Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-৫): দ্য সোলজার কিং

প্রুশিয়ার দ্বিতীয় রাজা ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের (জার্মান ভাষায় Friedrich Wilhelm) জন্ম হয়েছিল ১৪ আগস্ট, ১৬৮৮ সালে। দাদার নামে তার নামকরণ হলো, যিনি মারা গিয়েছিলেন রাজপুত্রের জন্মের মাত্র তিন মাস আগেই। ছোটবেলা থেকেই তার চরিত্রের রুক্ষ কঠোর ভাব প্রকাশিত হতে শুরু করে। বাবা ফ্রেডেরিক খরচ করতেন দু’হাতে, রাজকীয় জাঁকজমক আর চাকচিক্য তার কাছে আভিজাত্যের অন্যতম প্রতীক। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম একদমই এসব পছন্দ করতেন না। তার কাছে বিলাস ব্যসনে জন্য টাকা খরচ অপব্যয় বৈ আর কিছু মনে হত না। জমকালো অনুষ্ঠান, বিপুল খাবারদাবারের ভোজ তাকে রুষ্ট করত। অন্যদিকে সামরিক বিষয়ে তার ছিল গভীর আগ্রহ। নিজের খরচের জন্য যে টাকা পেতেন বলা হয় সেই অর্থ বাঁচিয়ে নাকি তিনি ছোট্ট এক সেনাদলই গড়ে তুলেছিলেন।

ফ্রেডেরিক উইলিয়াম, দ্য সোলজার কিং; Image source: prussianhistory.com

ভাবী রানীর খোঁজ

বয়সকালে রাজপুত্রের বিয়ে দেবার জন্য রাজা প্রথম ফ্রেডেরিক ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তখনকার দিনে রাজবংশগুলোর কাছে বিয়ে ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার মাত্র। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য ছিল কৌশলগত মিত্রতা স্থাপন করা, অনেক সময় এই উপায়ে এক অঞ্চলের রাজবংশ অন্য রাজ্যের উত্তরাধিকারে পরিণত হত। ফলে প্রথম ফ্রেডেরিক সতর্কতার সাথে তিনজন রাজকন্যাকে নির্বাচন করলেন। সুইডেনের সাথে ভূখণ্ডগত জটিলতা ছিল, বিশেষত পোমেরানিয়া নিয়ে রেষারেষি শেষ হয়নি। ফলে সুইডিশ রাজকন্যা উলরিখ এলেনোরা ছিলেন ফ্রেডেরিকের প্রথম পছন্দ। দ্বিতীয় ছিলেন হাউজ অফ হ্যানোভারের সোফি ডরোথি। ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়ার সাথে হ্যানোভারের রাজবংশের বিয়ের ঐতিহ্য আগে থেকেই ছিল। ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের মা সোফি শার্লট ছিলেন হ্যানোভারের মেয়ে।

তখন পর্যন্ত হ্যানোভার ছিল একটি ডাচি, ব্রান্সউইক-ল্যুনবার্গ (Duchy of Brunswick-Lüneburg), যার নামকরণ হয়েছিল ডাচির প্রধান দুটি শহরের নামে। হ্যানোভারের রাজবংশের জর্জ লুইস ১৭১৪ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জর্জ হিসেবে শপথ নেন। তিনিই হাউজ অফ হ্যানোভারের প্রথম ব্রিটিশ রাজা। ইংল্যান্ড, হ্যানোভারের পাশাপাশি তার অধীনে ব্রান্সউইক-ল্যুনবার্গ পরিচালিত হচ্ছিল। তার মেয়ে সোফি ডরোথি (Sophia Dorothea) আর ছেলে জর্জ, যিনি দ্বিতীয় জর্জ হিসেবে ১৭২৭ সালে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে অভিষিক্ত হন। সুতরাং হাউজ অফ হ্যানোভারের সাথে আত্মীয়তার রাজনৈতিক গুরুত্বও কম ছিল না। তদুপরি তাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় এই বিয়ে খুব সহজে আর দ্রুত সম্পন্ন করা যেত।

রাজা প্রথম জর্জ; Image source: Wikimedia Commons

তালিকায় তৃতীয় ছিলেন নাসাউ-ডিয়েটজের (Nassau-Die) প্রিন্সেস অ্যামেলিয়া। জার্মানির এই রাজ্যের সাথে মিত্রতাও প্রুশিয়ার জন্য মঙ্গলজনক ছিল। কিন্তু ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের সাথে সোফি ডরোথির সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে তার প্রতি রাজপুত্রের কিছুটা আকর্ষণ ছিল। তাই তিনি কৌশলে এমন ব্যবস্থা করলেন যাতে প্রথম পছন্দ সুইডিশ প্রিন্সেস উলরিখের ব্যাপারে খোঁজখবর করতে গেলে বাবার কানে নেতিবাচক রিপোর্ট পৌঁছে। ফলে প্রথম ফ্রেডেরিক ছেলের সাথে সোফি ডরোথির বিয়ে ঠিক করেন। ধুমধাম করে ১৭০৬ সালে বিয়ে হয়েও গেল।

ফ্রেডেরিক উইলিয়াম এবং সোফি ডরোথি; Image source: fashionhistory.fitnyc.ed

যুদ্ধক্ষেত্রে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম

এরই মধ্যে স্প্যানিশ উত্তরাধিকারের যুদ্ধে ১৭০৯ সালে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম অস্ট্রিয়ান সেনাদলের সাথে এক অভিযানে রওনা হন। সামরিক কর্মকাণ্ডে তার উৎসাহ থাকায় তিনি আগ্রহভরে এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। এখান থেকে তিনি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা পরবর্তী জীবনে কাজে দিয়েছিল। তবে তার সবচেয়ে বড় লাভ হয় যখন রাজপুত্রের সাথে লিওপোল্ড নামে এক যুবরাজের পরিচয় হয়। তিনি ছিলেন হলি রোমান এম্পায়ারের প্রিন্সিপালিটি আনহাউটের (Anhalt) অধিকর্তা। তার উপাধি ছিল প্রথম লিওপোল্ড, তাকে দ্য ওল্ড দাসাউ (The Old Dessauer) নামেও ডাকা হত। তিনি প্রুশিয়ান সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন। তার সাথে ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা আজীবন বজায় ছিল।

আনহাউটের প্রথম লিওপোল্ড © Eduard Kretzschmar

ফ্রেডেরিক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এলেন। তার জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন হলো না। যাবতীয় রাজকীয় ভোগবিলাস তিনি পরিহার করতেন। লেখাপড়াও তিনি বেশি দূর করেননি। বেশিরভাগ সময় তিনি পড়ে থাকতেন সেনাছাউনির ক্লাবে (Tabakskollegium/Tobacco club), নিজের ঘনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সাথে। ফ্রেডেরিকের স্ত্রী ছিলেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি রাজকীয় আচার অনুষ্ঠান পূর্ণরূপে পালন করতেন গেবং শ্বশুর-শাশুড়ির মতো জ্ঞান, বিজ্ঞান আর শিল্পকলায় বড় অঙ্কের অর্থ ঢালতেন। স্বামীর ঔরসে তার বেশ কয়েকটি সন্তান জন্ম নেয়। তবে সবাই বয়সকালে উপনীত হতে পারেনি।

বেঁচে থাকা সন্তানদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন প্রিন্সেস উইলহেলমিনা (Friederike Sophie Wilhelmine; জন্ম ১৭০৯)। দ্বিতীয় ১৭১২ সালে সোফির গর্ভে জন্ম নেয়া রাজপুত্র ফ্রেডেরিক, আইন অনুযায়ী যিনি হলেন ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের উত্তরাধিকারী। এদিকে ১৭১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম ফ্রেডেরিক মারা গেলেন। প্রুশিয়ার দ্বিতীয় রাজা হিসেবে উইলহেলমিনা আর ফ্রেডেরিকের পিতা প্রথম ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের অভিষেক হল।

দ্য সোলজার কিং

প্রথম ফ্রেডেরিকের বেহিসাবি খরচে রাষ্ট্রীয় কোষাগার তখন তলানিতে। রাজা বিলাসব্যসন আর নানা রাজকীয় অনুষ্ঠান আর পৃষ্ঠপোষকতার কাজে টাকা খরচ করতে করতে পরিবারকে প্রায় দেউলিয়া করে ফেলেছেন। ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের দাদা ছোট হলেও দক্ষ একটি সামরিক বাহিনী গড়েছিলেন। কিন্তু সামরিক খাতে প্রথম ফ্রেডেরিকের ব্যয় ছিল নগণ্য। ফলে মাত্র ২৫,০০০-৩০,০০০ লোকের সেনাদলে অস্ত্র ও সরঞ্জামের প্রচুর অভাব ছিল। সৈন্যদের আত্মবিশ্বাসও হ্রাস পেয়েছিল অনেকে। বসে থাকতে থাকতে তাদের দক্ষতায় মরচে ধরে গিয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম তার চরিত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী করাকেই প্রায়োরিটি দেন। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ে তিনি চূড়ান্ত মিতব্যয়ীতার নীতি গ্রহণ করেন। সেকাজ তিনি শুরু করেন রাজপ্রাসাদ থেকেই। প্রাসাদের রাজকর্মচারীদের বরখাস্ত করা হলো। বাড়িঘরের কাজ করবার জন্য মাত্র আটজন লোক রেখে বাকি সবাইকে রাজা বিদেয় করে দিলেন। এই আটজনের বেতনও তিনি কমিয়ে দেন। পিতার ত্রিশজন খাস ভৃত্যের মধ্যে টিকল কেবল আটজন। এরপর রাজার নজর গেল রাজকীয় আস্তাবলের দিকে। সেখানে এক হাজার তরতাজা বলিষ্ঠ ঘোড়া তার কাছে বাহুল্য মনে হল। নয়শো সত্তুরটি ঘোড়া তিনি বিক্রি করে ফেলেন। রাষ্ট্রীয় পেনশন ভোগীদের তালিকাতেও কাঁচি পড়ল। তিন-চতুর্থাংশ পেনশনভোগীর ভাতা বিভিন্ন অজুহাতে বাতিল করে দেয়া হয়।

ফ্রেডেরিক উইলিয়াম সমস্ত পতিত জমি চাষাবাদের আদেশ জারি করলেন। রাজ্যের প্রত্যেককে কাজ করতে তিনি নির্দেশ দেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কলকারখানা গড়ে উঠে, ঘুরতে শুরু করে প্রুশিয়ান অর্থনীতির চাকা। ফ্রেডেরিক প্রায়ই নিজে নিজে সব পরখ করবার জন্য রাস্তায় বের হতেন, সাথে থাকত একটা বেত। তিনি যদি কারো প্রতি অপ্রসন্ন হতেন সাথে সাথেই করতেন বেত্রাঘাত। অল্পতেই খেপে যাবার বদ স্বভাব ছিল তার। তিনি সবচেয়ে অপছন্দ করতেন জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক। কাউকে যদি রাজা দামি পোশাকে দেখতেন তাহলে আর রক্ষা নেই। ছেলে হোক আর মেয়ে, রাজার হাতে তার মার ছিল অবধারিত।

ফ্রেডেরিক নিজে পড়তেন সামরিক পোশাক। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসতেন। দিনে নাকি পাঁচবার তার গোসল করবার অভ্যাস ছিল। ফ্রেডেরিকের মিতব্যয়ীতা, সামরিক শক্তির দিকে মনোযোগ আর রাষ্ট্রীয় আরাম আয়েশ ত্যাগ করে সামরিক কঠোরতার জীবন বেছে নেয়ায় তার নামই হয়ে যায় দ্য সোলজার কিং (Soldatenkönig)।

ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রদূতের অপমান

ফ্রেডেরিক ফ্রেঞ্চদের চরম অপছন্দ করতেন। মূল কারণ ছিল তাদের পোশাকের চাকচিক্য। প্রুশিয়ার রাজাসহ সকলে সাধারণ কাপড়চোপড় পরেই নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করত। কিন্তু ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রদূত, কাউন্ট রথেনবার্গ এবং তার কর্মচারীরা সবসময় হাজির হতেন বহুমূল্য ফ্রেঞ্চ রাজকীয় পরিচ্ছদে, যা ফ্রেডেরিক দু’চোখে দেখতে পারতেন না। তিনি ফন্দি আঁটলেন এদের শায়েস্তা করবার। সেই মতো ফ্রেঞ্চদের বার্লিনের প্রাসাদের এক রাজকীয় আয়োজনে দাওয়াত দেয়া হলো। ফ্রেডেরিক এরপর প্রুশিয়ান সমাজের সবথেকে নিচু শ্রেণীর লোকদের ডেকে এনে কিম্ভুতকিমাকারভাবে তাদের ফ্রেঞ্চ পোশাক পরালেন। তারপর তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন ফ্রেঞ্চদের আগমনের।

১৭০০-৮৯ সালের ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন; Image source: americanrevolution.org

যথাসময়ে নিজ সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে রথেনবার্গ অভ্যাসমত রাজকীয় কায়দায় হাজির হলেন। তিনি উপস্থিত হওয়ামাত্রই ফ্রেডেরিকের নির্দেশে ট্রাম্পেট বাজানো হলো। সাথে সাথে বিতিকিচ্ছিরিভাবে ফ্রেঞ্চ পোশাক পরিহিত নোংরা লোকগুলো রথেনবার্গের বহরের সামনে এসে দাঁড়ালো। কাছেই ঘোড়ার পিঠে উপবিষ্ট রাজা পাথরের মত মুখ করে সব দেখছিলেন। তিনি ভাব করলেন যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না। তবে রথেনবার্গের বুঝতে বাকি রইল না এই কাণ্ড কার। তিনি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেন। এরপরে ফ্রেডেরিক উইলিয়াম যতদিন রাজা ছিলেন আর কখনোই ফ্রেঞ্চরা রাজকীয় পোশাক জাহির করার চেষ্টা করেনি। তারা সবসময় সাধারণ পরিচ্ছদেই তার সামনে আসত।   

বার্লিনের প্রাসাদের সামনে আয়োজন; Image source:bryla.pl/bryla

শাসন সংস্কার

ফ্রেডেরিক উইলিয়ামই প্রথম প্রুশিয়ার প্রশাসনিক কার্যক্রম সরাসরি কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসেন। এই লক্ষ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তিনি তৈরি করলেন একটি প্রশাসনিক সংস্থা, জেনারেল ডিরেক্টরি (General-Ober-Finanz-Kriegsund Domänendirektorium/Generaldirektorium)। তাদের কাজ ছিল রাষ্ট্রীয় সমস্ত কাজ পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে ফ্রেডেরিক নিজে তা পরীক্ষা করতেন এবং তার অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হত না। এত সুন্দরভাবে এই ব্যবস্থা কাজ করছিল যে ইউরোপে এর কোনো জুড়ি ছিল না। ফ্রেডেরিক কর আদায়ের জন্যেও সুশৃঙ্খল কাঠামোর প্রবর্তন করেন। ফ্রেডেরিক অভিজাতদের উপর ভূ-সম্পত্তির বিনিময়ে কর ধার্য করেন, বিলাসদ্রব্য ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুর উপরেই কর চাপানো হয়। এই ব্যবস্থার প্রয়োগে প্রচুর কর আদায় হতে থাকে এবং কোষাগার আবার ভরে ওঠে। ১৭১৫ সালে যেখানে প্রুশিয়ার রাজকীয় ভাণ্ডারে ছিল তৎকালীন মুদ্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন থেলার (প্রায় আড়াই মিলিয়ন ডলার), সেখানে ১৭৪০ সালে ফ্রেডেরিকের মৃত্যুর পর সাত মিলিয়ন থেলারেরও বেশি (প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার) জমা ছিল।

রাষ্ট্রীয় অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ১৭২৩ সালে তিনি জেনারেল ফিন্যান্স ডিরেক্টরি প্রতিষ্ঠা করেন (General Finance Directory), যাদের কাজ ছিল যেকোন কাজে অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করা। তবে এখানেও ফ্রেডেরিকের ইশারা ছাড়া অনুমতি মিলত না। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হত যাদের কাজ নির্দিষ্ট করা ছিল। সব মিলিয়ে প্রুশিয়ার এমন একটি শাসন কাঠামো গড়ে উঠেছিল যা ইউরোপিয়ান পরাশক্তিগুলো তখন পর্যন্ত ভালভাবে প্রচলন করতে পারেনি। ফলে কেউ কেউ প্রুশিয়ার দেখাদেখি কিছু সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশেষ করে কর আদায়ে ফ্রেডেরিকের সাফল্য দেখে ইউরোপিয়ান অনেক রাজ্যই পরে প্রুশিয়ান ব্যবস্থার অনুকরণ করে। ফ্রেডেরিকের কঠোর শাসনে অর্থনীতি এতটাই বেগবান হয় যে এমনকি ডাক ব্যবস্থা থেকেই লাভ আসছিল, যা এর আগে কখনোই হয়নি।

ফ্রেডেরিক রাজ্যজুড়ে দুই হাজারের মতো স্কুল স্থাপন করেন। প্রুশিয়ার ভবিষ্যৎ অনেক পণ্ডিত লোকের শিক্ষার গোড়াপত্তন হয় ফ্রেডেরিকের বানানো স্কুলগুলোতে। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে রাজা নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন। তার কাছে এগুলো সময়ের অপচয় মনে হত। বিজ্ঞানী বা দার্শনিকদের তিনি অনেকটা নিচু চোখে দেখতেন। ধর্মীয় দিক থেকে তিনি ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্টদের ক্যালভিনিস্ট ধারার অনুসারী। বেশ কিছু প্রুশিয়ান স্কলারের কথা বা লেখনী তার কাছে ক্যালভিনিজম বিরোধী মনে হলে তিনি তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করে দেন।

এই সিরিজের আগের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:

১) পর্ব ১ – প্রাচীন প্রুশিয়া
২) পর্ব ২ – ব্র্যান্ডেনবার্গ-প্রুশিয়া
৩) পর্ব ৩ – ইউরোপের আকাশে কাল মেঘ
৪) পর্ব ৪ – গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স এবং স্প্যানিশ সাকসেশন ওয়ার

This is a Bengali language artile about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Abbott, J. S. C. (1882) . The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company.
  2. Frederick William I: The Soldier King (2019). 
  3. Atkinson, Emma Willsher (2018) . Memoirs of the queens of Prussia, London : W. Kent
  4. Frederick William I: Encyclopedia Britannica
  5. Dwyer, Philip G., ed. The Rise of Prussia: 1700–1830. New York, 2000.
  6. Oestreich, Gerhard. Friedrich Wilhelm I: Preussischer Absolutismus, Merkantilismus, Militarismus. Göttingen, 1977.

Featured Image ©HugodeGroot

Related Articles