Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেলিপ্যাথি: গল্প নয় সত্যিই যখন মানুষ প্রিয়জনের বিপদ আগে থেকে টের পেয়েছিল

গ্রীষ্মকালের উত্তপ্ত এক রাত। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন এলি ব্ল্যাক। হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল। প্রচণ্ড অস্থির লাগছে তার। হুট করে ঘুম ভাঙার মতো তো কিছু হয়নি, তবে এতো ভয় লাগছে কেন? সবার আগে মাথায় এলো বাবার কথা। বাবা ঠিক আছে তো? ফোন দিয়ে কোনো উত্তর পেলেন না। বেজে বেজে কেটে গেল লাইন, বাড়তে থাকলো এলির উত্তেজনা। সে রাতেই ঘুমন্ত বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন বাবার বাড়িতে। বাবা ছাড়া আর কেউ থাকে না সেখানে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অবিরত কলিং বেল বাজাতে লাগলেন। নাহ, দরজা খুলছে না বাবা। ভেতরে কারো কোনো সাড়াশব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। চিন্তিত এলি পানির পাইপ বেয়ে কোনোমতে দু’তলায় উঠে দেখলেন ইজি চেয়ারে ঘাড় কাত করে পড়ে আছে বাবার নিষ্প্রাণ দেহটা। ৯১১ এ ফোন করে পুলিশ ডেকে ভেতর থেকে বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারলেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আরও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগেই মারা গেছেন বেচারা।

হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙেই এলির কেন বাবার কথা মনে পড়ল? কেন তার জন্য মনে কু-ডাক ডাকলো? একেই কি বলে টেলিপ্যাথি? টেলিপ্যাথি যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে আপনার সাথেও। টেলিপ্যাথিকে বলা হয় মন থেকে মনের যোগাযোগ। বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রেমিক-প্রেমিকা, এমনকি পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে টেলিপ্যাথি। মা আর শিশুর মধ্যে এ ধরনের যোগাযোগ তো আমরা প্রায়ই দেখি, এই ঘটনার সর্বোত্তম উদাহরণ হতে পারেন কালজয়ী ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ এবং তার মা আয়েশা ফয়েজ। নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত ছেলে মারা যাওয়ার আগমুহূর্তে ঢাকায় বসেই মা টের পেয়েছিলেন ছেলের সাথে খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আর ফোনের কাছ থেকে দূরে বসেও কে ফোন করছে তা টের পাওয়ার ঘটনা তো কমবেশি আমাদের সবার সাথেই ঘটে।

মন থেকে মনে যোগাযোগের নাম টেলিপ্যাথি; Source: dzhingarov.com

গ্রীক শব্দ ‘টেলি’ অর্থ দূর থেকে আর ‘প্যাথি’ অর্থ অনুভব করা। টেলিপ্যাথিতে বিশ্বাস করেন না এমন মানুষ যেমন অহরহ পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি তীব্রভাবে টেলিপ্যাথিতে বিশ্বাস করেন এমন মানুষও বিরল নন। “তুমি ঠিক আছো তো? কেন যেন মনে হলো তোমার কোনো বিপদ হয়েছে”- এ ধরনের কথা শুনতে অভ্যস্ত অনেকেই। এমনকি মনস্তত্ত্ববিদরাও টেলিপ্যাথিকে এখন বিজ্ঞানসম্মত বলেই ঘোষণা দিয়েছেন। ইএসপির (এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন) জোরে অনেকেই আগে থেকে আভাস পেয়ে যাবেন সামনে কী ঘটতে চলেছে। এমনকি এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় এখনো প্রস্তর যুগের কিছু কৌশল ব্যবহার করেই দূরদূরান্তে অবস্থানরত প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করে। শিকারী গোত্রগুলো নাকি মানসিক শক্তি ব্যবহার করে প্রাণীদের ডেকে আনতে পারে ফাঁদের গহীনে।

সে যা-ই হোক, সত্যি সত্যি টেলিপ্যাথির জোরে প্রিয়জনের খবর আগে থেকে টের পেয়েছিলেন এমন পাঁচ ব্যক্তির মুখ থেকেই শুনুন তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা।

১. বড় ভাই যে খুন হয়েছে তা আগেই অনুভব করেছিল ছোট ভাই

১৯৬০ এর দিকের কথা। সমুদ্রের বেশ গভীরে অবস্থান করছিল আমার জাহাজ। প্রায়ই স্বপ্নে দেখতাম নিজের ঘরে বিছানার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছি আমি, কথা বলছি স্ত্রীর সাথে। জাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানোর কয়েক দিনের মধ্যেই স্ত্রীর কাছ থেকে চিঠি পেলাম একটা। বেশ উদ্বেগের সাথে সে জানতে চেয়েছে আমি ঠিক আছি কিনা। দীর্ঘ সেই চিঠিতে লেখা আছে, গত শনিবারে সে নাকি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে বিছানার কাছে। স্পষ্ট শুনেছে বিছানার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তার নাম ধরে ডাকছি আমি। গত শনিবার রাতেই তো একই স্বপ্ন দেখেছি আমিও! মন থেকে বিশ্বাস করি এখন, মানুষ ঘুমিয়ে গেলে আত্মারা দেহ ছেড়ে ঘুরতে বের হয়। আর আমার আত্মা চলে যায় বাড়িতে, স্ত্রীর কাছে।

ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়া ভাইয়ের কথা আগেই টের পেয়েছিল ছোট ভাই; Source: videogamegenius.com

এ তো গেল ভালো অভিজ্ঞতার কথা, ১৯৭১ সালের দিকে দুর্বিষহ এক স্মৃতির কবলে পড়ি আমি। মানসিক যোগাযোগের প্রেক্ষাপটটি এবার একটু আলাদা অবশ্য। রাতের বেলা ঘরে বসে স্ত্রীর সাথে টেলিভিশন দেখছি। হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়া আমার পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলো। মনে হলো, কেউ যেন ছুরি দিয়ে সমানে খুঁচিয়ে চলেছে পিঠটা। আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না, স্থানুর মতো বসে অপেক্ষা করছি কখন শেষ হবে এই ব্যথা। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল আমার, স্ত্রীকে জানালে সে-ও যেন একটু ঘাবড়ে যায়। পরদিন কাজে গিয়েই হাতে পাই ভয়ঙ্কর এক দুঃসংবাদ। আমার ভাইকে কারা যেন ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলেছে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় তার পিঠে ছুরি দিয়ে অসংখ্যবার আঘাত করা হয়েছে। খুনের সময়- গত রাতে ঠিক যে মুহূর্তে আমি পিঠে ব্যথা অনুভব করি সেই সময়, রাত ১০টার দিকে।

নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া টেলিপ্যাথির কথা এভাবেই বর্ণনা করেন নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মি. রজার হ্যারল্ড।

২. বিশ্বযুদ্ধে পলায়নরত ভাইয়ের অবস্থান জানতে পেরেছিলেন বোন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা, একরাতে স্বপ্নে দেখলাম আমার ভাইয়ের স্ত্রীর বাড়িতে এক লোককে লুকিয়ে রেখেছি আমি, লোকটি কে তা ঠিক মনে নেই। জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, নাৎসিরা কুচকাওয়াজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে, সবার পায়ে জ্যাক বুট। লুকিয়ে থাকা লোকটার সাথে বেশ বড় একটা ব্যাগ আছে, ওটাকে বারবার ফেলে দিতে চাইছে সে। আমার কাছে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে হতবাক হয়ে বসে ছিলাম আমি। ক’দিন পরেই জানতে পারি, সে রাতে আমার ভাই যে প্লেনে ছিল, তাতে আঘাত হানে নাৎসিরা। প্লেন গিয়ে পড়ে একেবারে শত্রুপক্ষের ঘাঁটির সামনে। মিত্রপক্ষের কয়েকজন তাকে নিরাপদ জায়গায় টেনে এনে প্যারাস্যুটটা মাটিতে পুঁতে ফেলে। স্বপ্নে দেখা লুকিয়ে থাকা সেই লোকটার ব্যাগটা কি তাহলে আমার ভাইয়ের প্যারাস্যুটের কথাই ইঙ্গিত করছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ছবি; Source: defense.gov

এর কয়েক মাস পরেই আরেকটি স্বপ্ন দেখলাম আমি। এবার দেখলাম আগেরবার লুকিয়ে থাকা সেই লোকটি বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। হাতে একটি স্যুটকেস। সোজা হেঁটে গিয়ে উঠল এক বাড়িতে। এত পরিস্কার ছিল সে স্বপ্ন যে দিব্যি এখনো পর্যন্ত বাড়িটির নিখুঁত বর্ণনা দিতে পারব আমি। ঘুম থেকে ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করছিলাম। কানে এলো ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। আমাদের এলাকায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনলে নাকি প্রিয়জন ঘরে ফিরে আসে। তার ঠিক দু’ সপ্তাহের মধ্যে ইংল্যান্ডে, আমাদের বাড়িতে ফিরে এলো আমার ভাই। হাতে আমার স্বপ্নে দেখা সেই স্যুটকেসটি। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, যে বাড়িটি আমি স্বপ্নে দেখেছি সত্যিই সেখানে ছিল সে।

ইংল্যান্ডে বসবাসরত মিসেস জে. টি. প্যাট্রিয়ার্ক নাম্নী এক নারী প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান এভাবেই।

৩. চিকিৎসক বুঝতে পেরেছিলেন রোগী অসুস্থ

কয়েক বছর আগে অসুস্থ মার দেখাশোনা করছিলাম আমি। হঠাৎ করেই তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি আমি। পারিবারিক ডাক্তারকে বারবার ফোন করছিলাম তিনি যদি একবার এসে মাকে একটু দেখে যেতে পারতেন। ফোন ধরল না কেউ। হাসপাতালে ফোন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। দরজা খুলতেই দেখি দাঁড়িয়ে আছেন সেই চিকিৎসক ভদ্রলোক!

Source: highmarkhealth.org

মাকে পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে আমাকে শোনালেন অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। গাড়ি চালিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ যেন কানের কাছে আমার গলা শুনতে পেলেন, ‘মা অসুস্থ, একবার বাড়িতে আসুন প্লিজ!’ সাথে সাথেই গাড়ি ঘুরিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে দেখেন মা সত্যিই অসুস্থ। এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।

চিকিৎসকদের নাকি ইএসপি ক্ষমতা এমনিতেই বেশি থাকে, সে কথাই যেন আরেকবার সত্য প্রমাণিত করলেন মিসেস এলিয়েনা ওয়াটসনের চিকিৎসক।

৪. স্বামীর তাকে প্রয়োজন, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন স্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরে মেয়েকে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। আমি আর আমার মেয়ে দুজনেই একসাথে শুনতে পেলাম আমার স্বামী আমার নাম ধরে চিৎকার করছে, “অ্যান! অ্যান!” বাচ্চাটা আমার দিকে অবাক চোখ মেলে তাকিয়ে আছে, তার বাবার তো এই সময়ে বাড়ির বাইরে আসার কথা নয়। প্রায় দশ মিনিট ধরে তাকে চারপাশে খুঁজলাম আমরা, কোথাও তার ছায়াটিও নেই। ফোন করলেও বারবার অপারেটর জানাচ্ছে লাইনটি এখন ব্যস্ত আছে।

Source: sarahbeckman.org

সাথে সাথে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে দেখি ঘরের সামনের দরজা হাঁ করে খোলা। রাস্তার উপরে ফোন হাতে নিয়ে বসে পাগলের মতো কাঁদছে আমার স্বামী। “অ্যান! আমার বাবা আর নেই!” একটি কথাই শুধু বলতে পারল বেচারা। উত্তর দিলাম, “আমি জানি কখন বাবা মারা গেছে। তুমি আমার নাম ধরে ডাকছিলে তখন, শুনেছি আমি”। স্বামীর হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখি সত্যিই ঠিক আধ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল তার কাছে।

বিপদের সময়ে মানুষের টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা যে আসলেই বেড়ে যায় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ অ্যান বেকার।

৫. বন্ধুকে ফোন করার আগেই চলে আসে তার ফোনকল

Source: googleusercontent.com

যখনই ফোনের ঘণ্টা বাজে বা ইমেইলের সংকেত শুনি, আমি বুঝতে পারি এটা কে পাঠাতে পারে বা কার ফোন হতে পারে। তবে একবার আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক বন্ধুর ফোন পেয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল, ওর কোনো খবর পাই না। বছর দুয়েক হয়ে গেছে ওর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। ফোন দেবো দেবো করেও দেওয়া হচ্ছিল না। শেষমেশ যখন সত্যিই ওকে ফোন করব বলে ফোন হাতে নিয়েছি, তখনই বেজে উঠল ফোন। পর্দায় নাম ভাসছে প্রবাসী সেই বন্ধুর! হতবাক হয়ে ভাবলাম, এটাও কি সম্ভব!

কেট ফার্গুসন তার জীবনে ঘটা টেলিপ্যাথির কথা জানালেন এভাবেই।

ফিচার ইমেজ- homestead.com

Related Articles