নতুন সংঘাত
ইউরোপ কিন্তু তখনও অস্থির। আপাত-শান্তির নিচে ফেনিয়ে উঠছিল উত্তেজনা। ১৬৬১ সালে ফ্রান্সে চতুর্দশ লুইয়ের অভিষেকের কিছুদিন পরেই এই উত্তেজনা সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিল। অস্ট্রিয়া আর স্পেন পরস্পরের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে সুইডেন আর ফ্রান্সের মধ্যে রক্তপাত শুরু হয়। ফ্রেডেরিককে চলতে হচ্ছিল খুব সাবধানে, কারণ তখন পর্যন্ত ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়া ইউরোপিয়ান পরাশক্তিগুলোর তুলনায় শিশু মাত্র। ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার মতো সামরিক বা অর্থনৈতিক কোনো ক্ষমতাই তার নেই। কাজেই ফ্রেডেরিক খুব সতর্কতার সাথে চলতে লাগলেন। তার দৃষ্টিকোণ ছিল যে সংঘাতে শক্তিশালী পক্ষের সাথে যোগ দিলে দিনশেষে ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ার প্রাপ্তির খাতা হবে শূন্য, কারণ শক্তিশালী পক্ষ তাকে পাত্তা না দিয়ে লাভের গুড় পুরোটাই ঘরে তুলবে। তার থেকে তুলনামুলকভাবে দুর্বল পক্ষের সাথে জোট করলে বরঞ্চ ফ্রেডেরিক কিছু দাবিদাওয়া আদায় করতে পারবেন। এই মন্ত্র তিনি তার উত্তরসূরির কানেও দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে সবকিছুর পরে ফ্রেডেরিকের কাছে রাষ্ট্রীয় স্বার্থই ছিল সবার আগে, কাজেই প্রয়োজন মনে হলে নিমেষেই তিনি পক্ষ পরিবর্তন করতেন।
ফ্রান্স আর সুইডেনের সংঘাতের পথ ধরে চতুর্দশ লুই ১৬৭২ সালে নেদারল্যান্ডস আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ফ্রেডেরিক তার নীতি অনুযায়ী দুর্বল ডাচ রাজ্যগুলির সাথে মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করেন। কিন্তু ফ্রেঞ্চদের প্রবল আঘাতে ডাচ প্রতিরক্ষা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লে তিনি ১৬৭৩ সালে ফ্রান্সের সাথে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হন। কিন্তু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হলি রোমান এম্পায়ারের যুদ্ধ ঘোষণার খবরে তিনি চুক্তি বাতিল করেন এবং পরের বছরের জুলাই মাসে ফ্রান্সের বিপক্ষে অস্ট্রিয়া, স্পেন আর নেদারল্যান্ডসের জোটে যোগ দেন। দ্বিতীয় সন্তান চার্লস এমিলকে সাথে নিয়ে ফ্রেডেরিক তার সেনাদলসহ পূর্ব ফ্রান্সের অ্যালসাসে (Alsace) উপস্থিত হলেন। কিন্তু ফ্রেডেরিক লড়াই করতে উম্মুখ থাকলেও অন্যান্য পক্ষের অনিচ্ছায় সরাসরি সংঘাত জমে উঠছিল না। জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে চার্লস এমিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফ্রেডেরিক তাকে স্ট্র্যাসবুর্গ পাঠিয়ে দিলেন, যেখানে সাত মাস পরে এমিলের মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন ফ্রেডেরিকের পছন্দের উত্তরাধিকারী, কাজেই তাকে হারিয়ে ফ্রেডেরিক যথেষ্ট মানসিক আঘাত পেলেন।
এদিকে ফ্রেডেরিকের ব্যস্ততার সুযোগ নিতে সুইডেন ব্র্যান্ডেনবার্গের উপর হামলা চালায়। ফ্রেডেরিক তড়িৎ নিজ রাজ্যের দিকে রওনা হন। ১৬৭৫ সালের জুনে প্রুশিয়ান সেনাদল সুইডিশ রাজকীয় বাহিনীকে পরাস্ত করে। এটাই সম্ভবত ছিল মিত্রপক্ষের সাহায্য ব্যতিরেকে শত্রুর বিরুদ্ধে ফ্রেডেরিক তথা ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ান বাহিনীর প্রথম বিজয়। এই জয় সাধারণ জনতা আর পরাশক্তিগুলির কাছে ফ্রেডেরিকের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তাকে নিয়ে লেখা হয় লোকগান, যেখানে ফ্রেডেরিককে উপাধি দেয়া হয় দ্য গ্রেট ইলেক্টর।
ফ্রেডেরিক বিজয়গৌরবে মত্ত না থেকে ড্যানিশদের সাথে নিয়ে সুইডিশদের তাড়া করলেন। তাদের হটিয়ে দিয়ে পুনরায় পশ্চিম পোমেরানিয়া দখল করেন। কিন্তু আবারো ফ্রেঞ্চ চাপে তিনি বিপদে পড়ে যান। কোন মিত্রই তাকে সহায়তা করল না। এই পরিস্থিতিতে ১৬৭৯ সালে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সন্ধি হয়, যা সেইন্ট-জার্মান অঁ-লেই চুক্তি নামে পরিচিত। ফ্রেডেরিকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পোমেরানিয়ার পশ্চিম থেকে তাকে সরে আসতে হয়। এই চুক্তি ফ্রান্সের হাতকে শক্তিশালী করল।
ক্ষমতার নতুন মেরুকরণ
বার বার ফ্রান্সের কাছ থেকে বাধা পেয়ে ফ্রেডেরিক এবার তাদের সাথেই সন্ধি করতে চাইলেন। ১৬৭৯ সালে গোপনে ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ার সাথে ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। কিন্তু অচিরেই ফ্রেডেরিক বুঝে গেলেন পোমেরানিয়া সম্পূর্ণভাবে তার আওতায় নিয়ে আসতে ফ্রান্স তাকে সহায়তা করবে না। চতুর্দশ লুইয়ের নজর শুধুমাত্র ফ্রান্সের সীমানা সম্প্রসারণের দিকে। ফলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ইউরোপিয়ান শক্তিগুলি একজোট হতে থাকে। এদের মধ্যে এক যুবরাজ, উইলিয়াম (পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়াম), যিনি ছিলেন নেদারল্যান্ডসের একজন স্টাডহোল্ডার (Stadtholder/সম্মিলিত কয়েকটি ডাচ প্রদেশের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট) ফ্রেডেরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১৬৮৫ সালে তিনি নতুন করে নেদারল্যান্ডসের সাথে চুক্তি করলেন। পরের বছর হলি রোমান এম্পায়ার এবং অস্ট্রিয়ার আর্চডিউকপ্রথম লিওপোল্ড সুইডেন, স্পেন এবং জার্মানির বাভারিয়া, স্যাক্সোনি এবং প্যালাটাইন নিয়ে গঠন করলেন লীগ অফ অগসবুর্গ। এদের সাথে পরে যোগ দিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়ান হাবসবুর্গ এবং নেদারল্যান্ডস (দ্য গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স)। ১৬৮৯-৯৭ সাল অবধি দ্য গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স যুদ্ধ করে ফ্রান্সের সাথে, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের আগ্রাসি অভিযান প্রতিহত করা। অবশেষে রিজউইক চুক্তি (Treaty of Ryswick) মোতাবেক যুদ্ধ সমাপ্ত হয় এবং চতুর্দশ লুই ফ্রেঞ্চ সম্প্রসারনের লাগাম টানতে বাধ্য হলেন। কিন্তু ফ্রেডেরিক কোনকিছু দেখে যেতে পারেননি। তিনি ১৬৮৮ সালে মারা যান, তৃতীয় সন্তান ফ্রেডেরিক উইলিয়াম তার স্থলাভিষিক্ত হলেন।
নতুন শাসক
ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের পুত্র ফ্রেডেরিক ১৬৮৮ সালে ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। তার ছেলেবেলার শিক্ষক ড্যাঙ্কেলম্যান (Eberhard von Danckelmann) হলেন উপদেষ্টা, তবে কার্যত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বই পালন করছিলেন। তাই দুজনের বোঝাপড়া ছিল বেশ ভাল। তিনি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকলেন। বাবার মতো রাজা হবার অভিলাষ তার ভেতরেও ছিল। তখন ফ্রান্সের সাথে অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর অস্থিরতা চলছে। ফ্রেডেরিক কড়ায় গণ্ডায় এর সুবিধা উঠাতে বদ্ধপরিকর হলেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসের জোটে যোগ দিলেন।
এই পদক্ষেপ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অস্ট্রিয়ার হাবসবুর্গদের থেকেই তখন হলি রোমান এম্পেরর নির্বাচিত হচ্ছিল। ফ্রেডেরিক চাচ্ছিলেন ফ্রান্সের বিপক্ষে তাদের সহায়তা করার বিনিময়ে তিনি এম্পেররের কাছ থেকে রাজা হবার অনুমোদন আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে ফ্রেঞ্চদের শ্যেনদৃষ্টি ছিল জার্মান ভূমি, বিশেষ করে ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ার দিকে। এককভাবে তাদের মোকাবেলা করা ফ্রেডেরিকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই তিনি ফ্রান্সের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের দলে ভিড়ে যান।
উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ এবং ইংল্যান্ডের সিংহাসন
ফ্রান্সের দক্ষিণে অবস্থিত প্রিন্সিপালিটি (প্রিন্স কর্তৃক শাসিত এলাকা) অফ অরেঞ্জের যুবরাজ উইলিয়াম। তার মা মেরি ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের কন্যা। উইলিয়ামের সাথে ফ্রেডেরিকের বাবা সুসম্পর্ক ছিল, যা ফ্রেডেরিক শাসক হবার পরেও বজায় ছিল। উইলিয়াম ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট, চতুর্দশ লুইয়ের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য জেমস ১৬৬৮/৬৯ এর দিকে ক্যাথলিক হন। তার স্ত্রী, ক্ল্যারেন্ডনের আর্লের কন্যা অ্যানের গর্ভে দুই মেয়ে মেরি এবং অ্যানের জন্ম। মেরিকে বিয়ে করেছিলেন উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ, ইংল্যান্ডের রাজা তখন জেমসের ভাই দ্বিতীয় চার্লস। চার্লস মেরি এবং অ্যানকে প্রোটেস্ট্যান্ট হিসেবেই বড় করতে জেমসকে শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। তবে চার্লস ধর্মীয় দিক থেকে উদার ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে ডিক্লারেশন অফ ইনডালজেন্স (Declaration of Indulgence) জারি করেন। এর লক্ষ্য ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদেরকেও স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম করার সুযোগ দেয়া।
তখন পর্যন্ত চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে আইনগত দিক থেকে বিধিনিষেধের ভেতর পড়তে হত। তবে চার্চ এবং পার্লামেন্টের চাপে চার্লস ১৬৭৩ সালে এই আইন রহিত করে টেস্ট অ্যাক্ট অনুমোদন করতে বাধ্য হন, যেখানে ক্যাথলিকদের সরকারি পদে আসীন হবার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। একই বছর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে জেমস মেরি অফ মডেনা নামে এক রোমান ক্যাথলিক রাজকন্যাকে বিয়ে করলে ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্টরা তার উপর আরো নাখোশ হয়।
এই পরিস্থিতিতে ক্যাথলিক জেমসকে পরবর্তী রাজা মানতে অনেকের দ্বিধা থাকলেও তিনি পার্লামেন্ট এবং অ্যাঙ্গলিকান (Anglican) ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমর্থনে ১৬৮৫ সালে দ্বিতীয় জেমস হিসেবে রাজা হন। প্রথমে তিনি বেশ উদারমনা ছিলেন এবং এমন কিছু করেননি যাতে প্রোটেস্ট্যান্টদের স্বার্থে আঘাত লাগে। কিন্তু তার ক্যাথলিক পরিচয়কে কেন্দ্রে করে কয়েকজন অভিজাত বিদ্রোহ করলে জেমস কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন। নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রোহ দমন করা হয়। সেনাবাহিনীতে অনেক রোমান ক্যাথলিক অফিসার নিযুক্ত হন। সরকারি উঁচু পদে জেমসের সরাসরি নির্দেশে ক্যাথলিকদের নিয়োগ দেয়া শুরু হলো। ১৬৮৫ সালের নভেম্বরে জেমস পার্লামেন্টের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। অ্যাঙ্গলিকানদের সাথেও আরম্ভ হয় টানাপোড়ন।
১৬৮৮ সালের এপ্রিলে জেমস ডিক্লারেশন অফ ইনডালজেন্স পুনরায় জারি করেন এবং মে মাসে ইংল্যান্ড জুড়ে সমস্ত চার্চে তা পাঠ করার আদেশ দেন। সাতজন বিশপ অস্বীকৃতি জানালে তাদের কারাবন্দী করা হলো, কিন্তু বিচারে পার্লামেন্ট তাদের বেকসুর খালাস দেয়। জেমসের সাথে তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সাতজন অভিজাত চিঠি লেখলেন উইলিয়াম অফ অরেঞ্জকে, আমন্ত্রণ জানালেন পার্লামেন্ট এবং জেমসের মধ্যে চলা বিবাদ বিচার করতে। এর মাধ্যমে তারা জেমসকে সরিয়ে উইলিয়ামকে ইংল্যান্ডের রাজা করতে চাইছিলেন।
ফ্রান্স থেকে চতুর্দশ লুই সব দেখছিলেন। ইউরোপে ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য বিস্তারের যে ছক তিনি কষছেন সেখানে উইলিয়াম পথের কাঁটা। জেমসকে তিনি সহায়তার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু নিজের শক্তিতে পরিপূর্ণ আস্থাশীল জেমস রাজি হলেন না। সম্ভবত চিরশত্রুর সাথে মিত্রতা জনগণ ভালভাবে নেবে না বলেও তিনি শঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু তার নৌবহরকে ফাঁকি দিয়ে উইলিয়াম ঠিকই ১৬৮৮ সালের ৫ মে ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছলেন। জেমসের সব প্রোটেস্ট্যান্ট সেনা অফিসার গিয়ে যোগ দিল উইলিয়ামের দলে। এমনকি তার মেয়ে অ্যানও দুলাভাইয়ের পক্ষ নিলে জেমসের পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। তিনি ফ্রান্সে পালাতে গেলে কেন্টে আটকে যান। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে তাকে ইংল্যান্ড ত্যাগ করার সুযোগ দেয়া হলে তিনি চতুর্দশ লুইয়ের আশ্রয়ে চলে যান। পরবর্তী বছর ফেব্রুয়ারিতে উইলিয়ামকে ইংল্যান্ডের রাজা ঘোষণা করা হয়। তিনি তৃতীয় উইলিয়াম নামে ক্ষমতা নেন। ফ্রেডেরিক তৃতীয় উইলিয়াম ইংল্যান্ডের সিংহাসনের বসাকে নিজের জন্য শুভ মনে করলেও আদতে এর ফলে তার কোনো লাভ হয়নি।
এই সিরিজের আগের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:
১) পর্ব ১ - প্রাচীন প্রুশিয়া
২) পর্ব ২ - ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়া
This is a Bengali language artile about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.
References
- Abbott, J. S. C. (1882) . The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company.
- Skalweit, S. Frederick William. Encyclopedia Brittanica
- McKay, D. (2001). The Great Elector. Harlow: Longman.
- Abbott, J. S. C. (1882) . The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company.
- Clark, Christopher Iron. Kingdom: The Rise and Downfall of Prussia, 1600-1947. Cambridge, M.A,: Belknap Press of Harvard University Press, 2006.
- Dwyer, Philip G. The Rise of Prussia, 1700-1830. New York: Longman, 2002.
- Frederick I king of Prussia (2020). Encycloepdia Britannica
- Kenyon, J. P. James II. Encyclopedia Britannica
Featured image © Alexander Altenhof