Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত ৫ মৃতদেহের করুণ পরিণতি

১) লুডউইগ ভ্যান বিটোভেন

ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী কম্পোজার ও পিয়ানিস্ট লুডউইগ ভ্যান বিটোভেন মারা যান ১৮২৭ সালের ২৬ মার্চ। তার মৃত্যু ঠিক কোন কারণে হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্কের অবসান হয় নি আজও। অ্যালকোহল, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, লিভার ড্যামেজ, লীড পয়জনিং, সার্কোইডোসিস এবং হুইপ্‌ল’স ডিজিজকে এজন্য দায়ী করা হয়ে থাকে।

তার ময়নাতদন্তে নিযুক্ত ডাক্তার তাড়াহুড়ো করে কাজ সেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে কাজ শেষে তার খুলির বেশ কিছু অংশই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কপালের দিকে কিছু অংশ, চোয়াল এবং কানের দিকের হাড় হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক বিটোভেনের অসিকলগুলো সরিয়ে ফেলেছিলেন তার বধিরতার কারণ খুঁজে বের করার আশায়।

বিটোভেন; Source: Youtube

এরপর অনেক দিন গড়িয়ে যায়। ১৯৯০ সালের দিকে পল কফম্যান নামক এক লোক তাদের ঘরের চিলেকোঠায় ‘বিটোভেন’ লেখা একটি বাক্স খুঁজে পান। সেখানে তিনি একটি ভাঙাচোরা খুলি খুঁজে পান। এর সূত্র ধরেই তিনি জানতে পারেন, তার এক পূর্বপুরুষ ছিলেন ডাক্তার, যিনি ১৮৬৭ সালে কবর থেকে বিটোভেনের মৃতদেহ তুলে মাথাটা নিয়ে চলে আসেন। স্যান জোসে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে তিনি এটা নিশ্চিতও হয়ে নেন। সেক্ষেত্রে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল ইউনিভার্সিটিতে আগে থেকেই থাকা বিটোভেনের চুল।

তিনি মারা যাবার পর অনেকেই এসেছিল তার চুল সংগ্রহ করতে! তার চুলগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মাঝে আছে লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, দ্য ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও বিটোভেন-হাউজও। এমনকি তার চুল ব্যবহার করে বানানো একটি হীরে ২,০২,৭০০ ইউএস ডলারে বিক্রিও হয়েছিল!

২) জোহানেস ব্রাহ্‌মস এবং জোহান স্ট্রাউস জুনিয়র

জার্মানির হামবুর্গে জন্ম নেয়া বিখ্যাত কম্পোজার জোহানেস ব্রাহ্‌মস তার পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন অস্ট্রিয়ার রাজধানী এবং একইসাথে দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ভিয়েনাতে। ওদিকে ‘দ্য ওয়াল্টজ কিং’ খ্যাত জোহান স্ট্রাউস জুনিয়র ছিলেন জন্মগতভাবেই একজন অস্ট্রিয়ান। কালোত্তীর্ণ সুর সৃষ্টির পাশাপাশি তারা ছিলেন বেশ ভালো বন্ধুও। তাই মৃত্যুর পর ভিয়েনার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাদের দুজনকে পাশাপাশিই স্থান দেয়া হয়েছিল।

Source: Listverse

কিন্তু এই বিখ্যাত হওয়াটাই তাদের; দুঃখিত, তাদের মৃতদেহের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০০২ সালে অন্দ্রেজ জাজকাজ নামে এক লোক কবরস্থানে ঢুকে মাটি খুঁড়ে তাদের কফিন দুটো বের করে। এরপর একজোড়া প্লায়ার্সের সাহায্যে সে এই দুই বিখ্যাত সুরকারের কিছু দাঁত তুলে নেয়! কেন? কারণ সে ছিল বিভিন্ন জিনিসের একজন সংগ্রাহক। নিজের সংগ্রহশালাকে আরো সমৃদ্ধশালী করতেই সে এই অদ্ভুত কাজটি করেছিল। বেশ কয়েক বছর ধরেই ভিয়েনার নানা কবরস্থান থেকে সে খুলি ও দাঁত চুরি করে যাচ্ছিল, ইচ্ছে ছিল নিজের জাদুঘর বানিয়ে সেখানে সেগুলোর প্রদর্শনীর আয়োজন করবে!

২০১২ সালে নিজের এই সংগ্রহশালার ভিডিও ধারণ করে সে এটা ইউটিউবে প্রকাশও করেছিল। সেখানে নিজের সংগ্রহ করা জিনিসগুলোকে দেখিয়ে গর্ব করে সে বলেছি, “একজন শৌখিন ব্যক্তি হিসেবে আমি ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বিভিন্ন দাঁতের এক অবৈধ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।”

৩) থমাস পেইন

জন্মগতভাবে ইংরেজ হওয়া সত্ত্বেও থমাস পেইন ছিলেন একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও বিপ্লবী। আমেরিকার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও পরবর্তী জীবনের নানা কাজকর্ম তাকে জনগণ ও সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত করেছিল। ফলশ্রুতিতে দারিদ্র্য ও বিষণ্নতা ঘিরে ধরে তাকে। ১৮০৯ সালে অবশেষে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের মায়ায় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে।

Source: A&E’s Biography

পেইনের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিল, নাম তার উইলিয়াম কব্বেট। লেখক কব্বেট মনে করতেন, পেইনের মৃতদেহকে ধারণের মতো যোগ্যতা আসলে আমেরিকার নেই, এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান ইংল্যান্ড, তার মাতৃভূমি। অবশেষে ১৮১৯ সালে কোদাল নিয়ে নিউ ইয়র্কের নিউ রোশেল কবরস্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন কব্বেট। তিনি পেইনের হাড়গোড় সংগ্রহ করে সেগুলোকে একটি বাক্সে ভরে নেন, এরপর যাত্রা করেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সীমানা পার হওয়ার সময় সীমান্তরক্ষীদের অবহেলায় তিনি কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইংল্যান্ডে পৌঁছে যান। কিন্তু ইংল্যান্ডে পেইনের প্রতি কেউই তেমন আগ্রহ দেখায় নি। ফলে যে উদ্দেশ্য তথা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে কব্বেট পেইনের দেহাবশেষ এনেছিলেন, তা একেবারে মাঠে মারা যায়। তাই মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এগুলো তার বাড়ির চিলেকোঠাতেই রেখেছিলেন।

বেচারা পেইনের দেহাবশেষের এরপর যে কী হয়েছিল তা ঠিক করে কেউই বলতে পারে না। হয় সেই হাড়গুলোই কব্বেটের বাড়ির পেছনে কবর দেয়া হয়েছিলো, নতুবা সেগুলো এক এক করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়েছিল! ১৮৫০ সালে ইংরেজ এক যাজক দাবি করে বসেন, তার কাছে পেইনের ডান হাতের হাড় আছে। ১৯৩০ সালে এক ব্রিটন নারী জানান, পেইনের চোয়ালের হাড় তার কাছে আছে। ধারণা করা হয়, তার পাঁজরের হাড়গুলোর ঠিকানা হয়েছিল ফ্রান্সে। কেউ কেউ আবার মনে করেন, তার হাড়গুলো ব্যবহার করে ইংরেজদের কোটের বোতাম বানানো হয়েছিল! ১৯৮৭ সালে জন বার্গেস নামে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিক দাবি করে বসেন, লন্ডনে ভ্রমণের সময় থমাস পেইনের খুলি কিনেছিলেন তিনি! অবশ্য তার সেই দাবির সত্যতা নিরুপণ করা সম্ভব হয় নি।

৪) রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট

রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট মারা গিয়েছিলেন তার কাঁধে লাগা তীরের কারণে সৃষ্ট ক্ষত থেকে। মৃত্যুর পর বিখ্যাত এ রাজার দেহের পরিণতি অবশ্য যে কাউকে বিস্মিত করবে।

Source: Wikimedia Commons

তার নাড়িভুঁড়িগুলো পুঁতে রাখা হয়েছিল চালুসে, যেখানে তার মৃত্যু হয় সেখানেই। এরপর নাড়িভুঁড়িহীন সেই দেহটি নিয়ে আসা হয় ফন্টেভ্রড অ্যাবেতে। সেখানে বাবা-মায়ের পাশেই অন্তিম শয্যায় শায়িত হন তিনি। তবে এখানেও তার দেহ থেকে আরেকটি অংশ খোয়া যায়, তা হলো তার হৃৎপিণ্ড। দেহ থেকে বের করে তার হৃৎপিণ্ডটি মার্টল, মিন্ট, ডেইজি, ফ্রাঙ্কিনসেন্স এবং মার্কারির মিশ্রণে ডুবিয়ে একটি বাক্সে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।

৫) জন এফ. কেনেডি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি (যিনি সংক্ষেপে ‘জেএফকে’ নামেই বেশি পরিচিত) ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। অসওয়াল্ডের একটি গুলি সরাসরি তার মাথায় আঘাত হানে। ফলে খুলির কিছু অংশের সাথে সাথে মগজও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যখন তারা হাসপাতালে পৌঁছান, তখন দায়িত্বরত ডাক্তাররা দেখতে পান জ্যাকি কেনেডি সেই মগজের কিছু অংশ হাতে ধরে রেখেছেন!

Source: Hank Walker/The LIFE Picture Collection/Getty Images

ময়নাতদন্তের পর তার মগজ স্টেইনলেস স্টিলের একটি কন্টেইনারে ভরে সিক্রেট সার্ভিস হোয়াইট হাউজের একটি গোপন কেবিনেটে রেখে দেয়। ১৯৬৫ সালে রবার্ট কেনেডি সেই মস্তিষ্ক, রক্তের স্যাম্পল, টিস্যু, হাড়ের টুকরা সহ বিভিন্ন কন্টেইনার ন্যাশনাল আর্কাইভসে পাঠান। পরের বছর সেখানকার কর্মীরা যখন সেগুলোর খোঁজ করতে যান, তখন তারা দেখেন টিস্যু ও ব্রেইন হাওয়া হয়ে গেছে! প্রায় ৩০ জন কর্মীকে জিজ্ঞেস করেও জেএফকের খোয়া যাওয়া মস্তিষ্কের কোনো কূলকিনারা করা যায় নি। কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের মতে, কতগুলো বুলেট কেনেডির মস্তিষ্কে আঘাত হেনেছিল, কোন অ্যাঙ্গেল থেকে সেগুলো এসেছিল, তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো লুকাতে এমনটি করা হয়েছিল।

ফিচার ইমেজ- Wikimedia Commons

Related Articles