বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ। কিংবদন্তী ভিয়েতনামি বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামি গেরিলাদের নিকট ফরাসি উপনিবেশবাদীদের শোচনীয় পরাজয়, পশ্চিমা বিশ্বের নির্দেশনায় ভিয়েতনামকে সমাজতান্ত্রিক উত্তর ভিয়েতনাম ও পুঁজিবাদী দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্তকরণ, দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট ভিয়েত কং গেরিলাদের লড়াই, এবং উত্তর ভিয়েতনাম ও ভিয়েত কংয়ের কাছে মার্কিন সমরযন্ত্রের পরাজয়– এই ঘটনাগুলো বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাবলির মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের অন্যতম একটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে ইউরোপীয় বৃহৎ শক্তি ফ্রান্স এবং পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শোচনীয় পরাজয় ইতিহাসের সবচেয়ে বিচিত্র ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে গণ্য।
কিন্তু আধুনিক ভিয়েতনামের ইতিহাসের একটি অধ্যায় তেমন পরিচিতি অর্জন করেনি। এটি হচ্ছে ১৯৭৯ সালে চীন কর্তৃক ভিয়েতনাম আক্রমণ, এবং এর ফলে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী চীনা–ভিয়েতনামি যুদ্ধ। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পর্যায়ে চীনা ও ভিয়েতনামি কমিউনিস্টদের মধ্যেকার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে ভিয়েতনাম চীনের কাছ থেকে সক্রিয় সহায়তা লাভ করেছিল। সে সময় চীনারা ভিয়েতনামকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র, রসদপত্র, খাদ্যদ্রব্য ও পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করত, এবং হাজার হাজার চীনা সামরিক উপদেষ্টা ও সৈন্য ভিয়েতনামি সশস্ত্রবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ভিয়েতনামের মাটিতে মোতায়েনকৃত ছিল। বস্তুত ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিদের অভূতপূর্ব বিজয়ে চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
কিন্তু ১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৬ লক্ষ চীনা সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী চীনা–ভিয়েতনামি সীমান্ত অতিক্রম করে, এবং ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চল জুড়ে আক্রমণ চালায়। ভিয়েতনামি সৈন্যরা চীনাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে, এবং প্রায় এক মাসব্যাপী যুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালের ১৬ মার্চের মধ্যে চীন ভিয়েতনাম থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে, এবং উভয় পক্ষই নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম দেখিয়ে বিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেখায়। কিন্তু পশ্চিমা ঐতিহাসিকদের মতে, এই যুদ্ধে প্রায় ২৬,০০০ চীনা সৈন্য নিহত এবং প্রায় ৩৭,০০০ চীনা সৈন্য আহত হয়। অন্যদিকে, ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ভিয়েতনামি সৈন্য নিহত এবং প্রায় ৩২,০০০ ভিয়েতনামি সৈন্য আহত হয়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরেও চীন কেন ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল? চীন ও ভিয়েতনাম উভয়েই কমিউনিস্ট রাষ্ট্র, সুতরাং কমিউনিস্ট চীনের অপর একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ পরিচালনার কারণ কী ছিল?
প্রথমত, ১৯৭৯ সালের চীনা–ভিয়েতনামি যুদ্ধের তাৎক্ষণিক কারণ ছিল সে সময় চলমান কম্পুচীয়–ভিয়েতনামি যুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম কর্তৃক কম্পুচিয়া (বর্তমান কম্বোডিয়া) দখল। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে উত্তর ভিয়েতনামের সমর্থনপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামি কমিউনিস্টরা যেমন মার্কিন–সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তেমনি কম্পুচীয় কমিউনিস্টরাও মার্কিন–সমর্থিত কম্পুচীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। এ সময় ভিয়েতনামি ও কম্পুচীয় কমিউনিস্টরা ছিল পরস্পরের মিত্র।
১৯৭৫ সালে উত্তর ভিয়েতনামি সৈন্যদের নিকট দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতন ঘটে, এবং ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়ে 'ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, ১৯৭৫ সালে কম্পুচীয় কমিউনিস্টদের নিকট কম্পুচীয় সরকারের পতন ঘটে, এবং পল পটের নেতৃত্বাধীন 'খেমার রুজ' দল 'গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়া' নামক একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
এ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম ও কম্পুচিয়ার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে হয় তার উল্টো। ঐতিহাসিকভাবে ভিয়েতনামিরা পার্শ্ববর্তী কম্পুচিয়াকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে, এবং কম্পুচীয় কমিউনিস্টদের আশঙ্কা ছিল যে, ভিয়েতনামি কমিউনিস্টরা তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।
এ পরিস্থিতিতে কম্পুচিয়া সম্ভাব্য ভিয়েতনামি আধিপত্যবাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে তোলে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল। এ সময় কমিউনিস্ট বিশ্বের নেতৃত্ব নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে তীব্র ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল, এবং এর ফলে চীনা–সোভিয়েত দ্বন্দ্বে কম্পুচিয়া ও ভিয়েতনাম পরস্পরের বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করে।
এদিকে খেমার রুজ কম্পুচিয়ার অভ্যন্তরে একটি ভয়াবহ গণহত্যা শুরু করে, এবং এর ফলে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়। এই গণহত্যার অংশ হিসেবে তারা কম্পুচিয়ায় বসবাসকারী হাজার হাজার জাতিগত ভিয়েতনামিকে হত্যা করে, এবং একই সঙ্গে কম্পুচীয় রাজনৈতিক শ্রেণির ভিয়েতনামপন্থী অংশটিকেও নিশ্চিহ্ন করতে শুরু করে। এর পাশাপাশি তারা ভিয়েতনামের অভ্যন্তরে আক্রমণ পরিচালনা করতে শুরু করে, এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে ভিয়েতনামে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৩০,০০০ বেসামরিক ভিয়েতনামিকে হত্যা করে।
আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে এবং কম্পুচীয়দের অতিরিক্ত আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে ভিয়েতনাম কম্পুচিয়ার অভ্যন্তরে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ চালায়, এবং ১৯৭৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কম্পুচীয় খেমার রুজ সরকারের পতন ঘটে। ভিয়েতনামিরা কম্পুচিয়ায় একটি ভিয়েতনামিপন্থী ও সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে এবং কম্পুচীয় গণহত্যার অবসান ঘটায়। কিন্তু কম্পুচিয়ায় নিজেদের সমর্থিত সরকারের পতনে চীন ক্ষিপ্ত হয়। তারা কম্পুচিয়ায় ভিয়েতনামি আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানায়, এবং কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ভিয়েতনামকে আহ্বান জানায়।
কিন্তু খেমার রুজ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তারা কম্পুচিয়ার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ অব্যাহত রাখে, এবং এই পরিস্থিতিতে কম্পুচীয় সরকারের টিকে থাকার জন্য ভিয়েতনামি সামরিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। ফলে ভিয়েতনাম কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। চীনের পক্ষে সরাসরি কম্পুচিয়ায় সৈন্য প্রেরণ করে খেমার রুজকে সহায়তা করা সম্ভব ছিল না, কারণ চীনের সঙ্গে কম্পুচিয়ার কোনো সীমান্ত সংযোগ নেই, এবং কম্পুচিয়ার সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর (মার্কিনপন্থী ও কমিউনিস্টবিরোধী থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামিপন্থী কমিউনিস্ট লাওস এবং ভিয়েতনাম) মধ্য দিয়ে দেশটিতে সৈন্য প্রেরণ করাও চীনের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনামকে 'শাস্তি প্রদানে'র উদ্দেশ্যে এবং কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে তাদেরকে বাধ্য করার জন্য চীন ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ধারণা ছিল, চীন ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ চালালে ভিয়েতনাম তার সমস্ত শক্তি চীনের বিরুদ্ধে নিয়োজিত করতে বাধ্য হবে, এবং এজন্য তাদেরকে কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে। এই সুযোগে খেমার রুজ কম্পুচিয়ার নতুন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, এবং হয়ত তাদেরকে উৎখাত করতেও সমর্থ হবে। এটি ছিল ভিয়েতনাম আক্রমণের পশ্চাতে চীনাদের মূল কারণ।
দ্বিতীয়ত, চীনাদের ভিয়েতনাম আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ভিয়েতনামিদেরকে বাধ্য করা, কিন্তু এর পাশাপাশি এই আক্রমণ পরিচালনার পশ্চাতে অন্যান্য কারণও ছিল। চীনা–সোভিয়েত দ্বন্দ্বে ভিয়েতনাম সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, এবং এজন্য চীন ভিয়েতনামের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় চীনের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নও ভিয়েতনামকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিল, এবং সোভিয়েত সামরিক সরঞ্জাম, সামরিক উপদেষ্টাবৃন্দ ও গোয়েন্দা সহায়তা ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিনিদের পরাজয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তদুপরি, ঐতিহাসিকভাবে চীনারা ভিয়েতনামকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করত এবং ভিয়েতনামের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে এসেছে। এজন্য ভিয়েতনামি কমিউনিস্টরা চীনাদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখত, এবং সম্ভাব্য চীনা আধিপত্যবাদকে ভিয়েতনামের বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে বিবেচনা করত। তাছাড়া, ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ১৯৭০–এর দশকের প্রথমদিকে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্থাপিত আঁতাত ভিয়েতনামি কমিউনিস্টদের ক্ষুব্ধ করে।
এই প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনাম সম্ভাব্য চীনা সম্প্রসারণবাদ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা সোভিয়েত–নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা 'পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিষদে' (Council for Mutual Economic Assistance, 'COMECON') যোগদান করে, এবং ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর ভিয়েতনাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি 'বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি' স্বাক্ষর করে। এগুলোর পেছনে ভিয়েতনামের উদ্দেশ্য ছিল যথাক্রমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য সোভিয়েত সহায়তা লাভ করা এবং কম্পুচিয়ায় আক্রমণ পরিচালনার পর চীন যদি ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেক্ষেত্রে সোভিয়েত সহায়তা লাভ করা।
অন্যদিকে, চীনাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ভিয়েতনাম এবং সমগ্র ইন্দোচীন (ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্পুচিয়া/কম্বোডিয়া) ছিল তাদের প্রভাব বলয়ের অংশ, এবং চীনা আধিপত্য স্বীকার না করে ভিয়েতনামিরা 'ঔদ্ধত্য' প্রদর্শন করছে। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে চীনা নেতা দেং জিয়াওপিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের নিকট ভিয়েতনাম সম্পর্কে মন্তব্য করেন, "ছোট বাচ্চাটি দুষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাকে শাস্তি দেয়া দরকার!" এর মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামের প্রতি চীনা নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বস্তুত ভিয়েতনাম নিজে চীনা–সোভিয়েত দ্বন্দ্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ নিয়েছিল, ভিয়েতনামিপন্থী লাওস সাধারণভাবে ভিয়েতনামের পথই অনুসরণ করছিল, এবং কম্পুচিয়ায় খেমার রুজের পতনের পর কম্পুচিয়াও অনুরূপ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ, ভিয়েতনামের কারণে সমগ্র ইন্দোচীনই চীনা বলয় ছেড়ে সোভিয়েত বলয়ে চলে যাচ্ছিল। চীনাদের দৃষ্টিতে, ভিয়েতনাম 'প্রাচ্যের কিউবা' হয়ে উঠছিল এবং চীনাদের 'প্রাকৃতিক প্রভাব বলয়'কে (natural sphere of influence) সোভিয়েতদের হাতে সমর্পণ করছিল। এজন্য চীনারা ভিয়েতনাম আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়, এবং এর মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামকে শাস্তি প্রদান করতে তারা আগ্রহী ছিল।
তৃতীয়ত, ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ পরিচালনার জন্য চীনা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে তিনটি কারণ দেখিয়েছিল, তার মধ্যে প্রথমটি ছিল কম্পুচিয়ার ওপর ভিয়েতনামের 'আগ্রাসন' এবং দ্বিতীয়টি ছিল ভিয়েতনামে বসবাসরত জাতিগত চীনাদের ওপর ভিয়েতনামি সরকার কর্তৃক পরিচালিত নিষ্পেষণ। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামে কয়েক লক্ষ জাতিগত চীনা বসবাস করত, যাদেরকে 'হোয়া' জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জাতিগত চীনারা কার্যত পুঁজিবাদী দক্ষিণ ভিয়েতনামের অর্থনীতির ৭০% থেকে ৮০% নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু ১৯৭৫ সালে উত্তর ভিয়েতনাম কর্তৃক দক্ষিণ ভিয়েতনাম দখলের পর ভিয়েতনামি সরকার দক্ষিণ ভিয়েতনামে রাষ্ট্র–নিয়ন্ত্রিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, এবং বেসরকারি ব্যবসা–বাণিজ্যকে বাজেয়াপ্ত করে নেয়।
এই নীতি কার্যত জাতিগত চীনাদের উদ্দেশ্য করে নেয়া হয়নি, বরং ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় আদর্শেরই বাস্তবায়ন। ভিয়েতনামে বসবাসকারী প্রতিটি জাতির ব্যবসায়ীরাই এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু চীনাদের যেহেতু বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি, এজন্য তারাই এই নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশ্য জাতিগত চীনারা ভিয়েতনামি সরকারের এই নীতি প্রতিরোধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, এবং এর ফলে বেশকিছু চীনা প্রাণ হারায়। তদুপরি, চীনা–ভিয়েতনামি সম্পর্কের ক্রমাবনতি এবং কম্পুচীয়–ভিয়েতনামি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনামি সরকার আশঙ্কা করতে থাকে যে, চীনা সরকার ভিয়েতনামে বসবাসকারী জাতিগত চীনাদেরকে ভিয়েতনামি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনামি সরকার ভিয়েতনামে বসবাসকারী জাতিগত চীনাদের ওপর নিষ্পেষণ বৃদ্ধি করে, এবং ১৯৭৮ সালের মধ্যে প্রায় ১,৭০,০০০ জাতিগত চীনা ভিয়েতনাম থেকে পালিয়ে চীনে আশ্রয় নেয়। ভিয়েতনামি চীনা শরণার্থীদের চীনে প্রবেশের প্রেক্ষাপটে চীনা–ভিয়েতনামি সীমান্তে দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হয়। চীনা সরকার জাতিগত চীনাদের ওপর ভিয়েতনামি সরকারের নিষ্পেষণের তীব্র নিন্দা জানায়, এবং এটিকে ভিয়েতনাম আক্রমণের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। কম্পুচীয় গণহত্যা চলাকালে খেমার রুজ কম্পুচিয়ায় বসবাসকারী হাজার হাজার জাতিগত চীনাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু খেমার রুজ সরকার যেহেতু চীনাপন্থী ছিল তাই চীন কম্পুচীয় চীনাদের ওপর নিষ্পেষণ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। অন্যদিকে, ভিয়েতনামে জাতিগত চীনাদের 'ব্যক্তিগত সম্পত্তি' বাজেয়াপ্তকরণ ছিল ভিয়েতনামিদের সমাজতান্ত্রিক নীতির অংশ। চীন নিজেও একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এবং তারাও নিজেদের নাগরিকদের সঙ্গে ঠিক একই কাজ করেছে। এজন্য সমাজতান্ত্রিক চীন ভিয়েতনামকে একই সমাজতান্ত্রিক নীতির জন্য দোষারোপ করছে, বিষয়টি অদ্ভুত।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ভিয়েতনামি সরকার সেদেশে বসবাসকারী চীনাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে, সেটি নিয়ে চীনের কার্যত কোনো মাথাব্যথা ছিল না। ভিয়েতনাম যেহেতু চীনাবিরোধী ছিল, এজন্য তারা ভিয়েতনামের এই নীতির বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ভিয়েতনাম যদি খেমার রুজের মতো চীনাপন্থী হতো, সেক্ষেত্রে ভিয়েতনামে জাতিগত চীনাদের ওপর নিষ্পেষণ চীনা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না।
চতুর্থত, ভিয়েতনাম আক্রমণের জন্য চীনা সরকার যে তিনটি যুক্তি প্রদান করেছিল, তাদের মধ্যে সর্বশেষ যুক্তিটি ছিল, ভিয়েতনামিরা অবৈধভাবে 'স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ' দখল করে আছে। ১৯৩০–এর দশকে ফ্রান্স এই দ্বীপপুঞ্জটির ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং এটিকে তাদের উপনিবেশ ভিয়েতনামের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু চীন এটিকে তাদের হাইনান প্রদেশের অংশ হিসেবে দাবি করতে থাকে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে দ্বীপপুঞ্জটি দক্ষিণ ভিয়েতনামের অংশ ছিল, এবং তখন উত্তর ভিয়েতনাম চীনা সহায়তা লাভের জন্য দ্বীপপুঞ্জটিকে চীনের অন্তর্গত বলে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালে তারা এই স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেয়, এবং দ্বীপপুঞ্জটিকে ভিয়েতনামের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।
এর ফলে চীনা–ভিয়েতনামি সম্পর্কে নতুন করে তিক্ততার সৃষ্টি হয়, এবং ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য চীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই কারণটিকে উল্লেখ করে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, ১৯৭৯ সালের চীনা–ভিয়েতনামি যুদ্ধ চলাকালে চীন ভিয়েতনামি–নিয়ন্ত্রিত স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ বা দখলের চেষ্টা করেনি। এজন্য চীনা সরকারি বক্তব্য যাই হোক না কেন, স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ সংক্রান্ত বিরোধ ১৯৭৯ সালের চীনা–ভিয়েতনামি যুদ্ধের পেছনে কেবল গৌণ ভূমিকা রেখেছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।
পঞ্চমত, ভিয়েতনামকে আক্রমণ করার পেছনে চীনের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত–ভিয়েতনামি মৈত্রীর অসারতা প্রমাণ করা এবং সম্ভব হলে ভিয়েতনামকে সোভিয়েত বলয় থেকে দূরে সরিয়ে আনা। ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত সোভিয়েত–ভিয়েতনামি বন্ধুত্ব চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম কোনো তৃতীয় পক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিয়েতনামকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু কার্যত সোভিয়েত মূল ভূখণ্ড থেকে ভিয়েতনাম অনেক দূরে অবস্থিত, এবং এজন্য ভিয়েতনাম কোনো রাষ্ট্রের দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান করা ছিল সোভিয়েতদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। নৌপথে ভিয়েতনামে সৈন্য প্রেরণ করা ব্যতীত ভিয়েতনামকে সরাসরি সহায়তা করার অন্য কোনো উপায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিল না, কিন্তু সোভিয়েত নৌবাহিনীর সামর্থ্য ছিল সীমিত এবং এ রকম কোনো সামরিক হস্তক্ষেপও মস্কোর জন্য হতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ভিয়েতনামকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করার একমাত্র কার্যকরী উপায় ছিল, চীনা–সোভিয়েত সীমান্ত বরাবর চীনের ওপর আক্রমণ চালানো। কিন্তু এটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ চীনের বিপুল জনবল ও পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সোভিয়েত আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াত। তদুপরি, চীনা–সোভিয়েত যুদ্ধ আরম্ভ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে চীনের পক্ষে যোগদানের সম্ভাবনা ছিল, যেটি অনায়াসে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিতে পারত।
এই প্রেক্ষাপটে চীনা সরকার হিসেব করে দেখেছিল, তারা ভিয়েতনাম আক্রমণ করলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি এই যুদ্ধে যোগ দেবে না। সেক্ষেত্রে ভিয়েতনাম ও অন্যান্য সোভিয়েতপন্থী রাষ্ট্রগুলো সোভিয়েত মৈত্রীর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্যাদা হ্রাস পাবে। এর ফলে কমিউনিস্ট বিশ্বে চীনের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং ভিয়েতনাম চীনের সঙ্গে চীনা শর্তানুযায়ী সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে।
ষষ্ঠত, ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ পরিচালনার পেছনে চীনের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল– ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ভিয়েতনামি সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ইউনিটগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া এবং উত্তর ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক অবকাঠামো বিধ্বস্ত করা। এই উদ্দেশ্যটি ছিল মূলত কৌশলগত। চীনা–সোভিয়েত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে চারদিক থেকে শত্রুরাষ্ট্র দিয়ে পরিবেষ্টিত করে ফেলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। চীনের উত্তরে সোভিয়েত দূরপ্রাচ্য ও মঙ্গোলিয়ায় সোভিয়েতরা প্রায় ৬ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছিল, এবং দক্ষিণ দিক থেকে চীনকে ঘিরে ফেলার জন্য সোভিয়েতরা ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। ভিয়েতনামের অভিজ্ঞ ও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী সম্ভাব্য চীনা–সোভিয়েত যুদ্ধের সময় দক্ষিণ দিক থেকে চীনের ওপর আঘাত হানতে পারত।
এজন্য চীনের উদ্দেশ্য ছিল, যুদ্ধের মাধ্যমে ভিয়েতনামি সশস্ত্রবাহিনীর মূল ইউনিটগুলো ধ্বংস করে দেয়া। একই সঙ্গে ভিয়েতনামিরা যাতে চীনের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়, সেজন্য চীনারা ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দিতে আগ্রহী ছিল।
সর্বোপরি, এই যুদ্ধ শুরু করার পেছনে চীনা নেতা দেং জিয়াওপিংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থও সংশ্লিষ্ট ছিল। তিনি চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার এবং চীনা সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়ন করতে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তার অভ্যন্তরীণ সমর্থন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ তাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে পারত। যদি যুদ্ধে চীনারা বিজয়ী হতো, সেক্ষেত্রে চীনা সরকারের অভ্যন্তরীণ সমর্থন বৃদ্ধি পেত, এবং দেং সেটার ভিত্তিতে নিজস্ব সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। অন্যদিকে, যুদ্ধে যদি চীনারা বিজয়ী না হতো, সেক্ষেত্রে সকলের নিকট চীনা সশস্ত্রবাহিনীর সংস্কার ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠত। উভয় ক্ষেত্রেই দেংয়ের উদ্দেশ্যই বাস্তবায়িত হতো।
এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীন ভিয়েতনামের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে। কিন্তু ভিয়েতনামিদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর এক মাসের মধ্যেই তারা ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এই যুদ্ধে তাদের অধিকাংশ উদ্দেশ্যই অর্জিত হয়নি। ভিয়েতনাম কম্পুচিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেনি, এবং আরো প্রায় ১০ বছর তারা কম্পুচিয়ায় অবস্থান করে। চীনাদের হিসেব মোতাবেক যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি, কিন্তু ভিয়েতনাম তাতে সোভিয়েত বলয় থেকে দূরে সরে যায়নি। ভিয়েতনামে জাতিগত চীনাদের ওপর নিষ্পেষণ বন্ধ হয়নি, এবং স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ সংক্রান্ত বিরোধেরও সমাধান হয়নি।
তদুপরি, ভিয়েতনামিরা চীনা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কেবল সীমান্তরক্ষী ও মিলিশিয়া বাহিনীকে ব্যবহার করেছিল, ফলে ভিয়েতনামি সশস্ত্রবাহিনীর মূল ইউনিটগুলোকে ধ্বংস করে দেয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সর্বোপরি, চীনারা উত্তর ভিয়েতনামের অধিকাংশ গ্রাম ও প্রধান প্রাদেশিক শহরগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ফলে ভিয়েতনাম চীনবিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেনি। ১৯৮০–এর দশক জুড়েই চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। এভাবে চীনাদের ভিয়েতনাম আক্রমণ তাদের জন্য একটি কৌশলগত ব্যর্থতায় পরিণত হয়।
This is a Bengali article about the reasons of the Chinese invasion of Vietnam in 1979.
Sources:
1. Nguyen Minh Quang. "The Bitter Legacy of the 1979 China-Vietnam War." The Diplomat, February 23, 2017. https://thediplomat.com/2017/02/the-bitter-legacy-of-the-1979-china-vietnam-war/
2. "Sino–Vietnamese War." The Cultural Me. https://thecultural.me/sino-vietnamese-war-1876
Source of the featured image: scmp.com