‘রবি-রোর’ লেখক আড্ডা: তরুণ লেখকদের সৃষ্টিশীলতায় অনুপ্রেরণা

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাষায় একটি তথ্যসমৃদ্ধ আর নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের শূন্যতা ছিল। বাংলাদেশ এবং বিশ্ব ইতিহাসের চমকপ্রদ সব তথ্য, সাম্প্রতিক বিশ্বের নানা ঘটনা, আলোড়ন জাগানো বিজ্ঞানের আবিষ্কার, ভ্রমণ, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য, বই, সিনেমা কিংবা উপকথার আকর্ষণীয় বিষয়গুলো পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের বিকল্প গণমাধ্যম জগতে আগমন হয় রোর বাংলার। 

২০১৬ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় রোর বাংলার। লক্ষ্য, সহজ ভাষায় সারা পৃথিবীর বিপুল তথ্যভাণ্ডার বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তুলে ধরা। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে গল্প বলার মতো করে সাজানো রোর বাংলার একেকটি আর্টিকেল। তিন জন লেখকের ছোট পরিবার নিয়ে রোর বাংলার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে রোর বাংলা তার লেখক এবং লেখনীতে আরও বৈচিত্র্য এনেছে, যুক্ত হয়েছে ভিডিও কন্টেন্ট। কৌতূহলী একঝাঁক পাঠকের কাছে মৌলিক উপস্থাপনা দিয়ে পাঠকের মনে রোরের জন্য তৈরি হয়েছে একটি নির্ভরযোগ্যতা।

‘রবি রোর লেখক আড্ডা’য় রোর বাংলার লেখকদের একাংশ; Photographer: Morshed Bhuiyan 

একজন পাঠক যেন প্রতিটি আর্টিকেল আরো সহজে পড়তে পারেন সেজন্য তৈরি করা হয়েছে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনও। তাই পাঠকের কাছে নিত্যনতুন সব ফিচার পৌঁছে দিতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রোর বাংলায় বাড়তে থাকে লেখকের সংখ্যা। দুই বছরের অতিক্রম করে রোর বাংলায় লেখক পরিবারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ এ।

শুধু লেখক সদস্য নয়, পাশাপাশি রোর বাংলায় আছে দক্ষ ভিডিও এডিটর টিম এবং বিজনেস ডেভেলপার টিমও। আর লেখকদের লেখনীর গুণগত মান যাচাই বাছাই করার জন্য আছে একটি দুর্দান্ত সম্পাদনা পর্ষদ। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এই পুরো দলের সিংহভাগ সদস্যই তরুণ। এই তরুণ সদস্যদের সবাইকে এক ছাদের নিচে একত্র করতেই সম্প্রতি ২২ ডিসেম্বর আয়োজন করা হয় ‘রবি-রোর লেখক আড্ডা’।

দেশে এই মুহূর্তে অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ‘রবি’র সাথে রোর বাংলার সম্মিলিত উদ্যোগেই আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের সৃষ্টিশীল উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে রবি। সেকারণেই রোর বাংলার মতো প্রয়াসের সাথে এসে দাঁড়িয়েছে এই টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি। সারা দেশজুড়ে বিস্তৃত শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান রবির সাথে দেশের মানুষের কাছে জ্ঞানভিত্তিক কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম রোর বাংলার এই মেলবন্ধন সত্যিই অনুপ্রেরণা দিয়েছে রোরের তরুণ অগ্রপথিকদের। 

রোর বাংলা টিমের একাংশ; Photographer: Md Shajedul Hasan 

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে বদলে যাচ্ছে ডিজিটাল কন্টেন্ট এর সংজ্ঞা। তাই আগামী দিনের কন্টেন্ট কেমন হতে পারে তাই নিয়ে আলোচনা করতেই গুলশানে রবির কর্পোরেট অফিসে আয়োজন করা হয় এই আড্ডার। এই আড্ডার মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘কন্টেন্টের ডিজিটাল রূপান্তর’। এছাড়াও ছিল রোর বাংলার লেখক এবং সম্পাদকদের মধ্যে মত-বিনিময় পর্ব।

রোর বাংলার এডিটর-ইন-চিফ, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ; Photographer: Md Shajedul Hasan 

আড্ডার শুরুতেই রোর বাংলার এডিটর-ইন-চিফ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আলোচনা করেন ডিজিটাল কন্টেন্ট এর ভবিষ্যৎ নিয়ে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলাতে শুরু করা দিনে অনলাইন কন্টেন্ট কেমন হতে পারে সেটাই ছিল তার বক্তব্যের মূল বিষয়। অ্যালেক্সা, সিরি কিংবা গুগল হোমের মতো প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের অনলাইনে তথ্য খোঁজার গতিপথে পরিবর্তন আনছে তাও চমৎকারভাবে উঠে আসে তার বক্তৃতায়। পাশাপাশি রোর বাংলা নিয়ে ভবিষ্যত নানা পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তার সাথে ডিজিটাল কন্টেন্ট নিয়ে আরো কিছু ভাবনা জানান রোর বাংলার সিইও মুনিমুল ইসলাম। 

কথা বলছেন রোর বাংলার সিইও মুনিমুল ইসলাম; Photographer: Morshed Bhuiyan 

এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবির ‘মিডিয়া, কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব ইকরাম কবীর। দীর্ঘ ২৪ বছর সাংবাদিকতা করা এই মানুষটিও অবিভূত হয়েছেন রোর বাংলার এই তরুণ লেখকের দল দেখে।

রবির ‘মিডিয়া, কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট, জনাব ইকরাম কবীর; Photographer: Md Shajedul Hasan 

রোর বাংলার সম্পাদকের কথার সূত্র ধরে তিনি বলেন, আগামী দিনের ডিজিটাল বিপ্লবে টেলিকম কোম্পানিগুলোই হয়ে উঠবে পরিবর্তনের নিয়ামক। টুজি থেকে থ্রিজিতে উত্তরণের ফলে যোগাযোগ আর তথ্য আদান প্রদানে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে সেটিও আলোকপাত করেছেন তিনি। রোর বাংলার নিয়মিত এই পাঠক তার বক্তব্যে তরুণ লেখকদের দিয়েছেন অনুপ্রেরণা।  

সেইসাথে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন গাজী টেলিভিশন এবং অনলাইন গণমাধ্যম ‘সারাবাংলা’র এডিটর-ইন-চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক তার দীর্ঘ কর্মজীবনের নানা দিকের কথা তরুণ লেখকদের সামনে তুলে ধরেন। স্লিপে সংবাদ লেখার দিন থেকে শুরু করে টাইপরাইটার পেরিয়ে এখন ডিজিটাল যুগের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। নানা উত্থান পতন দেখা এই মানুষটির কণ্ঠেও ছিলো রোরের কন্টেন্ট নিয়ে প্রশংসা। তরুণ লেখকদের পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে আরো দায়িত্বশীলতার সাথে ফিচারে তথ্য উপস্থাপন করতে হবে এই নিয়েও। 

নতুন লেখকদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন গাজী টেলিভিশন এবং অনলাইন গণমাধ্যম ‘সারাবাংলা’র এডিটর ইন চিফ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা; Photographer: Md Shajedul Hasan 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন গ্রে বাংলাদেশের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর রাসেল মাহমুদ। তিনি আলোচনা করেন ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট তৈরির নানা দিক নিয়ে। তার আলোচনায় উঠে আসে কীভাবে সময়ের সাথে ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট তৈরির ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। ফেসবুক, ইউটিউব-এর কারণে এখন বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের সাথে দর্শকদের যে মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে এবং তার ফলে কন্টেন্ট মূল্যায়নের যে সুযোগ এখন দর্শকদের হাতে তাও তুলে ধরেন এই নির্মাতা। পাশাপাশি রোর বাংলার লেখকদের কন্টেন্ট তৈরির ব্যাপারেও নানাবিধ পরামর্শ দেন রাসেল মাহমুদ।

বক্তব্য দিচ্ছেন ‘গ্রে বাংলাদেশ’ এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর রাসেল মাহমুদ; Photographer: Md Shajedul Hasan 

অতিথিদের বক্তব্য শেষে তাদের সবাইকে নিয়ে ছিলো প্যানেল ডিসকাশন। মানুষ প্রিমিয়াম কন্টেন্টকে কীভাবে মূল্যয়ন করবে, এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, কীভাবে কন্টেন্টের ডিজিটাল রূপান্তর হচ্ছে প্রতিনিয়ত- ইত্যাদি বিষয় নিয়েই এই পর্বে আলোচনা হয়। 

চলছে প্রশ্নোত্তর পর্ব; Photographer: Md Shajedul Hasan  

উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের অংশগ্রহণে জমজমাট প্রশ্ন-উত্তর পর্বও ছিলো আলোচনার শেষে। যেখানে রোর বাংলার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, প্রিমিয়াম কন্টেন্ট এইসব ব্যাপারে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অতিথিরা।

প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করছেন একজন লেখক; Photographer: Morshed Bhuiyan 

অনুষ্ঠানের একদম শেষ অংশে ছিল রোর বাংলার লেখকদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য পুরষ্কারের আয়োজন। ২০১৮ সালের জন্য সম্পাদনা পর্ষদের নির্বাচিত সেরা লেখক, সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক এবং সবচেয়ে পরিশ্রমী লেখকদের হাতে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাঠকদের মাঝেও আয়োজন করা হয়েছিল কুইজ প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল বই। 

উপহার গ্রহণ করছেন কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ী; Photographer: Md Shajedul Hasan 
বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে পুরষ্কার গ্রহণ করছেন সিরাজাম মুনির শ্রাবণ; Photographer: Md Shajedul Hasan
রোর বাংলার ২০১৮ সালের পথচলায় সার্বিক অবদানের জন্য এডিটর্স চয়েজ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন জাকারিয়া হাসান (ডানে); Photographer: Morshed Bhuiyan 
গত একবছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী লেখক ছিলেন সাইফুল ইসলাম (সর্ব ডানে); Photographer: Morshed Bhuiyan 
বছরের সেরা লেখকের পুরস্কার পেয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন (মাঝে); Photographer: Morshed Bhuiyan 

পুরস্কার প্রদান পর্বের পর পুরস্কার বিজয়ী সেরা লেখক তুলে ধরেন রোর বাংলায় তার পথচলার অভিজ্ঞতার কথা। দেশের জনপ্রিয়তম বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে রোর বাংলার কাজের পরিধি এবং গুণগত মান প্রতিনিয়তই আরও সমৃদ্ধ হবে, অতিথিদের এমন আশাবাদ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়েই শেষ হয় ‘রবি-রোর লেখক আড্ডা’। 

This article is written in Bangla, on a program named 'Robi-Roar Lekhok Adda'. The program has been arranged jointly by Roar Bangla and Robi, mainly as a meet-up of Roar content creators and editors with renowned media personalities of the country. 

Feature Image: Morshed Bhuiyan 

Related Articles