Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শীর্ষ দশ প্রচারণামূলক কার্টুন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা ছিল যুদ্ধের এক অপরিহার্য অংশ। মিত্র ও অক্ষ শক্তি যে যতটুকু পেরেছে, প্রোপাগান্ডা ব্যবহার করেছে। মানুষের চোখ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের প্রোপাগান্ডা কার্যালয়কে যথাক্রমে যুদ্ধ তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয় নাম দিলেও জার্মানি কিন্তু এত রাখঢাক করেনি। সোজা গিয়ে নিজেদেরটার নাম দিয়েছিল প্রোপাগান্ডা মন্ত্রণালয়। উভয় পক্ষই নিজেদের জনগণকে তথাকথিত জ্ঞান দিতে একের পর এক তৈরি করেছিল প্রচারণামূলক কার্টুন। যুদ্ধ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই এসব কার্টুনের উপর নির্ভর করে।

১০. নিম্বাস লিবারে (নিম্বাসের মুক্তি, ১৯৪৪)

নিম্বাসের মুক্তিতে গুফি ও মিকি মাউস; Source: TopTenz

এটি নাৎসিদের তৈরি একটি কার্টুন, যা নির্মিত হয়েছিল দখল হওয়া ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে। ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের এই কার্টুনটিতে তখনকার বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র নিম্বাসকে তার পরিবারসহ রেডিও শুনতে দেখা যায়। রেডিওতে হঠাৎ এক লম্বা নাকের ইহুদী উপস্থাপক ঘোষণা করে যে মিত্রবাহিনী তাদের শীঘ্রই উদ্ধার করবে। কিছুক্ষণের মাঝেই আকাশে দেখা যায় উড়োজাহাজ, চালক ডোনাল্ড ডাক, মিকি মাউস আর পাপাইয়ের মতো আমেরিকান কার্টুন। আছে গুফি আর ফেলিক্স দ্য ক্যাটও। বিমানচালকদের পিছনে রাখা বোমার গায়ে লেখা ‘মেড ইন ইউএসএ’ অর্থাৎ আমেরিকার তৈরি। পাপাইয়ের পিছনে হুইস্কির পাত্র, সামনে ফ্রান্সের ম্যাপ। তাদের বোমার আঘাতে  বাড়ি ধ্বংস হলে নিম্বাস তার পরিবারসহ নিহত হয়। কিন্তু রেডিও অনবরত বাজতেই থাকে আর বলে মিত্ররা তাদের উদ্ধার করবে, বিমানচালকেরা নেমে এসে রেডিও বন্ধ করে হাসতে থাকে।

৯. ডক্টর চার্চিল (১৯৪১)

ডক্টর চার্চিল একটি ইতালীয় কার্টুন। এই কার্টুনে নায়ক করা হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে। ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইড গল্পের প্যারোডি বলা যায় এই কার্টুনটিকে। চার্চিল এখানে অর্ধেক দৈত্য আর অর্ধেক মানুষ। একধরনের রাসায়নিক দ্রব্য খেয়ে তিনি মাঝে মাঝে প্রয়োজনমাফিক ভালো মানুষে পরিণত হন। ইংল্যান্ডের এক নদীর কিনারে চার্চিলের বাড়ি। তার কাছে আছে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে চুরি করে আনা স্বর্ণ। এসব দেশ আবার তাকে বন্ধু ভাবে। কাজের আগে দৈত্য চার্চিল রাসায়নিক খেয়ে ভালো মানুষের মুখোশ পরে বন্ধুদের কাছ থেকে স্বর্ণ চুরি করতে থাকেন যতক্ষণ না নাৎসি ও ইতালীয় বাহিনী তাকে মেরে ফেলে ইংল্যান্ড ধ্বংস করে দেয়।

৮. মোমোতারো নো উমিওয়াশি (মোমোতারোর সমুদ্র ঈগল, ১৯৪২)

মোমোতারোর যুদ্ধ পরিচালনা; Source: LIttle Anime Blog

জাপানের এই কার্টুনটি আসলে নির্মিত হয়েছিল ১৯৪২ সালে, কিন্তু মুক্তি পায় ১৯৪৩ সালে। ১৯৪১ সালের পার্ল হারবারে বোমা হামলা এই কার্টুনটির ঘটনা। এখানে দেখা যায়, জাপানের ঐতিহ্যবাহী লোকজ নায়ক মোমোতারো তার পশুপাখি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পার্ল হারবার বা দৈত্যদের দ্বীপ আক্রমণ করে। কার্টুনটিতে আক্রমণের বাস্তব দৃশ্য আছে। আমেরিকার পক্ষে দেখা যায় পাপাইয়ের বান্ধবী অলিভ ও পাপাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লুটোকে। কার্টুনটি ছিল জাপানী নৌবাহিনী ও তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রয়াস।

৭. অফ দ্য লিটল ট্রি হুইচ উইশড ডিফারেন্ট লিভস (ছোট যে গাছটি অনেক রকম পাতা চেয়েছিল, ১৯৪০)

নাৎসিদের বিশ্বাস ছিল ইহুদীরা পরজীবীর মতো। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন ইহুদীবিরোধী সিনেমা কার্টুন তৈরি করে তাদের জনগণের মন ইহুদী বিদ্বেষী করে তুলতে চাইতো। এই কার্টুনটিও ছিল সেই প্রয়াসেরই অংশ। কার্টুনটি তৈরি করা হয়েছিল ফ্রেডরিক রুকার্ট নামের এক জার্মান কবির কবিতা অবলম্বনে। কার্টুনে ছোট একটি সোনালি গাছে আশ্রয় নিত পাখিরা। একদিন এক ইহুদী এসে একটা পাতা রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে নেয়।

৬. ইভিল মিকি অ্যাটাকস জাপান (দুর্বৃত্ত মিকির জাপান আক্রমণ, ১৯৩৪)

ভয় পাওয়ানো মিকি; Source: SoraNews24

১৯৩৪ সালে জাপান এই কার্টুনটি তৈরি করলেও তারিখ পিছিয়ে দেয় ১৯৩৬ সালে। কারণ ১৯৩৬ সালে জাপান যুক্তরাষ্ট্র নৌচুক্তি শেষ হবার ছিল। কার্টুনে উড়ন্ত ইঁদুরেরা জাপানের বাচ্চাদের তাড়া করে। ইঁদুরগুলো দেখতে মিকি মাউস আর বাদুড়ের সংকরের মতো। তার পেছনে সাপ ও কুমিরের বাহিনী। জাপানি সামুরাইয়েরা এসে বাচ্চাদেরকে উদ্ধার করে।

৫. মোমোতারোস ডিভাইন সী ওয়ারিয়রস (মোমোতারোর নৌপথের স্বর্গীয় যোদ্ধারা, ১৯৪৫)

মোমোতারো আর তার যোদ্ধারা; Source: MyMBuzz

এটি প্রথম এনিমে চলচ্চিত্র এবং মোমোতারো নো উমিওয়াশির শেষ অংশ। মোমোতারো এবার তার প্রাণী বাহিনী নিয়ে রওনা দেয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে। সেখানে আরো অনেক প্রাণী বন্দী আছে ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে। এই এনিমে চলচ্চিত্রটি কিন্তু ব্যবসাসফল হয়নি। কারণ এই সময়ের মাঝেই জাপানের বাচ্চাদেরকে ভারি বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল দূরদূরান্তে। অবশিষ্ট বাচ্চারা কারখানায় কাজ করত, যাদের পক্ষে কার্টুন দেখা সম্ভব ছিল না। কার্টুনটি অনেকদিন পর্যন্ত হারিয়ে গিয়েছিল। শেষে ১৯৮৩ সালে এর একটি কপি পাওয়া যায়।

৪. আরমার হানসি (বেচারা হানসি, ১৯৪৩)

দুঃখী পাখি হানসি; Source: Dailymotion

অ্যাডলফ হিটলারের ইচ্ছা হয়েছিল তিনি কার্টুন নির্মাণে ওয়াল্ট ডিজনিকে হারিয়ে দেবেন। তারই আদেশমতো প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস নিজের দাঁড় করানো স্টুডিওতে তৈরি করেন আরমার হানসি বা বেচারা হানসি। হানসি এখানে এক পাখির নাম, যে নিজের খাঁচা ছেড়ে পালায় সুন্দরী এক পাখির প্রেমে পড়ে। কিন্তু সেই পাখি আবার ভিন্ন জাতের। পাখিটির কাছে পৌঁছাতে অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে হয় হানসিকে। কিন্তু যেই না সেই সুন্দরীটির কাছে হানসি পৌঁছাল, পাখিটির সঙ্গী হানসিকে তাড়িয়ে দিল। তারপর হানসি নিজের জাতের এক পাখিকে খুঁজে পায় আর তার সাথে সুখে শান্তিতে জীবন কাটায়।

৩. ডের স্টরেনফ্রাইড (দুষ্টু শেয়াল, ১৯৪০)

ডের স্টরেনফ্রাইড বা দুষ্টু শেয়াল তৈরি করেছিল জার্মানরা। কার্টুনটিতে সোভিয়েতের প্রতীক দুষ্টু শেয়াল খরগোশ শিশুদের হুমকি ধামকি দেয়। কিন্তু জার্মান সেনাবাহিনীর প্রতীক কুকুর আর বিমানবাহিনীর প্রতীক বোলতা সামরিক পদ্ধতিতে শেয়ালকে আক্রমণ করে আর তাড়িয়ে দেয়। কার্টুনটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, ক্ষুদ্র শক্তিও একতাবদ্ধভাবে বৃহৎ শক্তিকে হারিয়ে দিতে পারে।

২. ফান দিন ভস রেইনার্ডে (১৯৪৩)

যোদ্ধা শেয়াল রেইনার্ড; Source: Kinderpleinen

১৯৩৭ সালে নাৎসিপন্থী ইহুদী বিদ্বেষী লেখক রবার্ট ফান গেনেচেন একটি উপন্যাস লেখেন। বাংলায় তার নাম ‘রেইনার্ড নামের শেয়াল ও ইহুদী প্রাণী’। এই উপন্যাস অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল কার্টুনটি। কার্টুনে দেখা যায়, প্রাণীদের রাজা বাল্ডউইন নামের এক গাধা। ব্যবসায়ী বড় শিঙের গণ্ডাররা এসে গাধাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দেশের কর আদায়ের ব্যবস্থা হাত করে নেয়। রেইনার্ড নামের এক শেয়াল গণ্ডারদের কার্যকলাপ দেখে বুঝতে পারে তারা একসময় বাল্ডউইনকে উৎখাত করে রাজ্যই দখল করে নেবে। তখন সে গণ্ডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

১. ডের স্নিম্যান (দ্য স্নোম্যান বা বরফমানব, ১৯৪৩)

শেষ হয়ে যাচ্ছে বরফমানব; Source: iluzjon.fn.org.pl

কার্টুনটিতে এক বরফমানবকে দেখানো হয়, যার বুকের উপর বরফ জময়ে হৃদয়াকৃতির হওয়ার ফলে সে জীবন পায়। তারপর নানা দুঃসাহসী কাজ করে সে। যেমন স্কেট করা, খেলা করা, এমনকি তার সাধের গাজর নাকটা এক ক্ষুধার্ত খরগোশের থেকে বাঁচানো। একসময় সে টের পায় যে, বছরে শীতকাল বাদে আরো অন্য ঋতু আছে, নিজেকে বাঁচাতে সে গ্রীষ্মকালটি একটি বরফের বাক্সের মাঝে কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গরমকালে একবার বাক্স থেকে বের হয়ে সে গলে শেষ হয়ে যায়। আর তার গাজর নাকটা নিয়ে যায় সেই খরগোশটি। কেউ কেউ কার্টুনটিকে একদমই প্রোপাগান্ডাহীন দাবি করলেও এটি নাকি আসলে নাৎসি বিরোধী কার্টুন। আরো একটি কার্টুনের নাম বরফমানবের সাথেই উচ্চারিত হয়, সেটি হলো দাস দুমে গ্যানস্লেইন (দ্য সিলি গুজ বা বোকা হাঁস, ১৯৪৪)। কার্টুনটি একটি বোকা হাঁসকে নিয়ে, যে বোকামি করে নিজের খামার থেকে বের হয়ে এক শেয়ালের খপ্পরে পড়ে। দুর্বৃত্ত শেয়ালটি তাকে মেরে ফেলে। এটি ও স্নোম্যান জার্মান এনিমেশন পরিচালক হানস ফিশারের তৈরি শেষ তিনটি এনিমেশনের দুটি। ধারণা করা হয়, হানস নিজে নাৎসি বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তার ছেলে বলেন যে, তার বাবার কার্টুনগুলো নিছকই কার্টুন, তিনি নাৎসিপন্থী বা বিরোধী কোনোটাই ছিলেন না।

ফিচার ইমেজ: youtube.com

Related Articles