Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য ডাইহার্ড স্কার্মিশার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
গোয়ালহাটি গ্রাম

শেষবারের মতো পেছন ফিরে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের দিকে তাকালেন সিপাহি মোস্তফা। ’৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে ‘তঘমা-ই-জং’ আর ‘সিতারা-ই-হার্ব’[1] পাওয়া লোকটা জেদি বালকের মতো গাছের শিকড় আঁকড়ে গোঁ ধরে বসে আছেন। তার ডান বাহু আর ডান হাঁটুর ক্ষতস্থান থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে, কিছুক্ষণ আগেই বিস্ফোরিত একটা পাকিস্তানি মর্টার শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতেই এই দুরবস্থা।

সিপাহি মোস্তফার কাঁধে ঝুলতে থাকা সিপাহি নান্নু মিয়া ফের ককিয়ে উঠলেন, গাছের শিকড় আঁকড়ে বসে থাকা মুমূর্ষু ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ শেষবারের মতো কমান্ডারসুলভ কপট উষ্মা নিয়ে ওদের চলে যেতে তাগাদা দিলেন। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে আহত নান্নুকে কাঁধে নিয়ে সিপাহি মোস্তফা ত্রস্ত পায়ে সুতিপুরের মেইন ক্যাম্পের দিকে এগোতে লাগলেন।

মোস্তফারা চলে যেতেই নূর মোহাম্মদ তার আহত হাত আর হাঁটু নিয়ে হিঁচড়ে নিজেকে একটু উঁচু করলেন, তারপর শত্রুর দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে ফের নিচু হলেন। গুলিতে কাউকে হতাহত করতে পারলেন কি না, তা নিয়ে এখন আর কোনো ভাবনা নেই তার। একমাত্র লক্ষ্য এখন যতক্ষণ পারা যায় পাকিস্তানিদের কনফিউজড করে আটকে রাখা, যেন মোস্তফা আর নান্নু তার ফায়ারের কাভারে পিছু হটে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন।

সুতিপুর গ্রামটা যশোর সেনানিবাসের কাছেই, কিন্তু ভারত সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় স্ট্র্যাটিজিকালি[2] খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বরাবরই মুক্তিবাহিনী গ্রামটাকে মুক্তাঞ্চল[3] হিসেবে দখলে রেখেছে, আর শুরু থেকেই পাকিস্তানিরা সুতিপুর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিল। এর আগে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানিরা সুতিপুর দখল করতে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ফিরেও গেছে।

সুতিপুরে মুক্তিবাহিনীর ডিফেন্সে শত্রু যেন সরাসরি আক্রমণ করে বসতে না পারে, সে জন্যই সুতিপুরের সামনে গোয়ালহাটিতে মুক্তিসেনাদের একটা টহলদল (স্ট্যান্ডিং পেট্রোল)[4] অবস্থান নিয়ে শত্রুর গতিবিধির ওপর নজর রাখত। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের টহলদল সেদিন গোয়ালহাটির ছুটিপুরে অবস্থান নিয়েছিল।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা সন্তর্পনে নূর মোহাম্মদের টহলদলকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলল। পাকিস্তানিদের ফায়ারের প্রচণ্ডতায় আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল, দলের এলএমজি ম্যান সিপাহি নান্নু মিয়া গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, কিন্তু অভিজ্ঞ নূর মোহাম্মদ নার্ভ হারালেন না।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ। (২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬–৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)। অলংকরণ: রহমান আজাদ

৪টা রাইফেল আর ১টা এলএমজি নিয়ে নূর মোহাম্মদ এক অসম যুদ্ধে নামলেন। শুরুতেই একজনকে বার্তাবাহক হিসেবে পেছনে পাঠিয়ে দিলেন। সুতিপুরে অবস্থিত মূল ক্যাম্পে শত্রুর উপস্থিতি, গতিবিধি আর এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাঠানোটা এখন সবচেয়ে জরুরি। এতে উপযুক্ত প্রস্তুতি আর করণীয় ঠিক করার জন্য তারা পর্যাপ্ত সময় পাবেন। তা ছাড়া তার কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা যদি তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসতেই চান, তাহলে এই বার্তাবাহক তাকে পথ চিনিয়ে এখানে নিয়ে আসতে পারবেন।

এরপর তারা তিনজনে মিলে পাকসেনাদের ফায়ারের জবাব দিতে শুরু করলেন, নূর মোহাম্মদের মাথার ভেতর চিন্তার ঝড় চলছে। পাকসেনাদের আক্রমণের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ওরা রাজাকারদের কাছ থেকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে পাকাপোক্ত সংবাদ পেয়ে আটঘাট বেঁধেই এসেছে। কিন্তু অভিজ্ঞ নূর মোহাম্মদ ভালো করেই জানেন যে আক্রান্ত হয়েই রণে ভঙ্গ দিয়ে লাভ হয় না; বরং মুক্তিসেনাদের পিঠটান দিতে দেখলে কালবিলম্ব না করেই পাকিস্তানিরা সুতিপুর ডিফেন্সের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

তাই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে নিজেদের বাঁচার রাস্তা বের করতে, আর যতটা সম্ভব পাকিস্তানিদের আটকে রাখার চেষ্টা করতে হবে যেন সুতিপুর মেইন ডিফেন্স প্রস্তুত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। নূর মোহাম্মদের হাতে বিকল্প এখন দুটি— এক. যতটা সম্ভব পাকিস্তানিদের আটকে রেখে সুতিপুর থেকে আসা উদ্ধারকারী দলের জন্য অপেক্ষা করা; দুই. একে অন্যকে কাভার করে ফায়ার করতে করতে পিছিয়ে এসে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসা।

প্রথম বিকল্পটা নূর মোহাম্মদ বাতিল করে দিলেন। কারণ উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছানোর আগপর্যন্ত তিনজন মিলে এই সীমিত ফায়ার পাওয়ার নিয়ে পাকিস্তানিদের আটকে রাখাটা প্রায় অসম্ভব। ওরা ইতিমধ্যে ২ ইঞ্চি মর্টার ছুড়তে করতে শুরু করেছে। অগত্যা নূর মোহাম্মদ ২য় বিকল্পটাই বেছে নিলেন।

রাজাকারদের দেওয়া তথ্যমতো পাকিস্তানিরা ওদের অবস্থানটা ঠিকই খুঁজে বের করে নিয়েছে, কিন্তু সম্ভবত তারা এখনো তাদের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত না। তাই নূর মোহাম্মদ শুরুতেই শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন। তিনজন মিলে ক্রমাগত জায়গা বদল করতে করতে গুলি বিনিময় করতে লাগলেন যেন শত্রু তাদের সঠিক সংখ্যা অনুমান করতে না পারে। এর মধ্যেই সুযোগ খুঁজতে লাগলেন যেন পাকসেনারা একটু পিছু হটলেই আহত নান্নুকে নিয়ে নিরাপদে সটকে পড়া যায়।

মুক্তিসেনাদের প্রচণ্ড ফায়ারের তোপে পাকিস্তানিরা প্রাথমিকভাবে পিছু হটল, তারপর নিরাপদ দূরত্বে থেকে নূর মোহাম্মদের অবস্থান লক্ষ্য করে একের পর এক মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করতে শুরু করল। কিন্তু তারপরও আহত নান্নুকে কাঁধে করেই একই কৌশলে নূর মোহাম্মদরা ফায়ার ব্যাক করে যাচ্ছিলেন।

হঠাৎ খুব কাছেই মর্টারের একটা গোলা বিস্ফোরিত হলো। মর্টার গোলা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে নূর মোহাম্মদদের কানে তালা লেগে গেল যেন। বিস্ফোরিত গোলার শক-ফ্রন্ট[5]এর পিছু পিছু চাক ভাঙা বোলতার মতো ছুটে এল স্প্লিন্টারের বৃষ্টি। সংবিৎ ফিরে পেয়ে নূর মোহাম্মদ অনুভব করলেন তার ডান পাশটা যেন অবশ হয়ে গেছে। হাত আর হাঁটুতে গভীরভাবে গেঁথে গেছে মর্টারের স্প্লিন্টার, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে।

নান্নু আগেই আহত হয়েছেন, নিজেও গুরুতর আহত, শুধু সিপাহি মোস্তফাই দুই পায়ে খাড়া এখনো। নূর মোহাম্মদ বাস্তবতা মেনে নিলেন। একা মোস্তফার পক্ষে দুজনকে বয়ে নেওয়া অসম্ভব। হয় তিনজন মিলেই এখানে মরতে হবে অথবা যেকোনো একজনকে নিয়ে মোস্তফা সরে পড়ার চেষ্টা করতে পারেন, অন্যজনের মৃত্যু নিশ্চিত। বাস্তবতাটা সিপাহি মোস্তফাও বুঝলেন, কিন্তু তিনি একা দুজনকেই নিয়ে সরে যেতে চাইলেন। কিন্তু নূর মোহাম্মদ সায় দিলেন না। নাছোড়বান্দা মোস্তফা তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করতেই নূর মোহাম্মদ বাম হাতে গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরে বসে রইলেন।

নূর মোহাম্মদ তার অকৃত্রিম সহযোদ্ধা মোস্তফার হাতে নিজের এলএমজিটা তুলে দিলেন, যেন তার মৃত্যুর পর অযথাই একটা এলএমজি শত্রুর হাতে গিয়ে না পরে। সিপাহি নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নিয়ে সিপাহি মোস্তফা এবার নূর মোহাম্মদের নির্দেশমত অস্ত্রপাতি সব কুড়িয়ে নিলেন। অবশেষে নূর মোহাম্মদের দিকে তাকাতেই নূর মোহাম্মদ ফের তাকে তাগাদা দিলেন। চোখের পানি লুকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে মোস্তফা পেছনের পথ ধরলেন। যাওয়ার আগে একটা লোডেড রাইফেল নূর মোহাম্মদের পাশে রেখে গেলেন।

মোস্তফা আর নান্নুর প্রস্থানকে নিরাপদ করতে আরেক পশলা গুলি ছোড়ার মতো শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলেন নূর মোহাম্মদ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দ্রুতই কাহিল হয়ে পড়ছেন তিনি। গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে নূর মোহাম্মদ শরতের আকাশ দেখলেন। স্বস্তির শ্বাস ফেললেন মোস্তফা আর নান্নুর কথা ভেবে, ওরা এ যাত্রা বেঁচে গেলেন। তার সাধ্যমতো তিনি পরিকল্পনা করেছেন, ওপরওয়ালার পরিকল্পনার ওপর তো আর তার কোনো হাত নেই। একমাত্র তৃপ্তি; তিনি যোদ্ধা, আর যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যাচ্ছেন। নূর মোহাম্মদের চারপাশ ঘিরে আঁধার এগিয়ে আসে গুটি গুটি পায়ে। ১৩ বছর বয়সে হারানো বাবা-মায়ের মুখ তার পরিষ্কার মনে পড়ে না, স্ত্রী তোতাল বিবির মুখটা শরতের মেঘ হয়ে ভাসে।

চারদিকে পাকসেনাদের সতর্ক নড়াচরা; বুটের চাপে ডাল ভাঙ্গার শব্দ; ক্রমশ ওরা নূর মোহাম্মদ শেখকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে! মুমূর্ষু নূর মোহাম্মদ শেখ প্রাণপণে তোতাল বিবির মুখটা মনের পর্দায় জিইয়ে রাখবার চেস্টা করেন। হায়েনারা সাবধানে পা ফেলে আরো কাছে এগিয়ে আসে! কিন্তু হঠাৎ তার চেয়েও দ্রুত এগিয়ে আসে একরাশ ঐশী আঁধার, হিংস্র পাকসেনাদের হাতে ধরা পরবার আগেই লুফে নেয় জাতির সূর্যসন্তান নূর মোহাম্মদকে…

অলংকরণ: রহমান আজাদ

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান তিনি। ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি।

১৯৫২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজ গ্রামেরই সম্পন্ন কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন; স্ত্রী তোতাল বিবির বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। ১৯৫৪ সালের শেষ ভাগে জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান হাসিনা খাতুন। সংসারে অভাবের ছোঁয়া লাগায় দিশেহারা হয়ে যোগ দেন মুজাহিদ বাহিনীতে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯, তদানীন্তন ইপিআরে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ১৫ নভেম্বর ১৯৬৪, জন্মগ্রহণ করে তার দ্বিতীয় সন্তান শেখ মো. গোলাম মোস্তফা। কিছুদিন পরেই আত্মীয়স্বজনদের অনুরোধে বিয়ে করেন মৃত শ্যালকের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন। যুদ্ধ শেষে তিনি ‘তকমা-ই-জং’ ও ‘সিতারা-ই-হারব’ মেডেল লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। মার্চ ১৯৭১-এ তিনি ছুটিতে ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। পাকবাহিনীর গণহত্যার খবর পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গায় ইপিআরের ৪নং উইংয়ে নিজ কোম্পানির সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

এরপর যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে যোগ দেন। যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। বয়রা সাব-সেক্টরের অধীনে গোয়ালহাটি, ছুটিপুর ঘাট, ছুটিপুর সেনাক্যাম্প, বরনী আক্রমণে অংশ নেন এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বরনীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার জীবন রক্ষা করেন তিনি। ৫ সেপ্টেম্বর ’৭১ সুতিপুরের যুদ্ধে এই বীর সেনানী প্রাণ হারান। পাকসেনারা নূর মোহাম্মদ শেখের মৃতদেহ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আর তার চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। ঘণ্টাখানেক পর মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের হটিয়ে দিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে শার্শা থানার কাশিমপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করে।

ফুটনোট

[1] পাকিস্তান সেনাবাহিনির বীরত্বসূচক পদক।

[2] উচ্চতর রণকৌশলগত কারণে।

[3] পাকসেনা আর রাজাকারদের আধিপত্যমুক্ত মুক্তিসেনাদের দখলে থাকা এলাকা।

[4] এ জাতীয় টহল দলের মূল কাজ শত্রুর গতিবিধি জেনে সেনাপতিকে অবহিত করা।  আক্রান্ত হলে এরা যুদ্ধ এড়িয়ে যায়।

[5] যেকোনো গোলা বিস্ফোরিত হলে প্রথমে বিস্ফোরণের কারণে উৎপন্ন ‘শক’ বৃত্তাকারে চারপাশের বাতাস ঠেলে চারদিকে ছড়িয়ে পরে। একে শকফ্রন্ট বলে। এর পিছুপিছু স্প্লিন্টার চারপাশে ছরিয়ে গিয়ে চারপাশে আঘাত করে।

তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থাবলি

১।  হাসান হাফিজুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, অষ্টম থেকে একাদশ খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্পাদিত, বিজি প্রেস, তেজগাঁও, ঢাকা, নভেম্বর, ১৯৮২।
২।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংকলিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ-ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস, দশদিশা প্রিন্টার্স, ১২৪, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০, মার্চ, ২০০৬।
৩।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংকলিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ-সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, দশদিশা প্রিন্টার্স, ১২৪, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০, মার্চ, ২০০৬।
৪।  মুহাম্মদ নূরুল কাদির, দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, মুক্ত প্রকাশনী, ১২৯ দক্ষিণ কমলাপুর রোড, ঢাকা-১২১৭, ২৬ মার্চ, ১৯৯৭।
৫।  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ১ম থেকে ৭ম খণ্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা পরিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত, এশিয়া পাবলিকেশনস, ৩৬/৭ বাংলাবাজার, ঢাকা, বইমেলা ২০০৮।
৬।  মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান, ১ম থেকে ৭ম খণ্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা পরিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত, এশিয়া পাবলিকেশনস, ৩৬/৭ বাংলাবাজার, ঢাকা, মে ২০১৫।
৭।  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস, ১ম থেকে ৫ম খণ্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা পরিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত, এশিয়া পাবলিকেশনস, ৩৬/৭ বাংলাবাজার, ঢাকা, মে ২০১৫।
৮।  মিলি রহমান সম্পাদিত, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর স্মারকগ্রন্থ, আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০, ফেব্রুয়ারি ২০০৫।
৯।  লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীর প্রতীক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের দেশে ফেরা, শুধুই মুক্তিযুদ্ধ প্রকাশনী, ৭২ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, ফেব্রুয়ারি ২০০৮।
১০। চন্দন চৌধুরী, বীরশ্রেষ্ঠ, কথাপ্রকাশ, আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, ফেব্রুয়ারি ২০০৮।
১১। সাইদ হাসান দারা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সময় প্রকাশন, ৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১০।
১২। ডা. মোহাম্মদ সেলিম খান, বাংলার বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তপ্রকাশ, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা, ডিসেম্বর ২০১১।
১৩। History of Counter Insurgency Operations in Chittagong Hill Tracts (1976-1999), Vol-2, Chapter – 3, 4 and 5, Page – Appendix 4E1-1.

ফিচার ছবি- রহমান আজাদ

[বি: দ্র: ডেল এইচ খানের লেখা সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্বের সবকটি গল্প পড়তে চাইলে দেখুন আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের বীরগাথা‘ বইটি।]

Nur Mohammad Sheikh was a Lance Nayek in East Pakistan Rifles during the Liberation War. He was killed in an engagement with the Pakistan Army while providing fire for covering the extrication of fellow soldiers at Goalhati in Jessore district on 5 September 1971.

Related Articles