Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টমিরিস: সাইরাসের হন্তারক? (শেষ পর্ব)

টমিরিস

টমিরিসের পারিবারিক পরিচয় নিয়ে হেরোডেটাস কিছু বলেননি। তবে মেসাজেটিদের রানী হিসেবে এটা অনুমান করাই যায় যে তিনি গোত্রপতির মেয়ে ছিলেন। কোনো কোনো অনির্ভরযোগ্য সূত্রমতে তার পিতার নাম স্পারগ্যাপিসেস (Spargapises)। কিংবদন্তী বলে, অস্ত্র আর ঘোড়া চালনায় মেসাজেটি কোনো পুরুষ টমিরিসের সমকক্ষ ছিল না। ফলে যৌবনে পদার্পণ করলে টমিরিসের পিতা তার বিয়ের জন্য এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।  

টমিরিস; image source: artstation.com

এদিকে একই সময় স্তেপির অন্যান্য গোত্রের সাথে মেসাজেটিদের সংঘর্ষ চলছিল। এই সংঘাতে তাদের মিত্র ছিল টিগ্রাখাউদা (Tigrakhauda) গোত্র। টিগ্রাখাউদা নেতা কাভাদ ব্যস্ত ছিলেন নিজ সীমানায় শত্রুদের হামলা রুখতে। ফলে স্পারগ্যাপিসেসের সহায়তায় তিনি নিজ পুত্র রুস্তমকে পাঠালেন। রুস্তম যখন মেসাজেটিদের বসতিতে এসে পৌঁছালেন তখন প্রতিযোগিতা শুরু হই হই করছে। খেলার নিয়ম হলো যে ঘোড়া ছুটিয়ে টমিরিসকে ধরতে পারবে সেই হবে তার স্বামী। সবাইকে টক্কর দিয়ে রুস্তম জিতে নিলেন মেসাজেটিদের হবু রানীকে।

সাইরাসের বদনজর

একিমিনিড সাম্রাজ্য গুছিয়ে এনে ছোটখাট কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেন সাইরাস দ্য গ্রেট। এর মাঝে একটি ঘরের দোরগোড়ায় স্তেপের উপর পার্সিয়ান আধিপত্য বিস্তার। স্তেপ এমন কোনো সম্পদশালী এলাকা নয়, তবে এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে সিল্ক রুটসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ। স্তেপের যাযাবরেরা মাঝেমধ্যেই পার্সিয়ান বণিকদের উপর সেখানে হামলা করে, দুয়েকবার তারা সাইরাসের রাজ্যে প্রবেশের ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে। সাইরাস সিদ্ধান্ত নিলেন এদের শায়েস্তা করে তার অধীনে আনতে হবে। যোদ্ধা হিসেবে স্তেপের যাযাবরদের সুনাম আছে, তাদের সেনাদলে অন্তর্ভুক্ত করে নিলে লাভ বৈ ক্ষতি হবেনা।  

স্তেপ অতিক্রম করে চলে যাওয়া বাণিজ্যপথ সিল্ক রুট © Irene M. Franck and David M. Brownstone.

ততদিনে টমিরিসের স্বামী মারা গেছেন। ফলে মেসাজেটিদের সর্বময় কর্তা এখন টমিরিস। তার ছেলে স্পারগ্যাপিসেস মায়ের অন্যতম জেনারেল। সুন্দরী টমিরিসের গল্প সাইরাসের কানেও এসে পৌঁছেছে। সাইরাস টমিরিসের দরবারে দূত পাঠালেন। উদ্দেশ্য কোনোভাবে রানীর সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করা। এতে মেসাজেটিরা বিনা রক্তপাতেই সাইরাসের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু টমিরিস ঠিকই সাইরাসের মতলব বুঝে গেলেন। পার্সিয়ান দূতদের নিজের দরবারে ঢুকতেই দিলেন না তিনি।

ছলাকলায় ব্যর্থ হয়ে সাইরাস এবার সৈন্যবাহিনী নিয়ে স্তেপের পথ ধরলেন। আরাক্সেসের উপর দিয়ে সেতু তৈরি করলেন তিনি। বহু নৌকায় করেও মালামাল পার করে আনা হলো। এভাবেই সাইরাস জানান দিলেন স্তেপ করতলগত করার খায়েশের।

স্তেপিতে হামলা করতে যাচ্ছেন সাইরাস; image source: factinate.com

সাবধানবাণী

সাইরাস যখন আরাক্সেসের তীরে নিজের অবস্থান শক্ত করতে ব্যস্ত তখন রানীর তরফ থেকে এসে পৌঁছল মেসাজেটি দূত। বহন করে নিয়ে এলেন টমিরিসের পত্র। মেসাজেটি রানী সাইরাসকে সতর্ক করলেন এই বলে যে কীসের মধ্যে জড়াতে যাচ্ছেন তা পারস্য সম্রাট নিজেও বুঝতে পারছেন না। তিনি শান্তি চাইলে যেন সরে যান নিজ এলাকাতে, ফলে যে যার অঞ্চল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। আর তিনি লড়াই চাইলে তা দুভাবে হতে পারে। মেসাজেটিরা আরাক্সেস থেকে তিন দিনের দূরত্বে তাদের এলাকাতে পিছিয়ে যাবে। সেখানেই মোকাবেলা হবে দুই বাহিনীর। এতে করে সাইরাসকে নদী পার হয়ে শত্রু এলাকায় প্রবেশ করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো সাইরাস তার অঞ্চলের ভেতর দিয়ে আরাক্সেস থেকে তিন দিনের পথ পিছিয়ে যাবেন, সেক্ষেত্রে টমিরিস নদী পার হয়ে পার্সিয়ান এলাকাতে তার সম্মুখীন হবেন।

সাইরাস আলোচনায় বসলেন তার জেনারেলদের নিয়ে। সকলেই মত দিলেন দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে। টমিরিসকেই পারস্যে টেনে নিয়ে আসা হোক। কিন্তু সাইরাসের অন্যতম উপদেষ্টা ক্রোসাস এর বিরোধিতা করলেন। বৃদ্ধ ক্রোসাস এককালে ছিলেন এশিয়া মাইনরের লিডিয়ার রাজা। সাইরাসের হাতেই সব খুইয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার জ্ঞান আর দূরদর্শিতার কারণে সাইরাস তাকে উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

ক্রোসাস যুক্তি দিলেন যদি সাইরাস পিছিয়ে যান এবং এরপর কোনো আশ্চর্য উপায়ে টমিরিস জিতে যান, তাহলে তার সেনারা নিশ্চিতভাবেই সাইরাসের এলাকাতে তাণ্ডব চালাবে। কিন্তু সাইরাস যদি টমিরিসের উঠোনে যুদ্ধ করেন তাহলে পরাজিত হলেও পেছনে নিজ সীমানার নিরাপত্তায় ফিরে যেতে পারবেন। সেখানে সীমান্তবর্তী দুর্গগুলো ব্যবহার করে মেসাজেটিদের থামিয়ে দেয়া যাবে, যা তারা একবার সীমানা পার হয়ে গেলে সম্ভব হবে না। আবার টমিরিসের দোরগোড়াতে সাইরাসের বিজয় হলে তিনি দুর্বার বেগে আশেপাশের সব এলাকাই দখলে নিয়ে আসতে পারবেন, কিন্তু পিছিয়ে গেলে সেই সুযোগ তিনি হারিয়ে ফেলবেন। উল্টো এতে করে মেসাজেটিরা হেরে গেলেও নতুন করে নিজ এলাকায় ফিরে পুনর্গঠিত হবার সময় পেয়ে যাবে।

ক্রোসাস; image source: thoughtco.com

ক্রোসাসের যুক্তি সাইরাসের মনে ধরল। তিনি টমিরিসকে জবাব দিলেন স্তেপের ভেতরেই দুই পক্ষের ফয়সালা হবে। এরপর সাইরাস ক্রোসাসের হাতে পুত্র ক্যাম্বিসেসের দায়িত্ব তুলে দিয়ে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। যদি অভিযান ব্যর্থ হয় তাহলে ক্যাম্বিসেসই হবেন তার উত্তরাধিকারী। তবে ফিরে যাবার আগে ক্রোসাস সাইরাসকে একটি কুটবুদ্ধি দিয়ে গেলেন।

যেদিন ক্রোসাস ফিরে গেলেন তার পরদিন রাতেই সাইরাস স্বপ্নে দেখলেন তার জেনারেল হাইস্টাস্পেসের (Hystaspes) সন্তান দারিয়ুসকে। বিশ বছরের এই তরুণকে যুদ্ধে যাবার উপযুক্ত মনে না হওয়ায় রাজধানীতে রেখে আসা হয়েছিল। সাইরাস দেখলেন দারিয়ুসের দুই কাঁধে দুই ডানা, একটি এশিয়া আর আরেকটি ইউরোপের উপর ছায়া বিস্তার করেছে। সাইরাস এই ইঙ্গিত দেখে ভীত হয়ে পড়লেন। অবিলম্বে হাইস্টাস্পেসকে ডেকে পাঠালেন তিনি। নির্দেশ দিলেন দেশে ফিরে ছেলের উপর নজর রাখতে। স্তেপের কাজ শেষ করে সাইরাস নিজে দারিয়ুসের সাথে কথা বলবেন। 

দারিয়ুস; image source: medium.com

সাইরাসের চাল

ক্রোসাস পার্সিয়া যাবার আগে সাইরাসকে মেসাজেটিদের সহজে কাবু করার একটি পন্থা বলে গিয়েছিলেন। মেসাজেটিরা মদের সাথে একদমই অপরিচিত। ফলে আরাক্সেস পার হয়ে একদিনের দূরত্বে এসে সাইরাস ঘাঁটি বানিয়ে সেখানে সব মদের পিপা জড়ো করলেন। এরপর বাহিনীর সবথেকে দুর্বল সেনাদের রেখে সরে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে। তার জানা ছিল টমিরিসের চরেরা কাছেপিঠেই ঘুরঘুর করছে।

সাইরাসের তাঁবুর খবর পেয়ে স্পারগ্যাপিসেস একদল মেসাজেটি নিয়ে সেখানে এসে পৌঁছালেন। ক্ষণস্থায়ী লড়াইতে সহজেই ধরাশায়ী করলেন দুর্বল পার্সিয়ানদের। এরপর লুণ্ঠন চালানোর একপর্যায়ে পিপার মধ্যে মদ আবিষ্কার করল মেসাজেটিরা। কী এই বস্তু বুঝতে গিয়ে পানও করে ফেলল। মদের নেশা জেঁকে বসতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন সাইরাস। মেসাজেটিরা তখন প্রায় বেহুঁশ। অসহায় শত্রুদের মনের সুখে কচুকাটা করল পার্সিয়ান সৈন্যরা। স্পারগ্যাপিসেস হলেন বন্দি। যখন শৃঙ্খলিত মেসাজেটি জেনারেলের হুশ ফিরল তখন নিজের বোকামির জন্য চুল ছেড়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।

টমিরিসের প্রতিহিংসা

সাইরাস যে কুটচাল চেলেছিলেন তা ছিল তৎকালীন যুদ্ধের রীতিনীতির পরিপন্থী। নিয়ম ছিল দুই পক্ষ খোলা ময়দানে মুখোমুখি হবে। সম্মুখযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে জয়-পরাজয়। কিন্তু সাইরাসের কাজ ছিল অলিখিত এই আইনের সম্পূর্ণ বিপরীত।

টমিরিসের কানে যখন খবর পৌঁছে তখন সাইরাসকে তার অনৈতিক কাজের জন্য তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করলেন মেসাজেটি রানী। সমান সমান যুদ্ধে সাইরাস মেসাজেটিদের হারাতে না পেরে বিষের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অপমান করলেন পারস্য সম্রাটকে। তাকে অবিলম্বে স্পারগ্যাপিসেসকে মুক্তি দিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে যেতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন টমিরিস। নাহলে, টমিরিস প্রতিজ্ঞা করলেন, তুমি রক্ত চাও সাইরাস? সূর্যের নামে শপথ করছি, তোমার ইচ্ছে পূর্ণ হবে! মেসাজেটি রানীর কথায় সাইরাস কর্ণপাত করলেন না।  

এদিকে স্পারগ্যাপিসেস সাইরাসকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যদি তার হাত-পায়ের শেকল খুলে দেয়া হয় তিনি পালানোর চেষ্টা করবেন না। সাইরাসের আদেশে তার বন্ধন খুলে দেয়ার সাথে সাথে এক প্রহরীর অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলেন।

টমিরিস এবার স্তেপের সবাইকে একত্র করলেন। আরাক্সেস থেকে তিন দিনের পথে সংঘটিত হলো ভয়াবহ যুদ্ধ। এমনই ভয়ঙ্কর ছিল সেই লড়াই, হেরোডেটাস বলেন, যা এর আগে বা পরে স্তেপে আর কখনো হয়নি।এমনকি, তার জানামতে, এমন ভয়াবহ যুদ্ধও নাকি খুব বেশি নেই।

দুই বাহিনীর সংঘর্ষ; image source: Wikimedia Commons

প্রথা মোতাবেক স্তেপের সৈনিকরা সবাই ছিল অশ্বারোহী, ওদিকে সাইরাসের মূল শক্তি তার পদাতিক বাহিনী। কিন্তু উন্মুক্ত প্রান্তরে ঘোড়ার গতির কাছে পদাতিকেরা অসহায়। অশ্বারোহী মেসাজেটিদের নির্ভুল তীরের নিশানায় বহু পার্সিয়ান সেনা মারা পড়ল। এরপর দুই দলের মধ্যে আরম্ভ হয়ে গেল হাতাহাতি লড়াই। অনেকক্ষণ পর সাইরাসের বাহিনীতে ফুটে উঠল পরাজয়ের চিহ্ন। অনেক হতাহত ফেলে পিছিয়ে গেল যুগের সেরা পার্সিয়ান সেনাবাহিনী। নিহতদের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং সম্রাট।     

পরাজয়ের মুখে সাইরাসের বাহিনী; image source: Wikimedia Commons

টমিরিসের প্রতিহিংসা কিন্তু শেষ হয়নি। তিনি সাইরাসকে রক্ত দেয়ার প্রতিজ্ঞা ভুলে গেলেন না। তার সেনারা মৃতদের থেকে আলাদা করল সম্রাটকে। এরপর তার মাথা কেটে নিজ হাতে টমিরিস এক চামড়ার থলিতে ফেলে দিলেন। থলি আগে থেকেই পূর্ণ করা ছিল মানুষের রক্তে। শেষবারের মত মেসাজেটি রানী অপমান করলেন রাজাধিরাজ সাইরাস দ্য গ্রেটকে, তোকে পরাজিত করতে গিয়ে সন্তানহারা আমিও নিঃশেষ হয়ে গেছি। তবে যে রক্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা আমি পালন করলাম। তোর রক্তলালসা মিটল তো!

অনেকেই মনে করেন, হেরোডেটাসের গল্প শুধুই কল্পকাহিনি। তারা দাবি করেন, স্তেপের গোত্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যে এজন্য স্বয়ং রাজাকে সেখানে যেতে হবে। সাইরাসের জেনারেলরাই এজন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা। তবে এখানেও কথা থাকে। সাইরাসের কাছে যদি স্তেপের যোদ্ধাদের শৌর্য-বীর্য নিয়ে উঁচু ধারণা থেকে থাকে, তাহলে অসম্ভব নয় যে তিনিও সেনাদলের সঙ্গী হয়েছিলেন, যাতে কোনো রকম বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার উপস্থিতি পার্সিয়ান বাহিনীর মনোবল বাড়িয়ে দেয়।

সমস্যা হলো, তৎকালীন কোনো নথিপত্র দেখে এমন মনে হয় না যে সাইরাস বা তার জেনারেলরা এই যাযাবরদের তেমন কোনো শক্তি মনে করতেন। আবার হেরোডটাসের কথা একেবারে ফেলে দেয়াও যায় না। তার সমসাময়িক অনেক ঐতিহাসিক তাকে ইতিহাসের জনক না বলে মিথ্যার জনক বলে কটুক্তি করলেও দিনশেষে হেরোডটাসই কিন্তু আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য থেকে গেছেন। তার অনেক কাহিনী, যা তৎকালীন ঐতিহাসিকেরা উড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা আজকের যুগে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যান্য কাহিনী

আরেক গ্রীক ঐতিহাসিক টেসিয়াস (Ctesias) তার পার্সিকা বইতে সাইরাসের মৃত্যুর ঘটনা আরেকটু ভিন্নভাবে লিখে গেছেন। তার কথামতে, সাইরাস মধ্য এশিয়াতে ঠিকই অভিযান চালিয়েছিলেন। তবে এর লক্ষ্য ছিল ডার্বিসেস উপজাতির রাজা অ্যামোরেস। স্ট্র্যাবোর মতানুসারে, এদের বাস ছিল কাস্পিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূলে। টেসিয়াসের গল্প ছিল, ডার্বিসেসরা যুদ্ধে হাতি ব্যবহার করে পার্সিয়ান অশ্বারোহীদের কুপোকাত করে ফেলে। এই হাতি আবার সরবরাহ করে ভারত উপমহাদেশ থেকে তাদের মিত্ররা, যারা অ্যামোরেসের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাইরাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল।

যা-ই হোক, অশ্বারোহী বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সাইরাস ঘোড়া থেকে পড়ে যান। তখন কোনো ভারতীয় তাকে বর্শা মেরে আহত করে। সম্রাটকে তাঁবুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। এদিকে ডার্বিসেসদের কাছে পার্সিয়ানদের নাজেহাল হবার সংবাদ পেয়ে আরেক স্কাইথিয়ান গোত্র অ্যামিরিয়জিয়ান্সের (Amyrgians) রাজা অ্যামোর্জেস ঝড়ের গতিতে বন্ধু সাইরাসকে সহায়তা করতে ছুটে এলেন। চূড়ান্ত সংঘর্ষে অ্যামোরেস, তার দুই ছেলেসহ ৩০,০০০ ডার্বিসেস সেনা নিহত হয়। জয় হয় পার্সিয়ানদের।   

ব্যবিলনের পুরোহিত বেরোসুস (Berossus) আবার সাইরাসের সাথে যে গোত্রের সংঘাত হয়েছিল তাদের দাহি নামে উল্লেখ করেছেন। এদের সাথে লড়াইয়ে সাইরাস মারা যান। একমাত্র জেনোফেন তার বৃহৎ পরিসরের গ্রন্থ সাইরোপেডিয়া’তে সাইরাসের মৃত্যু নিজ রাজধানীতে শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছিল বলে লিখে গেছেন। 

আসলে কী হয়েছিল

এককথায় বলতে গেলে, আমরা এখনো স্পষ্টভাবে জানি না সাইরাস কীভাবে মারা গিয়েছিলেন। তার জীবনের বহু কিছুই লিপিবদ্ধ, ব্যতিক্রমের মধ্যে একটি তার মৃত্যু। তবে এই বিষয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকেরা মোটামুটি একমত যে সাইরাসের মৃত্যুর আনুমানিক সময় বলে যা ধরা হয়, সেই সময় সম্ভবত তিনি মধ্য এশিয়াতেই কোনো অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। দূর প্রাচ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী সাইরোপোলিস তারই বানানো ছিল, সম্ভবত মধ্য এশিয়া অভিযানের সময়েই সাইরাস কোনো বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই নগরীর গোড়াপত্তন করেন।

সাইরাসের মৃত্যু নিয়ে টেসিফোন, বেরোসুস আর হেরোডেটাস একমত যে সম্রাট মারা গিয়েছিলেন যুদ্ধ করতে গিয়েই, এবং তা ছিল স্তেপের কোনো গোত্রের সাথেই। যেহেতু পার্সিয়ানরা স্তেপির সবাইকে সাকা বলে অভিহিত করত, ফলে ঠিক কাদের সাথে সাইরাস লড়াই করতে গেছিলেন তা বোঝা কষ্টকর। এখানে কথা চলে আসে সেক্ষেত্রে সাইরাসের মৃতদেহ পরীক্ষা করে কি আধুনিককালে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়? মজার কথা, হচ্ছে সাইরাসের সমাধিতে তার মৃতদেহ পাওয়াই যায়নি।

একিমিনিডদের রাজধানী সাইরাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পার্সাগেডে (Pasargadae)। সেখানে প্রায় দুই শতাব্দী পর পা পড়ল আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের। নিজ আদর্শ সাইরাসের প্রতি সম্মান জানাতে তিনি সমাধি উন্মুক্ত করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ভেতরে ঢুকে তিনি থ! অনেক আগেই লুটেরারা সমাধি খুড়ে সমস্ত জিনিস সরিয়ে ফেলেছে। এমনকি সাইরাসের কফিনেও কিছু নেই। অ্যালেক্সান্ডার সমাধি নতুন করে সিল করে দেন। কিন্তু সাইরাসের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সাইরাসের সমাধি; image source: irandoostan.com

স্ট্র্যাবো বলে গেছেন, সাইরাসের সমাধিতে লেখা ছিল “হে মানব, আমি সেই মহান সাইরাস, যিনি এশিয়ার প্রভু এবং পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। আমাকে বিরক্ত করো না!” হয়তো বিরক্ত হতে চান না বলেই প্রকৃতি তার শেষটা রহস্যের চাদরে ঢেকে রেখেছে।

This is a Bengali language article about the account of death of Cyrus the great in the hands of Tomyris, queen of the Massagetae.

References

  1. The Histories. Translated by George Rawlinson (2013). Roman Roads Media, 739 S Hayes St, Moscow, Idaho.
  2. Encyclopedia Iranica.
  3. Abetekov, A. & Yusupov. H. (1994). Ancient Iranian Nomads in Western Central Asia.History of Civilizations of Central Asia, Volume II. UNESCO Regional Office.
  4. Cyrus the Great. Encyclopedia Britannica.

Feature image: imdb.com

Related Articles