Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দাস স্থাপনায় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গোপন ভ্রমণ!

১৯৩০ সালের মাঝামাঝি কোনো একটা সময়। ফেডারেল রাইটার্স প্রজেক্ট হাজার হাজার দাসের সাথে কথা বলে, তাদের সাক্ষাৎকার নেয়। আর সেই সময় সবার সামনে চলে আসে অদ্ভূত এক দাবী। দাবীটা দাস হিসেবে কাজ করা মানুষগুলোর। তারা দাবী জানায় যে, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন নিজে নানারকম ছদ্মবেশে তাদেরকে দেখতে এসেছিলেন। সত্যিটা কী? আসলেই কি এসেছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন? কথাগুলো কি সত্যি?

লিংকন এবং দাসেদের স্বাধীনতা নিতে আছে বিতর্ক; Source: Libcom

১৮৬০ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগের ঘটনা। টেক্সাসের মার্লিনের কাছে অবস্থিত একটি স্থাপনায় একজন মানুষকে দেখতে পাওয়া যায়। মানুষটির পরিচয় না পাওয়া গেলেও স্থাপনার মালিক অতিথি হিসেবে গ্রহণ করে নেন অচেনা পথিককে। খুব কাছ থেকে দাসেরা কী হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সেটা দেখেন মানুষটি। আর এই পরিশ্রমের বিনিময়ে পাওয়া চার পাউন্ডের মাংসের বিনিময়টাও চোখে পড়ে তার। ইচ্ছেমতো দাসেদের কিনে নেওয়া, বিক্রি করা, পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা- এই সবটাই খুব খেয়াল করে লক্ষ্য করেন তিনি। তবে একটা সময় চলেও যান। চলে যাওয়ার কিছুদিন পর স্থাপনার মালিকের কাছে একটি চিঠি আসে। চিঠিটি লিখেছেন সেই অতিথি। চিঠিতে লেখা আছে যে, খুব দ্রুতই এই দাসেদের মুক্ত করে দিতে হবে। আর নিজের পরিচয় সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেন তিনি চিঠিতে। লেখেন, এতদিন ধরে স্থাপনার মধ্যে যে ঘরটিতে তিনি ছিলেন, সেটার খাটের উপরে লেখা আছে তার নাম। মালিক মানুষটি ঘরে ঢুকে খাটের দিকে নজর দেন। সেখানে খোদাই করা ছিল দুটো শব্দ- এ. লিংকন।

মনে করা হয় লিংকন ছদ্মবেশে এসেছিলেন দাসেদের কাছে; Source: The Atlantic

কথাগুলো বলছিলেন বব মেইনার্ড। তার জন্ম হয়েছিল দাস হিসেবে। আর এই গল্প তিনি শুনেছিলেন সেখানেই। ১৯৩৬ সালে ফেডারেল রাইটার্স প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে দেশের কাজে লাগানোর একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর সেই সময় প্রাক্তন দাসেদের নিয়ে একটি কাজ শুরু করে তারা। তথন পর্যন্ত বেঁচে থাকা প্রায় ২,০০০ জন দাসের মৌখিক কথাগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয় কাগজে। সেই সাক্ষাৎকারে অবশ্য কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে সেসব কিছুকে পেরিয়ে কাজই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল তরুণেরা। এই মানুষগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০ জন দাবী করেন যে গৃহযুদ্ধের সময় আব্রাহাম লিংকন তাদের বসতিতে এসেছিলেন। কখনো ভিক্ষুক হয়ে, কখনো সাধারণ পথিকের বেশে তিনি এসেছিলেন আর কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করেছিলেন দাসপ্রথাকে। এটাও বলে গিয়েছিলেন যে, খুব দ্রুত তারা মুক্তি পাবে।

তবে লিংকনের এই ভ্রমণ একটা জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি কেবল দক্ষিণেই নয়, মিসিসিপি ডেল্টা, কেন্টাকি পেনিরয়্যাল, জর্জিয়া, এমনকি ১৯৮০ সালে সাউথ ক্যারোলিনার দ্বীপের বাসিন্দারা দাবী করে যে, ১৮৬৩ সালে লিঙ্কন এই দ্বীপেও এসেছিলেন। তিনি কোথায় কিংবা কীভাবে এসেছিলেন সেটা নিয়েও নানান কথা বলে তারা। এই কথাগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। লিংকন দক্ষিণে ভ্রমণ করেছিলেন কিংবা দাসেদের বলেছিলেন মুক্তির কথা- এগুলোকে অনেকে কাল্পনিক বলে দাবী করেন। তবে কাল্পনিক হলেও, এটিই দাসেরা সত্যি বলে মনে করেন। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠে আসে যে, পরবর্তীতে দাসেরা যে মুক্তি পায় সেটা কি প্রেসিডেন্ট লিংকনের এই কথাগুলোর বাস্তব রূপ হিসেবে, নাকি দাসেদের চেষ্টার বদৌলতে?

তবে লিংকন সাথে ছিলেন দাসেদের সেটা বোঝা যায় কিছুটা হলেও; Source: history.com

তবে সত্যিটা এটা যে, যেভাবেই হোক লিংকনকে সেইসময় দাসেদের দরকার ছিল। বাইরে থেকে নয়, বরং তাদের পাশে থেকে কাজ করেছেন এমন একজন হিসেবে। সে হিসেবে হয়তো এই ঘটনাগুলো শুধুই মনোবল বাড়ানোর একটি উপায় ছিল। অথবা ঘটনাগুলো সত্যি। লিংকন সত্যিই এসেছিলেন দক্ষিণে দাসেদের কাছে। তবে তিনি যদি এসেও থাকেন, সেই ঘটনাগুলো ঠিক কতটা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটাও চিন্তার বিষয়। কারণ, প্রাক্তন দাসেরা কেবল লিংকনকে নিজেদের এই গল্পে প্রবেশ করাননি, বরং নিজেরাই লিংকনকে কেন্দ্র করে বলা এই ঘটনার চরিত্র হয়ে গিয়েছেন। অনেকে অবশ্য এই ব্যাপারটাকে অনেক আফ্রিকান আমেরিকানই মেনে নিতে চান না। কারণ, এভাবে তাদের সংগ্রাম, তাদের চেষ্টা খুব অল্প আর নগণ্য হয়ে যায়। মনে হয়, তাদের স্বাধীনতা আব্রাহাম লিংকনের উপহার, এর বেশি কিছু নয়। আর সেই ভাবনা থেকেই অনেকে লিংকনের মৃত্যুর পর দাসেদের আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে বলে মনে করেন। যদিও সেটা আর হয়নি, তবে স্প্রিংফিল্ডে কালো চামড়ার মানুষদের ঘর জ্বালিয়ে, তাদেরকে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সাদা চামড়ার মানুষেরা। তাড়িয়ে দেয় লিংকনের জন্মস্থান থেকে। সাদা চামড়ার রাজনীতিবিদেরাও খুব একটা সহায় ছিলেন না এক্ষেত্রে। কালো চামড়ার মানুষ, দাসেদের নিজেদের মানুষ হিসেবে ভাবতে পারেননি তারা কখনোই। অন্য এক গল্প অনুসারে, লিংকন দাসেদের মুক্ত করার এই কাজ মোটেও তাদের উন্নয়নের কথা ভেবে করেননি। করেছিলেন তার উপরে দক্ষিণের এক সাদা চামড়ার মালিকের করা বাজে ব্যবহারের ফলাফল হিসেবে। রেগে গিয়েছিলেন তিনি দক্ষিণে বসবাসরত সাদা চামড়ার মানুষদের উপরে। তবে এতে দাসেদের কিছু যায় আসে না। ফলাফল যেটাই হোক না কেন আর আব্রাহাম লিংকন তাদের মুক্তি দিতে চান কিংবা না চান, সবাই জানতো যে, তিনি একা কিছুই করতে পারবেন না। তিনি আর যা-ই হোক, রাজা নন। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে তার দরকার পড়বে আরো অনেক মানুষ এবং প্রক্রিয়ার। সেইসাথে দরকার পড়বে দাসদেরও।

আব্রাহাম লিংকন ও দাসপ্রথা; Source: britannica.com

লিংকন দাসেদের সাথে ছিলেন তাদের মুক্তির সংগ্রামে। গোপন মিটিং, যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো, দরকারি টাকা দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজ করেছেন তিনি পর্দার আড়ালে থেকে- সেটা মানেন অনেকেই। ফলে কেবল আফ্রিকান আমেরিকানদের ইতিহাসে নয়, তাদের লোককাহিনীতেও অংশ হয়ে যান লিংকন। জন, ব্রির ইত্যাদি বিভিন্ন নামে তাকে পাওয়া যায় এই লোককাহিনীগুলোতে। যেগুলোতে এই চরিত্রটির কাছে এমন কিছু আছে যেগুলো দাসেদের কাছে ছিল না, যুদ্ধে তাদের পক্ষে সেই কাজগুলো করাও সম্ভব ছিল না। কেবল তাই নয়, আব্রাহাম লিংকন দক্ষিণের সাদা চামড়ার মালিকদের কাছে গিয়েও কথা বলেন। তাদের সাথে ছদ্মবেশে খাবার খান। জানতে চান যুদ্ধ এবং আব্রাহাম লিংকন সম্পর্কে। অবশ্যই ভালো কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি তিনি কখনোই। আব্রাহাম লিংকনের নাম নেওয়া সেসময় দক্ষিণে সাদা চামড়ার মানুষদের কাছে ছিল অসহ্য ব্যাপার। অবশ্য এই সাক্ষাৎকারগুলো সম্পর্কে খানিকটা দ্বিধা থেকে যায়।

একদিকে, যে মানুষগুলো সরকারের হয়ে কাজ করছে তাদের কাছে নেতিবাচক সাক্ষাৎকার দেওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না। অন্যদিকে, সাদা চামড়ার মানুষেরা নিজেদের বিপরীতে বলা কোনো কথা ছাপবে কিংবা একটু ঘুরিয়ে সাদা চামড়ার মানুষের মহাত্ম্য লিখবে না সেটা আশা করাটাও ছিল বোকামি। কে জানে, হয়তো সাক্ষাৎকারগুলোতে কিছু রদবদল আছে। নেতিবাচক কথাগুলো হয়তো বাদ পড়ে গিয়েছে! লিংকন যেখানে সাদা চামড়ার মানুষের উৎকৃষ্টতার প্রতীক, সেখানে তাকে ব্যবহার করাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করা হয়েছে সবখানে। মনে করা হয়, পরবর্তীতে হয়তো দক্ষিণোকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য দাসদের এই স্বাধীনতা উঠিয়ে দিতেন তিনি। তবে সেই সুযোগ হয়নি। সুযোগ হয়নি আসলেও লিংকন কেন এই কাজগুলো করেছেন, আদৌ দক্ষিণে গিয়েছেন কিনা সেটা জানার। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ থেকে কালো চামড়ার মানুষ এবং দাসদের বাদ দিতে চান অনেকে। তবে লিংকনের এই গল্পগুলোর মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের পেছনে নিজেদের অবদানকে সবসময় প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবেন এমনটাই ভাবেন আফ্রিকান আমেরিকান প্রাক্তন দাসেরা।

ফিচার ইমেজ: The Imaginative Conservative

Related Articles