Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভিক্টোরিয়ান যুগের ব্রিটেনে নারীদের অবস্থা

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সমাজে নারীদের অবস্থা খুব একটা শক্তসামর্থ এবং সম্মানজনক ছিলো না। নারীদের প্রতি একধরনের বৈষম্য লক্ষ্য করা যেত সবখানে। ১৮৩৭ সাল থেকে ভিক্টোরিয়ান যুগ শুরু হয় এবং তা চলে প্রায় ১৯০১ সাল পর্যন্ত। এসময় ব্রিটেনসহ সারা বিশ্বে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, যা ছিল শিল্প-কারখানা এবং যান্ত্রিক যুগের সূচনা।

অন্যান্য শতাব্দীর তুলনায় উনবিংশ শতাব্দীতে খুব দ্রুত সমাজের পরিবর্তন হচ্ছিল। ব্রিটেনের মানুষ, যারা এতদিন কৃষিকাজে নির্ভরশীল ছিল এবং গ্রামীণ সমাজে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল, তারা শহরকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো এবং শিল্পের দিকে ঝুঁকে গেলো। কিন্তু নতুন যুগের এই সূচনালগ্নে নারীদের অবস্থান নিয়ে একটা চিত্র স্পষ্ট ছিলো যে, সমাজের এই পরিবর্তনে তাদের অবদান ছিল খুবই সামান্য। এর পেছনে কারণ ছিল শুধু একটাই- সামাজিকভাবে তাদেরকে স্বীকৃতি বা মর্যাদা দেয়া হচ্ছিলো না।

ভিক্টোরিয়ান নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়েছিল; Image Source: home.bt.com

তখনকার সমাজের মনোভাব ছিলো যে, পুরুষরা নারীদের থেকে সবসময় এগিয়ে থাকে। তখন মনে করা হতো, নারীরা লেখাপড়া করতে পারবে না, কারণ তারা লিখতে এবং পড়তে শিখতে অনেক দুর্বল। নারীরা পুরুষদের মতো দ্রুত কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, তাদের সেই ক্ষমতাই নেই। এমনকি তখন ব্রিটেনে নারীদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিলো না। শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য যতটুকু পড়াশোনার প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই তাদের পড়তে দেয়া হতো।

ঘরের বাইরের যেকোনো কাজে তাদের প্রার্থিতা আগেই বাতিল করে দেয়া হতো, চাকরি করার কোনো দরজা তাদের জন্য খোলা ছিলো না। এমনকি বিয়ের পর মেয়ের নিজস্ব সম্পত্তি, যেটা সে তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছে সেটার উপরও তার কোনো অধিকার থাকতো না, সেটা তার স্বামীর হয়ে যেতো। একজন আদর্শ ভিক্টোরিয়ান নারীর দায়িত্ব ছিল ঘর-সংসার চালানো এবং বাচ্চা লালনপালন করা। এদের মধ্যে খুবই কম সংখ্যক নারীকে বাইরের কাজে দেখা যেতো, কিন্তু তাদের বেতন ভাতার পরিমাণ ছিল পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। এমনকি তাদেরকে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের কাজ দেয়া হতো। যোগ্যতা অনুযায়ী নারী-পুরুষের মধ্যে কাজ বণ্টন করা হতো না।

এলিজাবেথ গ্যরেথ এন্ডারসন; Image Source: Wikimedia Commons

কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সমাজের আচরণে পরিবর্তন আসা শুর হয়েছিলো। কোনো কোনো পরিবার থেকে নারীরা পড়াশোনায় আসতে পারছিলো, কাজে যোগ দিতে পারছিলো। এমনকি নারীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছিলো। যেমন- এলিজাবেথ গ্যরেথ এন্ডারসনের কথা ধরা যাক। তিনি ব্রিটেনের প্রথম নারী চিকিৎসক, যিনি ১৮৬৫ সালে এই দায়িত্ব পান। কোনো কোনো নারী শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগদান করতে পারছিলো। যদিও তাদের বেতন ছিল কম।

পুরুষদের যেখানে দেয়া হতো বছরে ১২৭ পাউন্ডের মতো, সেখানে নারীদের দেয়া হতো প্রায় ৯২ পাউন্ড। তখন নতুন নতুন আবিষ্কার হয়েছিলো, যেমন- টেলিফোন, টাইপ রাইটার ইত্যাদি। এসব নতুন আবিষ্কারের ফলে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিলো। তখন নারীদেরকে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার পেলেও রাষ্ট্রীয় আইনসভা বা সংসদের নির্বাচনে তখনও তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়নি।

১৮৯৭ সালে এই সংঘ তৈরি হয়; Image Source: Kate Gill Textile and Upholstery Conservation Services

১৮৬০ সাল থেকে নারীরা ভোটাধিকার পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার করে গিয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভোটের অধিকার পেলেও নিজেদের মৌলিক অধিকারগুলো পেতে হলে এবং সমাজে সমানাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভোটাধিকার পাওয়াটা জরুরি। একমাত্র সংসদে যেতে পারলেই নিজেদের অধিকারগুলো নিয়ে সবার সাথে কথা বলা যাবে এবং নিজেদের নারীজাতির জন্য ভালো কিছু করা যাবে। কারণ সেসময় নারীদের সুস্বাস্থ্য নীতি, বিবাহের সঠিক আইন প্রণয়ন, নারী-পুরুষ সবার জন্য সমান শিক্ষা- এসব নিয়ে কথা বলার জন্য রাষ্ট্রের উপরিমহলে যে প্রবেশাধিকার দরকার সেটা তারা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলো। রাষ্ট্রের বড় বড় যে সিদ্ধান্তগুলো সংসদের বসে নেয়া হতো, সেই সিদ্ধান্তে নারীদের মতামত তো নেয়া হতোই না, এমনকি তাদেরকে গণনার মধ্যেও ধরা হতো না। ভিক্টোরিয়ান নারীরা এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে চেয়েছিলো। ভোটাধিকার আদায় করার জন্য তাদের লড়াই ছিলো বলে তাদেরকে Suffragist বলা হতো।

মিসেস এমিলিন প্যঙ্কহারস্ট এবং তার দুই মেয়ে ক্রিস্টাবেল ও সিলভিয়া মিলে আরেকটি সংঘ গঠন করে যার নাম Women’s Social and Political Union (WSPU); Image Source: Pinterest

১৮৯৭ সালে একটি সংঘ তৈরি হয় National Union of Women’s Suffrage Societies (NUWSS) নামে। এর নেতৃত্বে ছিলেন এলিজাবেথ গ্যরেথ এন্ডারসনের বোন মিলিসেন্ট ফকেট। তাদের দাবি-দাওয়া আদায় এবং সেগুলোর প্রচারণার বৈশিষ্ট্য ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। তারা মন্ত্রীপরিষদে তাদের দাবি নিয়ে চিঠি লিখতেন, বিভিন্ন মিটিং করতেন, এমনকি উপরিমহলের মন্ত্রীদের থেকে কাজ আদায় করার জন্য তাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করতেন। এই সংঘের বেশীরভাগ সদস্য ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা। এবং এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সমগ্র ব্রিটেনে এর প্রায় ৫০০টি শাখা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এতসব হওয়ার পরও তাদের ভোটাধিকার আদায় করা যায়নি।

মিলিসেন্ট ফকেট; Image Source: Wikimedia Commons

NUWSS গঠন করে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি চেয়ে যেহেতু কিছুই করা যাচ্ছিলো না, তাই এই সংঘের তিন সদস্য মিসেস এমিলিন প্যঙ্কহারস্ট এবং তার দুই মেয়ে ক্রিস্টাবেল ও সিলভিয়া মিলে আরেকটি সংঘ গঠন করেন, যার নাম Women’s Social and Political Union (WSPU)। এর প্রতিষ্ঠাকাল ছিল ১৯০৩। খুব শীঘ্রই এই সংঘের সদস্যদের Suffragettes নাম দেয়া হয়েছিলো। এই ইউনিয়নের ধারণা ছিল, NUWSS অত্যন্ত ভদ্র একটি সংঘ এবং তাদের প্রোটকল অনেক বেশী শান্তিপূর্ণ। এভাবে দাবি আদায় করা যাবে না। WSPU অনেক বেশী কঠোরভাবে দাবী আদায়ের দিকে এগোতে থাকে; এমনকি তারা রাষ্ট্রায়ত্ত আইন-কানুনের প্রতিও অনুগত ছিলো না। তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো দেশের আইন বারবার করে ভাঙা।

মিসেস এমিলিন প্যঙ্কহারস্ট; Image Source: Pinterest

Suffragettes-দের কাজ করার বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল এমন- তারা ইচ্ছা করে এমন সব কাজ করতো যাতে তারা পুলিশের হাতে আটক হতে পারে এবং কারাগারে যেতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এভাবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়া। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সভার বাইরে অবস্থান করে “Votes for Women!” বলে চিৎকার করে সেই সভাকে ভণ্ডুল করে দিতো। তাদের লক্ষ্যই ছিল সবার দৃষ্টি-আকর্ষণ করা, যাতে সবাই তাদেরকে চিনতে পারে এবং তাদের দলে যোগ দিতে পারে অথবা সমর্থন করতে পারে। এরকম এক Suffragettes একবার এক দুঃসাহসিক কাজ করেছিলো। তার নাম ছিল এমিলি ওয়াইলডিং ডেভিসন। ১৯১৩ সালে সে এক ডার্বিতে রাজার ঘোড়া ছিনিয়ে নিতে গিয়েছিলো এবং সেখানে মারা পড়ে।

Suffragist-দের দাবি-দাওয়া আদায় এবং সেগুলোর প্রচারণার বৈশিষ্ট্য ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ; Image Source: The Time is Now

এরকমভাবে প্রতিবাদ করার কারণে যখন একে একে এই ইউনিয়নের অনেকেই ধরা পড়তে থাকলো, তখন এই ধরা পড়া বন্দীরা অনশন শুরু করে। জেলের লোকজন খুব নিষ্ঠুরভাবে তাদের এই অনশন ভাঙে, যেটা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। এর ঠিক পরপর সরকার থেকে Cat and Mouse নামের একটি বিল পাস করা হয়। এই বিলে উল্লেখ করা হয়, যেসব Suffragettes অসুস্থ তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং যখন তারা সুস্থ হবে তখন তাদের আবারও বন্দী করা হবে।

এমিলি ওয়াইলডিং ডেভিসন ১৯১৩ সালে এক ডার্বিতে রাজার ঘোড়া ছিনিয়ে নিতে গিয়েছিলো এবং সেখানে মারা পড়ে; Image Source: Youtube.com

Suffragettes-দের এই গ্রুপটি আগের গ্রুপের তুলনায় অনেক বেশি সফল ছিল এবং তারা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো প্রচুর। কিন্তু এতকিছুর পরও তারা ভোটাধিকার তখনও পর্যন্ত আদায় করতে পারেনি। এমনকি ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, কিন্তু তখনও তাদের ভোটাধিকারভুক্ত হওয়া অধরাই থেকে যায়। অবশ্য এখানে একটি কথা উল্লেখযোগ্য। নারীদের এই প্রতিবাদ যখন চলছিলো, তখন কিন্তু পুরুষদের বেলায় মাত্র ৬০ শতাংশ রাষ্ট্রীয় ভোট দিতে পারতো, বাকিরা পারতো না, কারণ তারা ছিল জাতে গরীব।

তথ্যসূত্র

[১] Making History – World History from 1914 to the Present – Christopher Culpin

ফিচার ইমেজ সোর্স: Youtube.com

Related Articles