Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওয়ার অব দ্য বাকেট: একটি বালতির জন্য হারিয়েছিল হাজার প্রাণ

যুদ্ধ কোনো বিরল ঘটনা নয়। এ পর্যন্ত বিশ্বে হাজার হাজার যুদ্ধ হয়েছে। প্রত্যেকটির পেছনেই কোনো না কোনো কারণ ছিল। তবে কিছু কিছু যুদ্ধ হয়েছে, যার কারণগুলো ছিল খুবই অদ্ভুত। মাঝে মাঝে হাস্যকরও বটে। এমনই এক যুদ্ধ ছিল মধ্যযুগের বাকেট ওয়ার বা বালতির যুদ্ধ। একটি বালতির জন্য সে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ।

মধ্যযুগে মানুষ বড়সড় জিনিস থেকে শুরু করে মামুলী সব জিনিস নিয়েও দাঙ্গা-হাঙ্গামায় মেতে থাকতো। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই বালতি যুদ্ধ। যুদ্ধটি হয়েছিল ১৩২৫ সালে বর্তমান ইতালির উত্তরাঞ্চলে। এর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি শুনতে যতটা সরল মনে হয় আসলে ততটা নয়। প্রকৃত ঘটনা ছিল অনেক জটিল।

এর শুরুটা জানতে হলে আমাদেরকে যুদ্ধের প্রায় ২০০ বছর আগে ফিরে যেতে হবে। ১১৫৪ সালের অক্টোবরে রোমান সম্রাট ফ্রেডেরিক বারবারোসা ইতালি আক্রমণ করেন। তখন ইতালির শাসন ব্যবস্থা ছিল পোপদের অধীনে। কিন্তু সম্রাট ফ্রেডেরিক মনে করতেন, তিনিই ঈশ্বরের প্রতিনিধি। পোপরা নন কোনোভাবেই। তাদের হাতে কেন শাসন ব্যবস্থা থাকবে? তিনি হাত বাড়ান ইতালির দিকে। 

রোমান সম্রাট ফ্রেডেরিক বারবারোসা; Image Source: warhistoryonline.com

কিন্তু ইতালিয়ানরা তাকে মেনে নিতে পারে না। তারা মনে করে, ঈশ্বর আর মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে পোপরাই। তারাই ঈশ্বরের প্রতিনিধি, সম্রাটরা নন। এ কারণে তৎকালীন খ্রিস্টান সমাজে পোপদেরই নেতা হিসেবে দেখা হতো। ক্ষুব্ধ ফ্রেডেরিক ইতালির মিলান, টরটোনা ও প্যাভিয়া শহর দখল করেন। সেগুলোতে তিনি নিজেকে ইতালির রাজা হিসেবে বহাল করেন। এরপর বলনিয়া ও টুসকানি শহর দুটিও জয় করেন।

অন্যান্য শহরগুলোতেও তিনি আক্রমণ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে ১১৭৬ সালের ২৯ মে লেগনানো যুদ্ধে পোপদের লম্বার্ড লিগের কাছে তার পরাজয় ঘটে। এর ফলে সম্রাট ফ্রেডেরিককে জার্মানিতে চলে যেতে হয়। তবে ইতালি ছেড়ে গেলেও সেখানকার মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন। এই বিভেদ চলতে থাকে শত শত বছর ধরে।

গোয়েলফ এবং গিবেলিনদের মধ্যে সংঘাত; Image Source: warhistoryonline.com

সমগ্র ইতালির মানুষ তখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক পক্ষ রোম সম্রাটের অনুসারী আর অন্য পক্ষ পোপের অনুসারী। সম্রাটকে যারা সমর্থন করতো তাদের বলা হতো গিবেলিন। অন্যদিকে পোপদের পক্ষের লোকদের বলা হতো গোয়েলফ। তখন ইতালির শহরগুলো আজকের মতো সমন্বিত ছিল না। শহরগুলোর শাসন ব্যবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কিছু শহর ছিল গিবেলিনদের অধীনে, আবার কিছু শহর ছিল গোয়েলফদের অধীনে। ভিন্ন এই শহরগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। এমনই দুটি শহর ছিল বলনিয়া আর মডেনা। বলনিয়া ছিল গোয়েলফদের আর মডেনা ছিল গিবেলিনদের।

ফ্রেডেরিক ইতালি থেকে বের হবার আগে গোয়েলফ এবং গোবেলিন শহরগুলোর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে যান। কিন্তু বলনিয়া আর মডেনার মধ্যে সীমানা নিয়ে জটিলতা দেখা যায়। এ কারণে প্রায়ই এই দুই শহরের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। ১২৯৬ সালে বলনিজরা মডেনাতে আক্রমণ করে বাজ্জানো ও স্যাভিগনো দখল করে নেয়। তখন যারা সম্রাটকে সমর্থন করতো তারা এসব এলাকা ত্যাগ করে। এভাবে সীমানা নিয়ে দাঙ্গা এবং একে অন্যের ভূমি দখল চলতে থাকে।

পোপ দ্বাবিংশ জন; Image Source: warhistoryonline.com

১৩০৯ সালে মাঞ্চুয়া, মডেনা, পারমা এবং রেজ্জিওর শাসক হন পেসেরিনো বনাকলসি। তার সময়ে মডেনা থেকে বলনিজ অঞ্চলে আক্রমণ আরো বেড়ে যায়। তখন পোপ দ্বাবিংশ জন বনাকলসিকে চার্চের শত্রু হিসেবে ঘোষণা দেন। পোপ তখন জনগণকে প্রলুব্ধ করেন বনাকলসির যেকোনো ক্ষতিসাধন করার জন্য। বলা হয়, এটা করলে তাদের পাপমোচন হয়ে যাবে এবং নরকে তাদের পুড়তে হবে না। সাথে বলা হয়, তাকে খুন করলেও কোনো শাস্তি হবে না।

১৩২৫ সালের শুরুতে এই দুই শহরের দাঙ্গা আরো বেড়ে যায়। জুলাই মাসে বলনিজরা মডেনার খামারগুলোতে গিয়ে আক্রমণ করে। তাদের মানুষদের হত্যা করে এবং জমিজমা পুড়িয়ে দিয়ে আবার বলনিয়াতে ফিরে আসে। তারা মডেনিজদের জিনিসপত্র লুটপাট করে আনতো। তারা ফিরে আসার পর এগুলো তাদের সাফল্যের প্রতীক হিসেবে প্রদর্শন করতো। তারা পরের মাসেও আবার আক্রমণ করে। দুই সপ্তাহ ধরে মাতলামি করে আর যতটা পারে ক্ষতিসাধন করে।

বনাকলসিও বসে থাকার পাত্র নন। তিনি সেই বছরের সেপ্টেম্বরে এর প্রতিশোধ নেন। তার মাঞ্চুয়ান সৈন্যদল মন্টেভেগিলোর বলনিজ দুর্গ দখল করে। দুর্গটি ছিল বলনিয়া থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে। তখন বলনিয়াতে খুব বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মডেনিজরা এর সুযোগ নেয়। তখন কিছু মডেনিজ সৈন্য লুকিয়ে বলনিয়াতে প্রবেশ করে। সেখানে শহরের কেন্দ্রে সেন্ট ফেলিস গেটের পাশে একটি কুয়া ছিল। কুয়াটির পাশে রাখা ছিল একটি বালতি। এতে মডেনিজদের কাছ থেকে লুট করে আনা সম্পদ রাখা ছিল। সৈন্যরা তখন বালতিটি চুরি করে মডেনাতে নিয়ে আসে। তারপর তারা এটাকে মডেনার প্রধান কুয়ার পাশে রাখে প্রদর্শনীর জন্য।

বলনিজরা এটা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা মডেনিজদের কাছে মালামালসহ বালতিটি ফেরত চায়। মডেনিজরা অবশ্যই সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। বলনিয়া তখন মডেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। একটি বালতির জন্য সেই যুদ্ধ, যেন অনেকটা বাচ্চাদের মধ্যে ঝগড়া লাগার বিষয়গুলোর মতো। সেদিন ছিল শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ১৩২৫ সাল। শুরু হয় সেই কুখ্যাত যুদ্ধ। বালতিটি ওক কাঠ দিয়ে তৈরি ছিল। এজন্য এই যুদ্ধটি ‘দ্য ওয়ার অব দ্য ওকেন বাকেট’ নামেও পরিচিত।

বলনিজদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রিমিনির লর্ড ম্যালাটেসটিনো দেল ওচ্চিও। তাদের মিত্র ছিল ফ্লোরেন্স এবং রোমাগনা। মিত্রদের লক্ষ্য ছিল মন্টেভেগিলো অবরোধ করা এবং এটি ফিরিয়ে নেয়া। অন্যদিকে বনাকলসি মডেনা, মাঞ্চুয়া এবং ফেরারার সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার সাথে রোমান সম্রাটের পাঠানো জার্মান সৈন্যদলও ছিল। তার সাথে আরো ছিলেন ভেরনার লর্ড কেনগ্রান্দে দেল্লা স্কেলি এবং মিলানের লর্ড অ্যাজোনে ভিসকন্তি।

বলনিজরা বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী নিয়ে আজকের জিরিব্যাগা শহরের বাইরে জমা হয়। বলনিজদের ছিল ৩০,০০০ পদাতিক সৈন্য এবং ২,০০০ ঘোড়সওয়ার। অন্যদিকে মডেনিজদের ছিল মাত্র ৫,০০০ পদাতিক সৈন্য এবং ২,০০০ ঘোড়সওয়ার। মডেনিজদের চেয়ে বলনিজরা ছিল সংখ্যায় চার গুণ। আর এত সৈন্য জমা হয়েছিল শুধুমাত্র একটি বালতির জন্য!

মডেনিজরা সংখ্যায় কম হলেও সেদিন সূর্য ডোবার সাথে সাথে তারা বলনিজদের উপর আক্রমণ করে। এবং সেই যুদ্ধে মডেনিজরা বলনিজদের পরাজিত করে। বেশিরভাগ বলনিজরাই নাস্তানাবুদ হয় এবং বলনিয়াতে পালিয়ে যায়। মডেনিজরা তখন শহরের দেয়ালের দিকে আগাতে থাকে। কিন্তু তারা শহর অবরোধের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা দুর্গগুলো ধ্বংস করে দিয়ে আসে। এগুলোর মধ্যে ছিল ক্রেসপেল্লানো, জোলা, অ্যানজোলা ও ক্যাসটেলফ্রাংকো। তারা ২৬ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে ধরে মডেনাতে নিয়ে আসে এবং জিম্মি হিসেবে আটকে রাখে।

সেই যুদ্ধে দুই পক্ষে প্রায় ২,০০০ মানুষ মারা যায়। পরের বছর জানুয়ারিতে একটি চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী মন্টেভেগিলো এবং আরো কিছু অঞ্চল বলনিয়ার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গিবেলিন-গোয়েলফ রেষারেষি থামেনি। দুই পক্ষের যুদ্ধ আরো ২০০ বছর ধরে চলতে থাকে। অবশেষে ১৫২৯ সালে রোমান সম্রাট স্পেনের প্রথম চার্লস ইতালি আক্রমণ করেন। এটা কোনো কারণে তাদের মধ্যে একাত্মতা আনতে বাধ্য করে। গিবেলিনরা তখন পোপদের পক্ষে চলে আসে।

সেই বালতি; Image Source: knowledgenuts.com

বালতি যুদ্ধের পর সেই ওক কাঠের বালতিটি মডেনিজরা অত্যন্ত গর্বের সাথে প্রদর্শনীর জন্য রাখে। প্যালাজ্জো কমিউনালে গেলে আজও দেখতে পাওয়া যাবে সেই বালতিটি। আজ প্রায় ৭০০ বছর হয়ে গেলেও বলনিয়া মডেনার কাছ থেকে এই বালতিটি নিতে পারেনি। শুধুমাত্র একটি বালতির জন্য এত রক্তারক্তি করায় এটি ইতিহাসে একটি নির্বুদ্ধিতার প্রতীক হয়ে আছে।

This is a Bangla article about the war of the bucket in the medieval era. It contains about the reason and outcome of that war.

References:

1. The Bloodiest Medieval War Was Fought Because Of A Bucket - War History Online

2. Why 2000 People Died Fighting Over a Bucket - Youtube

Feature Image: halfarsedhistory.net

Related Articles