Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জর্জ রিভস হত্যারহস্য: আত্মহত্যা না খুন, কী জুটেছিল সুপারম্যানের ভাগ্যে?

এটি কি আত্মহত্যা ছিল? নাকি কেউ তাকে খুন করেছিল? কেউ জানে না এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। জর্জ রিভস, বাস্তব জীবনের সুপারম্যান হিসেবেই যাকে চেনে সবাই, তার মৃত্যুরহস্য দিয়ে ছাপিয়ে গেছেন হলিউডের যেকোনো থ্রিলার মুভিকেও। জিমি হেন্ড্রিক্স, মেরিলিন মনরো, এলভিস প্রিসলির মৃত্যুরও অনেক আগে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন জর্জ রিভস। টেলিভিশনের প্রথম সুপারম্যান নিজের হাতেই খুন হন ১৯৫৯ সালের জুন মাসে। তার ‘অ্যাডভেঞ্চারস অফ সুপারম্যান’ প্রোগ্রামটির হাত ধরে একটি প্রজন্ম পরিচিত হয় নতুন এই চরিত্রটির সাথে। বিশাল বিশাল সব বিল্ডিংয়ের উপর দিয়ে বুলেটের গতিতে উড়ে বেড়ানো এই সুপারহিরো যে এমন একটি কাজ করতে পারেন, তা আজ প্রায় ৬০ বছর পরও মেনে নিতে পারেন না তার ভক্তরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার বেনেডিক্ট ক্যানিয়নের একটি বাড়িতে মারা যান রিভস। তার সে ছোট্ট বাড়িটির কাছেই বাস করতেন চার্লি চ্যাপলিন, রুডলফ ভ্যালেন্টিনো, চার্লস মুনসুনের মতো রথী-মহারথীরা। বাড়ি-গাড়ি-হেলিকপ্টার, কী ছিল না তাদের? সে তুলনায় একেবারে ছাপোষা জীবনযাপন করতেন জর্জ রিভস। সদ্য জনপ্রিয়তা পাওয়া টেলিভিশন তারকার বাড়িটি ছিল মাত্র তিন রুমের। তা-ও বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন তার দীর্ঘদিনের প্রেয়সী টনি ম্যানিক্স। এ বাড়িটি থেকে ১৯৫৯ সালের ১৬ জুন সকালে উদ্ধার করা হয় রিভসের মৃতদেহ। তার বাগদত্তা লিওনোর লেমন তিনজন প্রতিবেশীর সাথে তখন খোশগল্পে মগ্ন ছিলেন। পুলিশ বাড়িতে এসে তাদের পুরোদস্তুর মাতাল অবস্থায় দেখতে পায়।

পত্রিকার পাতায় সুপারম্যান হত্যার খবর; Source: theunredacted.com

দোতলার জানালাবিহীন বেডরুমে নগ্ন হয়ে রক্তের সাগরে শেষঘুম ঘুমিয়েছিলেন রিভস। দু পায়ের মাঝখানে রাখা একটি বন্দুক, লাশের পাশে রাখা গুলির কার্তুজ, মাথায় একটি বুলেটের ক্ষতচিহ্ন, গড়িয়ে পড়া রক্ত জমাট বেঁধে কালচে দাগ ফেলে দিয়েছে। একনজর দেখেই একে আত্মহত্যার মামলা বলে সেই মুহূর্তেই রায় দিয়ে দেয় লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ। পত্রিকাগুলোতেও সপ্তাহখানেকের মধ্যে চাপা পড়ে যায় সাদামাটা এই হত্যারহস্য। কিন্তু মৃত ব্যক্তির সত্যিকারের কিছু বন্ধু ছিলেন, যাদের দৃঢ় বিশ্বাস এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। মজার বিষয় হলো, সন্দেহ করার মতো ব্যক্তি এবং তাদের মোটিভের কোনো অভাব না থাকা সত্ত্বেও মামলাটি কিন্তু পুনরায় তদন্ত করা হয়নি। কাজেই এই অব্দি হত্যারহস্যের কোনো কূলকিনারাও পাওয়া যায়নি।

অ্যালেন কোল্টার তার ‘হলিউডল্যান্ড’ সিনেমাটিতে রিভস হত্যার সন্দেহজভাজনদের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। মুভিটিতে তিনি সুনিপুণভাবে তিন-চারটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন। ১৯৫০ এর দশকে রিভস যখন দাপটের সাথে টেলিভিশনের পর্দা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, বেন অ্যাফ্লেক সে সময়কার জর্জ রিভসের চরিত্রটি দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন। ব্ল্যাক ডালিয়া বা এলিজাবেথ শর্টের মতো রিভসের হত্যারহস্যেও পরস্পরবিরোধী বেশ কিছু ধাঁধার উন্মেষ ঘটে।

যে রাতে রিভস মারা যান, সে রাতে তিনি এবং লেমন ডিনার করতে বাইরে গিয়েছিলেন। লেমনের জন্যই তিনি সাবেক প্রেমিকা ম্যানিক্সকে ত্যাগ করেন। তাদের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট বা ভাড়াটে হিসেবে থাকতেন কন্ডন। রাত এগারোটার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন রিভস ও লেমন। মাঝরাতে একা ঘুমাতে চলে যান রিভস। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে খুব বিরক্ত হয়ে নিচে চলে আসেন। কন্ডনের প্রেমিকা ক্যারোল ভ্যান রনকেল, বিবাহিত এক প্রতিবেশী, উইলিয়াম ব্লিস নামের আরেক লোককে নিয়ে অত রাতে রিভসের বাড়িতে এসে হইচই করে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। কন্ডনের ভাষ্যমতে, রিভস নাকি পরবর্তীতে তার বিরক্তির জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ঘুমাতে চলে যান। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো হলো, লেমন উপস্থিত তিনজনকে বলতে থাকে, “ও এবার নিজের মাথায় গুলি চালাবে”। তার পরপরই উপরে ড্রয়ার খোলার শব্দ শোনা যায়। “বন্দুক বের করেছে, এখনই গুলি করবে,” বলতে থাকে লেমন। বলাই বাহুল্য, তার প্রায় সাথে সাথেই গুলির আওয়াজ শোনা যায়। ব্লিস দৌড়ে উপরে গিয়ে বিছানার উপরে রিভসের মৃতদেহ আবিষ্কার করেন।

‘সুপারম্যান অ্যান্ড দ্য মোল ম্যান’ এর পোস্টারে রিভস; Source: theguardian.com

প্রকৃত ঘটনা যা-ই হোক, উপস্থিত চার পাঁড়মাতালের ভাষ্যমতে মূল ঘটনা ছিল এটুকুই। পুলিশের কাছে ভাসা-ভাসা জবানবন্দীতে লেমন জানিয়েছে, এমন কিছু হতে পারে তা তার মাথায়ই ছিল না। নেশার ঘোরে কী না কী বলেছে, সে নিজেও তা জানে না। পরের সপ্তাহে অবশ্য বাড়িটিকে ঘিরে পুলিশের যে নিরাপত্তা সিল লাগানো ছিল, তা ভেঙে ৪,০০০ ডলার নিয়ে নিউ ইয়র্কে গা ঢাকা দেয় লেমন। লেমনকে খুঁজে বের করার খুব একটা চেষ্টা চালায়নি পুলিশ, কারণ রিভসের এমন কোনো আত্মীয় বা কাছের মানুষ ছিল না, যে তার হত্যারহস্য উদঘাটনের জন্য তাগাদা দেবে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হলে শুরুতেই লাশের পুরো শরীর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। এত কাছ থেকে গুলি করা হলে রিভসের মাথায় বা হাতে যে গানপাউডার থাকার কথা, তা পরীক্ষা করে দেখারও আর কোনো উপায় থাকে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মৃতদেহ দেখে তাকে আত্মহত্যা না বলে উপায় নেই। কিন্তু আত্মহত্যা করার আগে কোনো নোট রেখে যাননি রিভস। তাছাড়া তার মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয় নগ্ন অবস্থায়, আত্মহত্যার বেলায় এটি একেবারেই নজিরবিহীন।

রিভসের কোনো বন্ধুই বিশ্বাস করেননি, এমন হাসিখুশি, উচ্ছ্বল একটি তরুণ, যে জীবনকে ভালবাসতে জানত, উপভোগ করতে জানত, সে এভাবে আত্মহত্যা করতে পারে। তবে একমাত্র সুপারম্যানের সহ-অভিনেতা জ্যাক লারসন, যিনি জিমি অলসেনের ভূমিকায় অভিনয় করতেন, বলেছিলেন যে এটি আত্মহত্যা হলেও হতে পারে। নিজের জীবন নিয়ে যেভাবে সে বাজি ধরেছিল, একের পর এক জট পাকাচ্ছিল, তাতে এটি অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। রিভস তার ক্যারিয়ারের প্রায় বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিল। হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে সে।

টনির সাথে জর্জ রিভস; Source: theguardian.com

তার বেশ কয়েক বছর পরে ফিলিস কোটস, যিনি লয়েস লেইনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন। তিনি জানান, রিভসের মৃত্যুর দিন ভোর ৪:৩০ এর দিকে টনি ম্যানিক্স তাকে ফোন করেন। ম্যানিক্সের কণ্ঠে ছিল উত্তেজনা, ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। অনেক কষ্ট করে একটি বাক্য উচ্চারণ করেন তিনি, “ছেলেটা মারা গেছে, মেরে ফেলেছে ওকে!” রিভসের জীবনের প্রকৃত অর্জন ছিল টনি ম্যানিক্স। টনি ছিলেন তার আশ্রয়স্থল, অর্থের যোগানদাতা, আত্মার সঙ্গী, তার জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্তগুলোর অংশীদার।

ছোটবেলা থেকে সৎ বাবার অত্যাচারে বড় হওয়া জর্জ রিভসের চেয়ে আট বছরের বড় ছিল টনি। ধনকুবের অ্যাডি ম্যানিক্সের রক্ষিতা হয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়া মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত অ্যাডি বিয়ে করে, তবে রিভসের সাথে দেখা হওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগের ঘটনা সেটি। রিভসকে নিয়ে অ্যাডির কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। নিজে ডজন ডজন রক্ষিতা নিয়ে ঘুরে বেড়ান যিনি, তার কাছে এসব কোনো ব্যাপারই না। কাজেই রিভসকে যেন ধীরে ধীরে নিজের করে পেতে শুরু করে টনি। তাদের সম্পর্কটি ছিল খুব মিষ্টি। তাদের মধ্যে বিয়ে করে মিলিত হওয়ার বাসনা তৈরী হতে না হতেই দু’বার হার্ট অ্যাটাক করে অ্যাডি। রিভসকে নিয়ে তখন বেনেডিক্ট ক্যানিয়নের বাড়িটিতে গিয়ে ওঠে টনি। বন্ধুবান্ধবে গিজগিজ করতে থাকা বাড়িটিকে দুজনে বানিয়ে ফেলে মর্ত্যের স্বর্গ।

বাগদত্তা লিওনোর লেমনের সাথে রিভস; Source: theguardian.com

১৯৫১ সালে অনেকটা অনিচ্ছায় সুপারম্যানের কস্টিউম পরে টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হয়ে স্বীকৃতি জানান রিভস। ‘সুপারম্যান অ্যান্ড দ্য মোলম্যান’ নামক ১৩ পর্বের আধা ঘণ্টার শোটির কারণে বেশ নামযশ হয় তার। পরের দু’বছরের জন্য তার সাথে চুক্তি হয় ফ্রেড জিনম্যানের। এর মধ্যে আরও বেশ কিছু কাজের প্রস্তাব আসে তার হাতে। ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ সুপারম্যান’ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে এক লাফে যেন খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান জর্জ রিভস। রাস্তা দিয়ে তিনি হেঁটে যেতে লাগলেই চারপাশ থেকে রব উঠতে থাকে, “সুপারম্যান! ঐ দেখো সুপারম্যান!” এই খ্যাতির সাথেই রিভস টের পাচ্ছিলেন, সিরিয়াস অভিনেতা হিসেবে তার ক্যারিয়ার ধ্বংসের দিকে আগাচ্ছে।

১৯৫৩ সালে টিভি সিরিজটি যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছিল, তখন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সেলেব্রিটিদের বিয়ে- সব জায়গায় রিভসের উপস্থিতি একপ্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে এক নজর দেখার জন্য ২০ হাজার লোক জড়ো হয়েছে, এমন রেকর্ডও আছে। বাচ্চারা কাছে পেলে তার পেটে ঘুষি মেরে দেখত, আসলেই তিনি মানুষ কিনা! কেউ কেউ তাকে ‘ম্যান অফ স্টিল’ মনে করতেও ছাড়ত না। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে রিভস হলিউডে পা রাখতে চেয়েছিলেন, সুপারম্যান তার সেই স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টিভি সিরিজের অভিনেতারা অন্য চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বছরে মাত্র একমাস সময় পায়, তার মানে সত্যিকারের অভিনেতা হয়ে ওঠার রাস্তা তার জন্য খুবই বন্ধুর হয়ে পড়ে। প্রতি সপ্তাহে ২.৫ হাজার ডলার পাওয়া রিভসের আয় হয়তো খুব একটা মন্দ ছিল না, কিন্তু এই আয় তো শুধু ঐ ১৩ সপ্তাহের জন্যই বরাদ্দকৃত। ৫২ সপ্তাহের এক বছরে বাকি দিনগুলো তার কাটে কীভাবে? টনি ছিল বলে সে যাত্রা তা-ও রক্ষা পেয়ে গেছেন রিভস।

লয়েস লেইনের সাথে সুপারম্যান; Source: theguardian.com

১৯৫৯ সালের শুরুর দিকে তার পরিচয় হয় লিওনোর লেমনের সাথে। নাইটক্লাব মাতিয়ে রাখা লেমন প্রায়ই পত্রিকার গসিপ কলামের শিরোনাম হতেন। তার জন্য রিভস প্রায় এক দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করেন টনি ম্যানিক্সের সাথে। লাবণ্যের জেল্লা কমতে থাকা টনির কাছে এ যেন এক অভিশাপ। রিভস ছিল তার হাতে গড়া সম্পদ। এখন তার হাতে একটিই অপশন আছে, অ্যাডির কাছে ফিরে গিয়ে তার মৃত্যুর প্রহর গোনা। সপ্তাহের পর সপ্তাহ যায় তার চোখের পানি ঝরিয়ে। দিনে কম করে হলেও ২০ বার রিভসকে ফোন দিত সে। মদ্যপ হয়ে মাঝে মাঝে হুমকি দিত রিভসকে, “তোমাকে আমি খুন করে ফেলব!” কাজেই রিভসের মৃত্যুর পেছনে উন্মাদ প্রাক্তন প্রেমিকার হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

কথায় আছে, হাতি মরলেও লাখ টাকা। অ্যাডি যতই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকুক না কেন, ঐ অবস্থাতেও তার নেটওয়ার্ক ছিল খুব শক্তিশালী। কথিত আছে, মাফিয়া দলগুলোর সাথেও তার আঁতাত ছিল। রক্ষিতার সংখ্যা ডজনখানেক হলেও বৌ ছিল তার একটাই। কাজেই টনি যখন কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসে, অ্যাডি তার দুরবস্থা দেখে ব্যথিত হয়। তাই উইলিয়াম ব্লিস নামক যে প্রতিবেশী রিভসের মৃত্যুর দিন তার বাড়িতে উপস্থিত ছিল, সে অ্যাডিরই ভাড়াটে গুণ্ডা বলে জানান কাশনার, রিভসের হত্যারহস্য নিয়ে শোনবার্গারের সাথে বইও লিখেছেন তিনি। বলা হয়, ব্লিস আগে থেকেই দোতলায় কাউকে পাঠিয়ে দিয়ে নিচে লেমনদের নিয়ে মদ্যপানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যাতে কেউ রিভসের দিকে নজর না দেয়। যার কথা চিন্তা করে এত পরিকল্পনা, সে তার স্বামীর কথা জানবে না এটা বিশ্বাসযোগ্য না। কাজেই সেদিন ভোরে টনি কেন কোটসকে ফোন করেছিলেন, তার একটি ব্যাখ্যা হয়তো এভাবে পাওয়া যায়। ১৯৯৯ সালে, বেভারলি হিলসের এক টিভি সিরিজ অভিনেতা জানান, তার চোখের সামনে টনি পাদ্রীর কাছে গিয়ে রিভসকে হত্যার কথা স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু অ্যাডির সাহায্য ছাড়া টনির একার পক্ষে ঘরভরা লোকের মধ্যে এ কাজ করা প্রায় অসম্ভব।

হাসিখুশি তরুণ জর্জ রিভস; Source: theguardian.com

পরবর্তীতে বাড়িটি থেকে আরও বেশ কয়েকটি বুলেটহোল খুঁজে পাওয়া যায়। দুটো ছিল মেঝেতে, একটি ছিল লিভিং রুমের দেয়ালে। লেমনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, রিভসের সাথে ঝগড়ার এক মুহূর্তে রাগের বশে গুলি চালিয়েছিল সে। লেমনের গগনবিদারী রাগের জন্যই তাকে রিভস হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নেয় পুলিশ। কিন্তু যুতসই সাক্ষীর অভাবে তাকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হয় তারা, সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় সে। এ ঘটনার ৩০ বছর পরে এক সাংবাদিকের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে লেমন বলে, সে রাতে সুপারম্যানের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিল সে। কাজেই তাকে হারানোর আশঙ্কা বা হতাশা থেকেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে জর্জ রিভস। এ কথা অবশ্য একেবারেই ধোপে টেকে না।

সুপারম্যান জর্জ রিভস; Source: theguardian.com

রিভসের ক্যারিয়ার কি সত্যিই ধ্বংসের পথে ছিল? ঠিক তা বলা যায় না। সিরিয়াস অভিনেতা হওয়াটা তার জন্য কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব ছিল না। টিভি সিরিজে অভিনয় করেও রূপালী পর্দা কাঁপানো অভিনেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কাজেই জীবন শেষ করে দেয়ার মতো হতাশা তাকে ঘিরে থাকার কথা না। যে রাতে তিনি মারা যান, সে রাতে তিনি নিজেও মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। আর আত্মহত্যা করলে বন্দুকের কার্তুজ পাশে রেখে করার প্রয়োজন হতো না। আজ পর্যন্ত যে-ই রিভসের মৃত্যুরহস্য সমাধান করতে গিয়েছে, তাকেই খালি হাতে, একগাদা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনে এককথায় এটিকে আত্মহত্যা বলে মামলা শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি রিভসের সাথে সংশ্লিষ্ট একজনও। দুই প্রেমিকার দিকে সন্দেহের তীর বিদ্ধ করে প্রশ্ন থামিয়ে দেয়া রিভসের বন্ধুরা চান অন্তত প্রকৃত খুনিকে যেন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাতেও যদি রিভসের আত্মা শান্তি পায়।

ফিচার ইমেজ- theunredacted.com

Related Articles