Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জীবনের ছোট ছোট সাফল্যগুলোকে উদযাপন করুন

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আমরা কিছু ছোট ছোট অর্জন করে থাকি, যেগুলোকে সাফল্য বলা চলে। সেটা হতে পারে কোনো ছোট কাজকে সুন্দরভাবে শেষ করতে পারা, কোথাও খেতে গিয়ে একটু টাকা বাঁচানো। আমাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই এই ছোট সাফল্যগুলো নিজেদের অগোচরে থেকে যায়। কিন্তু অপরপক্ষে, জীবনের ছোট ভুলগুলো কখনোই আমাদের চোখে এড়ায় না, বরং সেগুলো আমাদের মানসিকভাবে ভোগায়। হ্যাঁ, নিজেদের ভুলগুলোকে অবশ্যই আমাদের খেয়াল করতে হবে, যাতে আমরা ভবিষ্যতে সেসব ভুল থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারি, কিন্তু সাফল্যগুলোকেও আমাদের দেখতে হবে, উদযাপন করতে হবে। কারণ এই সাফল্যগুলো উদযাপনের মাধ্যমেই আমরা পাব প্রতিদিনের জীবনে এগিয়ে যাবার আত্মবিশ্বাস, কাজ করার অনুপ্রেরণা। চলুন দেখা যাক, কীভাবে আমরা জীবনের ছোট ছোট সাফল্যগুলোকে উদযাপন করতে পারি।

সাফল্যগুলোকে দেখতে শিখুন

‘ছোট সাফল্য’ ব্যাপারটি আসলে কী? এটা বলতে আসলে বোঝানো হচ্ছে এমন কোনো কাজ, যেটা আপনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন কিন্তু আপনি জানতেন না সেটা আপনি করতে পারতেন কি না। এই ছোট সাফল্য ব্যক্তিসাপেক্ষে ভিন্ন হতে পারে। হতে পারে সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পেরেছেন, কিংবা ক্লাসে শিক্ষকের লেকচারের পুরোটা বুঝতে পেরেছেন। হতে পারে বন্ধুদের একটা কৌতুক বলে হাসাতে পেরেছেন, হতে পারে মায়ের সাথে একটা সুন্দর কথোপকথন শেষ করেছেন।

এসব সাফল্য হয়তো পৃথিবীকে বদলে দেবে না, কিন্তু এগুলোকে মূল্য দেবার মাধ্যমে আপনার মুখে হাসি ফুটে উঠবে, বাড়বে আত্মবিশ্বাস। সাধারণত আমরা শুধু জীবনের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই পড়ে থাকি এবং ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে ভুলে যাই। ছোট সাফল্যগুলোকে দেখবার মাধ্যমে আপনি নিজের সত্যিকারের ক্ষমতাকে বুঝতে পারবেন এবং নিজের ভবিষ্যত লক্ষ্যগুলোকে আরো বড় করবার সুযোগ পাবেন। সুতরাং নিজের ছোট সাফল্যকে লক্ষ্য করার জন্য জীবনে সময় বের করে নিন এবং এভাবে নিজেকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি করুন।  

ছোট সাফল্যগুলোকে উদযাপন করুন; image source: seealternativewellness.com

সাফল্যগুলো নিয়ে উত্তেজিত হন

শিশুরা অনেক ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজনা তাদেরকে জীবন নিয়ে অনেক উদ্যমী এবং সুখী করে রাখে। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে সমাজ আমাদেরকে গুরুগম্ভীর হতে শেখায়। কোনোকিছু বড় এবং তাৎপর্যপূর্ণ না হলে সেটা নিয়ে আমরা উত্তেজিত হতে দ্বিধাবোধ করি। অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের সামনে নিজেদের ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখবার জন্য নিজেদের একটি মুখোশ তৈরি করি। কিন্তু কেন আমরা নিজেদের সুখকে এভাবে সীমারেখায় বেঁধে দিই? ছোট কিছু যদি আপনাকে উত্তেজিত করে, তা প্রকাশ করুন। উত্তেজিত হওয়া আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, যা আপনাকে দিতে পারে সুখের অনুভূতি, বের করে আনতে পারে আপনাকে যেকোনো হতাশা থেকে। যেকোনো ছোট জিনিস সম্পন্ন হবার পরেই নিজেকে সম্পূর্ণ উত্তেজিত হবার সুযোগ করে দিন। সেগুলোকে ধরে নিন আপনার সাফল্য হিসেবে। ফলে হয়ে উঠুন একজন সুখী মানুষ। 

অন্যকে জানান আপনার ছোট ছোট সাফল্যের কথা

মানুষ সামাজিক জীব। আমাদের চিন্তাকে, অভিজ্ঞতাকে অন্যদের সাথে ভাগ করে নেবার মাধ্যমেই আমরা বেঁচে থাকি। কোথাও কোনো ছোট সাফল্য অর্জন করলে তা আপনার কোনো বন্ধুকে জানান। তার সাথে নিজের আনন্দকে ভাগ করে নিন। এই ভাগ করার অনুভূতিই আপনাকে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাফল্য অর্জনের অনুপ্রেরণা দেবে। অপরপক্ষে, আপনার বন্ধুও অনুপ্রাণিত হবে নিজের ছোট ছোট সাফল্যকে উদযাপন করতে। প্রতিটি ক্ষুদ্র সাফল্যই আপনাদের জন্য একটি আনন্দের উপলক্ষে পরিণত হবে।

বন্ধুদের সাথে সাফল্য উদযাপন করুন; image source: doyouknowbonobo.co.uk

এমন সব অভ্যাস তৈরি করুন, যা এধরনের সাফল্য অর্জনে অনুপ্রাণিত করে

যেকোনো ঘটনাকেই তো আপনি নিজের সাফল্য বলে ধরে নিতে পারবেন না, কোনোকিছুকে নিজের সাফল্য বলতে হলে অবশ্যই সে কাজের পেছনে শ্রম ও চেষ্টা থাকতে হবে। আর একে প্রতিদিনের ব্যাপার বানিয়ে নিতে হলে এই শ্রম দেয়াকে পরিণত করতে হবে আপনার অভ্যাসে। সুতরাং এমন সব অভ্যাস তৈরি করুন, যা আপনার প্রতিদিনকে সফল বানিয়ে দেবে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, মিতব্যয়িতার অভ্যাস করতে পারেন। এগুলো করতে হলে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, এবং সফল হওয়ার আনন্দও পাবেন তা ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে পারলে। নিজেকে ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন যেকোনো কিছু করার ক্ষেত্রেই। যেমন- এতটুকু সময়ের মধ্যে আপনি কাজটি শেষ করবেন, আজকে আপনি এই ক’টি কাজ করবেন। সেগুলো করতে সফল হলে সে সাফল্যকে উদযাপন করবেন।

বর্তমানকে মূল্য দেবার চেষ্টা করুন; image source: redbubble.com

বর্তমানে বাস করুন

ভবিষ্যত অর্জনের দিকে মুখিয়ে থাকবার কারণে বর্তমান আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। বর্তমানে যে ছোট ছোট কাজগুলো করার কারণেই আমরা ভবিষ্যত অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই ছোট ছোট কাজগুলোকে আমরা অর্জন হিসেবে ধরি না। সেসব মুহূর্ত আমাদের কাছে কেমন যেন মূল্যহীন থেকে যায়। অথচ অনেকগুলো বর্তমান মুহূর্ত মিলেই কিন্তু আমাদের জীবন, সেখানে কোনো ভবিষ্যত মুহূর্ত নেই। তাই বর্তমানের দিকে তাকিয়ে সেই বর্তমানকে সাফল্য দিয়ে ভরপুর করবার চেষ্টা করুন, ভবিষ্যতকে নয়। এই বর্তমান সাফল্যগুলোই আপনাকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। সেই ভবিষ্যতের ফলাফলটা হয়তো আপনার আশানুরূপ না-ও হতে পারে, কিন্তু তাই বলে সেই অর্জনের দিকে এগোতে গিয়ে আপনার যেই ছোট ছোট কাজ করতে হয়েছে, সেগুলো মোটেও মূল্যহীন নয়, সেগুলোও অর্জন, সেগুলোও সাফল্য। প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে একটি বই পড়ে শেষ পর্যন্ত যদি আপনি বইটি হারিয়ে ফেলেন, তার মানে এই নয় যে আগের পড়া পৃষ্ঠাগুলো থেকে আপনার অর্জিত জ্ঞান কেউ কেড়ে নিতে পারবে। প্রতি ১০ পৃষ্ঠাকেই অর্জন হিসেবে দেখতে শিখুন। আবার পড়াশোনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফলাফলকেই সকল প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিদিনের পড়াকে, শেখাকেও সাফল্য হিসেবে দেখতে শিখুন।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

যেকোনো অর্জনের কারণেই আপনার নিজেকে পুরস্কৃত করা উচিত, সে অর্জন ছোট হোক কিংবা বড়! এজন্য জীবনে সময় বের করে নিন। কোনো কাজ ভালোমতো করতে করলে তার জন্য নিজেকে নিজের পছন্দের কিছু করবার সুযোগ করে দিন। ভালো কোনো সিনেমা দেখুন বা নিজের পছন্দের কিছু কিনে দিন নিজেকে। নিজের ছোট সাফল্যকে উদযাপন করুন ছোট কোনো পুরস্কার দেবার মাধ্যমে। এভাবে আপনার জীবনে বারবার সাফল্য নিয়ে আশার প্রেরণা অর্জন করবেন আপনি।

জীবনের ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জনই আপনাকে বড় অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে; imagesource: mecmining.com.uk

জীবনের বড় লক্ষ্যগুলোকেও ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে নিন

জীবনের কোনো বড় লক্ষ্যই একবারে অর্জন করা সম্ভব নয়। অনেকগুলো ধাপ সফলভাবে পাড়ি দেবার মাধ্যমেই পৌঁছানো যায় মূল লক্ষ্যে। এখন থেকে এই লক্ষ্য অর্জনের ধাপগুলোকেই একেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ লক্ষ্য মনে করুন। প্রত্যেকটি লক্ষ্য অর্জনকে সাফল্য হিসেবে ধরলেই আপনি হতাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। এবং মনে রাখবেন, যেকোনো অর্জনই আপনার জীবনে অনেকগুলো নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। তাই জীবনকে রাখুন উদযাপন এবং উত্তেজনায় ভরপুর। উপভোগ করুন নিজেকে!

This article is written in Bengali language. References are hyperlinked in the article.

Featured Image: shutterstock.com

Related Articles