Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লিপস্টিকের নানা দিক

প্রসাধনী হিসেবে খুবই জনপ্রিয় একটি উপাদান লিপস্টিক। যে মেয়েটি খুব সাধারণভাবে সাজতে পছন্দ করে, তার সাজগোজের জিনিসের তালিকায় অন্তত একটি লিপস্টিক থাকেই। এই লিপস্টিক কীভাবে বানানো হয়, এতে কী কী উপাদান থাকে, এটি ঠোঁটের উপর কেমন প্রভাব ফেলে ইত্যাদি নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।

বিভিন্ন রকম লিপস্টিক; সোর্স: The Happy Sloths

এই প্রসাধনীটি তেল, মোম এবং আরো কিছু উপাদান দ্বারা তৈরি করা হয়। এটি ঠোঁটের উপর রঙিন প্রলেপ সৃষ্টি করে। উন্নতমানের লিপস্টিকগুলো এই প্রলেপের মাধ্যমে ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখে। সাধারণত ঠোঁট রাঙানোর জন্য বিভিন্ন বয়সী নারীরা বিভিন্ন রঙের  লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন।

লিপস্টিক তৈরিতে ৪টি মূল উপাদান ব্যবহৃত হয়।

  • মোম
  • তেল
  • রঞ্জক পদার্থ ও
  • অ্যালকোহল

এই চারটি উপাদানের সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করে বিভিন্ন রকমের লিপস্টিক তৈরি করা হয়। মৌলিক উপাদান মোমের মধ্যে কারনাউবা নামক একধরনের মোমের সমন্বয় করা হয়। মোম লিপস্টিক তৈরির প্রক্রিয়া আরো সহজতর করে তোলে। যখন লিপস্টিক সংরক্ষণ করা হয় এবং এর মধ্য থেকে তেল বা চর্বির নির্যাস সরিয়ে নেয়া হয়, তখন এর আকৃতি নষ্ট হওয়া থেকে কারনাউবা মোম লিপস্টিককে রক্ষা করে। লিপস্টিকের মৌলিক উপাদানগুলি স্বাভাবিক বা জৈব যৌগ হতে পারে। মোম এবং তেলের অনুপাত, রঞ্জক পদার্থ  এবং অ্যালকোহলের অনুপাতের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

লিপস্টিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ৩ ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে

  • গলানো এবং মেশানো
  • আকৃতি দেয়া
  • প্যাকেট করা

প্রথম ধাপে, মৌলিক উপাদানগুলো আলাদাভাবে গলানো হয়। তারপর সবগুলো উপাদান মিশ্রিত করা হয়। প্রাপ্ত মিশ্রণ সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের সংরক্ষকে রেখে তৈরি করা হয়। তারপর মিশ্রণে রঞ্জক পদার্থ এবং সুগন্ধি যুক্ত করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপে বাড়তি তেল ছেঁকে আলাদা করে মিশ্রণটিকে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেবার জন্য ছাঁচে ঢালা হয়। ঠাণ্ডা হয়ে এলে প্যাকিং করা হয়। লিপস্টিকের ধরন অনুযায়ী উৎপাদন পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে, তবে এটি সাধারণ পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরেও বানিয়ে নেয়া যায় পছন্দমতো লিপস্টিক।

নারীর সৌন্দর্যে বিভিন্ন আকার, রঙ, সুগন্ধ এবং ভিন্ন ধরনের লিপস্টিক বাজারে পাওয়া যায়।

উজ্জ্বলতা দেয়া লিপস্টিক; Source: teen voug

  • উজ্জ্বলতা দেয়া লিপস্টিক (Shiny Lipstick)
  • আর্দ্র লিপস্টিক (Soft Moisture Lipstick)
  • শুষ্ক লিপস্টিক (Matte Lipstick)
  • ক্রিম লিপস্টিক (Creamy Lipstick)
  • গ্লসি লিপস্টিক (Gloss Lipstick)
  • দীর্ঘস্থায়ী লিপস্টিক (Long Lasting Lipstick)

গ্লসি লিপস্টিক; Source: lyn vidyallon

ক্রিম লিপস্টিক; Source: dHgate.com

আর্দ্র লিপস্টিক সাধারণত এমন ঠোঁটের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা সারা বছরই শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। এমন ঠোঁটকে সুন্দর ও সতেজ রাখতে আর্দ্র লিপস্টিকের জুড়ি নেই। এই লিপস্টিকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উজ্জ্বলতা দেয়া লিপস্টিকগুলো ঠোঁটে একরকম চাকচিক্য নিয়ে আসে, যার কারণে ঠোঁটকে আরও আকর্ষণীয় দেখায়। শুষ্ক লিপস্টিক গরমকালে বেশি ব্যবহৃত হয়। ঘেমে ওঠা ঠোঁট থেকে যেন লিপস্টিক লেপটে না ওঠে, সেজন্য এই ধরনের লিপস্টিক ব্যবহৃত হয়। ক্রিম এবং গ্লসি লিপস্টিক সাধারণত আর্দ্র লিপস্টিকের চেয়েও আরও নরম হয়। দীর্ঘস্থায়ী লিপস্টিক যেকোনো পার্টি বা দূরপাল্লার যাত্রায় সঙ্গী হতে পারে। এই ধরনের লিপস্টিক শুষ্ক এবং আর্দ্র দু’ভাবেই পাওয়া যায়।

লিপস্টিক ব্যবহারের উপকারিতা

লিপস্টিক যে শুধু ঠোঁটের বা মুখের সৌন্দর্যই বাড়ায়, তা-ই নয় বরং ঠোঁট আর্দ্র এবং নরম রাখতেও লিপস্টিক ব্যবহার করা যায়। ক্রিম লিপস্টিক, আর্দ্র লিপস্টিক বা গ্লসি লিপস্টিক ঠোঁটকে নরম রাখে এবং ফাটল থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষিত করে। যদিও এমন শোনা যায় যে অতিরিক্ত লিপস্টিক ব্যবহারে ঠোঁটের চামড়ার ক্ষতি হয়, কিন্তু ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহারে ঠোঁটকে ভালো রাখা যায়। কিছু কিছু লিপস্টিক সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ঠোঁটকে রক্ষা করে।

ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ঠোঁটের জন্য উপকারী; Source: The New york Times

কিছু ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক

ম্যাক (MAC)

এর লিপস্টিকগুলো শুষ্ক, আর্দ্র, ক্রিম, গ্লসি সবরকমের হয়। দাম সাধারণত ২,২০০-৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ম্যাক লিপস্টিক; সোর্স: home.bt.com

মুয়া (MUA)

মুয়া ব্র্যান্ডও ম্যাকের মতোই বিভিন্নরকম লিপস্টিক তৈরি করে থাকে। এর দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় বিভিন্ন দেশে এই ব্র্যান্ডের চাহিদা অনেক বেশি। মুয়ার লিপস্টিকগুলো ২২০-২,৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মুয়া লিপস্টিক; সোর্স: makeupbrandbeauty.com

রিভাইভার লিপস্টিক (REVIVER)

এটি তুলনামূলক দামি একটি ব্র্যান্ড হলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সহ ইউরোপেও এই লিপস্টিকের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর দাম সাধারণত ৫০০-৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

রিভাইভার লিপস্টিক; সোর্স: beautyblogofakind.com

গোল্ডেন রোজ (GOLDEN ROSE)

এটি এশিয়াতে খুব জনপ্রিয় একটি লিপস্টিক ব্র্যান্ড। সহজলভ্যতার জন্য মুয়া-এর পরেই গোল্ডেন রোজের স্থান। গোল্ডেন রোজ প্রায় সবরকম লিপস্টিক উৎপাদন করে থাকে। ২২০-১,২০০ টাকা পর্যন্ত এই ব্র্যান্ডের খুব ভালো লিপস্টিক পাওয়া সম্ভব।

লা ফেমে (LA FEMME)

লা ফেমে শুধু লিপস্টিক ব্র্যান্ডই নয়, বরং একটি মেকাপ ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের লিপস্টিকগুলো সাধারণত আর্দ্র ধরনের হয়ে থাকে যা সারা বছরই ব্যবহারোপযোগী। ১৭০ টাকা খুচরা মুল্য থেকে এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডের লিপস্টিক পাওয়া যায়।

এছাড়াও আরও রয়েছে স্লিক মি, আরবান ডিকে, নারস, ন্যাকেড ইত্যাদি অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের লিপস্টিক, যা ব্যবহারে ঠোঁটে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

পছন্দের লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙিয়ে তুলুন; Source: radioadda24.com

লিপস্টিক ব্যবহারের অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসেরই কিছু না কিছু না ভালো এবং খারাপ উভয় দিক থাকে। লিপস্টিকও তার ব্যতিক্রম নয়। লিপস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ঠোঁটের লোমকূপ ছোট হয়ে আসে, যার ফলে ঠোঁটের চামড়ার নমনীয়তা কমে যায়। ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে ঠোঁট তার নিজ রঙ এবং স্বাভাবিকতা হারায়। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে লিপস্টিকে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ব্যবহৃত হয়, যা বিপদজনক রোগ এবং শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাডমিয়াম রেচনতন্ত্রে এবং কিডনি বা বৃক্কীয় রোগের সৃষ্টি করে। কিছু লিপস্টিকে সীসা ব্যবহৃত হয়, যা স্নায়ুতন্ত্রের বড়রকমের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাছাড়া লিপস্টিক সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত উপাদান স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

লিপস্টিক ব্যবহারে কিছু পরামর্শ

  • লিপস্টিক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ঠোঁটে ভেসলিন বা যেকোনো পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা লিপবাম ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁটের চামড়া নরম থাকবে।
  • সঠিক রঙ পেতে একবার লিপস্টিক ঠোঁটে লাগিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে টিস্যু চেপে ধরুন। তারপর আবার লিপস্টিক ব্যবহার করুন। এতে লিপস্টিক এর রঙ দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • আপনি যদি শুষ্ক লিপস্টিক ব্যবহারে অভ্যস্ত না হন, কিন্তু আপনার কাঙ্ক্ষিত লিপস্টিকটি আরেকটু শুষ্ক হলে হয়ত আপনার সাজটি পরিপূর্ণ হতো- এমন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে লিপস্টিক ব্যবহারের পর একটি টিস্যু হালকা করে ঠোঁটে বসিয়ে নিন। এরপর মেকাপ ব্রাশের সাহায্যে অল্প একটু পাউডার নিয়ে টিস্যুর উপরেই ব্রাশ বুলিয়ে নিন। কিছুক্ষণ পরে দেখবেন আর্দ্র রেখেই লিপস্টিকটি অতিরিক্ত ভেজা ভাব কমিয়ে আপনার সাজকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
  • রাতে কখনই লিপস্টিক না তুলে ঘুমাতে যাবেন না। তাহলে রাতে ঠোঁট এর প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা পাবে না এবং ধীরে ধীরে ঠোঁট রুক্ষ হয়ে যায়।
  • লিপস্টিক তোলার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন। টিস্যুতে হালকা পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভেসলিন নিয়ে আস্তে আস্তে ঠোঁটে ঘষতে থাকুন। এতে ঠোঁটের কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই লিপস্টিক উঠে আসবে।
  • ঠোঁটে নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করুন। লিপস্টিকের উপরেও লিপবামের একটি প্রলেপ যোগ করবে বাড়তি সৌন্দর্য।

সবশেষে নিজের ঠোঁটের ধরন অনুযায়ী লিপস্টিক ব্যবহার করুন। সবাইকে একই লিপস্টিকে মানায় না, আবার সবধরনের ঠোঁটে একইরকম লিপস্টিক ব্যবহার করা যায় না। ধরন, সময়, আবহাওয়া এবং পরিহিত কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে আপনার পছন্দমতো লিপস্টিক কিনুন। সুন্দর ঠোঁটে আপনার হাসি থাকুক অমলিন।

ফিচার ইমেজ সোর্স: thecut.com

Related Articles