Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টুসেন্ট ল্যুভারচার: অপরাজেয় নেপোলিয়নকে পরাজিত করা এক বীর ক্রীতদাস

অষ্টাদশ শতাব্দীর গতানুগতিকতা মেনে ফ্রান্স, স্পেন আর ব্রিটেনে গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত-খামারে কাজ করতো হাজারো ক্রীতদাস। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন, প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ তাদের করতেই হতো। বিনিময়ে খাদ্য ছিল সীমিত, অত্যাচার ছিল পাশবিক। ইউরোপীয় উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে লাভজনক এবং বৃহৎ দাস কলোনিটি ছিল ফ্রেঞ্চদের অধীনে, নাম তার সেন্ট ডোমিনিক। বর্তমান হাইতির পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই এলাকাটি ফ্রেঞ্চদের অধীনে থাকলেও হাইতির পূর্বাংশ ছিল স্পেনের দখলে। সেন্ট ডোমিনিকের এক ক্রীতদাস কীভাবে দিগ্বিজয়ী রাজা নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে হারিয়েছিলেন, চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সেই ইতিহাস।

খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ সেন্ট ডোমিনিককে অভিহিত করেছেন ‘ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিনির কলোনি’ হিসেবে। সদ্য স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য শুরু করার কিছুদিনের মধ্যে সেন্ট ডোমিনিকের চিনি উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়, সময়টা তখন ১৭৮৩-৮৯ সালের কাছাকাছি। এই বাড়তি উৎপাদনের জন্য ফ্রেঞ্চ ঔপনিবেশিক শক্তির অধিকারীরাও ক্রীতদাসদের উপর বাড়তি অত্যাচার চালানো শুরু করে। প্রায় অর্ধ মিলিয়ন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের উপর চালানো সে নির্যাতনের ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। ‘রিটেন ইন ব্লাড: দ্য স্টোরি অফ দ্য হাইতিয়ান পিপল, ১৪৯২ থেকে ১৯৭১’ বইটিতে রবার্ট আর ন্যান্সি হেইল ভ্যাস্তি নামক এক ক্রীতদাসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেন্ট ডোমিনিকের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে সেই ক্রীতদাস বলেন,

“মাথা নিচের দিকে রেখে উল্টো করে মাটিতে পুঁতে ফেলা, বস্তায় পুরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসা, কাঠের তক্তার সাথে হাতে-পায়ে পেরেক ঠুকে ক্রুশবিদ্ধ করা, জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া, চাবুক দিয়ে পিটিয়ে চামড়া তুলে নেয়া, হাত-পা বেঁধে বদ্ধ জলাভূমিতে কীটপতঙ্গের খাবার হিসেবে ফেলে রেখে আসা, কাঁটাতারের বেড়ায় বেঁধে রোলের মতো গড়িয়ে দেয়া, খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে কুকুর লেলিয়ে দেয়া… কৃষ্ণাঙ্গ চাকরদের সাথে কী করেনি মনিবরা? ভাগ্য খুব ভালো হলে এত কষ্ট না দিয়ে একবারে বেয়োনেটের আঘাতে খুন করেছে আমার জাতভাইদের।”

দাস বিদ্রোহের একটি দৃশ্য; Source: thenation.com

অমানবিকতার চরমে পৌঁছে যাওয়া মনিবদের অধীনে থাকা সেন্ট ডোমিনিকের ক্রীতদাসরা যে একসময় না একসময় বিদ্রোহ ঘোষণা করবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ১৬৭৯ সালের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো দাস বিদ্রোহ প্রত্যক্ষ করে সেন্ট ডোমিনিক। এই প্রতিবাদ চলতে থাকে ১৮ শতক পর্যন্ত, ততদিনে ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৫-১৭৮৯) কারণে সে এলাকায় আমদানি করা হয়েছে আরো প্রায় দেড় লক্ষ ক্রীতদাস। অর্থনৈতিক উন্নতির নেশা এমনভাবে জেঁকে বসেছিল ফরাসিদের মনে যে তারা ক্রীতদাসদের মানুষ বলে মানতেই নারাজ হয়ে পড়ছিল।

প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হতে ক্রীতদাসদের মনে দানা বাঁধছিল ক্ষোভ। পুঞ্জীভূত সে আক্রোশের চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোকে। ১৭৯১ সালে সামরিক এক কর্মকর্তা দিব্যি স্বীকার করে বসেন, “আমরা তো বাণিজ্য করছি ক্রীতদাসদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে”। সে বছরের ২১ আগস্ট মাঝরাতে ঘাড়ে রাখা বন্দুকের মুখ ঘুরিয়ে আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগায় ক্রীতদাসরা। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া সে বিদ্রোহ মোড় নেয় সশস্ত্র আন্দোলনে। শুরুর দিকে আফ্রিকার বিদ্রোহী দাসরা সম্পূর্ণ শৃঙ্খলমুক্তির জন্য লড়াই না করে বরং লড়ছিল একটু স্বাধীনতা আর অধস্তন দাসদের অবস্থার কিঞ্চিৎ উন্নতির জন্য। শীঘ্রই দাসদের জেনারেল হিসেবে সংগ্রামরত ঊর্ধ্বতন ক্রীতদাসরা বুঝতে পারেন এভাবে নিজেদের দাবি কখনোই আদায় করা সম্ভব হবে না। কাজেই তারা আটঘাট বেঁধে পূর্ণ মুক্তির দাবিতে মাঠে নেমে ফরাসি সরকারের অবস্থা কাহিল করে ছাড়ে। ফরাসি সরকারের তখন প্রয়োজন মিত্রশক্তির। ঠিক সেই সময় নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা এক ক্রীতদাসের নাম টুসেন্ট ল্যুভারচার

টুসেন্ট ল্যুভারচার; Source: thenation.com

১৭৪৩ সালের ২০ মে শিক্ষিত এক ক্রীতদাস পরিবারে জন্ম নেয় টুসেন্ট ল্যুভারচার ব্রেডা (‘ব্রেডা’ পদবিটি এসেছে যে ক্ষেতে তার বাবা কাজ করতো, তার নাম অনুসারে)। আফ্রিকার রাজপুত্র গাও গুইনোনের বড় ছেলে টুসেন্ট, দুর্ভাগ্যবশত শ্বেতাঙ্গদের কাছে ক্রীতদাস হিসেবে ধরা পড়ে গাও। বাপ-দাদার মুখ থেকে আফ্রিকার গল্প শুনতে শুনতে বড় হয় টুসেন্ট। যাজক দাদা সাইমন ব্যাপ্টিস্ট তাকে লিখতে পড়তে শেখান। টুসেন্টের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ব্রেডা ক্ষেতের ম্যানেজার ব্যয়ন দা লিবার্তা তাকে নিজের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ঢোকার অনুমতি দেন। বয়স ২০ হতে না হতেই, স্বশিক্ষিত আর ত্রিভাষী টুসেন্ট ঘোড়সওয়ার আর অপেশাদার চিকিৎসক হিসেবেও বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। দা লিবার্তার কাছ থেকে যথেষ্ট স্বাধীনতাও ভোগ করতেন তিনি, লিবার্তা বরং তার কোচের ভূমিকা পালন করে তাকে আরো দক্ষ করে তুলছিলেন।

তবে ১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট বেশ বড় ধরনের এক পরিবর্তন আসে টুসেন্টের জীবনে। ‘নাইট অফ ফায়ার’ খ্যাত এই দিনটিতে সেন্ট ডোমিনিকের ক্রীতদাসরা একত্র হয়ে অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ মনিবদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তাদের ক্ষেত-খামারে আগুন লাগিয়ে দেয়। ৪২ বছর বয়সী স্বাধীনচেতা টুসেন্ট সে সময় স্বজাতির পক্ষ নিয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়। তখন তার নামের সাথে যুক্ত হয় ‘ল্যুভারচার’ কথাটি, ল্যুভারচার মানে শুভদিনের সূত্রপাত ঘটানো ব্যক্তি। তবে টুসেন্ট কিন্তু সে সময় শুভদিনের সূত্রপাত ঘটাতে পারেননি। অগ্নিকাণ্ডের সে রাতের প্রায় বছর দুয়েক পরের কথা, ফ্রেঞ্চ রাজপরিবারের সদস্যরা স্প্যানিশ আর ব্রিটিশদের সাথে মিলে দাসপ্রথা রদ করে একটি ফরমান জারি করে। দাসদেরকে নিজেদের পাশে পাওয়ার জন্য একটি কুবুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই নয় এটি। টুসেন্ট আর তার সঙ্গীরা সবাই জানত দাসপ্রথা মোটেও বাতিল করা হয়নি। আর এর পিছনে কলকাঠি নাড়া ফরাসিরা পরিণত হয় তাদের চক্ষুশূলে। তারা বরং তুলনামূলক উদারমনা স্পেনের সাথে বন্ধুত্ব করে নেয়।

সামরিক পোশাকে টুসেন্ট; Source: thenation.com

পরবর্তীতে ফরাসি অধ্যুষিত এলাকা থেকে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার পাকাপাকি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন টুসেন্ট। ১৭৯৪ সালের মে মাসে ফরাসি বিপ্লবীদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন তিনি। ১৮০২ সাল পর্যন্ত টুসেন্ট ল্যুভারচার সেন্ট ডোমিনিক এলাকার রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রের প্রভাবশালী নেতার ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধবিগ্রহ আর বিপ্লব-বিদ্রোহের ১০ বছরের মাথায় ক্রীতদাসের দলকে তিনি পরিণত করেন সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনীতে। ইউরোপিয়ান কমান্ডারদের তাক লাগিয়ে দিয়ে ইউরোপ সরকারের জড়ো করা সেরা সৈন্যদের হারিয়ে দেয় টুসেন্ট ও তার বাহিনী।

সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে সেন্ট ডোমিনিকের মাঠ পর্যায় থেকে দাসপ্রথার বিলোপ সাধন করে সমাজে স্ট্যাটাস ক্যু বা আভিজাত্যের রূপরেখা বজায় রাখতে চাওয়া অভিজাতদের বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেন টুসেন্ট। মাথা চাড়া দিয়ে বাড়তে থাকা শক্তিশালী দাসদের রুখতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ সেনাবাহিনী পাঠায়। এমনকি জর্জ ওয়াশিংটন নিজে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, “নিগ্রোদের মধ্যে এমন বিপ্লবের ছোঁয়া দেখতেও আফসোস লাগে”। তার এই মাতমে কিচ্ছু আসে-যায়নি বিল্পবী দাসদের। কেবল দাস বিদ্রোহ আর দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি টুসেন্ট, ইতিহাসে তিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছেন সেনাবাহিনীর জেনারেল-ইন-চিফ পদমর্যাদায় আসীন হয়ে ফ্রেঞ্চ অধ্যুষিত এলাকা থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে। তাছাড়া স্পেন কর্তৃক দখলকৃত দ্বীপপুঞ্জের অর্ধেকেরও বেশি হাইতির আওতায় নিয়ে আসেন তিনি। ইতোমধ্যে ফ্রান্সে একটি ক্যু বা সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়ে জ্যাকোবিন বা রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা চলে যায় একনায়কতান্ত্রিক সরকারের হাতে। শুরুর দিকে সেন্ট ডোমিনিকে টুসেন্টের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে নতুন সরকার। ১৭৯৬ সালের এপ্রিল মাসে তাকে উপনিবেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ঘোষণা করা হয় এবং ১৭৯৭ সালে তাকে ফরাসি সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডারের পদে আসীন করা হয়।

ঘোড়সওয়ার টুসেন্ট; Source: the-tls.co.uk

১৮০১ সালে সেন্ট ডোমিনিক ফরাসি উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এটিকে একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই শাসন করতেন টুসেন্ট ল্যুভারচার। এমনকি তিনি স্থানীয় পর্যায়ে একটি সংবিধান লিখে ফেলেন এবং তাতে নিজেকে গভর্নর দাবি করে ১৭৯৪ সালে দাসপ্রথা বিলোপ সাধনের উপর বারংবার জোর দেন। ক্রীতদাসদের এই স্বাধীনতা অবশ্য খুব কম সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় এসে ক্ষেত-খামারের মালিকদের অনুনয়-বিনয় শুনে আবারও ফ্রেঞ্চ কলোনির অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে দাসপ্রথা জারি করার হুকুম দেন। তার এই একটিমাত্র আদেশ মুহূর্তের মধ্যে সেন্ট ডোমিনিককে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।

১৮০২ সালে সেন্ট ডোমিনিকে প্রায় ৩৫ হাজার সৈন্য পাঠান নেপোলিয়ন। সাবেক ক্রীতদাসরা তাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়। এবার আর সামান্যতম ছাড় না দিয়ে তারা গঠন করে ‘হাইতি প্রজাতন্ত্র’ নামে স্বাধীন একটি ভূখণ্ড। এভাবেই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্রথম স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ায় হাইতিরা। পশ্চিমা বিশ্বের তিন পরাশক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং স্পেনকে পরাজিত করা একমাত্র জাতি হাইতির সেনাপ্রধান টুসেন্ট ল্যুভারচারের নাম লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে।

শিল্পীর চোখে হাইতির মুক্তিকামী জনগণ; Source: oup.com

নিজেরা নিজেরা স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার আগে একটি চুক্তিতে সম্মত হন টুসেন্ট এবং নেপোলিয়ন। চুক্তি অনুযায়ী নেপোলিয়ন হাইতি নামক দ্বীপটিকে স্বাধীনতা দিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তার বিনিময়ে জনগণের ত্রাণকর্তার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে টুসেন্টকে। স্বজাতির কথা বিবেচনা করে নির্দ্বিধায় এই অযৌক্তিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই ভুলের খেসারত দিতে হয় তাকে। কয়েক মাস পরেই আলাপ-আলোচনার ছুতোয় তাকে ডেকে পাঠায় ফ্রেঞ্চরা। তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হবে- এই প্রতিশ্রুতি এসেছিল তাদের পক্ষ থেকেই।

কিন্তু টুসেন্ট সেখানে পৌঁছানোর পরপরই বিশ্বাসঘাতকতা করে বসেন নেপোলিয়ন। কথার বরখেলাপ করে তাকে গ্রেপ্তার করে ফরাসি সৈন্যরা, জাহাজে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় ফ্রান্সের দূর কোনো এক প্রান্তে। নেপোলিয়নের নির্দেশে আল্পসের এক অন্ধকূপে নিক্ষেপ করা হয় টুসেন্টকে, ১৮০৩ সালের ৭ এপ্রিল যেখানে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ৩৫ হাজার সৈন্য নিয়ে গিয়েও তার সাথে লড়াই করে জয়ী হতে না পেরে কাপুরুষের মতো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে টুসেন্টকে হত্যা করেন নেপোলিয়ন। তবুও আশার ব্যাপার এই যে, নেপোলিয়ন তখন ইউরোপীয় সাম্রাজ্য জয়ের নেশায় এতোটাই মত্ত হয়ে ওঠেন যে হাইতির মতো ছোটখাটো দ্বীপের কথা তার আর মাথায় থাকে না। কাজেই অক্ষুণ্ণ থাকে হাইতির স্বাধীনতা, বিফলে যায় না টুসেন্টের মৃত্যু।

তবে হাইতির স্বাধীনতাকে যে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি পশ্চিমা বিশ্বগুলো, সে কথা আরেকবার প্রমাণ করতে পাহাড়সম করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় হাইতির জনগণের মাথায়। প্রতিবাদ করার মতো শক্তিশালী কোনো ব্যক্তিত্ব তখনো আত্মপ্রকাশ করেনি সে এলাকায়, কাজেই স্বাধীনতার বিনিময়ে কড়া মূল্য দিতে হলো হাইতিবাসীকে। তখন থেকেই হাইতির রাজনৈতিক জীবনে যখন তখন নাক গলায় পশ্চিমা দেশগুলো, এই প্রথা জারি আছে এখনো পর্যন্ত। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতি, যার শতকরা ৮০ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। আর এই অবস্থার জন্য দায়ী নাক উঁচু পশ্চিমা দেশের মাথারা। এখন শুধু সময়ই বলতে পারে, টুসেন্ট ল্যুভারচারের সেই প্রাণশক্তি আর কখনো হাইতির কোনো অধিবাসীর মধ্যে জাগ্রত হবে কিনা। ন্যায়বিচার আর আক্ষরিক অর্থে স্বাধীনতা লাভের জন্য আরেকজন টুসেন্টকে এখন ভীষণ দরকার হাইতির।

ফিচার ইমেজ- all-that-is-interesting.com

Related Articles