Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রোফিম লিসেনকো ও সমাজতন্ত্রের নামে সোভিয়েত বিজ্ঞানবিরোধিতা

বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক- দুই দিকই পরীক্ষা, নিরীক্ষা, সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও যৌক্তিক বিচারের কঠোর পথে চলে। কোনোভাবে বিপথে গেলে নীতি বা ফলাফলের হিসেবে ভালোর বদলে খারাপ ফলই আসতে পারে। কারণ সঠিক ফলাফল পেতে পদ্ধতি ও নীতিতে নির্ভুল এবং নির্মোহ থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়। এই হচ্ছে ছোট ব্যাপারে সতর্কতা। বড় ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন হয় আরো বেশি। কোনো বিশেষ বিশ্বাসকে একেবারে নির্ভুল ধরে নিয়ে বিজ্ঞানের পদ্ধতি তার প্রমাণে কাজে লাগাতে গেলে ঠিক বিপরীত ফলও আসতে পারে। বিজ্ঞানের তত্ত্বে ও প্রয়োগের নীতিতে বিশেষ কোনো মতবাদের প্রভুত্ব চলতে পারে না।

কিন্তু প্রভুত্ব যে চালানোর চেষ্টা হয়নি- এমন নয়। প্রকৃতির অকাট্য নিয়মে তার খারাপ ফলও দেখা গেছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যথেষ্ঠ অগ্রগতি লাভ করতে থাকে। বিশেষ করে জীববিজ্ঞান ও কৃষিতে এর অর্জন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু মার্ক্সের দর্শনের প্রায়োগিক উপায়ে চালিত দেশটির উপর মতবাদের তলোয়ার নেমে আসার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছিলো।

সোভিয়েত কৃ্ষিতে স্ট্যালিনের নীতি বাস্তবায়নের উপর পোস্টার; Image Source: spartacus-educational.com

জীববিজ্ঞানে গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের জেনেটিক্স বা বংশগতির আবিষ্কার এক যুগান্তকারী ঘটনা। জীবদেহের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা কোষীয় অঙ্গানুর আবিষ্কার মেন্ডেলের পথ ধরে জীববিজ্ঞানের আরো নতুন অনেক দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছিলো। বিশেষ করে জৈব প্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজিতে অভাবনীয় সব অগ্রগতির সূচনা দেখা যাচ্ছিলো। ফলে ইউরোপব্যাপী বিজ্ঞানীরা এই বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড উৎসাহিত ও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন।

রাশিয়ার বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি নিয়ে কম উৎসাহিত ছিলেন না। ১৯২০ এর দশকে এক্ষেত্রে দেশটির বিজ্ঞানীরা ভালো সাফল্য পাচ্ছিলেন। নিকোলাই ভাভিলভ, ইউরি ফিলিপচেংকো, সের্গেই চেতভেরিকভ, মিখাইল জাভাডোভস্কি ও নিকোলাই কলৎসভ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আবদান রেখেছিলেন। বিশেষ করে জীববৈচিত্র্যের বংশগতীয় বিশ্লেষণ, খাদ্যশস্যের বংশগতীয় রূপান্তর, উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ও বিস্তার নিয়ে তাদের গবেষণার কিছু দিক বেশ প্রশংসনীয় ছিলো। নিকোলাই ভাভিলভ মনে করতেন, পৃথিবীতে প্রচলিত খাদ্যশস্যের বংশগতীয় রহস্য নিয়ে সঠিক গবেষণা অভাব অনটন নিরসনে সাহায্য করবে। তিনি প্রায় ৫০টির মতো দেশ ঘুরে প্রচলিত খাদ্যশস্যের প্রচুর বৈচিত্র্যময় বীজ সংগ্রহ করেন। তার ইচ্ছে ছিলো বংশগতীয় চরিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদনের গুণগত অগ্রগতির জন্য কাজ করা।

নিকোলাই ভাভিলভ; Image Source: researchgate.net

১৯৩০ এর দশকে জোসেফ স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বময় কর্তা হন। তিনি বিজ্ঞানের উপর মার্ক্সবাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার পথে গেলেন। জনজীবনের সর্বত্র, এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছেও রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য আদায় করার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছিলো। সেই পথ ধরেই সোভিয়েত বিজ্ঞান জগতে ট্রোফিম লিসেনকোর আবির্ভাব। তার নামেই বিজ্ঞানের উপর মতবাদের অযৌক্তিক প্রাধান্য ‘লিসেনকোইজম’ নামে পরিচিত হয়েছিলো।

ট্রোফিম লিসেনকো; Image Source: alchetron.com

১৮৯৮ সালে ইউক্রেনের এক কৃষক পরিবারে ট্রোফিম লিসেনকো জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন কিয়েভ এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউটে তিনি কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। গম চাষের উপর তার বিশেষ গবেষণা ছিলো। বিশেষ করে শীতকালীন গমকে আবহাওয়ার প্রভাব কাজে লাগিয়ে বসন্তকালীন গমে রূপান্তরিত করার ব্যাপারে তিনি বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। পারিবারিকভাবে কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় কম্যুনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোতে তিনি বিশেষ সমাদর পেতেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞানী হিসেবে তার মর্যাদা বেশ বেড়ে গিয়েছিলো। তবে বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মান ও পদ্ধতির বিচারে তার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। গমের বৃদ্ধি নিয়ে তার গবেষণার ফলাফল সোভিয়েত ইউনিয়নের মানদণ্ডে বেশ উৎকৃষ্ট বিবেচিত হলেও তা বিজ্ঞানের সুষ্ঠু বিচারধারা অনুযায়ী পরিচালিত হয়নি।

তার মতে, জীবের বংশগতি ক্রোমোসোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, সরাসরি সাইটোপ্লাজম দ্বারা হয়। ফলে পরিবেশের প্রভাব একেবারে সরাসরি তার বংশগতির উপর পড়ে। সোভিয়েত মার্ক্সবাদীরা অর্জিত গুণের সরাসরি বিস্তারের তত্ত্ব বাদে বংশগতির অন্য তত্ত্ব বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতবিরোধী বলে উড়িয়ে দিতেন!

তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত কৃষিবিদ ও জেনেটিক বিজ্ঞানীরা লিসেনকোর এমন অদ্ভুত তত্ত্বের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন। তারা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্মমতার শিকার হন। নিকোলাই ভাভিলাভ ১৯৪০ সালে গ্রেফতার হন এবং ‘৪৩ সালে জেলেই মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৮ সালে দেশটির স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রম থেকে জেনেটিক্সের স্বীকৃত বিষয়গুলো তুলে দেওয়া হলো। লিসেনকোর তত্ত্ব সোভিয়েত দেশের সরকারী বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। সুতরাং সোভিয়েত জীববিজ্ঞান ও আদর্শ জীববিজ্ঞান কার্যত দুই পৃথক জিনিসে পরিণত হলো।

লিসেনকো ইউক্রেনে গমের ক্ষেতে ফসলের বৃৃদ্ধি পরীক্ষা করছেন; Image Source: theatlantic.com

ট্রোফিম লিসেনকো সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দের সমর্থন পেয়েছিলেন। এমনকি জোসেফ স্ট্যালিন পর্যন্ত তার অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। ‘বুর্জোয়া বিরোধী’ ফলিত বিজ্ঞানের এমন অভিনব চর্চা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রসারের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে, এমন আশাবাদ পার্টির নেতৃবৃন্দকে নতুন করে উৎসাহিত করে তুলেছিলো। ফলে প্রকৃত বিজ্ঞান সাধনার পথ প্রচণ্ডভাবে বাঁধা পেতে লাগলো।

কৃষিক্ষেত্রে লিসেনকো ‘অ্যারোভাইজেশন’ নামে এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। এই পদ্ধতি ‘ভার্নালাইজেশন’ নামেও পরিচিত। তিনি দাবি করেন, শীতকালীন শস্যের বীজ বপনের পূর্বে নিম্ন তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় রেখে বসন্তকালে বপন করা হলে ফলন আশাতীত রকম বেশি হয় এবং রাশিয়া অঞ্চলের ভয়াবহ শীতের ক্ষতির হাত থেকে এভাবে ফসল বাঁচানো সম্ভব। লিসেনকোর বিশ্বাস ছিলো, ‘ভার্নালাইজেশন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শস্যের মৌলিক চরিত্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব। সমকালীন জেনেটিক বিজ্ঞানীরা  এ দাবিকে ছদ্মবৈজ্ঞানিক বলে উড়িয়ে দেন।

ইউক্রেন অঞ্চলের কৃষি বিভাগের ‘পিপল’স কমিসার’ আলেকজ্যান্ডার শিলখটার ট্রোফিম  লিসেনকোর তত্ত্বে বিশেষ আগ্রহী  হুয়ে উঠেছিলেন। তিনি ‘ভার্নালাইজেশন’কে ‘মিরাকল’ হিসেবে আখ্যা দেন। মজার ঘটনা হচ্ছে, শস্যের বীজে শীতলতা প্রদানের প্রক্রিয়া ট্রোফিম লিসেনকো’র বেশ আগে থেকেই কৃষিক্ষেত্রে পরিচিত ছিলো। উনিশ শতকের প্রথমদিকে মার্কিন ও রাশান কৃষিক্ষেত্রে এবং বিশ শতকের জার্মান কৃষিক্ষেত্রে এর পরিচিতি ছিলো। তবে এর কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে উত্তীর্ণ ছিলো না। শস্য প্রজননবিদ পেত্রো লিসিৎসিন ও নিকোলাই তুলাইকভ, জেনেটিক বিজ্ঞানী আন্দ্রেই স্যাপেগিন ও উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ববিদ নিকোলাই ম্যাকসিমভ এর ব্যবহারিক প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে করার আগে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রশ্নটি তুলেছিলেন।

বিজ্ঞানের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিষয়ে লিসেনকো ভাষণ দিচ্ছেন; Image Source: hplusmagazine.com

সমাজতান্ত্রিক দেশের কৃষি বিভাগের কর্তারা বিশেষজ্ঞদের এই দাবির প্রতি ভ্রূক্ষেপই করলেন না। প্রক্রিয়াটির যথার্থতার উপর বিশেষ কোনো বৈজ্ঞানিক যাচাই না করেই ১৯৩১ সালে কৃষিক্ষেত্রে ভার্নালাইজেশন প্রয়োগ  করার আদেশ জারি করা হলো। ট্রোফিম লিসেনকো মাত্র ২-৩ বছরের মধ্যে শস্যের নতুন সংস্করণ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেখানে জেনেটিক বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার ফল ৪-৫ বছরের মধ্যে পাবার কথা বলেছিলেন। লিসেনকোর প্রতিশ্রুতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বেশি আকৃষ্ট করেছিলো।

১৯৩২-১৯৩৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিলো। ট্রোফিম লিসেনকো ১৯৩৪ সালে ইউক্রেনের ‘একাডেমি অব সায়েন্স’এর সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ‘ওডেসা ব্রিডিং জেনেটিক ইন্সটিটিউট’ এর পরিচালক হয়েছিলেন। এসময় তিনি প্রতিষ্ঠিত জেনেটিক্সের অনেক বিষয় মার্ক্সীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের দোহাই দিয়ে খারিজ করে দেন। তার মতে, জীবের বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য কোষের বিশেষ কোনো অঙ্গানু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবার তত্ত্ব পুঁজিবাদী মনোভাবের ফলে উদ্ভাবিত হয়েছে!

১৯৩৫ সাল নাগাদ লিসেনকোর তত্ত্ব মারাত্মক ভুল প্রমাণিত হলো। ভার্নালাইজেশন প্রক্রিয়ার শস্যের বীজে শীতলতা প্রয়োগে উল্টো বীজের প্রজনন ক্ষমতা কমে গিয়েছিলো। ট্রোফিম লিসেনকো ততদিনে সোভিয়েত রাজনীতির দুষ্টচক্রে রীতিমতো খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তার ব্যর্থতা ঢাকতে এককালের সহকর্মী ও প্রতিপক্ষকে দায়ী করতে উঠেপড়ে লাগলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে ততদিনে স্টালিনের স্বৈরশাসন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লিসেনকো এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিজ্ঞান পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নিকোলাই ভাভিলভকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে লিসেনকো এই পদে আসীন হন। এবার তিনি সরাসরি জেনেটিক বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগলেন। 

ট্রোফিম লিসেনকো, নিকিতা ক্রুশ্চেভ ও অ্যানাটাস মিকোয়ান; Image Source: washingtonexaminer.com

১৯৩৯ সালে লিসেনকো পিপল’স কমিসারদের কাউন্সিল চেয়ারম্যানের কাছে এককালের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চিঠি পাঠালেন। ফলে রাষ্ট্রের দমন পীড়ন আরো তীব্র আকার নিলো। এ আই মুরালভ, এ এস বন্ড্রানকো ও জি কে মেইস্টারের মতো বিজ্ঞানী দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে প্রায় ১২ জন বিজ্ঞানী এভাবে মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিহত হন।

বলা হয়ে থাকে, এসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে সামান্য কারণে নির্যাতিত বিজ্ঞানীর সংখ্যা নাৎসি জার্মানিতে  নির্যাতিত বিজ্ঞানীর চেয়ে বেশি ছিলো। কারণ, এসময় বিজ্ঞানের সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাপনে কল্যাণ করার চাইতে রাজনৈতিক মতবাদের প্রসারে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিলো। ফলে মতবাদের থাবা বিজ্ঞানের শ্বাসরোধ করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো। তাতে মতবাদ সাময়িক বিজয় পেয়েছিলো- কিন্তু বিজ্ঞানে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিলো। শস্য উৎপাদনে সোভিয়েত ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে পিছিয়ে গিয়ে পশ্চিমা বাজারের ক্রেতায় পরিণত হয়েছিলো।

Related Articles