Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাটল অব বয়রা-গরিবপুর: আর্ট অব ওয়ার | (পর্ব – ২)

বয়রা-গরিবপুর যুদ্ধের ১ম পর্বে আমরা দেখেছি কীভাবে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর যশোর প্রতিরক্ষা লাইনকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পাকবাহিনী ধারণাই করেনি যে, বয়রার হাওড়-বাঁওর, কাদা-মাটি পাড়ি দিয়ে মুক্তিবাহিনী আসতে পারবে। শুধু মুক্তিবাহিনী না, সাথে করে মিত্রবাহিনীর ট্যাংকও নিয়ে এসেছিল মুক্তিসেনারা। কাদার উপর খেজুর গাছ বিছিয়ে দিয়েছিল মুক্তিবাহিনী, তাতেই পার হয়ে আসে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক। মুক্তিবাহিনীর এমন বিচিত্র সব কৌশলে যুদ্ধের আগেই পিছিয়ে পড়ে শত্রুরা। কুয়াশার ভেতর থেকে ভারতীয়  ট্যাংক বের হতে দেখে হতভম্ব পড়েন যশোরে মোতায়েনকৃত পাকবাহিনীর ১০৭ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান। 

বলে রাখা ভাল- ভারত-পাকিস্তান পূর্ণ যুদ্ধ ডিসেম্বরে শুরু হলেও এপ্রিল-মে থেকেই নিয়মিত সীমান্ত সংঘর্ষ হতো। 

যুদ্ধের বর্ণনা

পাকবাহিনী তিনদিক থেকে যৌথবাহিনীকে ঘিরে ধরে। কিন্তু তাদের পিছু হটাতে পারে না। ফায়ার সাপোর্টের জন্য পাকবাহিনীও ট্যাংক এবং আর্টিলারি আনে যুদ্ধক্ষেত্রে। ব্যাপক যুদ্ধের শঙ্কায় বেসামরিক মানুষ এলাকা ত্যাগ করে। বিপদের আঁচ করতে পেরে অনেকে আগেভাগে ধান কাটা শুরুও করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের জন্য সেই ধান ঘরে তোলার সুযোগ হয়নি।

বয়রা যুদ্ধের মানচিত্র; Image Courtesy: ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন

কুয়াশার কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাংকগুলো যৌথবাহিনীর লাইনের প্রায় ১০০ গজ সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু তা-ও কুয়াশার কারণে লক্ষ্যভেদ সম্ভব হয় না।

আক্রমণের একপর্যায়ে কুয়াশার কারণে পাকিস্তানি ২১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি আক্রমণের অগ্রভাগের ট্যাংকের সাথে সমন্বয় রাখতে না পেরে পিছিয়ে পড়ে। ফলে সহজেই যৌথ বাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পিটি-৭৬ ট্যাংক ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্রের মাধ্যমে আক্রমণকারী পাকিস্তানি ট্যাংকগুলোকে ধ্বংস অথবা বিকল করে ফেলা সম্ভব হয়। মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা মাইনে ধ্বংস হয় কিছু ট্যাংক।

বয়রাতে ভারতীয় ট্যাংক; Image Source: Senior Today

পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি কোম্পানি চৌগাছাতে সংগঠিত হয়ে গরিবপুর প্রতিরক্ষা লাইনের পশ্চিম থেকে আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর এ আক্রমণ আংশিক সফল হয়। তারা পশ্চিম থেকে গরিবপুরের জগন্নাথপুর (বর্তমান নাম মুক্তিনগর) গ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এ আক্রমণে ভারতীয় বাহিনীর ১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের চার্লি (সি) কোম্পানির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, ও পিছু হটে যায়।

কিন্তু মুক্তিবাহিনী এই এলাকার ভূপ্রকৃতির সাথে খুব ভালমতো পরিচিত ছিল। গাছের ফাঁকফোঁকর, জলাজঙ্গলের মাঝখান দিয়ে বারবার তারা হামলা চালাতে থাকে। অন্যদিকে, মরুর পাকসেনারা সাঁতারই জানত না। কর্দমাক্ত এলাকায় তাদের বেগ পেতে হচ্ছিল, যা যুদ্ধে তাদের বড় অসুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।

বয়রা যুদ্ধ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম বড় সীমান্ত যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর কাছে কৌশলে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি পাকিস্তান শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো বিষয় ঢাকা থেকে জেনারেল নিয়াজি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। যুদ্ধ শুরুর আগেই অবস্থা নিজেদের প্রতিকূলে যায়, তাদের মনোবল কমতে থাকে।

নিয়াজি দুঃসাহসিক একটা কিছু করে তার সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। পাকিস্তানী সৈন্যরা বয়রা গ্রামে হত্যা চালায়। এতে কয়েকজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। তবে বেশি মারা যায় বেসামরিক মানুষ। “ভারতের মাটিতে যুদ্ধ হচ্ছে” এবং “আমাদের সেনারা ভারতে প্রবেশ করেছে” এটা বলে দম্ভ করার জন্যই জেনারেল এই কাজ করে বসেন।

ইতিমধ্যে ট্যাংক হারানো ও আর্টিলারির সহায়তা না থাকায় পাকবাহিনী তাদের প্রাথমিক সফলতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং গরিবপুর গ্রামের অভ্যন্তরে ব্যাপক হাতাহাতি যুদ্ধের পর পাককোম্পানি দুটি পিছু হটতে বাধ্য করে মুক্তিসেনারা। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়- খুব কাছাকাছি চলে আসায় মুক্তিবাহিনীর সাথে বেয়নেট এবং হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হয় পাকবাহিনীর কিছু সেনা। জগন্নাথপুরের যে আম্রকাননে মূল যুদ্ধ হয়, সেটি এখন মুক্তিনগর শহীদ সরণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। 

সকাল ১০টার মধ্যে সম্পূর্ণ গরিবপুর এলাকায় যৌথ বাহিনীর ভারতীয় ১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। ক্যাপ্টেন হুদা (খন্দকার নাজমুল হুদা, বীর বিক্রম) তখন মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এদিকে, দত্তপুকুর ও বুড়িন্দিয়ায় উভয়পক্ষের মাঝে তুমুল গোলাগুলি চলতে থাকে। অগ্রগামী টিম হিসেবে মুক্তিবাহিনী এগোতে থাকে। গুলির ভেতর দিয়ে তারা দত্তপুকুরে ঢুকে পড়ে।

ক্যাপ্টেন হুদা ( খন্দকার নাজমুল হুদা, বীর বিক্রম ), credit: wikimedia commons

বয়রা-গরিবপুর ডগফাইট

সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এয়ার সাপোর্ট চায়।

পাকিস্তান সরকার জার্মানি এবং ইরানের কাছ থেকে পুরনো ৯০টি এফ – ৮৬ স্যবর সংগ্রহ করেছিল, যেগুলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর বোমা ফেলতে ব্যবহার করা হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ১৪ নং স্কোয়াড্রনের (Tail choppers) ১৬টি স্যবর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন ছিল। যদিও কোথাও কোথাও স্যবরের সংখ্যা ২০ বলা।

গরিবপুরে বোমা ফেলতে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর সকালে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর (বর্তমান তেজগাঁও বা পুরনো বিমানবন্দর) থেকে ৪টি এফ-৮৬ স্যবর যৌথবাহিনীর অবস্থানে হামলা করতে উড়ে যায়। সকাল ৮:১১ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানগুলো আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে এবং বয়রার উপর দিয়ে উড়ে কয়েকবার ডাইভ দিয়ে বোমা ফেলে। সেই যুগের বিমান লক্ষ্যে বোমা ফেলার আগে ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠে যেত, তারপর নিচে নামতে নামতে প্রচণ্ড গতি অর্জন করত, এবং ভূমি থেকে কয়েকশ ফুট উঁচুতে থাকা অবস্থায় বোমা ফেলত।

বিমানের ডাইভ দিতে এবং পরেরবার আবার ডাইভ দেয়ার জন্য ইউ টার্নের মতো নিতে হয়। এজন্য বেশ জায়গার প্রয়োজন হয়। সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ হবার ফলে স্যবর ডাইভ দেয়ার সময় ভারতের অভ্যন্তরে বয়রার আকাশে চলে আসে। ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তাই সাথে সাথেই কলকাতার দমদম বিমানবন্দর (বর্তমান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ২২ নং স্কোয়াড্রনের ৪টি জিনাট বিমান শত্রুবিমান ধাওয়া করতে উড়ে যায়। এটিই বয়রার আকাশযুদ্ধ বা বয়রার ডগফাইটের সূচনা করে।

শিল্পীর তুলিতে বয়রার আকাশযুদ্ধ; Image Cortesy: Air power asia

কিন্তু যে সময় জিনাট বয়রা এলাকায় পৌঁছে, ততক্ষণে স্যবর হামলা চালিয়ে ভারতের আকাশসীমা ত্যাগ করে।

পাকিস্তানিদের অভিযান ১০:২৮ মিনিটে ঘটে। এক্ষেত্রেও ভারতীয় বিমান সময়মতো এসে পৌঁছায়নি, এবং স্যবরগুলো নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সেদিন প্রায় ১৪:৪৮ ঘটিকায় ভারতীয় রাডারে আবার চারটি স্যাবর ধরা পড়ে, যেগুলো ভূমি থেকে প্রায় ২,০০০ ফুট (৬১০ মিটার) উঁচু দিয়ে উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে ছুটে যাচ্ছিল।

১৪:৫১ ঘটিকায় ঘাঁটির অধিনায়ক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রায় অ্যান্ড্রু ম্যাসির নেতৃত্বে চারটি জিনাট ধেয়ে যায়। ভারতীয় রাডার স্যবরগুলো সনাক্ত করার তিন মিনিটেরও কম সময়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী সাড়া দেয়।

শক্তির বিচারে ভারতীয় জিনাট বিমানের তুলনায় পাক-স্যবর অনেক উন্নত ছিল। পাকিস্তান এতে AIM 9 sidewinder missile সংযুক্ত করেছিল। আকাশে বিমানের সাথে বিমানের যুদ্ধ বা ডগফাইটে সব মিলে স্যবর যোজন যোজন এগিয়ে ছিল। ভারতীয় বিমান বহরের চার পাইলটই ছিলেন বয়সে অত্যন্ত তরুণ, অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে। দলনেতা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অ্যান্ড্রু ম্যাসি। তার সাথে আছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মন্দাপাদু গনপতি, ফ্লায়িং অফিসার সোয়ারেজ ও ডোনাল্ড ল্যাজারাস।

পাক স্যবরের নিকটবর্তী হওয়ায় আগেই প্রচলিত ডগ ফাইটের কায়দায় শত্রু বিমান বহরকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে ম্যাসি তার ৪টি বিমানকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলেন। প্রথমভাগে থাকে দলপতি ম্যাসি ও ফ্লায়িং অফিসার সোয়ারেজের দুটি জিনাট বিমান। পেছনে অবস্থান নেয় গনপতি ও ল্যাজারাসের অপর দুটি ন্যাট।

ভারতীয় বিমান বহরের এই বিভাজন দেখে পাক স্যবর জেটও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মূল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কিছুটা দূরে রক্ষণাত্মক অবস্থানে চলে যায়। এ সময় ম্যাসি ও সোয়ারেজ বিমান নিয়ে স্যাবরগুলোর দিকে ধেয়ে যান। স্যবরগুলো পালাতে গিয়ে গণপতি ও ল্যাজারাসের বাকি দুটি জিনাটের সামনে গিয়ে পড়ে। ভারতীয় পাইলটদের সামনে মোক্ষম সুযোগ। গনপতি ল্যাজারাসকে রেডিও “মার্ডার মার্ডার মার্ডার” বলে চেঁচিয়ে ওঠেন, অর্থাৎ “ঘায়েল করো স্যাবরগুলোকে।”

দুই পাইলটই সময় নষ্ট না করে তাদের কামান থেকে শেল নিক্ষেপ করলে নিখুঁতভাবে দুটি পাক স্যাবর জ়েটকে আঘাত হানল। বিমান দুটিতে মুহুর্তেই আগুন ধরে যায়। ল্যাজারাস উল্লাসে চেচিয়ে উঠলেন, “I got him! I got him!” এ অবস্থায় দুই পাক-পাইলট পারভেজ মেহদী কোরেশী ও খলিল আহমেদের বিমানের মায়া ত্যাগ করে বেইল আউট বা প্যারাস্যুট নিয়ে বিমান থেকে ঝাঁপ দেন। তারা প্যারাসুট খুলে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেও বনগায়ের অদূরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরা পড়েন। দুই পাক বিমানের ভগ্নাংশও পড়ে ভারতীয় সীমানার ভেতরে।

এ সময় আরেকটি (৩য়) পাক স্যবর দলপতি ম্যাসির বিমানের পেছনে অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থানে চলে আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে ল্যাজারাস দ্রুত ফর্মেশন ভেঙে পাল্টা হুমকি হিসেবে সেই স্যাবরের পেছনে চলে যান। ফলে পাক বিমানকে পিছু হটতে হয়, দলপতি ম্যাসির বিমান হয় বিপদমুক্ত।

ভারতীয় বিমানের ক্যামেরাতে স্যবর ধ্বংসের ছবি; Image credit: Asianet Newsable

এদিকে দলপতি ম্যাসি ৪র্থ পাক স্যাবর জেটের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হন, যার পাইলট উইং কমান্ডার চৌধুরী। ম্যাসির বিমান সামনাসামনি দেখে চৌধুরী তার বিমানকে সুবিধাজনক আক্রমনাত্মক অবস্থানে নিতে উপরে ওঠা শুরু করেন। ফলে ম্যাসির সামনেও একই পথ অবলম্বন করা ছাড়া আর উপায় রইল না। তিনিও শুরু করলেন খাড়াভাবে উপরে ওঠা। এ সময়ই পাক পাইলট চৌধুরী ম্যাসির বিমান লক্ষ্য করে শেল ছোড়ে ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ম্যাসিও মাত্র ৭০০ গজ দূর থেকে পাল্টা শেল ছোড়েন এবং তার শেল চৌধুরীর স্যবরের পোর্ট উইংয়ে (বাম পাশে) আঘাত হানে। চৌধুরী আহত স্যবর নিয়ে পাকিস্তানী সীমানার দিকে পালাতে থাকেন, পিছু নেন ম্যাসি। এ সময় দুর্ভাগ্যবশত ম্যাসির বিমানের কামান অকেজো হয়ে যায় এবং তিনি দেখেন ভারতীয় আকাশসীমা ছাড়িয়ে গেছেন। ফলে তাকে ধাওয়া করা বাদ দিয়ে নিজেদের ঘাটির দিকে ফিরে যেতে হয়। পাক পাইলট চৌধুরী অবশ্য নৈপুণ্য দেখিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত স্যবর জেট নিয়ে সফলভাবে ঢাকার তেজগাও ঘাটিতে ফিরে যেতে সক্ষম হন। তিনি একটি ভারতীয় জিন্যাট বিমান ঘায়েলের দাবী করলেও পরে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়, কারণ আক্রমণে অংশ নেওয়া ৪টি ভারতীয় ন্যাট বিমানই সম্পূর্ণ অক্ষতাবস্থায় ঘাটিতে ফিরতে সক্ষম হয়।

প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ স্যবরটি পরবর্তীতে নিশ্চিতভাবেই বিধ্বস্ত হবে, কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিবেদন নিশ্চিত করে সেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্যবরকে দক্ষতার সাথে উড়িয়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে ল্যান্ড করান পাইলট চৌধুরী।

তাৎক্ষণিকভাবে চার বিমানচালক ভারত ও বাংলাদেশে রাতারাতি বিখ্যাত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাদের ছবি, গান ক্যামেরাতে ধারণকৃত বিধ্বস্ত স্যবরগুলোর ছবি এবং পাক যুদ্ধবন্দীদের খবর বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

আটক পাক পাইলট কোরেশি, ডানে সাম্প্রতিক ছবি; Image Credit: ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন

২৪ নভেম্বর পর্যন্ত গরিবপুরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর এক ট্যাংক যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ১৪টি ট্যাংক ছিল। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ৫টি ট্যাংক ধ্বংস হলেও পাকবাহিনী তাদের সব কয়টি ট্যাংক হারায়।

সপ্তাহখানেক ধরে চলা এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী একইসঙ্গে ট্যাংক, আর্টিলারি ও এয়ার সাপোর্ট ব্যবহার করে। কিন্তু এই ব্যর্থ আক্রমণে তাদের প্রায় এক স্কোয়াড্রন ট্যাংক (১১-১৪টি ট্যাংক) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়, কয়েকটি বিমান ধ্বংস হয় এবং হতাহত হয় অনেকেই। তাদের নিহত কিংবা আহতদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর ১৯ জন নিহত, ৪৪ জন আহত, ২টি ট্যাংক সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত এবং আরো কিছু ট্যাংক অকেজো হয়।

কিছু বর্ণনাতে এক পাকসেনার জীবনের অন্তিম মুহূর্তের বর্ণনা পাওয়া যায়। মৃতপ্রায় সেই পাকসেনা মৃত্যুর আগে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং সে বলে, “তোমরা তো দেখছি সবাই মুসলমান। আমাদের তো বলা হয়েছে, যুদ্ধটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে হচ্ছে।” মুক্তিযোদ্ধারা তাকে বলেন, এটা ধর্মযুদ্ধ না, দেশের জন্য যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলিম সবাই যুদ্ধ করছেন। মুক্তিসেনারা তাকে পানি দেন। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে ওই সেনা বলেন, এ যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে। এই বলে তার হাতের ঘড়ি, ১৬০ রাউন্ড গুলি, চাইনিজ রাইফেল ও ১৫০ রুপি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়ে কলেমা পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

যুদ্ধের সমাপ্তি

৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে শত্রুদের এই ঘেরাও বজায় ছিল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ৩ তারিখ শেষে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় পাকবাহিনী। এই যুদ্ধে সব মিলিয়ে কতজন মারা যায় সেটা  নিশ্চিত না। ধারণা করা হয়, অন্তত ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এর বাইরেও অন্তত ১০০ বেসামরিক মানুষ পাকবাহিনীর এলোমেলো কামানের গোলায় হতাহত হন।  

পরে যশোর হয়ে খুলনার শিরোমণিতে অবস্থান নেয় তারা। সেখানে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি‘ সংঘটিত হয়।

As freedom fighter trying to defeat pakistani army during 1971 Bangladesh Liberation War, they started to kickout enemy from border and made their way toward capital Dhaka. Khulna region was heavily fortified. Freedom fighters did a surprise maneuver to outrun superior enemy. But there was more surprise for the enemy! This Benglai article discuss battle of bayra during 1971 Bangladesh Liberation War. 

  1. ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন - সারতাজ আলীম (একই লেখকের বইয়ের অংশবিশেষের পরিমার্জিত এবং বর্ধিত সংস্করণ)গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ - খন্ড ০৯
  2. মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অভিযান(৭)। সামরিকবাহিনী কর্তৃক সংগৃহীত সম্মুখযুদ্ধের তথ্যবিবরণী
  3. এগারোটি সেক্টরের বিজয় কাহিনী - মেজর রফিকুল ইসলাম
  4. ১৯৭১ এর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ইতিহাস, ইতিহাস বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়, ভারত সরকার, Bharat Rakshak -এ প্রকাশিত
  5. A Tale Of Millions - Major M. Rafiqul Islam, B.u / লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে - মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম
  6. মল্লযুদ্ধেই মুক্ত সীমান্তগ্রাম - bdtimes365.com
  7. হাতাহাতি যুদ্ধ ১৯৭১, দি সংবাদ লিমিটেড
  8. লেখকের নেয়া মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এর সাক্ষাৎকার
  1. 'উইটনেস টু সারেন্ডার' ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক(pakistan)

Feature Image: গেরিলা ১৯৭১ 

Related Articles