Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রসাধনী নাকি সুস্থ জীবনের প্রতি হুমকি?

প্রায় প্রতিটি বাসায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে এখন দেখা যায় প্রসাধনীর মেলা। হাজারো রকমের ক্রিম, পাউডার, বিভিন্ন লোশন, শ্যাম্পু-সাবান, চুলের জেল- আরো না জানি কত কিছু! গোসল করার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, শ্যাম্পুর আগে ও পরে, চুলের কন্ডিশনার, বিভিন্ন সাবান বা সাবানের পরিপূরক, স্ক্রাবার, ক্লিনজার, ফেসওয়াশ- এ তো কেবল নিত্যদিনের ব্যবহারের প্রসাধনী। রয়েছে এগুলোর পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে বা মাসে ব্যবহারের আরো নানা জিনিস। একটু স্বচ্ছল, আধুনিক আর হাল ফ্যাশানের ব্যাপারে সচেতন হলে তো আর কথাই নেই। পায়ের নখ থেকে মাথায় চুলের ডগা পর্যন্ত- আজকের মানুষ চায় নিখুঁত পরিচর্যা। সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে বেড়েই চলেছে বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহার। যেন মানুষ নিজের প্রকৃতিগত কিছু নিয়েই আর সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। আর এই সুযোগে সারা পৃথিবীর প্রসাধনীর কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে নিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে দিচ্ছে। টেলিভিশনের, বিলবোর্ড, এমনকি ইন্টারনেটে দেওয়া বিজ্ঞাপন আর মডেলদের জমকালো শারীরিক উপস্থাপন সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতা আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে তাদেরকে মানসিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পকেটে বিশাল অংকের অর্থ ভরে ভোক্তাদের হাতে যে পণ্য তুলে দিচ্ছে, তা কি মানুষের জন্য নিরাপদ? আশ্চর্যজনক বিষয় হলেও সত্যি অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের অনেক মারাত্মক কুফল থাকলেও কাউকে এই প্রশ্ন করতে খুবই কম দেখা যায়। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রসাধনীতে এমন অনেক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু পণ্যের গায়ে তারা কোনো সতর্কবার্তা লেখে না। বিশেষ করে যেসব পণ্য অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের ত্বকের রঙ পরিবর্তন করে ফেলে বা শরীরের প্রাকৃতিক কিছু প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করে, সেই সকল পণ্যের ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। অনেক প্রসাধনী বা মেক আপ দ্রব্যের ব্যবহার ঘটাতে পারে মাথাব্যথা, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, এমনকি গর্ভধারণে অক্ষমতা, ফুসফুসে সমস্যা, বিষক্রিয়া আর ক্যান্সারের মতো ব্যাধি। গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অনেক রাসায়নিক প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার। তাই পাঠকদের কল্যাণ কামনায় অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষতিকর কিছু ফলাফল নিয়ে আজ কথা হোক।

নকল সৌন্দর্য নাকি সুস্থ জীবন- আগে কোনটা চান? Source: upsocl.com

প্রসাধনী ব্যবহারের সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হলো ক্যান্সারের সম্ভাবনা। লিপস্টিকে থাকে অ্যালুমিনিয়াম, যা ঘটাতে পারে রক্তশূন্যতা আর শর্করার প্রতি অসহনশীলতা। অনেক প্রসাধনী দীর্ঘদিন খোলা আবহাওয়াতে ভালো রাখার জন্য যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া প্রসাধনী ও মেক আপ সামগ্রীতে থাকা জিংক অক্সাইড, বেরিয়াম সালফেটের মতো উপাদানও হতে পারে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এসকল উপাদান বয়ে আনতে পারে কিডনি আর যকৃতের বিভিন্ন জটিলতাও। এমনকি অঙ্গ বিকলকরণের মতো ভয়াবহ ফলাফল আনতে পারে এগুলোর একটানা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার।

গ্রীষ্ম, শীত বা অন্য কোন ঋতু- দিনের বেলায় বাইরে বের হতে হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার কখনোই বাদ পড়ে না? ভাবছেন সূর্যালোকের বিরুদ্ধে এই রক্ষাকবচ আপনাকে ত্বকের বিপদ থেকে বাঁচাবে? একদম নিশ্চিন্ত হওয়ার আগে জেনে নিন এই সূর্যালোকরোধক ক্রিম বা লোশন কী দিয়ে তৈরি। অধিকাংশ সূর্যালোকরোধক প্রসাধনী এমন সব রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, যার ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ ত্বকের ক্যান্সারসহ ডেকে আনতে পারে আরো অনেক ভয়াবহ বিপদ।

প্রসাধনীও হতে পারে মাথাব্যথার কার; Source: curejoy.com

মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে প্রসাধনী আর মেক আপ পণ্যের দৈনন্দিন ব্যবহার। ইউরিয়া ডায়াজোডিনিলের মতো অনেক রাসায়নিক উপাদান বেশিরভাগ প্রসাধনী তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়া ব্যবহার করা হয় এসব প্রসাধনী দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য আরো অনেক অণুজীবরোধক রাসায়নিক উপাদান। এসকল প্রসাধনী যখন সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তখন আরো অনেক ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। আবার এসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চোখের প্রভাবেও দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। বিশেষ করে মাইগ্রেন আর আগে থেকেই মাথাব্যথায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য প্রসাধনী ব্যবহারে সচেতন হওয়া কিন্তু বেশ জরুরি। এছাড়া মাথাব্যথা হতে পারে প্রসাধনী থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চোখ থেকেও।

চোখের কথা বলতে গেলে বলতেই হয় যে, যেহেতু চোখ এমনিতেই খুব স্পর্শকাতর একটা অঙ্গ, যেকোনো সামান্য অবহেলা থেকেও ঘটে যেতে পারে অনেক বেশি ক্ষতি। বিশেষ করে ভারতীয় অঞ্চলে মেয়েদের যেন কাজল ছাড়া চলেই না- এমন মনোভাব ঘটাতে পারে চোখের বিভিন্ন সংক্রামণ, অতিরিক্ত শুষ্ক চোখ, চোখের স্বাভাবিক রঙের ক্ষতি ইত্যাদি। মাসকারাতে তাপ ও ঠান্ডায় সহনশীল ‘সুইডোমোনাস আরুগিনোসা’ নামক এক ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতির কারণে এটি দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। চোখের পাঁপড়ি চোখকে অনেক বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন কাজল, মাসকারা আর লেন্সের ব্যবহার তার জীবন কেড়ে নিতে পারে। চোখের মণিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহারে।

কাজল আর মাশকারাও হতে পারে বিপদের কারণ; curejoy.com

সুগন্ধি আর পাউডার আপনার শরীরে সীসার বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে লিপস্টিকে আপনার অত্যধিক আগ্রহ। মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ধাতুগুলোর একটি হলো সীসা। ঠোঁটের ত্বকের শ্বাসগ্রহণ ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে লিপস্টিকে থাকা সীসা। বাহ্যিকভাবে এর ফলে ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। লিপস্টিকের পাশাপাশি লিপবাম, লিপগ্লসেও এখন অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমিয়ামের উল্লেখজনক উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। লিপস্টিকের মতো নেইলপলিশের ব্যবহারও নখের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট করে নখকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে। অনেক সময় এর ফলে নখে ছত্রাকের আক্রমণও দেখা যায়। আবার হাত-পায়ের পেডিকিওর ও মেনিকিওর আপাতদৃষ্টিতে সৌন্দর্যবর্ধক হলেও ঘন ঘন এগুলো করানোও হাত-পায়ের নখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া বেশি মেক আপ করার নিশ্চিত ফল; gragemood.com

এ কথা তো নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এসব প্রসাধনীর ব্যবহার অনেক বেশি। আর মেয়েদের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবও ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি মেয়েদের গর্ভধারণ ক্ষমতাও এই কারণে নিদারুণ ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। পাউডার যদি কখনো দেহের ভেতরে চলে যায়, তবে সারা শরীরের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতাকে। রজঃচক্রকে প্রভাবিত করে সৃষ্টি করতে পারে গর্ভধারণের অন্যান্য জটিলতা। প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত অনেক রাসায়নিক উপাদান সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে। গোসলের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন জেল দেহের বাইরের ও ভেতরের বংশবৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারী অঙ্গগুলোতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যার মধ্যে আছে যোনিপথের সংক্রামণ, এমনকি জরায়ু মুখ ক্যান্সার। সামান্য বাড়তি সৌন্দর্যের প্রতি লোভ নারীর জীবনে অভিশাপ হয়ে আসতে পারে।

সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে যে দেখে, তার দৃষ্টিতে থাকে। সৌন্দর্যের আসল উৎস আসলে মানুষের মন। চামড়ায় থাকতে পারে কেবল মাপজোখ আর মোহ। স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টির তার নিজস্ব অনন্য সৌন্দর্য থাকে। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে স্বীকার করে তাই সুস্থ-সুন্দর আর স্বাভাবিক জীবনই হোক সকলের কাম্য।

ফিচার ইমেজ: successfollowsme.com

Related Articles