Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রুম নম্বর ১০৪৬: অমীমাংসিত এক হত্যারহস্যের আঁতুড়ঘর

কানসাস শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেল প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৫ সালের ২ জানুয়ারি দুপুর ১টা বেজে ২০ মিনিটে সেখানে প্রবেশ করেন একাকী এক ব্যক্তি। একটি চিরুনি এবং টুথব্রাশ ছাড়া তার কাছে আর কোনো বাক্স-পেটরা নেই। রিসেপশনিস্টকে বললেন উপরের তলায় সুন্দর করে সাজানো গোছানো একটি রুম লাগবে তার। চাহিদা মোতাবেক তাকে দেয়া হলো হোটেলের দশম তলার ১০৪৬ নম্বর রুমটি। কে জানত শেষ পর্যন্ত এই রুমটিই হবে তার জন্য প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াবে?

হোটেলের রেজিস্ট্রেশন খাতায় রোল্যান্ড টি. ওয়েন নামে স্বাক্ষর করতে করতে বেলবয়ের কাছে নালিশ জানান, পাশের হোটেলের ভাড়া এত বেশি কেন? সবার সাথে টুকটাক কথা বলে, চাবি নিয়ে সোজা চলে যান ১০৪৬ নম্বর কক্ষে। এরপর যতদিন হোটেলে ছিলেন, একটানা কেউ তাকে বেশিদিন রুমে থাকতে দেখেননি। সবসময় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা ওয়েনের আচার-আচরণ হোটেল প্রেসিডেন্টের কর্মচারীদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। তবুও বিষয়টি তারা খুব বেশি পাত্তা দেয়নি। কেননা অন্য শহর থেকে আগত ব্যবসায়ীরা প্রায়শই এই হোটেলে উঠত, কাজের চাপে তারাও হোটেলে বেশিক্ষণ থাকার সুযোগ পেত না। কোনো সঙ্গী নিয়ে হয়তবা রাতটুকু কাটাতে হোটেলে হাজির হতো তারা। ওয়েনকেও তেমনই একজন ব্যবসায়ী ধরে নিয়ে মাথা ঘামায়নি কর্মচারীরা। তাছাড়া অতিথিদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কর্মচারীরা যত কম নাক গলাবে, উভয় পক্ষের তাতে তত মঙ্গল হবে- এটাই ছিল হোটেল প্রেসিডেন্টের অলিখিত নিয়ম।

কল্পনাকে হার মানিয়ে দেয়া এক হত্যারহস্য; Source: whaleoil.co.nz

কর্মচারীরা আসলে কিছু ভাবতও না, যদি না ছয় দিনের মাথায় পুরো হোটেলকে রক্তের সাগরে ভাসিয়ে খুন না হতেন ওয়েন। তারা যখন পুলিশকে পুরো হত্যাকাণ্ডের কথা জানাচ্ছিল, তখন পুলিশের কাছে তার মৃত্যুর চেয়ে অস্বাভাবিক ব্যবহার বেশি গুরুত্ব পায়। যেকোনো একটি সূত্র ধরে তো পুলিশকে রহস্যের সমাধান করতে হবে। পুলিশ তাই কর্মচারীদের বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানতে চেয়েছে ওয়েনের ব্যবহার কতটা অদ্ভুত ছিল।

জানুয়ারির ৩ তারিখে, অর্থাৎ ওয়েনে হোটেলে ওঠার ঠিক একদিন পরে, হোটেলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ম্যারি সপ্টিক তার ঘর পরিস্কার করতে যায়। দুপুর তখন প্রায় ১২টা বাজে, হোটেলের বেশিরভাগ বাসিন্দা ততক্ষণে যার যার কাজে বেরিয়ে গেছে। ওয়েনের ঘরে পৌঁছে সপ্টিক আবিষ্কার করল, ঘরটা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। দরজার কড়া নাড়ল সে, দরজা খুললেন ওয়েন নিজে। সপ্টিককে সে কিছুতেই ঘরে ঢুকতে দিতে চায় না। অনেক অনুরোধের পর কিছুক্ষণ পরে আবার আসার কথা বলে তখনকার মতো বিদায় নেয় বেচারি। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে এসেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। কোনোমতে জোরপূর্বক ঘরের ভেতরে উঁকি দিয়ে অন্ধকারে ঢেকে থাকা ঘর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না সপ্টিকের। সারা ঘরে আলো বলতে কেবল টেবিলের উপরে জ্বলতে থাকা ডিম লাইটের একটি টেবিল ল্যাম্প আছে।

পুলিশকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে এই হত্যাকাণ্ড! Source: whaleoil.co.nz

ভেতরে ঢুকে পড়ে সপ্টিক। ঘর পরিস্কার করার সময় ওয়েন তাকে জানায় কিছুক্ষণের মধ্যে এক বন্ধু তার সাথে দেখা করতে আসবে, সপ্টিক যেন চলে যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ না করে। মেনে নেয় সে, ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ওয়েন। প্রায় চার ঘণ্টা পর, পরিস্কার তোয়ালে হাতে আবার ১০৪৬ নম্বর ঘরে ফিরে আসে সপ্টিক। দুপুরে যেভাবে সে দরজা খুলে রেখে গিয়েছিল, তখনো ঠিক তেমনি করে খুলে রাখা হয়েছে দরজাটা। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে স্টিলের তৈরি খাটের উপরে বাইরের পোশাকে সজ্জিত ঘুমন্ত ওয়েনকে দেখতে পায় সে। বিছানার পাশের টেবিলের উপরে রাখা আছে একটি নোট, যাতে লেখা- ‘ডন, পনের মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছি আমি। অপেক্ষা কর।’

পরদিন সকালেও, অর্থাৎ জানুয়ারির ৪ তারিখে, রুম নম্বর ১০৪৬ এর সাথে অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা হয় সপ্টিকের। সকাল ১০.৩০ এর দিকে, বিছানা ঠিক করতে গিয়ে ওয়েনের ঘরে বাইরে থেকে তালা দেখতে পেল সপ্টিক। ওয়েন ঘরে নেই মনে করে হোটেলের মাস্টার চাবি দিয়ে ঘর খোলে সে। বিস্ময়ে হতবাক সপ্টিক আবিস্কার করে, ওয়েন ঘরের ভেতরেই বসে আছে! কোণার দিকের এক চেয়ারে, অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে আছে যেন।

চুপচাপ নিজের কাজ শুরু করে সপ্টিক, মনের মধ্যে খুঁতখুঁত করলেও মুখ ফুটে কিছু বলে না সে। সে ঘরে থাকতেই ফোন বেজে ওঠে একবার। ওয়েন ফোনের এ প্রান্ত থেকে জানায়, “না ডন, আমি কিছু খাব না। ক্ষুধা লাগেনি। সকালে নাস্তা করেছি, এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না”। এক মুহূর্তের নীরবতার পরে আবারও একই উত্তর দেয় সে, “না, কিছু খাব না আমি।”

হতভাগ্য রোল্যান্ড টি. ওয়েন; Source: all-that-is-interesting.com

ফোন রেখে দিয়ে সপ্টিককে তার চাকরি সম্পর্কে, হোটেল সম্পর্কে নানা কথা জিজ্ঞেস করে ওয়েন। বলতে গেলে প্রথমবারের মতো সপ্টিকের সাথে কথা হয় তার। সে কয়টি ঘরের দায়িত্বে আছে, এই হোটেলে কী ধরনের লোক আসে এবং আবারও পাশের হোটেলের ভাড়া এত বেশি কেন- এ জাতীয় বেশ কিছু প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলে দুজনের মধ্যে। চটজলদি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, ঘর পরিস্কার করে, ওয়েনকে একা রেখে চলে আসে সপ্টিক। ঘর থেকে বের হয়েই সে বুঝতে পারে, যেহেতু ওয়েনের ঘরে বাইরে থেকে তালা দেয়া ছিল, তার মানে কেউ তাকে এই ঘরে আটকে রেখে বাইরে চলে গেছে! ওয়েনকে কি তবে বন্দী করে রাখা হয়েছে?

সেদিন বিকালে আবার পরিস্কার তোয়ালে হাতে ১০৪৬ এ ফিরে আসে সপ্টিক। ব্যবহৃত তোয়ালেগুলো সকালেই সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। এবার ঘরের দরজার কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে দুটো পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে। একটি ওয়েনের কণ্ঠ, চিনতে পারে সপ্টিক। আরেকটি কণ্ঠ একেবারেই অপরিচিত। তোয়ালে নিয়ে এসেছে জানাতেই ভেতর থেকে ভারী একটি কণ্ঠ জানায়, তাদের আর তোয়ালে লাগবে না। অনেক তোয়ালে আছে ঘরে। সপ্টিক খুব ভালো করেই জানে, ঐ ঘরে আর একটি তোয়ালেও নেই। তবুও কারো ব্যক্তিগত আলাপে ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ সেখান থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটি। মাথায় ঘুরতে থাকে বেশ কিছু প্রশ্ন, কে এই দ্বিতীয় লোকটি? হোটেলের কেউ তাকে দেখেছে বা ১০৪৬ এ আর কেউ উঠেছে বলে তো শোনেনি সে।

সেই একই বিকালে আরও দুজন অতিথির দেখা পায় হোটেল প্রেসিডেন্ট। রুম নম্বর ১০৪৬ এর অমীমাংসিত রহস্যের সাথে গাঢ় সম্পর্ক রয়েছে এ দুজনের। প্রথমজনের নাম জিন ওয়েন। পদবী এক দেখে মনে করার কোনো কারণ নেই রোল্যান্ডের সাথে তার আত্মীয়তা আছে, ব্যাপারটি নিছকই কাকতালীয়। ছেলেবন্ধুর সাথে দেখা করতে কানসাস শহরে এসে, অত রাতে আর বাড়ি ফিরে না গিয়ে হোটেলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। রোল্যান্ডের ঠিক পাশের অর্থাৎ ১০৪৮ নম্বর ঘরটির চাবি দেয়া হয় তাকে।

এই সেই হোটেল প্রেসিডেন্ট; Source: all-that-is-interesting.com

হত্যাকাণ্ডের আগের রাতের ব্যাপারে পুলিশকে সে জানায় নতুন কিছু তথ্য, ঘরটি থেকে নাকি বারবার তোলপাড়ের আওয়াজ আসছিল। “সে রাতে খুব গণ্ডগোলের শব্দ শুনছিলাম আমি। মনে হচ্ছিল আমার একদম কাছেই কোথাও ধ্বস্তাধস্তি হচ্ছে খুব। একটি লোক এবং একটি মহিলা চিৎকার করে ঝগড়া আর গালিগালাজ করছিল”, বক্তব্যে জানায় জিন। “একবার ভাবছিলাম রিসেপশনে ফোন করে অভিযোগ করব, পরে ভাবলাম পারিবারিক কোনো সমস্যা হবে হয়তো, কিছুক্ষণ পরে থেমে যাবে। তাই আর ফোন করিনি।”

হোটেলের বাকি অতিথিরা তেমন কিছু শুনতে পাননি। বেলবয় জানায়, মেয়ে কণ্ঠটি হয়তবা কোনো নিশিকন্যার হবে, রাতে অতিথিদের মনোরঞ্জন করতে এই হোটেলে প্রায়ই এমন একটি মেয়ে আসে। জানুয়ারির ৪ তারিখ বিকালেও ১০২৬ নম্বর কক্ষের এক পুরুষ অতিথির খোঁজে আসে সে। বেশ কিছুক্ষণ খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে না পেয়ে প্রায় ঘণ্টাখানি পরে হোটেল ছেড়ে চলে যায় সে। হোটেলের কর্মচারীরা সবাই দেখেছে তাকে। হয়তো পরে কোনো এক ফাঁকে ফিরে এসেছিল সে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, পরে আর হোটেলে ফিরে যায়নি সে। সে রাতে মেয়ে কণ্ঠটি কার ছিল তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

পরদিন সকালে টেলিফোন অপারেটরের পক্ষ থেকে রিসেপশনিস্টের কাছে একটি ফোন আসে। ১০৪৬ নম্বর ফোনটির রিসিভার নাকি প্রায় দশ মিনিট ধরে উঠিয়ে রাখা হয়েছে, এর আগে কোনো ফোনকল আসেনি ঐ নম্বরে। এক বেলবয় আসল কাহিনী জানার জন্য ওয়েনের ঘরে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ লেখা একটি বোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও দরজায় নক করে বেলবয়। ওয়েন তাকে ভেতরে আসতে বলে। দরজায় তালা দেয়া, জানায় বেলবয়। ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে না। আরও একবার কড়া নাড়ে ছেলেটা। এবারও কোনো উত্তর না পেয়ে চিৎকার করে ফোনটা জায়গামতো রেখে দেয়ার অনুরোধ জানায় সে। তার মনে হয়েছিল অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ওয়েন বোধহয় হুঁশ হারিয়ে ফেলেছে।

মামলার প্রধান দুই তদন্তকারী ফ্রেড গ্রিন এবং ফ্র্যাঙ্ক হ্ল্যান্ড; Source: all-that-is-interesting.com

যা-ই হোক, প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে আবারও ফোন করে একই অভিযোগ করে টেলিফোন অপারেটর। এবার মাস্টার কী ব্যবহার করে সোজা ওয়েনের ঘরে ঢুকে পড়ে ছেলেটা। বিছানায় নগ্ন হয়ে পড়ে থাকা ওয়েনকে দেখে মদ্যপানের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হয় সে। তাকে আর না ঘাঁটিয়ে ফোনের রিসিভার ঠিক জায়গায় রেখে আগের মতো দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে আসে। ম্যানেজারের কাছে ওয়েনের কথা জানায় বেলবয়। অবাক করা ব্যাপার হলো, প্রায় এক ঘণ্টা পর আবার ফোন করে একই অভিযোগ জানায় টেলিফোন অপারেটর। টেলিফোনের রিসিভার উঠিয়ে রেখেছে ওয়েন, কিন্তু কথা বলছে না কারো সাথে।

এবার দরজা খুলে রক্তের সাগরে পা রাখে বেলবয়। ঘরের এক কোণায় দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে ওয়েনের শরীর। ছুরির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত শরীর থেকে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে যেন। দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাখা অবস্থাতেই মারা গেছে সে। বিছানার চাদর, তোয়ালে, দেয়াল সবকিছুতে লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।

সাথে সাথে পুলিশকে ফোন করে বেলবয়। পুলিশ এসে ওয়েনকে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা আবিষ্কার করে ওয়েনের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার হাত, পা, গলায় দড়ির দাগ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বারংবার। ফুসফুসে ঘুষি মারার এবং মাথার খুলি ফাটিয়ে দেয়ার নমুনাও খুঁজে পায় তারা। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোল্যান্ড টি. ওয়েনকে মৃত ঘোষণা করে।

আর কখনোই জানা যাবে না কী ঘটেছিল ওয়েনের ভাগ্যে; Source: coolinterestingstuff.com

তদন্তকারীরা ১০৪৬ কক্ষটি তদন্ত করতে এলে আরও বেশ কিছু অবাক করা ব্যাপার চোখে পড়ে তাদের। সারা ঘর খুঁজে একটি কাপড় খুঁজে পাওয়া যায়নি। হোটেল থেকে সরবরাহ করা সাবান আর টুথপেস্টও যেন বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। হত্যায় ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দারা কেবল টেলিফোন রিসিভারে ছোট ছোট চার আঙুলের ছাপ পেয়েছেন, তবে সে আঙুলের মালিককে কখনই সনাক্ত করা যায়নি। আরও মজার ব্যাপার হলো, রোল্যান্ড টি. ওয়েন নামের কোনো ব্যক্তিই আদতে ছিল না! যুক্তরাষ্ট্র বা তার আশেপাশে এই নামের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি পুলিশ। হোটেলে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী তদন্ত চালিয়ে জানা যায়, রোল্যান্ড একটি ভুয়া পরিচয় নিয়ে হোটেল প্রেসিডেন্টে উঠেছিল।

এর কিছুদিনের মধ্যে পাশের যে হোটেলটি নিয়ে বারবার অভিযোগ জানাচ্ছিল ওয়েন, সেই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায় ওয়েনের চেহারার বর্ণনার সাথে হুবহু মিল থাকা এক ব্যক্তি জানুয়ারির ১ তারিখে তাদের হোটেলে উঠেছিল। সেখানে অবশ্য সে ইউগেন কে. স্কট ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিল। আবারও তদন্ত চালিয়ে ব্যর্থ হয় পুলিশ, এই নামেও কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। পরবর্তী এক মাসে, বেশ কিছু মানুষ এসে মৃতদেহটি তাদের প্রিয়জনের বলে দাবি করে। তবে যথার্থ কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় তাদের দাবি ধোপে টেকেনি। প্রায় এক মাস অপেক্ষা করে মৃতদেহটি দাফন করার উদ্যোগ নেয় পুলিশ। ততদিনে বেশ শীতল হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রেশ। ছোট একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান করে পুলিশ। অকস্মাৎ সেখানে এক তোড়া ফুল পাঠায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ফুলের সাথে একটি চিঠিতে লেখা ছিল- ‘নিরন্তর ভালোবাসা- লুসিলি’। কে এই লুসিলি কেউ তা জানে না।

পত্রিকার পাতায় ওয়েন হত্যারহস্য; Source: historicmysteries.com

প্রায় এক বছর পর, ওগ্লেট্রি নামক এক বৃদ্ধা দাবি করে ওয়েন/স্কট ছিল তার ছেলে, যে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। তিনি জানান, তার ছেলের নাম আর্টেমিস ওগ্লেট্রি। কানসাস শহরে গিয়েই নিখোঁজ হয়েছে তার পুত্র। যদিও তার এই কথার খুব বেশি প্রমাণ নেই, তবুও পুলিশ তার কথা মেনে নিয়ে মামলার ইতি টেনে দেয়। ধামাচাপা দিয়ে শেষ করা সেই মামলাটির এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর দীর্ঘদিন পর্যন্ত ১০৪৬ নম্বর রুমটি খালি পড়ে ছিল। ১০৪৬ এর এই অমীমাংসিত রহস্যের সমাধান হবে, তেমন কোনো আশাও এখন আর নেই। ইতিহাসে এখন কেবলই একটি দীর্ঘশ্বাসের নাম ‘১০৪৬’।

ফিচার ইমেজ- whaleoil.co.nz

Related Articles