প্রাচীন মিশরের আকাশে তখনও তৃতীয় রাজবংশের সূর্য উদিত হয়নি। তখনও কোনো ভবন, অট্টালিকা, সমাধি নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল ছিল মাটির তৈরি ইট, কাঠ বা নলখাগড়া। চলতি ধারার সেই শিকল ভেঙে দিয়েছিলেন তৃতীয় রাজবংশের প্রথম ফারাও জোসের। তার আমলে সাক্কারাতে নির্মিত স্টেপ-পিরামিড দুনিয়ার প্রথম ভবন, যা সম্পূর্ণভাবে পাথর দ্বারা তৈরি বলে দাবি করা হয়। এর পূর্বে প্রাচীন মিশরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহার থাকলেও তা শুধু দরজা বা মূল কবরকক্ষ তৈরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ থেকে প্রায় ৪,৭০০ বছর পূর্বে এই স্টেপ-পিরামিডের নকশা করেন প্রাচীন মিশরের স্থাপত্য প্রকৌশলী ইমহোতেপ। তিনি মিশরের ফারাওদের চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি সূর্য দেবতা 'রা' এর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। তাকে প্রাচীন পৃথিবীর অন্যতম সেরা স্থপতি, প্রকৌশলী ও চিকিৎসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জোসেরের আমলে ফারাওদের মূল সমাধিমন্দির ছিল আবিদোস নামক স্থানে। কারণ, তৎকালীন মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, আবিদোসে শায়িত আছেন দেবতা ওসাইরিস। কিন্তু প্রথম রাজবংশের রাজাদের সমাধি দাফনের ফলে আবিদোসে তেমন খালি জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। তাই, দ্বিতীয় রাজবংশের অনেকে ফারাওই সাক্কারায় নিজ সমাধি নির্মাণ করেন। এছাড়াও, সাক্কারা রাজধানী মেম্ফিসের খুব নিকটে অবস্থিত হওয়ায় ফারাও জোসের সাক্কারাকেই নিজ সমাধিস্থান হিসেবে নির্ধারণ করলেন। সম্পূর্ণ পিরামিড পাথর দ্বারা তৈরি হবে বলে এতে প্রয়োজন ছিল দক্ষ শ্রমিকশ্রেণীর। কিন্তু যেসকল শ্রমিক জোসেরের স্টেপ-পিরামিড নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিল, তাদেরকে দাস বলা যাবে না। কারণ, মিশরে তখনও দাসপ্রথা শুরু হয়নি।
স্টেপ-পিরামিডকে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা পেতে হয়েছিল। প্রথমদিকে, ইমহোতেপ একটি সাধারণ মাস্তাবা (মাটির ইট বা পাথর দিয়ে তৈরি আয়তক্ষেত্রাকার, ঢালু দেয়াল এবং সমতল ছাদবিশিষ্ট প্রাচীন মিশরীয় সমাধি) নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তখন অধিকাংশ মাস্তাবার উচ্চতা ৩০-৪০ ফুট হতো। কিন্তু ইমহোতেপ ভাবলেন, উচ্চতা আরও বাড়ানো দরকার। সেজন্য তিনি প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের সাথে মিল রেখে এক পরিকল্পনা সাজালেন- প্রথমে কবরের উপর বালির ঢিবি তৈরি করা হবে। সেটা প্রতিনিধিত্ব করবে আদিম জলরাশি থেকে উঠে আসা এক টিলার, যা মূলত সৃষ্টি এবং পুনঃসৃষ্টির এক অনুপম মিশ্রণ ঘটাবে। এরপর মাটির তৈরি ইটের মাস্তাবাকে রূপ দেওয়া হবে পাথরের টাওয়ারে। আর তখন বালির ঢিবি কাজ করবে পবিত্র সিঁড়ি হিসেবে, যে সিঁড়ি বেয়ে ফারাও মহাশূন্যের অবিনশ্বর নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে যোগ দেবেন। এভাবেই তিনি চেয়েছিলেন মিশরের প্রথম পাথরের স্থাপত্যকে ধর্মীয় ধারণার সাথে জুড়ে দিতে। প্রথমদিকের মাস্তাবাসমূহে শিলালিপি ও নলখাগড়া খোদাই করে দেওয়া হতো। ইমহোতেপও এর ব্যতিক্রম কিছু চিন্তা করলেন না। তবে তার ইচ্ছা ছিল, এই শিল্পবিদ্যা ও কারুকার্যগুলো হোক সূক্ষ্ম, স্পষ্ট।
কমপ্লেক্স প্রাচীর
পুরো পিরামিড কমপ্লেক্স যে উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল, তার উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রারম্ভিক রাজবংশ আমলের ফ্যাসাডের অনুকরণে। প্রাচীরে মোট দরজার সংখ্যা ছিল ১৪টি, যার মধ্যে ফলস ডোর ছিল ১টি। জীবিতদের জন্য একটি প্রবেশপথ বরাদ্দ ছিল। সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রারম্ভিক রাজবংশের সময়কালের সাথে মিল রেখেই, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ফলস ডোরগুলো বানানো হয়েছিল ফারাওয়ের আত্মা 'কা' এর জন্য।
পরিখা
প্রাচীরের বাইরে অবস্থিত পরিখা ছিল ২,৪৬০ ফুট লম্বা এবং ১৩০ ফুট চওড়া, যা তৎকালীন মেম্ফিস অঞ্চলের সর্ববৃহৎ পরিখা। আয়তক্ষেত্রাকার এই পরিখার অক্ষ ছিল উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। জটিল নকশা-খচিত পরিখা ও ফলস ডোরগুলো মূলত দেওয়া হয়েছিল অবাঞ্ছিত প্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে। ফলে প্রবেশকারীকে পড়তে হতো গোলকধাঁধায়। সেজন্য, কেউ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রবেশের নিয়ম বলে দেওয়া লাগত।
মূল প্রবেশপথ
মূল প্রবেশপথ থেকে ছাদসহ স্তম্ভযুক্ত ২২ ফুট উচ্চতা সম্বলিত একটি সরু পথ কমপ্লেক্সের ভেতরের দিকে চলে গিয়েছিল। সরু এই পথে স্তম্ভের সংখ্যা ছিল ২০টি, তা তৈরি করা হয়েছিল নলখাগড়ার আঁটির অনুকরণে। স্টেপ-পিরামিডের প্রকৌশলী ইমহোতেপের সন্দেহ ছিল, স্তম্ভগুলোকে কোনো কিছুর সাথে সাথে সংযুক্ত না করে আলাদাভাবে কাঠামো হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিলে হয়তো সেগুলো ছাদকে ধরে রাখতে পারবে না। সেজন্য তিনি স্তম্ভগুলোর অর্ধেক দেয়ালের সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন। সরু পথের দু'পাশে স্তম্ভগুলোর মাঝে ছোট ছোট কক্ষ বিদ্যমান ছিল। সরু পথের শেষদিকে এসে আটটি স্তম্ভ জোড়ায় জোড়ায় আড়াআড়িভাবে যুক্ত হয়ে একটি কক্ষে এসে মিলেছিল, যা ছিল দক্ষিণ চত্বরের দিকে উন্মুক্ত।
দক্ষিণ চত্বর
দক্ষিণ চত্বরের ভেতরে B আকৃতির দুটি বাঁকানো পাথরখণ্ড ছিল, যা হেব-সেদ উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত। এই চত্বরের দক্ষিণে একটি বেদীর অস্তিত্ব মেলে। ধারণা করা হয়, এটি পৃথিবীতে ফারাওয়ের সিংহাসনের বিকল্প হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে মৃত্যুর পরও মসনদে বসে তিনি দুনিয়ার সকল কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারেন।
দক্ষিণ মন্দির
দক্ষিণ চত্বরের একেবারে দক্ষিণে দক্ষিণ মন্দির ও সমাধি অবস্থিত। অভ্যন্তরীণ কাঠামোর কথা বিবেচনা করলে দক্ষিণ সমাধি পুরোটাই স্টেপ-পিরামিডের ছাঁচে তৈরি। দক্ষিণ মন্দির থেকে একটি সিঁড়িপথ পশ্চিম দিক থেকে সমাধিকক্ষের সাথে গিয়ে মিলেছে। পথটি আবার অর্ধেক নিচে নামার পর একটি আয়তক্ষেত্রাকার গ্যালারির সাথে মিশে গিয়েছে- যেখানে বিভিন্ন পাথরের ঘড়া, পাত্র, কাঠের তক্তা, কাঠের বাক্স এবং সোনার পাত দিয়ে তৈরি শামিয়ানার সন্ধান মিলেছিল। মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষেও ফলস ডোর দেয়া হয়েছিল, এবং এসবে আঁকা ছিল ফারাও জোসেরের বিভিন্ন রীতিনীতি পালনের দৃশ্য। দরজাগুলোর উপরের অংশ ও শীর্ষ ফলকে ফারাওয়ের নাম ও উপাধি খোদাই করা ছিল। মিশরতত্ত্ববিদদের ধারণা, মূল পিরামিডের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হবার পূর্বেই দক্ষিণ সমাধির কাজ সমাপ্ত হয়েছিল। সেজন্য এর নির্মাণশৈলী মূল পিরামিড থেকে অনেকাংশেই মসৃণ।
উত্তরের শবাগার মন্দির
পঞ্চম রাজবংশের সময় ফারাওরা সূর্যের মাধ্যমে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এর আগে তারা উত্তরের তারার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তাই নর্থ স্টার বা উত্তরের তারার সাথে যোগ দেওয়ার জন্যই ফারাও জোসেরের এত আয়োজন। সেজন্য উত্তর শবাগার মন্দির পিরামিডের উত্তর দিকে মুখ করা ছিল। জায়গাটি বরাদ্দ ছিল মৃত ব্যক্তির দৈনন্দিন রীতি-নীতি, উৎসর্গের অনুষ্টানাদি পালন এবং ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে। পঞ্চম রাজবংশের সময় পূর্ব দিকে মুখ করে মন্দির নির্মাণ করা হতো।
হেব-সেদ চত্বর
দক্ষিণ চত্বরের সমান্তরালে অবস্থিত একটি আয়তক্ষেত্রাকার স্থানকে বলা হয় হেব-সেদ চত্ত্বর। মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে ফারাও যাতে হেব-সেদ উৎসব আড়ম্বরে পালন করতে পারেন, সেজন্য এটি বানানো হয়েছিল। চত্বরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুই শ্রেণীর বেদির অবশিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছে, যেগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল তিনটি ভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে। উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে স্তম্ভ-বিহীন সমতল ছাদের তিনটি ভজনালয়ের অস্তিত্ব ছিল। পশ্চিম দিকের অবশিষ্ট ভজনালয় ফাঁপা স্তম্ভের অনুকরণে সাজানো হয়েছিল। প্রতিটি ভজনালয় থেকে ছাদবিহীন একটি পথ চলে গিয়েছে উপাসনার স্থানে।
of Egypt.
পশ্চিমের স্তূপীকৃত ঢিবি
পিরামিড কমপ্লেক্সের পশ্চিমের পুরোটা জুড়ে মনোমুগ্ধকর তিনটি ঢিবি অবস্থিত। আকারে ছোট এই ঢিবিগুলোকে দেখলে মনে হয়, এগুলো যেন পিরামিডের দিকে নাথা নুইয়ে আছে। তবে এর অধিকাংশ জায়গাতেই এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি। মাঝের ঢিবিটি ৩ মিটার উঁচু এবং ২৫ মিটার প্রস্থের, যেখানে বহু পানির কূপের সন্ধান মিলেছে।
পিরামিড নির্মাণের পর্যায়ক্রম
আধুনিক মিশরতত্ত্ববিদেরা স্টেপ-পিরামিড নির্মাণের পর্যায়কে মোট ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হলো- এম ১, এম ২, এম ৩, পি ১, পি ১` এবং পি ২। তিনটি মাস্তাবা এবং তিনটি পিরামিড মূলত এই জায়গাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় রাজবংশের অনুরূপ ইমহোতেপ সমাধিকক্ষের উপরে যে মাস্তাবা নির্মাণ করেছিলেন, তা ছিল বর্গাকৃতির। শুধু পার্থক্য ছিল এই- তিনি 'এম ১' মাস্তাবা নির্মাণ করেছিলেন তুরা লাইমস্টোন দিয়ে। হঠাৎ কী মনে করে তিনি এর চারপাশে আরও দশ ফুট করে আয়তন বাড়ালেন (এম ২)।
ইমহোতেপ দ্বিতীয় মাস্তাবা নির্মাণ করতে গিয়ে প্রথমটি থেকে উচ্চতা কমালেন অর্ধ মিটারের মতো। এরপর পূর্ব দিকে দৈর্ঘ্যে বাড়ানো হলো ২৫ ফুট। এভাবে বর্গক্ষেত্রের মাস্তাবা পরিণত হলো আয়তক্ষেত্রাকার মাস্তাবাতে। তবে এই পর্যায়ে উচ্চতা কিছুটা কমানো হলো। ফলে তৈরি হয়ে গেল তিন ধাপবিশিষ্ট মাস্তাবা। এরপর মাস্তাবা বর্ধনের মাধ্যমে পুরো মাস্তাবার (এম ৩) উপর ভিত্তি করে নির্মিত হলো প্রথম পিরামিড (পি ১)। ইমহোতেপ চেয়েছিলেন, এই ধাপ পিরামিডের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ফারাও জোসের অবিনশ্বর তারার সাথে যোগ দেবেন। সেজন্য পিরামিডটি মোট চারটি ধাপে বানানো হয়েছিল। মাস্তাবা নির্মাণ করা হতো আনুভূমিকভাবে। কিন্তু ধাপ পিরামিডের একেকটি ইউনিটকে স্থাপন করা হয়েছিল উল্লম্বভাবে, এবং কিছুটা ভেতরের দিকে ঝুঁকিয়ে, যাতে সেটি পুরো পিরামিডের ভার কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
অভ্যন্তরীণ কাঠামো
এই পিরামিডের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগুলো নির্মাণের সময় একের পর এক নকশায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল। ৭ মিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ২৮ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় খাদ অবস্থিত ছিল এর অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে। এই খাদ আবার যুক্ত ছিল অসংখ্য কক্ষ এবং করিডোর গোলকধাঁধার সঙ্গে। প্রাচীন সাম্রাজ্যের অন্য যেকোনো পিরামিডের চেয়ে জোসেরের ধাপ পিরামিড ছিল অধিকতর জটিল, আয়তনে বৃহৎ, ও অনন্য স্থাপত্যশৈলীর অধিকারী।
সমাধিকক্ষ
কেন্দ্রীয় খাদের নিচেই ছিল ফারাও জোসেরের মূল সমাধিকক্ষ। ফরাসি স্থাপত্যশিল্পী জ্যাঁ ফিলিপ ল'য়েরের মতে, সমাধিকক্ষের ভিত্তি ছিল ডিওরাইট দিয়ে নির্মিত। তার ধারণা, সেসময় সম্ভবত লাইমস্টোনের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছিল শুধুমাত্র সিলিংয়ে, এবং তা ছিল ফাইভ পয়েন্টেড স্টার দিয়ে সুসজ্জিত। যদি ল'য়েরের ধারণা সঠিক হয়ে থাকে, তবে জোসেরের সমাধি হচ্ছে ফাইভ পয়েন্টেড স্টার দিয়ে সুসজ্জিত ভবন, যে শিল্পকে আনুমানিক আরও কয়েকশ বছর অনুসরণ করা হয়েছিল। সমাধিকক্ষের একমাত্র প্রবেশপথটি নির্মাণ করা হয়েছিল ছাদের উত্তর দিকে। এই প্রবেশপথের মাধ্যমে রাজকীয় মৃতদেহ কক্ষে নিয়ে আসার পর এটি সাড়ে তিন টন গ্রানাইট পাথর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সমাধিকক্ষে যেসব জিনিসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, তার মধ্যে কিছু মমিকৃত দেহাবশেষ এবং একটি পা উল্লেখযোগ্য। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, এটি ফারাও জোসেরের দেহাবশেষ। কিন্তু কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে, দেহাবশেষগুলোর বয়স জোসেরের চেয়েও কয়েকশ বছরের পুরনো।
অন্যান্য ভূগর্ভস্থ কাঠামো
জোসেরের স্টেপ-পিরামিডের ভূগর্ভে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের করিডোর এবং সুরঙ্গ গোলকধাঁধা বিদ্যমান। এই জায়গাজুড়েই বিস্তৃত মূল সমাধিকক্ষ, রাজকীয় সদস্যদের সমাধিকক্ষ, সমাধি সামগ্রীর সংরক্ষণাগার। কেন্দ্রীয় খাদ ছাড়াও অন্য ১১টি খাদ বিভিন্ন গ্যালারির সাথে যুক্ত ছিল। ৬ষ্ঠ ও ৭ম খাদে প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো বিভিন্ন আকৃতির পাথরের পাত্রের সন্ধান মিলেছিল। পাত্রগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের বিভিন্ন ফারাও এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় সদস্যদের নাম উল্লেখ ছিল। যেমন- নারমার, জের, ডেন, সেমারখেত, আজিব, কা, হেটারপেখেমউয়ি, নিনেতজার, সেখেমিব, খাসেখেমউয়ির প্রমুখ ফারাওয়ের নাম। এত হাজার পাত্র কেন জোসেরের সমাধিতে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভিন্ন মত চালু আছে। ল'য়ের বিশ্বাস করেন, এগুলো ছিল দ্বিতীয় রাজবংশের শেষ ফারাও খাসেখেমউয়ি দ্বারা সংরক্ষিত। পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ফারাও জোসের এই পাত্রগুলো ধাপ পিরামিডে জড়ো করেছিলেন। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে, ডাকাতদলকে সমাধিস্থানে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পাত্রগুলো খাদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এত জটিল ও সূক্ষ্ম নকশা দ্বারা স্টেপ-পিরামিড তৈরি করা হলেও সুখ সয়নি ফারাও জোসেরের কপালে। সমাধির সামগ্রী, এমনকি তার মমিকৃত দেহটুকুও ডাকাতেরা লুট করে নিয়ে যায়।
স্টেপ-পিরামিড এবং এর কমপ্লেক্সের চমৎকার নির্মাণশৈলী খুবই আকৃষ্ট ও সন্তুষ্ট করেছিল ফারাও জোসেরকে। তিনি এই পিরামিড নিয়ে খুবই গর্বিত ছিলেন। সেজন্য এর স্থপতি ইমহোতেপকেও তিনি দিয়েছিলেন অনন্য সম্মান। পূর্বের সকল প্রথা ভেঙে জোসের তার নিজের একটি স্তম্ভে ইমহোতেপের নামও খোদাই করে দিয়েছিলেন। প্রাচীন পৃথিবীতে তৈরি হওয়া স্টেপ-পিরামিড আজও স্থাপত্যবিদদের কাছে এক রহস্যের নাম, যা অনুসরণ করে পরবর্তীকালে মিশরীয় স্থপতিরা বহু স্থাপত্য নির্মাণ করেন।
1. Step Pyramid of Djoser: Egypt's First Pyramid - Live Science.
2. The Step Pyramid of Djoser at Saqqara - World History Encyclopedia.
3. The Step Pyramid Complex of Djoser - Ministry of Tourism and Antiquities of Egypt.
4. Step Pyramid of Djoser : Ancient Egypt's First Monumental Pyramid - ThoughtCo.
5. Old Kingdom Monuments - Egyptian Museum.
6. The Djoser Pyramid In Egypt: 10 Facts on The First Pyramid - The Collector.
7. Imhotep - World History Encyclopedia.
8. Imhotep: A Sage between Fiction and Reality - American Resarch Center in Egypt.
10. মিশরীয় মিথলজি - আদি থেকে অন্ত, এস এম নিয়াজ মাওলা, জাগৃতি প্রকাশনী, ২০২১।