Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উইলিয়াম থমাস স্টিড: টাইটানিকে নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যিনি

জেমস ক্যামেরনের বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র টাইটানিক দেখেননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোল্যুশনের একটি মহাসৃষ্টি, দেবতুল্য এই জাহাজে সমাজের দুই ভিন্ন প্রান্তের মানব-মানবী জ্যাক আর রোজের প্রেম এবং বরফরুপী মৃত্যুদূতের কাছে দেবতার স্খলনের পরে তাদের চিরবিচ্ছেদ ঘটে জ্যাকের মৃত্যুতে; কার জানা নেই এই কাহিনী? তবে জ্যাক আর রোজের অমর প্রেম ক্যামেরনের কল্পনা হলেও, টাইটানিকের কাহিনী সত্য। এই ঘটনায় মারা গিয়েছিল এক হাজারের বেশি মানুষ। তাদের প্রত্যেকের জীবনেরই নিশ্চয়ই ছিল অনেক কাহিনী, যা আমরা জ্যাক আর রোজকে দিয়ে শুধুমাত্র কল্পনাই করতে পারি। বাস্তব বেশিরভাগ সময়ই কল্পনার চেয়ে বিস্ময়কর।

এরকমই টাইটানিকের আরেক শিকার, উইলিয়াম থমাস স্টিডের কাহিনী নিয়ে এই লেখা। তবে এটি কোনো প্রেমকাহিনী নয়, এটি এমন একজনের কাহিনী, যিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এই জাহাজে তার মৃত্যু নিয়ে।

কে ছিলেন উইলিয়াম থমাস স্টিড?

সাংবাদিকতা নিয়ে আগ্রহ আছে যাদের তারা হয়তো স্টিডের নাম শুনে থাকবেন। তার টাইটানিকের ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়িয়েও তিনি একজন কিংবদন্তী সাংবাদিক ছিলেন। একইসাথে সাহিত্যেও তার ছিল ভালো দখল। তাকে বলা হয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পিতৃপুরুষ। আমরা এখন ট্যাবলয়েড বলে যে পত্রিকাগুলো চিনি, তার সৃষ্টিও অনেকাংশে তার অবদান।

স্টিডের জন্ম ১৮৪৯ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডের নর্থাম্বারল্যান্ডের এম্বল্টনে। তার বাবা উইলিয়াম স্টিড ছিলেন একজন ধর্মসভাপতি এবং মা ইসাবেলা ছিলেন কৃষক পরিবারের মেয়ে। তার মা ছিলেন অত্যন্ত তেজস্বিনী এক নারী এবং স্টিডের লেখনী ও প্রতিভা বিকাশের প্রধান অনুপ্রেরণা। তিনি সরকারের বিভিন্ন আইনের প্রকাশ্য বিরোধিতাও করতেন।

william thomas stead as a boy
বাল্যকালে উইলিয়াম থমাস স্টিড; Image Source: wikipedia.org

স্টিডের পড়াশোনা ও ধর্মশিক্ষার প্রাথমিক পাঠটি হয় তার বাবার কাছেই। পরে কৈশোরে তিনি ওয়েকফিল্ডে যান পড়াশোনার জন্য। সেখানেই তিনি একজন ব্যবসায়ীর অফিসে প্রথম কেরানীর চাকরি পান। ১৮৭০ সাল থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন পুরোদমে। দ্য নর্দান একো নামের একটি পত্রিকায় নিয়মিত লেখা দিতে শুরু করেন তিনি। এক বছরের মধ্যেই তিনি ঐ পত্রিকার সম্পাদকের কাজও পেয়ে যান। তিনি তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কনিষ্ঠতম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ব্যবসায়িক বুদ্ধিও ছিল ক্ষুরধার, শহরের রেলপথ ব্যবহার করে তার পত্রিকার বিক্রি অনেক বাড়িয়ে তোলেন। তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হন মায়ের কাজের সূত্রে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই তার খ্যাতি ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে।

স্টিড পরে বিখ্যাত পলমল গ্যাজেটের সাথে যুক্ত হন এবং সেখানেই তার যুগান্তকারী ধারণা ‘নব্য সাংবাদিকতার (New Journalism) চর্চা শুরু করেন। তার পত্রিকায় লাইনের পর লাইন লেখাকে ছোট করে এনে ছবি ও তালিকার ব্যবহার বাড়িয়ে দেন। সাংবাদিকেরা সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি নিজের অভিমতও প্রদান করতে পারতেন এই পত্রিকায়। স্টিড গল্প বলার ছলে সংবাদ পরিবেশন করতেন, যা পরবর্তীতে ষাটের দশকের নিউ জার্নালিজম ধারাকে অনেক প্রভাবিত করেছিল। তার বিভিন্ন অনুসন্ধানমূলক লেখাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূচনা করে।

pall mall gazette
বিখ্যাত পলমল গ্যাজেট; Image Source: thenorthernecho.co.uk

তিনি বিভিন্ন শান্তিবাদী ও নারীবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন সারাজীবন। অনেক নামকরা পত্রিকা বের করেছিলেন সরকারের ও বিভিন্ন প্রকল্পের সমালোচনা করার জন্য। তবে বিভিন্ন কৌশলের কারণে তিনি সরকার তো বটেই, বুদ্ধিজীবীদেরও চক্ষুশূল হয়েছিলেন।

স্টিডের আধ্যাত্মিকতা

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন স্টিড। জাত সাংবাদিক তিনি, এখানেও তার আগ্রহ ছিল সাংবাদিকসুলভ। তিনি বর্ডারল্যান্ড নামের এক ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের করেন, যাতে আধ্যাত্মিকতাবাদ নিয়ে লেখালেখি হতো। স্টিড একসময় দাবি করে বসলেন, তিনি আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। মৃত বন্ধু সাংবাদিক জুলিয়া এ. এমেসের সাথে তার যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি দাবি করতেন, তার অটোমেটিক রাইটিংয়ের ক্ষমতা রয়েছে, যার অর্থ সচেতন না থেকেই লেখার ক্ষমতা। তার মতে, তাকে আত্মারা এসে যা বলে যেত তা-ই লিখতেন তিনি। এজন্য তিনি ‘জুলিয়া’স ব্যুরো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও খুলে ফেলেন, যাতে অন্যরাও পরাজগতের তথ্য পেতে পারে।

julia a ames
জুলিয়া এ এমেস, যার স্মরণে জুলিয়া’স ব্যুরো খোলা হয়; Image Source: wikipedia.org 

আধ্যাত্মিকতার সূত্র ধরে স্টিডের বন্ধুত্ব হয়েছিল গোয়েন্দা শার্লক হোমস খ্যাত লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সাথে। তারা দুজনই ছিলেন এই ব্যাপারে প্রচণ্ড উৎসাহী। বেশ কয়েকবার দুজনে বিভিন্ন বাটপারের কাছে প্রতারিতও হন। তবে স্টিডের বিশ্বাসে ভাঁটা পড়েনি কখনোই।

স্টিডের টাইটানিকে মৃত্যু

তার মৃত্যু হয় ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল, আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে আরএমএস টাইটানিক জাহাজে আরও সহস্র মানুষের সাথে সলিল সমাধি হয় তার। ঘটনাটি ছিল তখন পর্যন্ত সাগরের বুকে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি এবং টাইটানিকের যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা ইংরেজ ছিলেন উইলিয়াম থমাস স্টিড।

william thomas stead
উইলিয়াম থমাস স্টিড; Image Source: wikipedia.org

বানানোর সময় ধারণা করা হয়েছিল, টাইটানিক জাহাজটিকে ডোবানো সম্ভব নয়। স্বয়ং ঈশ্বর এসেও ডোবাতে পারবেন না এই জাহাজ, এমন দাবি করা হয়েছিল। স্টিডের মনে ছিল অন্য কথা। ব্যাপারটি নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। কারণ আধ্যাত্মিকতা ও আত্মার সাথে যোগাযোগ নিয়ে স্টিডের আগ্রহের অনেক আগেই ১৮৮৬ সালে পলমল গেজেটে একটি ছোট গল্পে তিনি এ ধরনের বড় জাহাজে লাইফবোট ও অন্যান্য তৎক্ষণাৎ সুবিধা না থাকার কুফল নিয়ে তার নিউ জার্নালিজম ধারায় লিখেছিলেন। গল্পটির নাম ছিল “এক জীবিতের জবানিতে, কীভাবে মধ্য আটলান্টিকে স্টিমারটি ডুবে গিয়েছিল’। গল্পটির নায়কের নামও ছিল থমাস, লেখকের নিজের নামের সাথে মিল রেখে। তবে এই গল্পে থমাস বেঁচে যায়। গল্পের শেষে স্টিডের নিজের মতামতও দেয়া ছিল;

যদি জাহাজে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইফবোট না থাকে, তাহলে বেশিরভাগ জাহাজের এই অবস্থা হবে।

এটা ছিল স্টিডের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম ধাপ। এ সময়ে হয়তো স্টিড ভাবেননি যে তার মৃত্যুও হতে পারে এভাবেই। তবে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে তার আগ্রহের শুরু থেকেই তিনি বারবার বলতেন, তার মৃত্যু হবে অপঘাতে, মৃত্যুদণ্ডে বা পানিতে ডুবে। ১৮৯২ সালে তিনি আরেকটি ছোটগল্প লেখেন, যার নাম ‘পুরনো থেকে নতুন পৃথিবীর পথে’। গল্পের কাহিনী ছিল আরএমএস ম্যাজেস্টিক নামের এক যাত্রীবাহী জাহাজ নর্থ আটলান্টিকে বরফখন্ডের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর (পাঠক কি দেখতে পাচ্ছেন টাইটানিকের সাথে মিল?) অন্য একটি জাহাজ তাদের বাঁচাতে আসে। তবে এই গল্পের নায়ক বেঁচে ছিল না।

এর বেশ কয়েক বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হাওয়ার্ড টাফটের অনুরোধে তাকে ১৯১২ সালে চড়তে হয় টাইটানিকে, নিউ ইয়র্কের কার্নেগি হলে একটি শান্তিসভায় যোগদানের জন্য। বেঁচে যাওয়া অনেক যাত্রীর জবানীতে, ভ্রমণের সময়ে তিনি যথেষ্ট আনন্দে ছিলেন এবং টাইটানিকের সৌন্দর্য নিয়ে তার প্রশংসার অন্ত ছিল না। তিনি তার স্বভাবসুলভ নিষ্ঠা ও ভদ্রতা ধরে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত। তিনি টাইটানিকের অত্যন্ত স্বল্পসংখ্যক লাইফবোটে অনেক নারী ও শিশুকে উঠতে সাহায্য করেন, নিজের লাইফ জ্যাকেটটিও অন্য একজন যাত্রীকে দিয়ে দেন।

তার মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আটলান্টিকের বরফশীতল পানিতেই তার সলিল সমাধি হয়। শেষপর্যন্ত তার লাইফবোট নিয়ে সাবধানবাণীই ফলে গিয়েছিল, শুধুমাত্র লাইফবোটের স্বল্পতার কারণে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল সেদিন। টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার ১০ বছর পর স্টিডের মেয়ে এস্তেল একটি বই প্রকাশ করেন, ‘নীলদ্বীপ’ নামে। এই বইতে দাবি করা হয়, বইটি স্টিডের আত্মার সাথে যোগাযোগ করে স্টিডের জবানিতে লেখা হয়েছে। বইতে স্টিড তার সমুদ্রে মৃত্যু ও পরকাল নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন।  

stead's memorial at new york central park
নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে স্টিডের স্মারক; Image Source: centralparknyc.org

তিনি আসলেই আত্মাদের সাথে কথা বলেছিলেন কি না সেটা নিয়ে অনেক তর্ক হতে পারে। তার লেখাগুলো আসলেই ভবিষ্যদ্বাণী কি না তা নিয়েও তর্ক চলছে প্রায় এক শতাব্দী ধরে। হয়তো পুরোটাই কাকতালীয়। তবে তার ব্যক্তিত্ব, তার অবদান, আধ্যাত্মিকতা ও এই ঘটনাবলীর কাকতালীয়তা এই পুরো ঘটনাটিকেই করে তুলেছে অত্যন্ত রহস্যময় ও কৌতূহলোদ্দীপক।

This article is in Bangla language. This article is about William Thomas Stead, who predicted his death in Titanic. Necessary resources have been hyperlnked.

Feature Image: DocumentaryTube

Related Articles