Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাজবেক হুদালভ: সোভিয়েত সেনা কর্মকর্তা থেকে আফগান মুজাহিদিনের নেতা

আফগান যুদ্ধ (১৯৭৯–৮৯) চলাকালে ১৯৮৫ সালের প্রথমদিকে মধ‍্য আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে অবস্থিত বাগরাম জেলায় মোতায়েনকৃত সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যরা নতুন একধরনের বিপদের সম্মুখীন হয়। বাগরাম জেলার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েনকৃত ছোট ছোট সোভিয়েত ও আফগান ফাঁড়িগুলোতে একদল সোভিয়েত সৈন‍্য চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে শুরু করে। এই সৈন‍্যরা ফাঁড়িগুলোর কাছাকাছি এসে নিজেদেরকে সোভিয়েত বা আফগান সৈন‍্যদের মিত্র হিসেবে পরিচয় দেয় এবং এরপর অসতর্ক সৈন‍্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে।

এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর অঞ্চলটিতে মোতায়েনকৃত সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যদের মধ‍্যে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতেই আফগান মিলিট‍্যান্টদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের পরিণতি ভালোর দিকে যাচ্ছিল না। এর মধ্যে সোভিয়েত সৈন‍্যরা কেন নিজেদের ইউনিটের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন‍্য সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির কিছু কর্মকর্তাকে উক্ত অঞ্চলটিতে প্রেরণ করা হয়।

আফগানিস্তানে চলমান একটি সোভিয়েত ট‍্যাঙ্কবহর; Source: Getty Images

কেজিবি কর্মকর্তারা আফগান গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেএইচএডি’কেও এই তদন্তে জড়িত করে নেয়, কারণ আফগান মিলিট‍্যান্টদের মধ‍্যে তাদের অনেক গুপ্তচর ছিল। কেজিবি এবং কেএইচএডি তাদের এই গুপ্তচরদের মাধ‍্যমে জানতে পারে যে, যে ‘সোভিয়েত’ সৈন‍্যদলটি বাগরামে সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, সেটি আসলেই সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যদের নিয়ে গঠিত। আর এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোভিয়েত সেনাবাহিনীর সিনিয়র লেফটেন্যান্ট কাজবেক হুদালভ!

সোভিয়েত সেনাবাহিনীর একজন কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঠিক কী কারণে নিজের দেশের সৈন‍্যদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করছিলেন? সেটি জানার জন্য হুদালভের ব‍্যক্তিগত পরিচিতি জানাটা জরুরি।

সোভিয়েত সেনাবাহিনীর সিনিয়র লেফটেন্যান্ট কাজবেক হুদালভের অফিসিয়াল ছবি; Source: Yandex Zen

হুদালভের পূর্ণ নাম কাজবেক আখতেমিরোভিচ হুদালভ (Казбек Ахтемирович Худалов)। তিনি ১৯৬১ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের রুশ যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত উত্তর ওসেতীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের আলাগিরস্কি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানটি বর্তমান রুশ ফেডারেশনের উত্তর ওসেতিয়া–আলানিয়া প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত। তার পরিবারটি ছিল জাতিগতভাবে ওসেতীয় এবং ধর্মগতভাবে মুসলিম। উল্লেখ্য, ওসেতীয় জাতির অধিকাংশ সদস‍্যই অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্মের অনুসারী।

তার পিতা আখতেমির হুদালভ উত্তর ওসেতিয়ার রাজধানী ওর্দঝোনিকিদজে শহরে চাকরি করতেন এবং সেই সুবাদে হুদালভ ওর্দঝোনিকিদজেতেই বেড়ে ওঠেন। ১৯৯০ সালে ওর্দঝোনিকিদজে শহরটির নাম পরিবর্তন করে এর সোভিয়েত–পূর্ব নাম ভ্লাদিকাভকাজ ফিরিয়ে আনা হয়।

হুদালভকে তার নিকটাত্মীয়রা বর্ণনা করেছেন ‘খুবই হাসিখুশি ও দয়ালু’ একজন মানুষ হিসেবে। ১৯৭৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৮ বছর বয়সে হুদালভ সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি প্রথমে ওর্দঝোনিকিদজে শহরে অবস্থিত কমান্ড স্কুলে এবং পরবর্তীতে তৎকালীন সোভিয়েত কাজাখ প্রজাতন্ত্রের রাজধানী আলমা–আতা (বর্তমান আলমাতি) শহরের সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

হুদালভকে আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশের বাগরামে মোতায়েন করা হয়েছিল এবং এই অঞ্চলেই তিনি সোভিয়েতদের ওপর আক্রমণ চালাতেন; Source: World Map

১৯৮৩ সালের আগস্টে হুদালভকে আফগানিস্তানে প্রেরণ করা হয়। সেসময় তিনি ছিলেন একজন সিনিয়র লেফটেন্যান্ট। মধ‍্য আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে একটি সোভিয়েত ইউনিটে তাকে মোতায়েন করা হয়।

আফগান যুদ্ধ ছিল একটি অপ্রচলিত (unconventional) যুদ্ধ। প্রচলিত যুদ্ধে দুইটি নিয়মিত সন‍্যবাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু আফগানিস্তানে যা হচ্ছিল তা ছিল ক্লাসিক গেরিলা যুদ্ধ। সোভিয়েত সশস্ত্রবাহিনী এবং আফগান সশস্ত্রবাহিনী যুদ্ধ করছিল কমিউনিস্টবিরোধী বিভিন্ন মিলিট‍্যান্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে, যারা গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালাচ্ছিল এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম যাদেরকে ‘মুজাহিদিন’ হিসেবে অভিহিত করত। আফগান জনসাধারণের মধ‍্যে থেকে এই গেরিলাদের খুঁজে বের করা ছিল অপ্রচলিত যুদ্ধে অনভিজ্ঞ সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যদের জন্য প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। ফলে যা হয়, তা হলো নির্বিচার বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ এবং এর ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষের মৃত‍্যু।

১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশে হেজব–এ ইসলামি গ্রুপের হাতে বন্দি দুই সোভিয়েত সৈন‍্য। পশ্চিমা সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, তারা ইসলাম গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় মিলিট‍্যান্টরা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল; Source: AFP vis The Atlantic

আফগান যুদ্ধে ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ বেসামরিক মানুষ নিহত হয় এবং আরো প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ইরানে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই ভয়াবহ সহিংসতা সোভিয়েত সৈন‍্যদের অনেকের মধ‍্যেই বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করে, যদিও তাদের মধ‍্যে সিংহভাগই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখে এবং দায়িত্ব পালন করতে থাকে। আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা সর্বমোট ৬ লক্ষ সোভিয়েত সৈন‍্যের মধ‍্য থেকে দলত‍্যাগ করেছিল মাত্র ৬৪ জন।

হুদালভ ছিলেন এই ব‍্যতিক্রমদের মধ‍্যে একজন। ১৯৮৩ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে তিনি আফগান জনসাধারণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণ সহিংসতা প্রত‍্যক্ষ করেন এবং একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন, সোভিয়েতরা (এবং তাদের মিত্র আফগানরা) আফগানিস্তানে যেটা করছে সেটা অন‍্যায়। সুতরাং, তিনি আর এর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না।

একটি ভূপাতিত সোভিয়েত এমআই–৮ হেলিকপ্টারের ওপরে উঠে আফগান মিলিট‍্যান্টরা বিজয়োল্লাস করছে। আফগান যুদ্ধ সোভিয়েতদের জন‍্য সুখকর ছিল না; Source: AP Photo

১৯৮৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হুদালভের ইউনিটের একজন সৈনিক নিখোঁজ হয়। তাকে খুঁজে বের করার জন‍্য হুদালভ সোভিয়েত ঘাঁটি থেকে বের হন। তিনি আর কখনো সেখানে ফিরে আসেননি। সেসময় ঘাঁটির বাইরে একাকী চলাচল করা সোভিয়েত সৈন‍্যদের জন‍্য মোটেই নিরাপদ ছিল না, এবং হুদালভ ফিরে না আসায় তার ইউনিটের সদস‍্যরা ধরে নেয় যে, হুদালভ আফগান মিলিট‍্যান্টদের হাতে বন্দি হয়েছেন। সোভিয়েত সেনাবাহিনীর কাগজপত্রে হুদালভকে ‘যুদ্ধবন্দি’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

হুদালভ সোভিয়েত সেনাবাহিনী থেকে দলত‍্যাগ করে স্থানীয় একটি মিলিট‍্যান্ট গ্রুপে যোগদান করেন। সোভিয়েত সেনাবাহিনীর খুব কম সংখ্যক কর্মকর্তাই আফগান মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে যোগদান করেছিলেন, এজন্য হুদালভের দলত‍্যাগ ছিল আফগান মিলিট‍্যান্ট ও তাদের সমর্থক পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর জন্য বড় একটি প্রচারণামূলক বিজয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথমদিকে তারা এই তথ‍্যটি গোপন রাখে, কারণ হুদালভের পরিকল্পনা ছিল অন‍্য রকম।

আফগান যুদ্ধ চলাকালে খুব কম সময়ই মিলিট‍্যান্টরা সোভিয়েত সৈন‍্যদের বড় কোনো ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাত, কারণ এই ঘাঁটিগুলোর প্রতিরক্ষা ব‍্যবস্থা ছিল অত‍্যন্ত শক্তিশালী। মিলিট‍্যান্টরা মূলত আক্রমণ করত ছোট ছোট সোভিয়েত ইউনিটগুলোর ওপর এবং পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী সোভিয়েত কনভয়গুলোর ওপর। আফগান যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত সৈন‍্যরা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ছোট ছোট ফাঁড়ি (outpost) স্থাপন করেছিল। এই ফাঁড়িগুলোর ওপর মিলিট‍্যান্টরা প্রায়ই আক্রমণ চালাত, কিন্তু আফগান যুদ্ধের পুরো সময়ে এরকম একটি ফাঁড়িও মিলিট‍্যান্টরা দখল করতে পারেনি, কারণ সোভিয়েত সৈন‍্যদের ছিল উন্নততর অস্ত্রশস্ত্র ও উচ্চমানের প্রশিক্ষণ।

আফগান যোদ্ধার বেশে প্রাক্তন সোভিয়েত সেনা কর্মকর্তা কাজবেক হুদালভ; Source: Yandex Zen

হুদালভ পারওয়ান প্রদেশে এই ছোট ছোট ফাঁড়িগুলো আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। আফগান সেনাবাহিনী থেকে দলত‍্যাগকারী প্রায় এক ডজন আফগান তাজিক সৈন‍্যকে নিয়ে তিনি ছোট্ট গতিশীল একটি মিলিট‍্যান্ট ইউনিট গঠন করেন। এই ইউনিটের সদস‍্যরা সোভিয়েত সেনাবাহিনীর উর্দি পরিধান করত এবং সোভিয়েত সৈন‍্য সেজে বিভিন্ন সোভিয়েত ও আফগান সেনা ফাঁড়িতে আক্রমণ করত। আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সোভিয়েত সৈন‍্যদলে বহুসংখ্যক তাজিক সৈন‍্য ছিল, যারা আফগান তাজিকদের সঙ্গে নৃতাত্ত্বিক ও ভাষাগতভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, এজন্য এই গেরিলাদের দেখে কেউ সন্দেহ করত না।

এই পদ্ধতিতে হুদালভ ও তার ‘সোভিয়েত’ সৈন‍্যরা ১৯৮৫ সালের প্রথমদিকে বাগরাম অঞ্চলের বিভিন্ন ফাঁড়ি আক্রমণ করে সোভিয়েত ও আফগান সৈন‍্যদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। অবশেষে কেজিবির তদন্তের ফলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ হুদালভকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং তার ছবি আফগানিস্তানে নিযুক্ত সোভিয়েত সৈন‍্যদের মধ‍্যে প্রচার করে, যাতে হুদালভের গ্রুপ আর তাদেরকে বিভ্রান্ত করে আক্রমণ করতে না পারে।

হুদালভের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র সংবাদ পশ্চিমা গণমাধ্যম লুফে নেয়, কারণ এসময় আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনাবাহিনী থেকে দলত‍্যাগী সৈন‍্যদেরকে নিয়ে ব‍্যাপক প্রচারণা চালানো ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মার্কিন ও অন‍্যান‍্য পশ্চিমা রাষ্ট্রের চালানো তথ‍্যযুদ্ধ (information war) এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের (psychological warfare) অংশ। স্বভাবতই হুদালভের কৃতিত্বকে পশ্চিমা গণমাধ্যম ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে। তারা দাবি করে যে, হুদালভের সঙ্গে আরো ১২ জন সোভিয়েত তাজিক সৈন‍্য আফগান মিলিট‍্যান্টদের সঙ্গে যোগদান করেছে!

রুশ সাংবাদিক আর্তিওম বোরোভিকের লেখা ‘দ‍্য হিডেন ওয়ার’ বইটিতে হুদালভের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে; Source: Goodreads

কিন্তু এই দাবিটি সত‍্য ছিল না। MIA (Missing in Action) Advocacy Group–এর তথ‍্যমতে, আফগান যুদ্ধে মোট ২৭০ জন সোভিয়েত সৈন‍্য নিখোঁজ হয়, যাদের মধ‍্যে মাত্র ৪ জন ছিল জাতিগত তাজিক। কাজেই হুদালভের সঙ্গে ১২ জন সোভিয়েত তাজিক সৈন‍্য দলত‍্যাগ করেছিল এই দাবিটি মিথ‍্যা এবং এই দাবি করার উদ্দেশ‍্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা বোঝানো যে, সোভিয়েত মুসলিমদের সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য নেই।

কিন্তু এই দাবিটি সত‍্যি বা মিথ‍্যা যা-ই হোক না কেন, হুদালভ সোভিয়েত সৈন‍্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো অব্যাহত রাখেন। কিন্তু সোভিয়েতরা তার কৌশল সম্পর্কে জেনে যাওয়ায় তার আক্রমণের কার্যকারিতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। তারপরও ১৯৮৮ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন‍্য প্রত‍্যাহার শুরু করে, তখনও হুদালভের গ্রুপটি বাগরাম অঞ্চলে সক্রিয় ছিল এবং সোভিয়েত সৈন‍্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।

১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সোভিয়েত সৈন্য আফগানিস্তান ত‍্যাগ করে এবং এর মাত্র দুই বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটে। কিন্তু তখনও আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকার টিকে ছিল এবং সেখানকার গৃহযুদ্ধ পুরোদমে চলছিল। হুদালভের গ্রুপটি আফগান সৈন‍্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। এসময় হুদালভ একজন পশ্চিমা সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারটিতে তিনি জানান, কাবুল থেকে কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।

১৯৯২ সালের এপ্রিলে কাবুলের কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং কাবুল দখল নিয়ে আফগান মিলিট‍্যান্টদের মধ‍্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই গৃহযুদ্ধে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ ছিল বুরহানউদ্দিন রাব্বানী ও আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বাধীন জামিয়াত–এ ইসলামি এবং গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ারের নেতৃত্বাধীন হেজব–এ ইসলামি দল। হুদালভও এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

হেজব–এ ইসলামি দলের নেতা এবং আফগানিস্তানের এককালীন প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ার হুদালভকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন; Source: Anadolu Agency

এর পরবর্তীতে হুদালভের কী পরিণতি হয়েছিল সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। যতদূর জানা যায়, কোনো কারণে হেকমাতিয়ার হুদালভের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর হুদালভকে মুক্তি প্রদান করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

যতদূর জানা যায়, হুদালভ এখনও জীবিত আছেন এবং আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন। প্রখ‍্যাত রুশ সাংবাদিক আর্তিওম বোরোভিকের আফগান যুদ্ধ নিয়ে লিখিত বই ‘দ‍্য হিডেন ওয়ার’ (The Hidden War) এ হুদালভের ঘটনার বিবরণ রয়েছে। বিভিন্ন রুশ সূত্রমতে, আফগান যুদ্ধ এবং ‘আফগানৎসি’ (Афганцы) বা আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সোভিয়েত সৈন‍্যদের সম্পর্কে আগ্রহী কিছু রুশ সম্প্রতি হুদালভকে নিয়ে একটি প্রামাণ‍্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

Related Articles