Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অতীতের জীবন ব্যবস্থার অবিশ্বাস্য যত ঘটনা

এখন আমাদের চারদিকে উদ্ভট জিনিসের যে অভাব নেই তা নয়, তবে আগেকার দিনের তুলনায় আজকের দিনের এসব জিনিস কতটা উদ্ভট ছিলো সে বিষয়ে হয়তবা একেকজনের মতামত একেকরকম হবে। আগেকার দিনের তেমনই কিছু উদ্ভট জীবনাচরণ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

কোকেন দিয়ে চিকিৎসা

প্রায় একশত বছর আগে কোকেনের ব্যবহার ক্ষতিকর- এ কথা মানা হতো না। বরং এটি সহজেই যেকোনো ঔষধের দোকানে পাওয়া যেত এবং সেখানে চিকিৎসকের কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ক্রেতাদের নিকট মাথা ও দাঁত ব্যথার ঔষধ হিসেবে বিক্রি করা হতো। দাঁত ব্যথার নিরাময়ক হিসাবে কোকেনের ড্রপ জাদুকরী ভূূূমিকা পালন করতো। কারণ কোকেন অবশীকারক হিসেবে কাজ করে। এটি দাঁত ব্যথা মুহূর্তের মধ্যেই কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করতো। শুধু তা-ই নয়, চিকিৎসকেরা শিশুদের ঘুমের ঔষধ হিসেবে কোকেন খাওয়ানোর পরামর্শ দিতেন। এমনকি সে সময়ে অন্যান্য পণ্যের মতো কোকেন নিয়েও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো। নিচের ছবিটি ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনী প্রচারণার ছবি। তবে দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে অনেকেই কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়তে শুরু করে।

এখন এমন হওয়াটা কি আদৌ সম্ভব? Source: commons.wikimedia.org

ডাকযোগে শিশুদের বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ

১৯১৩ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে পোস্টাল সার্ভিস যেকোনো জিনিস ডাকযোগে আদান-প্রদানের ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থা চালু করার কিছুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের দম্পতি জেস ও মাথিলডা বেগেল তাদের আট মাস বয়সী ছেলেকে ডাকযোগে বাতাভিয়াতে তার দাদীর কাছে পাঠিয়ে দেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য অভিভাবকেরাও তাদের সন্তানদের ডাকযোগে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো শুরু করেন দূরদূরান্তে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। আর এই শিশুদের কপালে বা মাথায় সরকারি স্ট্যাম্প বসিয়ে পার্সেল করা হতো নির্দিষ্ট ঠিকানায়, যার খরচ ছিলো ১৫ সেন্ট!

এভাবেই ডাকযোগে একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাঠানো হতো শিশুদের; Source: Smithsonian Magazine

বাচ্চাদের খাঁচা

১৯৩০ সালের দিকে ব্রিটিশ পরিবারগুলোর ঘর-বাড়িতে তার দিয়ে বাঁধানো এ ধরনের খাঁচা আকৃতির বস্তুটি দেখা যেতো। এই জিনিসটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো বলা চলে। মায়েরা ঘরের কাজকর্মে যখন ব্যস্ত থাকতো, তখন ছোট বাচ্চারা এই খাঁচার ন্যায় বস্তুটিতে এসে মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা করতো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, খাঁচার মতো দেখতে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এই বস্তুগুলোকে সে সময়ে নিরাপদ ভাবা হতো। মূলত কী ভেবে তখনকার অভিভাবকেরা এরকম ঝুঁকিপূর্ণ জিনিসকে তাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করতেন, তা আসলেই ভাবিয়ে তোলে!

দেখে আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা! Source: vintag.es

নিজস্ব বাগান বা বাগানের অধিকারী

আগেকার দিনের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বিস্ময়কর ঝোঁকের কমতি ছিলো না। আঠারো শতকের দিকে নিজেদের বাগানের জন্য ব্যক্তিগত বনবাসী বা নির্জনবাসী রাখার প্রথা বেশ জনপ্রিয় ছিলো। সেই ব্যক্তিগত বনবাসীদের চুল ও নখ কাটা, এমনকি পরিচ্ছন্ন রাখাও নিষিদ্ধ ছিলো। তারা সেই বাগানের ভেতর নিজেদের হাতে তৈরি গুহায় বসবাস করতো। আর সেই বনবাসীদের মালিকেরা তাদের অতিথিদের সামনে তাদেরকে প্রদর্শন করে গর্ববোধ করতেন এবং সমাজে নিজেদের একটি সম্মানজনক অবস্থান প্রমাণ করতেন।

ধনাঢ্য ব্যক্তির বাগানে নিজস্ব এক বনবাসী; Source: Taiko TV

সন্দেহজনক চিকিৎসা পদ্ধতি

চিকিৎসাবিজ্ঞান যখন ততটা উন্নত হয়ে ওঠেনি, তখন যেকোনো ধরনের ইনফেকশনজনিত রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যেমন- যেকোনো অসুখ-বিসুখ প্রতিকারের জন্য শিরা কেটে রক্ত ক্ষরণ, তোতলামির সমস্যা সমাধানের জন্য জিহ্বা কেটে ফেলা, বিভিন্ন সমস্যার জন্য বৈদ্যুতিক শক দেয়া ইত্যাদি। তখন অনেক অভিজ্ঞ এবং সফল চিকিৎসকও (যেমন অর্থোপেডিক সার্জন লেউইস সায়রে) এ ধরনের মারাত্মক ও প্রাণঘাতী অপারেশন করতেন।

তেজস্ক্রিয় খেলনা

১৯৫০ সালের দিকে তেজস্ক্রিয়তাকে তেমন একটা ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হতো না, বরং বেশ নিরাপদই মনে করা হতো। ছবিতে মিনি ল্যাবরেটরির মতো এ ধরনের পারমাণবিক খেলানাগুলো সে সময়ে ছিলো অনেক জনপ্রিয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তৈরি ছোট সেটের এই খেলনাগুলোতে থাকতো স্বল্প পরিমাণে ইউরেনিয়াম ও পলোনিয়াম।

এমন বিপজ্জনক খেলনা দেয়া হতো বাচ্চাদের হাতে; Source: Pinterest

মানুষের চিড়িয়াখানা

নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে বিষয়টি? কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এমন আশ্চর্যজনক চিড়িয়াখানা বাস্তবেই ছিলো বটে! বর্তমানে আমরা চিড়িয়াখানা বলতে বুঝি পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর প্রদর্শনীর জায়গা বিশেষ। তবে তখনকার এই চিড়িয়াখানার বিষয়বস্তু যেন চিড়িয়াখানার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিলো।

ডারউইনের তত্ত্বের প্রমাণ হিসাবে এশীয় এবং আফ্রিকার মানুষজনকে দেখানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিলো এই চিড়িয়াখানা। এ ধরনের অপমান ও লজ্জাজনক বিনোদন ব্যবস্থার প্রতি তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিলো এবং এটি বর্ণবাদ হিসেবেও ছিল ঘৃণিত। তবুও বহু শতাব্দী ধরে এটি চালু ছিলো। মানুষের এই চিড়িয়াখানাকে জাতিবিদ্যা সংক্রান্ত প্রদর্শনীয়ও বলা হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৫৮ সালের সেই মানব চিড়িয়াখানায় আফ্রিকার এক শিশুকে দেখার জন্য (যাকে বেড়া দেয়া এক বন্ধনীর ভেতর আটকে রাখা হয়েছে) ইউরোপের মানুষজন ভিড় করেছে। দর্শকদের অনুভূতি দেখে মনে হচ্ছে যে, তারা আশ্চর্যজনক কোনোকিছু দেখে আপ্লুত হয়ে আছেন।

এ যেন ছিলো মানবতার প্রতি চরম অবমাননা; Image Source: dzr.org.ro

মানসিক হাসপাতালে বিনোদনমূলক ভ্রমণ

আগে মানসিক হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিলো অনেক ভয়ঙ্কর। হাসপাতাল কর্মীরা রোগীদের ঠিকমতো খাবার দিতো না, যদিও রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের থাকা খাওয়ার খরচ দিতেন। তবে সেই পরিমাণ অর্থ মানসিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। আর সেজন্যই কর্তৃপক্ষ একরকম অদ্ভুত ব্যবস্থা চালু করে। তারা ছোটখাট এক ধরনের ব্যবসা চালু করে। কিছু পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে লোকজন মানসিক হাসপাতালে এসে রোগীদের দেখতে পারত, এমনকি তারা লাঠি দিয়ে রোগীদের খোঁচাও দিত!

মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র নাকি বিনোদনের জায়গা! Source: GIGGAG

শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ

মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি আজকের দিনে কেউ ট্রফি বা জয়ের স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করে তাহলে তাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাবা হবে না। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলেও সত্য যে, অতীতে এই বিষয়টিকে আদর্শ শখ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এগুলো মূলত একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য করা হয়েছিলো। সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তির বাসায় আলাদা একটি কক্ষই থাকতো যেখানে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কোষ, কলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও তাদের শত্রুদের মাথার খুলি বাসায় নিয়ে যেত। নিচের ছবিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাবিককে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জাপানের একজন সেনাসদস্যের খুলি নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছেন।

আজব কাণ্ডকারখানা! Source: BrightSide

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় ধূমপান করা

‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’- এই বাক্যটি প্রায় সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। চিন্তা করে দেখুন তো, যদি আপনার সামনে কোনো গর্ভবতী মহিলা ধূমপান করেন, তাহলে কি অবাক হবেন না? কারণ ধূমপান প্রজনন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি ধূমপানের কারণে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভেই মৃত্যুবরণ করতে পারে। কিন্তু আজ থেকে ৭০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধূমপান করার পরামর্শ দিতেন। সাধারণত তখনকার দিনে গর্ভবতী মহিলারা ফিলিপ মরিস ব্র্যান্ডের সিগারেট ব্যবহার করতেন।

ফিচার ইমেজ: Chaostrophic

Related Articles