Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অদ্ভুত কারণে সংঘটিত হয়েছে যে যুদ্ধগুলো

মানুষ কি কেবল যুদ্ধ নিয়েই মেতে থাকতে ভালবাসে? না, নিশ্চয়ই! অন্তত সভ্যতার আলোয় নিজেদের সভ্য করে তোলার পর কারণে অকারণে নিজেদের মধ্যে মারামারি হানাহানি করাটা মানুষের জন্য অসম্ভব লজ্জার বিষয়। সভ্যতা তো আমাদের যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে যেগুলো সভ্যতার মোড়ক পরা দুয়েকজন মানুষ লড়েনি, তাতে অংশ নিয়েছে দুটো কিংবা তার চেয়ে বেশী দেশ। প্রশ্ন হলো, যুদ্ধ তো হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কারণ কী? হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে আপনার দেশগুলোর মধ্য সংঘটিত হওয়া এই যুদ্ধগুলোর মূল কারণ শুনলে। মনে হবে, আরে! এজন্য আবার যুদ্ধ করার দরকার হয় নাকি? হয়। আর এমনই অদ্ভুত আর হাস্যকর সব কারণে সংঘটিত যুদ্ধ নিয়েই এই আয়োজন।

১. দ্য পিগ ওয়ার

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এই যুদ্ধটির সাথে কোনো না কোনোভাবে শূকর প্রাণীটির যোগাযোগ আছে। আসলেও তা-ই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দুই কর্ণধার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য এই যুদ্ধটি চালিয়েছিল কেবল একটি শূকরের জন্য!

Source: Washington, Our Home

যুক্তরাষ্ট্রের মেইনল্যান্ড ও ভ্যানকুভারের মাঝখানে অবস্থিত সান ঝু দ্বীপে নিজেদের দখলদারিত্ব নিয়ে সবসময়েই বেশ ঝামেলা চলছিল যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। আমেরিকান বাসিন্দা এবং ব্রিটিশ হাডসন বে কোম্পানির কর্মী দু পক্ষের বাসস্থান ছিল সান ঝু। নিজেদের জমিজমা নিয়ে সমস্যা যে তাদের মধ্যে তৈরি হতো না তা নয়। তবে সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে ১৮৫৯ সালের ১৫ জুন

আমেরিকান নাগরিক লাইম্যান কাটলার এদিন নিজের আলুর জমিতে শূকর দেখতে পেয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন। ফলে ক্ষেপে যায় ব্রিটিশরা। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায় তারা কাটলারকে। আমেরিকান সামরিক বাহিনী ঘটনাটি জানতে পারলে ক্যাপ্টেন জর্জ পিকেট সৈন্যদের নিয়ে চলে আসেন সান ঝু-তে। আমেরিকা সৈন্য পাঠিয়েছে, ব্রিটিশরা কি বসে থাকবে নাকি? চলে এল ব্রিটিশদের ভারী নৌবাহিনী। কয়েক সপ্তাহ প্রচন্ড গোলমালের পর অবশেষে অক্টোবরে শান্তিচুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। দুই দেশের সামরিক বাহিনী সান ঝু দ্বীপের অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। একটা শূকরের কারণে পুরো সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ, ভাবা যায়?

২. দি নিকা রায়ট

ঘোড়দৌড় তখন বিভক্ত হয়ে পড়েছিল দুই দলের মধ্যে; Source: History Collection

এবার যে যুদ্ধের কথা বলবো, তাকে গৃহযুদ্ধ বলাই শ্রেয়। ৫৩২ অব্দের কথা বলছি। সেসময় কন্সটান্টিপোলের ঘোড়দৌড় ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। তবে কেবল খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এটি। তার চাইতে অনেক বড় আর মারদাঙ্গা একটা রূপ নিয়েছিল এই ঘোড়দৌড়। বিশেষ করে দুই প্রতিযোগী দল নীল আর সবুজ দল খেলার মাঠের বাইরেও একে অন্যের শত্রু হয়ে পড়েছিল। এই দুই দলের দুজন সদস্যকে শাসক জাস্টিনিয়ান মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। তার এই সিদ্ধান্তের ফলাফল দাঁড়ায় ভয়াবহ।

নিজেদের এই বিপদে এক হয়ে যায় নীল আর সবুজ দল। সম্মিলিতভাবে বিদ্রোহ করে বসে তারা। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানী পুড়ে শেষ হয়ে যায়। রাজকীয় সৈন্যদের প্রায় হারিয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। জাস্টিনিয়ানকে শাসকের পদ থেকে সরিয়ে নতুন শাসক ও শাসনব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করে তারা। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কত দূর গড়াতো কে জানে, তবে এই ঝামেলার ভেতরে জাস্টিনিয়ান নীল দলকে ঘুষ দিয়ে নিজের দলে টেনে নেন। থেমে যায় বিদ্রোহ। এরপরও যারা লড়াই করছিল তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। সর্বমোট প্রায় ৩০,০০০ মানুষ মারা যায় এই গৃহযুদ্ধে।

৩. দি ওয়ার অব স্ট্রে ডগ

কুকুরের জন্য যুদ্ধে জড়ালো গ্রীস আর বুলগেরিয়া; Source: History Collection

একটা শূকরকে নিয়ে যদি যুদ্ধ হতে পারে তাহলে কুকুরকে কেন্দ্র করে কেন নয়? আর বিংশ শতকে ঠিক সেটাই করেছিল বুলগেরিয়া আর গ্রীস। সেসময় সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না এই দুই দেশের মধ্যে। ১৯১০ সালের বলকান যুদ্ধের পর থেকেই অসন্তোষ একটু একটু করে জমা হচ্ছিল। আর সেই অসন্তোষের ঘিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এক কুকুর। গ্রীসের বর্ডার পার হয়ে বুলগেরিয়ার ভেতরে ঢুকে পড়েছিল কুকুর। তার পেছন পেছন কখন যে গ্রীক সৈনিক নিজের দেশ ছেড়ে বুলগেরিয়ায় চলে এসেছে সেটা খেয়াল করার সময় পায়নি। কিন্তু তাতে কী? এতদিন পর শত্রুদেশের কাউকে সামনে পেয়ে দেরী না করে তাকে গুলি করে মেরে ফেলে বুলগেরিয়ার সৈন্যরা। পুরো গ্রীসে যেন আগুন লেগে যায় এই ঘটনার পর। আক্রমণ করে গ্রীস বুলগেরিয়ায়। ফলাফল আরো খারাপ হওয়ার আগেই তৎকালীন লীগ অব নেশন বা জাতিপুঞ্জ শান্তিচুক্তি করে যুদ্ধ থামিয়ে দেয় দুই দেশের মধ্যে। তবে তার আগেই অবশ্য এই যুদ্ধের কারণে মৃত্যু হয় ৫০ জনের!

৪. ওয়ার অব জেনকিন্স ইয়ার

কারো কানের জন্যেও যে যুদ্ধ হতে পারে সেটা ১৭৩৯ সালের এই যুদ্ধকে না দেখলে বোঝা কষ্টকর। সে বছর ব্রিটিশ নাবিক রবার্ট জেনকিন্স আদালতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নিজের পচে যাওয়া কান হাতে নিয়ে। সে দাবী করে, ঐ কান একজন স্প্যানিশ কোস্টগার্ড অফিসার কেটে নিয়েছে আর অভিযোগ করেছে যে জেনকিন্স চোরাচালানি করে।

এক মুহূর্ত দেরী করেনি ব্রিটিশ আর্মি। সোজা গিয়ে স্পেনে হামলা চালায় তারা এ ঘটনার জের ধরে। শুরু হয় ওয়ার অব জেনকিন্স ইয়ার বা জেনকিন্সের কানের যুদ্ধ। সাদা চোখে ব্যাপারটা দেখতে তেমন মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু এই যুদ্ধ অনেকদিন ধরেই চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল ব্রিটেন। স্প্যানিশ ফ্লোরিডা আর ব্রিটিশ জর্জিয়ার সীমারেখা নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলা, ব্রিটিশ নাবিকদের হেনস্থা করা- এমন ছোটোখাটো বেশ কিছু বিষয়ের জন্য ১৭ শতকের শুরু থেকেই তোড়জোড় চলছিল যুদ্ধের। ফলে জেনকিন্সের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই একে অজুহাত বানিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধের ময়দানে। প্রায় দুই বছর ধরে ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ার ভেতরে যুদ্ধ চলে। যদিও কে জিতেছে আর কে হেরেছে সেটা বলা বেশ মুশকিল। পরবর্তীতে এই যুদ্ধ থেমে গেলেও জন্ম দেয় অস্ট্রিয়ান যুদ্ধের, যেটা সমাপ্ত হয় ১৭৪৮ সালে।

কানের জন্য শুরু হয়ে গেল একটা গোটা যুদ্ধ; Source: Die Welt

৫. দি পেস্ট্রি ওয়ার

পেস্ট্রি যুদ্ধে মুখোমুখি দুই পক্ষ; Source: ThoughtCo

১৮২৮ সালের কথা। মেক্সিকোর ভেতরে নিজের একটি পেস্ট্রির দোকান ছিল এক ফ্রেঞ্চ শেফের। দেশের কিছু বিদ্রোহের সময় বেশ কিছু দোকান লুটপাট হয়, অনেক দোকান নষ্ট করে দেয় মেক্সিকোর জনতা। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হলে শেফ যায় মেক্সিকান প্রশাসকের কাছে নিজের দোকানের মালামাল বাবদ ক্ষতিপূরণ চাইতে। কিন্তু প্রশাসনের অত সময় কই? শেফের কথা পাত্তা দেয়নি তারা। কিন্তু দোকানটা ছিল শেফের একমাত্র সম্বল। মেক্সিকো কিছু করলো না দেখে নিজের দেশ ফ্রান্সে গিয়ে অভিযোগ তোলে শেফ। সেখানেও অভিযোগ পড়ে থাকে প্রায় এক যুগ। অনেকদিন পর অভিযোগনামা চোখে পড়ে রাজা লুইস ফিলিপের। ফলাফল গড়ায় অনেক দূর পর্যন্ত। এমনিতেও মেক্সিকোর উপরে বেশ ক্ষেপে ছিলেন লুইস ফিলিপ। এই ঘটনার জের ধরে ঐ শেফকে ৬,০০,০০০ পেসো দেওয়ার দাবী জানান তিনি। এতগুলো পেসো দিতে চায়নি মেক্সিকো কোনোভাবেই। ব্যস, শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ।

১৮৩৮ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোতে ফ্রান্সের যুদ্ধজাহাজ চলে আসে। প্রায় ২৫০ জন সৈনিক মারা যায় যুদ্ধে। অবশেষে ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধ থামে। শেষমেশ ৬,০০,০০০ পেসো দিতে হয় তাদের ফ্রান্সের সেই পেস্ট্রির দোকানের মালিককে।

ফিচার ইমেজঃ YouTube

Related Articles