Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যান্টিকিথেরার গোলকধাঁধা: এক অজানা ইতিহাসের সন্ধানে

আজ থেকে প্রায় ১১৭ বছর আগের ঘটনা। প্রচন্ড ঝড় বইছে এজিয়ান সমুদ্রপথে। তখন এ পথ দিয়েই ঝড়ের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে একটি জাহাজ। জাহাজের কাপ্তান একজন গ্রীক, নাম তার দিমিত্রিয়স।

অদম্য সাহসিকতার জন্য তার খ্যাতি আছে। জাহাজে কয়েকজন ক্রু, হাতেগোনা কয়েকদল স্পঞ্জডাইভার(যেসব ডুবুরী স্পঞ্জ প্রজাতির প্রাণী সংগ্রহ করেন)বাদে তেমন কেউ নেই। কাপ্তান গম্ভীরভাবে পায়চারি করছেন ডেকের মধ্যে। তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ঝুলি হাতড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টায় চোখ-মুখ কুঁচকে আছে। ঠিক তখনই একজন নাবিক “কাপ্তান! কাপ্তান!” বলে হাঁক দেয়াতে তার মনযোগে ব্যাঘাত ঘটলো।

তিনি ছুটে চলে গেলেন চিৎকারের দিক অনুসরণ করে। সেখানেই তরুণ নাবিক আরাগিনুস জল আর বাতাসের ঝাপটার মাঝে ভিজে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে টেলিস্কোপ হাতে। কাপ্তান তার পাশে এসে দাঁড়াতেই দূরে একটুকরো মাটির দিকে আঙুল তুলে ইশারা করলো সে। কাপ্তান সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন।

দূরেই একটা দ্বীপ দেখা যাচ্ছে। তার চিনতে ভুল হলো না। দ্বীপটিকে তিনি ভালো করেই চেনেন।সিনিয়র নাবিককে কাছে ডেকে জানালেন,“আজ রাত্রের মতো তাদের যাত্রাবিরতি। বিরতিস্থল সামনের সেই দ্বীপটা।

সিনিয়র নাবিক রুদলফ সামনে তাকালেন। তার চোখের সামনের দ্বীপটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে এসেছে। দ্বীপটাকে চিনতে ভুল হলোনা তারও। “অ্যান্টিকিথেরা আইল্যান্ড!”, অস্ফুট শব্দে বিড়বিড় করে উঠলেন তিনি।

অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপ। সূত্রঃ Wikimedia Commons

অ্যান্টিকিথেরার ডুবন্ত জাহাজ

ঠিক ১৯০০ সালের সেই রাত্রে ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটা আশ্রয় নেয় সেই দ্বীপটির মাঝে। অপেক্ষায় রাত পার করে সবাই। ভোরের দিকে যখন পূর্ব আকাশে সূর্য প্রথম উঁকি দিল, ঠিক তখন ঝড় হঠাৎ করেই থেমে গেল। কিন্তু জাহাজের কাপ্তান ঠিক তখনই যাত্রা শুরু করেননি। দ্বীপটি স্পঞ্জ নামক সামুদ্রিক প্রাণীর খনি হিসেবে পরিচিত। তাই ভোরের দিকেই ডুবুরী স্তাদিতিস নেমে পড়ে সাগরজলে। ৪৫ মিটারের মতো গভীরে যাওয়ার পর এক জায়গায় সে স্তুপের মতো কিছু একটা দেখতে পায়। তখনই সে ফেরত চলে আসে উপরে। এসে কাপ্তানকে তার দেখা স্তুপের কথা খুলে বলে। কাপ্তান নিজেও একথা শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠেন।

তিনি নিজে আরো কয়েকজনকে নিয়ে নেমে পড়েন সাগরে। মিনিটখানেক পর তারা ফিরে আসে। সাথে নিয়ে আসে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি রোমান মূর্তি। যেটাকে তারা স্তুপ ভেবেছিল, সেটা আসলে ডুবে যাওয়া এক জাহাজ।

অ্যান্টিকিথেরার সেই ডুবন্ত জাহাজ। সূত্রঃ jomarchant.com

ব্যস! স্পঞ্জের সন্ধানে গিয়ে এভাবেই তারা খুঁজে পায় অতিপ্রাচীন একটি জাহাজ। জাহাজের বয়সের ব্যাপারে ‘সম্প্রতি’ শব্দটা ব্যবহার করলে শুধু ভুল হবে না, অপরাধ হবে। এরকম জাহাজ দিমিত্রিয়সের বাপ-দাদা তো দূরের কথা, পরদাদার জন্মেও ব্যবহৃত হতো না।

কাপ্তান গ্রীসে ফেরত যান। সেখানে হেলেনার নৌবাহিনীকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন তিনি। নৌবাহিনী তাদের একটি ইউনিট নিয়ে তড়িৎগতিতে সেখানে পৌঁছে যায়।

ঘটনা এখনো তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি। জাহাজ থেকে মূল্যবান অনেক পুরাকীর্তি মিললো ঠিকই। অনুসন্ধান চললো ২ বছর ধরে।

যা যা মিললো, সব সরকারি তত্ত্বাবধানে জাদুঘরে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। সেদিন ছিল মে মাসের ১৭ তারিখ, ১৯০২ সাল।

গ্রীক পুরাতত্ত্ববিদ ভালেরস স্তাইস হঠাৎ করে এবড়োথেবড়ো একটি পাথর হাতে নিয়ে দেখার সময় অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বিস্মিত হয়ে গেলেন লক্ষ্য করেন যে, পাথরের মধ্যে একটি গোল মাঝারি আকারের গিয়ার গেঁথে আছে। স্তাইস যন্ত্রপাতি সম্পর্কে হালকা পাতলা ধারণা রাখতেন। কিন্তু তিনি গিয়ারটা দেখে ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না সেটা কিসের অংশ। তিনি পাথরটা আলাদা করে রেখে দিলেন। এরপর সেই পাথরটা নিয়ে আরো কিছুদিন গবেষণা শেষে তিনি বুঝতে পারলেন এটা খুবই জটিল একটি যন্ত্রের অংশ এবং এই যন্ত্রের রহস্য উদঘাটন তার একার পক্ষে সম্ভব না। তিনি সেটাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরলেন একটি সেমিনারের মাধ্যমে।

অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র। সূত্রঃ age-of-sage.org

মুহূর্তের মধ্যে সেটা বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীদের মাঝে আলোড়ন তৈরি করে ফেললো। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন হালকা পাতলা গড়নের যন্ত্রটা খুবই পাতলা। সেটা মোটে ১৭ সে.মি. এর মতো চওড়া। কিন্তু হঠাৎ করেই সব বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী এই ১৭ সেন্টিমিটারের রহস্যের ফাঁদে পড়ে দিশেহারা হয়ে গেলেন। কেউ এরকম কলকব্জার কিছু আগে কখনো দেখেনি। এর নামও কেউ বলতে পারলেন না। তবে মুখে মুখে একে সবাই দ্বীপের নামানুসারে অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র নামেই ডাকা শুরু করলো।

অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র

১৯০০ সালের এক বেসাইজ পাথরটুকু ১০০ বছর পরেও আছে বিস্ময়ের কেন্দ্র হয়ে। সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানীদের দল মিলে একসাথে কাজ করেও এ রহস্যের একফোঁটা সমাধানও করতে পারেনি দীর্ঘ ৭৫ বছর। তবে পৃথিবীর বুকে যখন কম্পিউটার নামক যন্ত্রের বিপ্লব সবে শুরু হয়েছে, তখন ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা ডেরেক প্রাইস এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কম্পিউটার হিসেবে দাবি করেন। প্রাইসের লেখা প্রবন্ধ সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকার সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই যন্ত্রের অনুসন্ধানকে ইতিহাসের সেরা অনুসন্ধানের মধ্যে অন্যতম ধরা হয়।

এই যন্ত্র নিয়ে এতো ধীর প্রগতির অন্যতম কারণ ধরা হয় প্রযুক্তির অভাবকে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এমন কোনো প্রযুক্তি মানুষের কাছে ছিল না যা দিয়ে এই যন্ত্রকে পুনরায় রূপ দিয়ে এর রহস্যগুলো বের করে আনা যাবে।

তবে প্রথম থেকেই মানুষের মনের একটি প্রশ্নের জবাব বিজ্ঞানীরা ঠিকই দিতে পেরেছেন। সেটি হচ্ছে ‘কবে এবং কারা’ এই যন্ত্র আবিষ্কার করেছিল।

ডেইলি টেলিগ্রাফে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক এডমান্ডস বলেন, প্রথমদিকে তাদের গবেষণায় মনে হচ্ছিল যন্ত্রটি ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়ে তৈরি করা হয়েছে। এরপর সম্প্রতি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা গেছে সেটি ১৫০ খ্রিস্টপূর্বে তৈরি করা হয়। আর জাহাজটি আনুমানিক ৬০ খ্রিস্টপূর্বে নিমজ্জিত হয়।

এই যন্ত্র কারা তৈরি করেছিল সেই প্রশ্নের জবাবে মোটামুটি সবাই একে গ্রীক সভ্যতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পুরাতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার জোনেস এর ভিতরের কলকব্জা এর নিরীক্ষণ শেষে ঘোষণা দেন এর প্রস্তুতকারক সম্ভবত রোডস দ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন।

ভাবা যায়? খ্রিস্টপূর্বকালীন সেই সামান্য বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত কোনো কারিগর এই অসামান্য জটিল কম্পিউটার তৈরি করে গেছেন! সেটা বের করতে আধুনিক বিজ্ঞানীদের শতবর্ষ ঘাম ঝরাতে হয়েছে।

গবেষণার অগ্রগতি

১৯৭০ এর দিকে তৎকালীন প্রযুক্তিবিদরা যন্ত্রটি পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তারা এক্স-রে ইমেজিংয়ের মাধ্যমে এর একটি নমুনা নকশা তৈরি করেন। এর মাধ্যমে ১৯৯০ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত হন যে এর মাধ্যমে সূর্য, চন্দ্র এবং তৎকালীন আবিষ্কৃত পাঁচ গ্রহের গতিবিধি বিস্মিত করার মতো নিখুঁতভাবে হিসেব করা যেত

উদ্ধারকৃত যন্ত্রটির ৮২টি টুকরো। এক অপার রহস্য নিয়ে সংরক্ষিত আছে জাদুঘরের কক্ষে। সূত্রঃ antikythera-mechanism.gr

তখন বিজ্ঞানী দানিকেন হঠাৎ করে দাবি করে বসেন এই যন্ত্র পৃথিবীর তৈরি করা নয়। সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। কেন? কোন যুক্তিতে?

তখন তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে এই যন্ত্র ব্যবহারকারীরা জানতো যে সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য! অথচ এই যন্ত্রের জন্মের আরো দেড় হাজার বছর পরে কোপার্নিকাস প্রথম সূর্যভিত্তিক সৌরজগতের ধারণা পেশ করেন।

আবার সরগরম হয়ে গেল বিজ্ঞানী মহল। তখন আবারো বোমা ফাটালো আরেকদল বিজ্ঞানী। তারা ২০০৬ এর দিকে যন্ত্রটির সিটিস্ক্যান ফলাফল প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে যন্ত্রটি সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি অনেক তথ্য বেরিয়ে আসলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যন্ত্রের গায়ে গ্রীক ভাষায় লেখা একটি প্রাচীন ম্যানুয়ালও আবিষ্কৃত হলো যেটা ক্লান্ত হয়ে পড়া বিজ্ঞানীদের নতুন করে কাজে লাগিয়ে দিল।

দানিকেনের তত্ত্ব এখনই উড়িয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত নয়। এ নিয়ে সত্য-মিথ্যা জানতে হলে এর সম্পর্কে সবকিছু জানা প্রয়োজন। সবাই ম্যানুয়ালের পাঠোদ্ধারে লেগে গেল।

২০০৬ এর শেষের দিকেই গ্রীক ইতিহাসবিদ আর ভাষাবিদরা ঘোষণা করলেন তারা প্রায় ৯৫ ভাগ লেখার পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে গ্রীকদের বাহবা দিতেই হয়। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তারা ২০০০ বছর পুরাতন গ্রীক ভাষায় লেখা জটিল লিপির পাঠোদ্ধার করে ফেলেন অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে। এবার তারা ক্লান্ত হয়ে অগ্রগতির ব্যাটন বিজ্ঞানীদের হাতে সঁপে দিয়ে নাটকের শেষটুকু আগ্রহ ভরে দেখছেন।

বিজ্ঞানীরা প্রথমেই ম্যানুয়াল থেকে হিসাব-নিকাশ করে পরিপূর্ণ একটা ডিজাইন করে ফেলেন পুরো যন্ত্রটার।

অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্রের চূড়ান্ত নকশা। এর উপর ভিত্তি করেই যন্ত্রটির রেপ্লিকা তৈরি করা হয়।সূত্রঃ antikythera-mechanism.gr

এরপর কাজের ভার গিয়ে পড়লো প্রকৌশলীদের উপর। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গড়ে উঠতে থাকলো অ্যান্টিকিথেরার সেই গোলকধাঁধার রেপ্লিকা।২০০৭ সালে রেপ্লিকা তৈরির কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করলেন নির্মাতা দলের প্রধান মাসিমো মোগি ভিসেন্টি।অপার বিস্ময়ে এর চারপাশে জড়ো হয়ে দাঁড়ালেন বড় বড় বিজ্ঞানীরা। ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কম্পিউটারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই।চারদিক থেকে অস্ফুট শব্দে ভেসে আসছে, “বিউটিফুল!

২০০৭ সালে তৈরিকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেপ্লিকা। সূত্রঃ mentalfloss.com

এবং যা যা জানতে পারলাম

রেপ্লিকা তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি রহস্যভেদের নেশায় উন্মত্ত হয়ে পড়া গবেষকরা। তারা আরো সতর্কতার সাথে ম্যানুয়ালের পাঠ আর রেপ্লিকা একসাথে নিয়ে এর রহস্যভেদের কাজে লেগে পড়লেন। কিছু কিছু তথ্য আগে থেকেই অনুমান করা ছিল। সেগুলোর কিছু ভুল আর কিছু সঠিক প্রমাণিত হয়। এবং এর সাথে আরো রোমাঞ্চকর তথ্য বেরিয়ে আসে। যার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরছিঃ

  • যন্ত্রটি দেখতে একটি ছোটখাট ঘড়ির মতো। এর মাঝে অসংখ্য ডায়াল এবং কাঁটা বিদ্যমান। ডায়ালগুলো চন্দ্র, সূর্য এবং পাঁচটি গ্রহকে নির্দেশ করে। এছাড়াও এর মাঝে আরো কয়েকটি সংখ্যাখচিত ব্লক আছে, যা দ্বারা আরো জটিল হিসাব করা যেত অনায়াসেই।
  • এর মাধ্যমে চন্দ্র-সূর্যের গতিবিধি, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ সঠিকভাবে হিসাব করা যেতো।
  • যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং সমীকরণ হিসাব করতেও সক্ষম এই যন্ত্র।
  • প্রাচীন অলিম্পিকের ক্যালেন্ডার এবং বড় বড় উৎসবের দিনক্ষণ হিসাবে অবিশ্বাস্য নিখুঁত এই যন্ত্র। এটি দ্বারা ঋতুর হিসাব-নিকাশও করা যায় বলে দাবি করেন গ্রিক বিজ্ঞানীরা।
  • তৈরি হবার সময় থেকে পরবর্তী ৫০০ বছর পর্যন্ত গ্রহের গতিবিধি ৯৫% নির্ভুলতার সাথে নির্দেশ করতে সক্ষম এই যন্ত্র।
  • জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, মিশরীয় ক্যালেন্ডার, সথিক এবং কালিপিয় চক্র নির্ণয়ে এটি নির্ভুল।
  • ২০১৬ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা এর মাধ্যমে ভাগ্যগণনা করা যায় বলে নতুন তথ্য প্রদান করেন।

গবেষণা শেষ হয়ে যায়নি, এখনও চলছে। এমনকি এখনও গবেষণার স্বার্থে অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপে অনুসন্ধান চালান ডুবুরীরা। এরকম আরো দুই-তিনটি অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্রের সম্ভাবনা হেসে উড়িয়ে দেয়া যায়না কোনোমতেই। জ্ঞানপিপাসুরাও মাঝে মাঝে ঢুঁ মেরে আসেন অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র নিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটে। সেখানে ক্রমান্বয়ে এই গবেষণার অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করে রাখছেন গবেষকদল।

২০১৭ সালে অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র অনুসন্ধানের ১১৫ বছর উপলক্ষে গুগল এর ডুডল। সূত্রঃদ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ

এটি এক অদ্ভুতুড়ে যন্ত্র যেটি ‘সবচেয়ে প্রাচীন এনালগ কম্পিউটার’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে, একাই প্রাচীন যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের পুরো ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছে। এধরণের জটিল যান্ত্রিক কলকব্জা, যা তার যুগের থেকেও হাজার বছর এগিয়ে ছিল, তা আমাদের জানা ইতিহাস আর বাস্তবতার মাঝে একটি বড় ব্ল্যাকহোলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

আবার দানিকেনের প্রস্তাবনার কথাও হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ। যদি সূর্যভিত্তিক সৌরজগতের খবর মানুষ আগেই জানতো, তাহলে মধ্যযুগে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, ব্রুনোর নাটকের কারণ কী? কিভাবে হঠাৎ করেই অ্যান্টিকিথেরার দক্ষ বিজ্ঞান হারিয়ে গিয়ে ফের জন্ম দিল মধ্যযুগীয় অজ্ঞতার? নাকি আসলেই এই যন্ত্র মহাজাগতিক অন্যকোনো অদেখা প্রাণীর মনের ভুলে এই ছোট্ট গ্রহে হারিয়ে ফেলা খেলনা!

ফিচার ইমেজঃ corpau.blogspot.com

Related Articles