বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা গত রাতে জার্মানির ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে হজম করে বসলো ২ হালি গোল। এরই ফলশ্রুতিতে আজ চারদিকে উঠেছে "সেভেন আপ, সেভেন আপ" রব, যা সর্বশেষ উঠেছিল ২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের সময়। সেবার সেমিফাইনালে জার্মানি গুণে গুণে ৭ বার বল ঢুকিয়েছিল ব্রাজিলের জালে।
কিন্তু এই যে সেভেন আপের ব্যাপারে এত কথাবার্তা, আপনি কি জানেন ঠিক কীভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সেভেন আপের? আসুন, সেভেন আপের অজানা ইতিহাসই আজকের লেখার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া যাক আপনাদের।
চার্লস লীপার গ্রিগ; ১৮৬৮ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যে জন্ম তার। প্রাপ্তবয়স্ক হলে সেইন্ট লুইসে চলে যান তিনি, কাজ শুরু করেন অ্যাডভারটাইজিং এবং সেলস সেক্টরে। সেসময়ই কোমল পানীয়ের সাথে পরিচয় হয় গ্রিগের।
১৯১৯ সালে ভেস জোন্সের মালিকানাধীন এক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন গ্রিগ। সেখানে থাকাকালেই জোন্সের এক ফার্মের জন্য গ্রিগ উদ্ভাবন করেন অরেঞ্জ ফ্লেভারের এক কোমল পানীয়, নাম হুইসেল; বাজারজাতও করা হয় সেটা। যা-ই হোক, শেষপর্যন্ত ম্যানেজমেন্টের সাথে ঝামেলা হওয়ায় সেখান থেকে চলে আসেন গ্রিগ, রেখে আসেন হুইসেলও।
এরপর তিনি যোগ দেন ওয়ার্নার জেকিনসন কোম্পানিতে। সেখানেও কোমল পানীয়ের ফ্লেভার নিয়ে কাজ করতে থাকেন। এখানে কাজ করার সময়ই গ্রিগের হাত ধরে আসে দ্বিতীয় কোমল পানীয় হাউডি। পরবর্তীতে ওয়ার্নার জেকিনসন ছেড়ে আসার সময় আর আগেরবারের ভুলটা করেননি তিনি, সাথে নিয়ে আসেন হাউডির সকল স্বত্বও।
গ্রিগ বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার মাধ্যমে কোমল পানীয়ের শিল্পে বড় কিছু ঘটানো সম্ভব। তাই তো এবার একজন অর্থ লগ্নিকারী খুঁজে নিলেন তিনি, নাম এডমুন্ড জি. রিজওয়ে। ততদিনে তিনি দুটো অরেঞ্জ ফ্লেভারের কোমল পানীয় নিয়ে আসলেও মার্কেট জায়ান্ট অরেঞ্জ ক্রাশের সামনে ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তাই এদিকে আর মন না দিয়ে গ্রিগ এরপর মাতলেন লেমন-লাইম সোডা নিয়ে।
১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে অবশেষে সফলতার মুখ দেখলেন গ্রিগ, উদ্ভাবন করলেন এক নতুন কোমল পানীয়ের ফর্মুলার, যার নাম দিলেন 'বিব-লেবেল লিথিয়েটেড লেমন-লাইম সোডাজ'। অল্প কিছুদিন পরেই এই নাম পাল্টে ওটা হয়ে গেল 'সেভেন আপ লিথিয়েটেড লেমন সোডা'। অবশেষে ১৯৩৬ সালে এটা হলো কেবলই 'সেভেন আপ'।
সেভেন আপের একেবারে মূল ফর্মুলার একটি উপাদান ছিল লিথিয়াম সাইট্রেট। সেসময় ম্যানিক ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো এই উপাদানটি। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোমল পানীয়তে এই উপাদানের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে আলাদা হয়ে যায় সেভেন আপ ও লিথিয়াম সাইট্রেটের চলার পতটি। ক্যালসিয়াম ডাইসোডিয়াম ইডিটিএ এর উপাদানের তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ২০০৬ সালে। ওদিকে সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে সোডিয়াম সাইট্রেটের বদলে যোগ করা হয় পটাসিয়াম সাইট্রেট।
এখন প্রশ্ন হলো, সেভেন আপকে কেন এই নাম দেয়া হলো? বিশেষত্ব কী এই নামের? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গ্রিগ কোনোদিনই খোলাসা করে বলেননি এই ব্যাপারে। ফলে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু তত্ত্ব আছে, কিন্তু সেসবের মাঝে কোনটিকে আপনি বেছে নেবেন তা একান্তই আপনার ব্যাপার!
১) সেভেন আপের মূল ফর্মুলায় ছিল ৭টি উপাদান: চিনি, কার্বোনেটেড ওয়াটার, লেমন ও লাইম অয়েলের নির্যাস, সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট, এবং লিথিয়াম সাইট্রেট।
২) ৭-আউন্সের বোতলে করে শুরুতে বিক্রি হতো এই কোমল পানীয়টি।
৩) অত্যধিক নেশার ফলে সৃষ্ট সাত ধরনের হ্যাংওভার কাটাতে সাহায্য করবে সেভেন আপ- এমনটাই একবার দাবি করেছিলেন গ্রিগ। ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট স্নোপসের পক্ষ থেকে এই দাবিটিকে সত্য বলে সাব্যস্ত করা হলেও তারা সেই সাথে জানিয়ে রেখেছে, গ্রিগ কথাটি সিরিয়াসলি বলেননি, কেবল মজা করার জন্যই এটা বলেছিলেন তিনি।
৪) সেভেন আপের মূল ফর্মুলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লিথিয়ামের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাটমিক ওয়েইট ৭ এর কাছাকাছি বিধায় এই নামটি বেছে নেন গ্রিগ!
৫) কোমল পানীয়টির পিএইচ লেভেল ৭ এর অধিক বিধায় এর এমন নামকরণ বলেও দাবি করেন কেউ কেউ, যার ফলে এর এমন নামকরণ। তবে যারা এমনটি মনে করেন, তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখা ভাল- এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা, কেননা এর পিএইচ লেভেল ৩.৭৯ এর কাছাকাছি।
৬) একবার একদল গবাদি পশুর গায়ে সনাক্তকরণের জন্য একধরনের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন গ্রিগ, যা ছিল অনেকটাই ‘7up’ কথাটির মতো। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই নামটি নিজের কোমল পানীয়ের জন্য বেছে নেন বলে দাবি করেন কেউ কেউ।
এখানে তো ৬টি তত্ত্বের ব্যাপারে আলোচনা করা হলো, ইন্টারনেটে ঘুরলে এমনই আরও বেশ কিছু তত্ত্বই চোখে পড়বে আপনার। ফলে এসবের মাঝে থেকে কোনোটি বেছে নেবেন, নাকি পছন্দের পানীয় হলে এতসব না ভেবে আগের মতোই গিলতে থাকবেন তা নাহয় আপনার উপরই ছেড়ে দেয়া যাক!
১৯৪০ সালে একাত্তর বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন গ্রিগ। তিনি চলে গেলেও রয়ে গেছে তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করা সেভেন আপ, যা হাল আমলে ফুটবলপ্রেমীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্রাজিল ফুটবল দল আর বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের কল্যাণে; কারও সুখ-স্বপ্নে, কারও বা দুঃস্বপ্নে!
This is a Bengali article discussing the history of soft drink 7 Up.
Reference:
1. Origins of the 7Up Soft Drink Name