোমান এম্পেরর পরবর্তীতে একটি নির্বাচিত দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচনের ভার ছিল ইতালি এবং জার্মানির বেশ কয়েকজন রাজকীয় ব্যক্তির উপর, যাদের পরিচয় ছিল প্রিন্স ইলেক্টর (prince-elector) বা শুধু ইলেক্টর হিসেবে। ১২৫০ সালের দিকে এই ইলেক্টোরাল কলেজ পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে। নির্বাচিত সম্রাটকে অভিষিক্ত করতেন পোপ নিজে। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে বহু ঘুঁটি চালাচালি হত। তবে সত্যিকার অর্থে নিজ রাজ্যের উপরেই হলি রোমান এম্পেররের ক্ষমতা চলত, উপাধির খাতিরে আর যেসব ভূখণ্ডের উপর তিনি অধিকার লাভ করতেন সেটা ছিল পুরোটাই আনুষ্ঠানিক। স্বাধীন সার্বভৌম রাজারা সেসব ভূখণ্ড শাসন করতেন। প্রুশিয়া যখন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন অস্ট্রিয়ান হাবসবুর্গ রাজপরিবার (House of Habsburg) হলি রোমান এম্পেররের পদকে অনেকটা তাদের বংশগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। নির্বাচনকে তারা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করত যে পনেরো শতাব্দী থেকেই অস্ট্রিয়ান সম্রাটের থেকে তার বড় ছেলের হাতে বংশানুক্রমে এই দায়িত্ব বর্তাচ্ছিল।

প্রাচীন প্রুশিয়া

বাল্টিক সাগরের কোল ঘেঁষে সমতল বালুময় ভূখণ্ডে বাস করত বরুসি/প্রুশিয়ান জাতি।(Borussi/Prussians)। এখানে প্রুশিয়া নামে আলাদা কোনো রাষ্ট্র তারা তখনও তৈরি করেনি। জার্মানির সাথে সংযুক্ত হলেও প্রুশিয়ানদের উৎপত্তি বাল্টিক জাতিগোষ্ঠী থেকে। নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি তাদের জার্মান অন্যান্য গোত্র থেকে আলাদা করেছিল। তবে ইউরোপের সার্বভৌম খ্রিস্টান রাজত্বগুলো দেব-দেবীর উপাসক প্রুশিয়ানদের বর্বর হিসেবেই দেখত। পার্শ্ববর্তী পোলিশ সাম্রাজ্যের শ্যেনদৃষ্টি ছিল এই অঞ্চলের দিকে। বেশ কয়েকবারই পৌত্তলিক প্রুশিয়ানদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে দেবার নাম করে সামরিক অভিযান চালালেও তারা ব্যর্থ হয়। কিন্তু এর ফলে তাদের প্রুশিয়া হস্তগত করবার ইচ্ছা আরো বৃদ্ধি পায়।

প্রুশিয়ানরাও বসে ছিল না, তারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে পোলিশ এলাকাতে লুটপাট করত। পোল্যান্ডের মাযোভিয়া অনেকবারই তাদের হামলার শিকার হয়। ১২২৬ সালে তাই মাযোভিয়ার ডিউক কনরাড প্রুশিয়ার বিরুদ্ধে ক্রুসেডের জন্য টিউটোনিক নাইট বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানান।

বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী অঞ্চল; Image Source: fpri.org/article

 

প্রুশিয়ান ক্রুসেড

টিউটোনিক নাইটরা ছিল ক্যাথলিক জার্মান সামরিক সংস্থা যার প্রতিষ্ঠা তৃতীয় ক্রুসেডের সময়ে, আক্রা (Acre) নগরী অবরোধকালে। ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করবার পাশাপাশি এরা যুদ্ধাহত সেনাদের জন্য হাসপাতাল পরিচালনা করত। ত্রয়োদশ শতকে এরা পূর্ব ইউরোপে ঘাঁটি গেড়ে বসে এবং ইউরোপিয়ান রাজাদের পক্ষে নিজেদের সামরিক শক্তি কাজে লাগায়। কনরাডের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা জার্মানিতে প্রবেশ করে। তৎকালীন হলি রোমান এম্পেরর দ্বিতীয় ফ্রেডারিক তাদের কাজের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেন। কনরাড তাদের দেন অর্থসাহায্য।

বর্মাচ্ছাদিত টিউটোনিক নাইটদল; Image Source: WallpaperAccess

 

টিউটোনিক নাইটদের প্রধান গ্র্যান্ড মাস্টার হারম্যান ভন সালজা (Hermann von Salza) ১২৩০ সালে ভলস্যাং (Vogelsang) এলাকার দিকে সাতজন নাইটদের নেতৃত্বে একশত সৈন্যের একটি দল পাঠান। এখানে পূর্ববর্তী বছরে একটি দুর্গ নির্মাণ করতে গিয়ে প্রুশিয়ানদের হাতে বহু খ্রিস্টান সেনা নিহত হয়। কিন্তু এবার প্রুশিয়ানদের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগে তারা এখানে স্থায়ী শিবির স্থাপন করতে সক্ষম হলেন।

এক বছর পরেই আরো দু’শো সেনা এসে তাদের দল ভারি করল। এখান থেকে টিউটোনিক নাইটরা আশেপাশের এলাকাতে নিয়মিত ছোট ছোট অভিযান চালানো শুরু করলেন। ফলে আস্তে আস্তে বেশ কিছু এলাকা তাদের অধিকারে চলে আসে। পোপ আর হলি রোমান এম্পেররের প্ররোচনাতে প্রচুর জার্মান গোত্র নাইটদের দখল করা এলাকাতে অভিবাসী হয়। টিউটোনিক নাইটরা যখনই কোনো নতুন এলাকা দখল করছিল, তখনই জার্মানরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতে থাকে। ফলে আদি প্রুশিয়ান বাসিন্দারা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং প্রুশিয়ার জার্মানিকরণের সূচনা হয়।   

হারম্যান ভন সালজা © Gerhard von Glinski, Peter Wörster: Königsberg. Die ostpreußische Hauptstadt in Geschichte und Gegenwart. Westkreuz-Verlag, Berlin Bonn 1992

 

প্রুশিয়ানদের একটি গোত্র ছিল পোমেসানিয়া (Pomesania)। তাদের সাথে টক্কর লাগলে এক প্রুশিয়ান সেনাপতি পক্ষ ত্যাগ করে নাইটদের দলে যোগ দেয়। তার দেখানো পথে নাইটরা রোগো’তে (Rogow ) পোমেসানিয়ানদের প্রধান দুর্গের দখল নিয়ে নেয়। নাইটদের হাতে এরপর পতন হলো থর্ন শহরের। পোমেসানিয়ান নেতা পেপিন নাইটদের হাতে বন্দি হন। নাইটরা পূর্বদিক বরাবর তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যায়।১২৩৩ সালে প্রায় দশ হাজার সৈন্যের বিশাল বহর নিয়ে টিউটোনিক নাইটরা পোমেসানিয়ানদের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ করে। তারা বেশ কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করে পোমেসানিয়ান অঞ্চলে তাদের ক্ষমতা সুরক্ষিত করে।

পোল্যান্ড সাম্রাজ্যের বড় আশা ছিল টিউটোনিক নাইট দল তাদের হয়ে প্রুশিয়াকে পোলিশ পতাকাতলে নিয়ে আসবে। এজন্যই তারা কনরাডকে দিয়ে টিউটোনিক নাইটদের কাজে লাগাচ্ছিল। কিন্তু গ্র্যান্ড মাস্টার সালজা  ১২৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে পোপের নামে স্বতন্ত্র একটি জার্মান রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করেন (papal suzerainty)। ফলে পোলিশদের পক্ষে সরাসরি এই জমির দখল নেয়া কঠিন হয়ে যায়। কনরাড নাইটদের কাছে জমি দাবি করলে তারা অস্বীকৃতি জানাল। ফলে ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে মাযোভিয়া নাইটদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।

টিউটোনিয়ান নাইটরা এতে হতোদ্যম না হয়ে বাল্টিক অঞ্চলে নাইটদের অন্যান্য সংগঠনের সাথে জোট গঠন করল। বর্তমান ড্রেসডেনের কাছেই মেইজন (Meissen) নগরীর শাসক তৃতীয় হেনরিও তাদের সাথে যোগ দেন। সম্মিলিত বাহিনী বর্তমান পোল্যান্ডের অন্তর্গত ভিস্টুলা নদীর ধার ঘেঁষে এগিয়ে গেল। তাদের যাত্রাপথকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল অনেক অভিবাসী অধ্যুষিত শহর, যারা এই সেনাবাহিনীর রসদ এবং সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১২৪০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত অভিযানে প্রুশিয়ান অনেক গোত্র একে একে নাইট বাহিনীর কাছে হার মানে।

প্রুশিয়ার গোত্র আর টিউটোনিক নাইটদের লড়াই; Image Source: weaponsandwarfare.com

 

অধিকৃত এলাকাকে টিউটোনিক নাইটরা চারটি প্রদেশে ভাগ করে- কুম, পোমেসানিয়া, এর্মেল্যান্ড আর স্যামল্যান্ড। নানা জায়গাতে তারা নগর এবং দুর্গ প্রতিষ্ঠা করে। ইতোমধ্যে জার্মান বিভিন্ন গোত্র এই এলাকাতে অভিবাসিত হয়। নাইটরা জার্মানির ম্যারিনবার্গ শহর থেকে তাদের প্রশাসনিক কার্যাবলী চালাতে থাকে। প্রুশিয়ান নগরগুলোকে তারা যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে দিত। টিউটোনিক নাইটদের তৈরি করা শাসনব্যবস্থাই ভবিষ্যৎ প্রুশিয়ান সাম্রাজ্যের ভিত গড়ে দেয়। কিন্তু প্রুশিয়া পুরোপুরি নাইটদের হাতে আসেনি। মাঝে মাঝেই তাদের বিপক্ষে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিতে থাকে। ১২৪২ সালে বড় আকারে নাইটদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে বহিঃশক্তির হাত ছিল।

টিউটোনিক নাইটদের এক মিত্র ছিল পোমেরানিয়া। বাল্টিক সাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত পোমেরানিয়া পড়েছে পোল্যান্ডের উত্তর দিকে। এর শাসক ডিউক সোয়ান্টোপেক (Swantopelk)। টিউটোনিক নাইটদের জয়যাত্রা তার কপালে কুঞ্চন তৈরি করল। তিনি ভয় পেলেন যেভাবে এরা এলাকার পর এলাকা দখল করছে তাহলে কবে যেন পোমেরেলিয়ার দিকেও এদের নজর পড়ে যায়। তিনিই প্রুশিয়ানদের উস্কানি দিতে থাকেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ, অর্থ এবং সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করে দেন।

দুই বছর ধরে প্রুশিয়ানরা টিউটোনিক নাইটদের বিরুদ্ধে প্রভূত সাফল্য অর্জন করে। তারা যুদ্ধ করার জন্য জঙ্গলাকীর্ণ জায়গা বেছে নিত যেখানে নাইটদের ভারি বর্ম তাদের দ্রুত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আবার নাইটদের সুরক্ষিত দুর্গ দখলের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রুশিয়ানদের কাছে ছিল না। ফলে অচলাবস্থা তৈরি হলো। ১২৪৯ সালে নতুন পোপ চতুর্থ আরবান এবং পোল্যান্ডের রাজপরিবার ডিউকের উপর চাপ সৃষ্টি করলে তিনি প্রুশিয়ানদের পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় নাইট বাহিনীর দিকে।

This is a Bengali language artile about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Abbott, J. S. C. (1882). The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company.
  2. The Columbia Electronic Encyclopedia, 6th ed. Columbia University Press
  3. Holy Roman Empire. Encyclopedia Britannic
  4. Bryce, J. (1920). The Holy Roman Empire. Macmillan and Company
  5. Urban, W. L. (2000). The Prussian Crusade. Lithuanian Research and Studies Center, Inc; Enlarged 2nd edition

Featured image: mapsofthepast.com

Related Articles