Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিউচ্চিয়া প্রাদা: সৃজনশীলতা ও ব্যবসায় জ্ঞানের অনন্য সমন্বয়

আজকের যুগে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে সফলতা অর্জনকারী মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। কিন্তু এর মাঝেও যুগ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে চলতে থাকা বড় কোম্পানিগুলো আজও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আর এই শীর্ষস্থানটি টিকিয়ে রাখার পেছনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা ক্ষয় করে যাচ্ছেন, তাদেরই একজন মিউচ্চিয়া প্রাদা। পারিবারিকসূত্রে অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে ফ্যাশন ব্র্যাণ্ড ‘প্রাদা’কে এর আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পাশাপাশি ‘মিউ মিউ’ নামের আরও একটি সফল ব্র্যাণ্ডের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

স্বামী পেত্রিজ্জিও বার্তেলির সাথে মিউচ্চিয়া প্রাদা; Image Source: luxe.supdepub.com

ফ্যাশন বিশ্বে মিনিমালিস্ট স্টাইলের জনপ্রিয়তা খুব পুরনো গল্প নয়, কিন্তু এর হাতেখড়ি হয়েছিল মিউচ্চিয়া প্রাদার হাত ধরেই। ১৯৪৯ সালে ইতালির মিলানে জন্মগ্রহণকারী মিউচ্চিয়া এক স্বচ্ছল ইতালীয় পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর প্রকৃত নাম মারিয়া বিয়াঙ্কী। ১৯৭৩ সালে মিলান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেই কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাঁর চিন্তাধারায় নারীবাদী ও বামপন্থী চিন্তাচেতনার প্রভাব বাড়তে থাকে। তিনি ইতালীয় কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। এরপরে পাঁচ বছর তিনি মূকাভিনয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেন এবং মিলানের তিয়েত্রো পিকোলোতে (লিটল্ থিয়েটার) মূকাভিনেতা হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে মিউচ্চিয়ার অবিবাহিত খালা তাকে দত্তক নিলে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে ‘প্রাদা’ পদবী ধারণ করেন।

কালো রঙের পোকোনো নাইলনের তৈরি প্রাদা ব্যাগের এক আধুনিক রূপ; Image Source: highsnobiety.com

প্রাদা ব্র্যান্ডের সাথে মারিয়া তথা মিউচ্চিয়ার সংযোগ ঘটে তার মায়ের সূত্রে। তার নানা মারিও প্রাদা ১৯১৩ সালে ফ্রেতেলি প্রাদা (প্রাদা ব্রাদার্স) এর প্রতিষ্ঠা করেন। আর ১৯৫৮ সালে মা লুইসা বিলাসবহুল পণ্য বিক্রয়কারী এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেসময়ে এটি স্যুটকেস, হ্যান্ডব্যাগ ও স্টিমার ট্রাঙ্ক তৈরির জন্য জনপ্রিয় ছিল। এমনকি ইতালির রাজপরিবারেও এর বেশ চাহিদা ছিল। ১৯৭০ সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অ্যাক্সেসরিজ ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন। সেসময়ে এই ব্র্যান্ডের মাত্র দুটি শোরুম ছিল।

১৯৭৮ সালে যখন তিনি তার মায়ের স্থলাভিষিক্ত হন, তখন শুধুমাত্র অবশিষ্ট একটি শোরুম নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রাথমিক পর্যায়েই তিনি পেত্রেজ্জিও বার্তেলিকে প্রধান কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবে নিযুক্ত করেন। বার্তেলি চামড়ার তৈরি পণ্যের ব্যবসায়ী ছিলেন। বার্তেলির সাথে তার পরিচয় ঘটে ঠিক এক বছর আগে একটি বাণিজ্য মেলায়, যেখানে বার্তেলি ফ্রেতেলি প্রাদা কোম্পানির ডিজাইন অনুকরণ করে তৈরি পণ্য বিক্রি করছিলেন। ১৯৮৫ সালে মিউচ্চিয়া কাল রঙের নাইলনের তৈরি ব্যাকপ্যাকের ডিজাইন করার মাধ্যমে এই ব্র্যাণ্ডের নতুন যাত্রার শুরু করেন।

কালো রঙের পোকোনো নাইলনের তৈরি প্রাদা মেনস্ওয়্যার এর পোশাকসামগ্রী; Image Source: irenebrination.typepad.com

তার ডিজাইনকৃত এই ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত কাল নাইলনটি সেনাবাহিনীতে তাঁবু তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। এর নাম ‘পোকোনো নাইলন’। এই ব্যাগের যাত্রা ১৯৭৯ সালে শুরু হলেও, এটি জনপ্রিয় ও সফল হয় ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রাদা’র আরও কয়েকটি শোরুম এর যাত্রা শুরু করেন আর ১৯৮৪ সালে প্রাদা ব্র্যাণ্ডের জুতার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি পোকোনো নাইলনের তৈরি সেই ব্যাগটিকে নতুন করে ডিজাইন করেন। এবারে তিনি এতে সোনালি রঙের চেন এর স্ট্র্যাপ এবং ত্রিকোণাকার লোগোটি যুক্ত করেন। সেই ত্রিকোণাকার লোগোটিই বর্তমানের বিশ্বখ্যাত প্রাদা লোগো। এই নতুন ডিজাইনটির সাথে অপেক্ষাকৃত অধিক মূল্যের শ্যানেলের তৈরি ব্যাগের বেশ খানিকটা মিল থাকায় এই ব্যাগের বিক্রি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এমনকি জেরি হলের মতো হলিউডের নামকরা অভিনেত্রীরাও এই ব্যাগের খরিদ্দার ছিলেন।

১৯৯৫ সালে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে প্রাদা পোশাকে অভিনেত্রী উমা থরম্যান; Image Source: groupon.com

তৎকালীন ফ্যাশন সমাজের বিশেষজ্ঞদের চাহিদা ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি ১৯৮৮ সালে তার ডিজাইনকৃত মেয়েদের পোশাকের প্রথম কালেকশনটি উদ্বোধন করেন। এই কালেকশনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পোশাক ছিল নাইলনের তৈরি পার্কা। সাধারণ পার্কার তুলনায় এটি ছিল একইসাথে ফ্যাশনেবল ও টেকসই। তার তৈরি পোশাকের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে ফ্যাশন জগতের প্রচলিত ‘সেক্স সেলস্’ প্রবাদটি মোটেও সত্যি নয়। ক্লিন, সিম্পল কাট ও বেসিক রঙের সাথে উন্নতমানের ফ্যাব্রিকে তৈরি তার ডিজাইনকৃত পোশাকে একইসাথে ছিল গ্ল্যামার ও এলিগেন্সের পর্যাপ্ত ব্যালেন্স। তবে তার এই নতুন ধরনের ডিজাইন সফল হতে সময় লেগেছিল প্রায় এক দশকের মতো। তার আগপর্যন্ত বাড়তি পণ্যের বোঝা ব্র্যাণ্ডটির সাথে জড়িয়েই ছিল। ১৯৯৫ সালে হলিউড অভিনেত্রী উমা থরম্যান প্রাদার একটি পোশাক পরে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে উপস্থিতির মাধ্যমে ব্র্যাণ্ডটিকে একটি প্রথম শ্রেণীর ফ্যাশন ব্র্যাণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সাথে ব্র্যাণ্ডটি আত্মবিশ্বাসী, বুদ্ধিমতি ও স্বচ্ছল কর্মজীবী নারীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রাদা মেনস্ওয়্যার এর বিজ্ঞাপনে ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাস্যাডর্ অভিনেতা এডি রেডমেয়েন; Image Source: cometrend.com

১৯৯২ সালে নিজের পোশাকের উপর ভিত্তি করে মিউচ্চিয়া তার দ্বিতীয় ফ্যাশন লাইন ‘মিউ মিউ’ এর সূচনা করেন। এই ব্র্যাণ্ডের নাম তার ডাকনামের সাথে মিল রেখেই রাখা হয়। আর প্রাদা ব্র্যাণ্ডের পণ্যের চেয়ে এই ব্র্যাণ্ডটির পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম। তার ও বার্তেলির একাগ্র চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ১৯৯০ ও ২০০০ এর দশকে প্রাদা ব্র্যাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এই সময়ে পারফিউম, প্রাদা মেনস্ওয়্যার ও প্রাদা আইওয়্যার এরও সূচনা হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি ‘প্রাদা স্পোর্ট’ নামে একটি অ্যাক্টিভওয়্যার কালেকশন শুরু করেন। পরবর্তীতে এর নাম রাখা হয় ‘লিনিয়া রোজা’ (রেড লাইন)। ২০০০ সালে তিনি প্রাদা কসমেটিক্স এরও যাত্রা শুরু করেন।

বিশ্বখ্যাত প্রাদা ক্যাণ্ডি সুগন্ধি; ছবি: shop.nordstrom.com

১৯৯৯ সাল থেকে মিউচ্চিয়া ও বার্তেলি একত্রে হেলমুট ল্যাং, জিল স্যান্ডার সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ব্র্যাণ্ডের পূর্ণ মালিকানা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। একইসাথে ফেণ্ডির মতো বড় ব্র্যাণ্ডেরও একাংশ তারা কিনে নেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালেই বার্তেলি তার পূর্ববর্তী হোল্ডিং কোম্পানি ‘প্র্যাপার বি.ভি’-কেও প্রাদার অধীনে নিয়ে আসেন। পরে এর নাম রাখা হয় ’প্রাদা হোল্ডিং বি.ভি.’। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে মিউচ্চিয়া এবং তার ভাই অ্যালবার্তো, বোন ম্যারিনা ও স্বামী বার্তেলি একত্রে ‘প্রাদা শেয়ার্স’ এর মোট ৮০ শতাংশের মালিক। আর মিউচ্চিয়া এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রাদা আইওয়্যার এর বিজ্ঞাপন; Image Source: walthamabbeyopticians.co.uk

মিউচ্চিয়া ও বার্তেলি দুজনেই শুরু থেকেই ফ্যাশনের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পের প্রতিও বিশেষ আগ্রহী ছিলেন, বিশেষত সমসাময়িক শিল্পের প্রতি। তারই ফলস্বরূপ ১৯৯৩ সালে তারা একত্রে ‘প্রাদা মিলিওনার্তে’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর উদ্দেশ্য সমসাময়িক ডিজাইনার, শিল্পী ও স্থপতিদের সহযোগিতা প্রদান করা। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ফণ্ডাজন প্রাদা’ (প্রাদা ফাউণ্ডেশন)।

কালো রঙের পোকোনো নাইলনের তৈরি ব্যাগের উপর বসানো ত্রিকোণাকার প্রাদা লোগো; Image Source: mrporter.com

ফ্যাশন জগতে তার অবদানের জন্য মিউচ্চিয়া বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০০৪ সালে ‘কাউন্সিল অফ ফ্যাশন ডিজাইনার্স অফ আমেরিকা’ (সিএফডিএ) তাকে সম্মানজনক ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। ২০০৫ সালে তার স্বকীয় ব্যক্তিত্ব ও কাজের ধারার মাধ্যমে সমসাময়িক ডিজাইনারদের অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্য তিনি ‘টাইম ম্যাগাজিন’ এর ১০০ জন শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান করে নেন। ২০১৩ সালে ‘ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল’ তাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইনার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘কস্টিউম ইন্সটিটিউট’ কর্তৃক আয়োজিত ‘মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট’ (মেট) এর বার্ষিক প্রদর্শনীটি মিউচ্চিয়া প্রাদা ও এলসা শিয়াপেরেলির নামে উৎসর্গ করা হয়। এই প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘এলসা শিয়াপেরেলি এণ্ড প্রাদা: ইম্পসিবল্ কনভার্সেশন্স’।

ফ্যাশন শো-এর শেষে মিউচ্চিয়া প্রাদা; ছবি: mrporter.com

বর্তমান ফ্যাশন জগতে প্রাদা একটি প্রথম শ্রেণীর ব্র্যাণ্ডের পাশাপাশি স্বকীয় ব্যক্তিত্ব প্রকাশের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। আর এই স্বকীয়তার পেছনে মিউচ্চিয়া প্রাদার ভিন্ন ধারার সৃজনশীলতার একক ভূমিকা রয়েছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না।

This article is based on the success story of Muccia Prada as a world famous fashion designer and is written in English. The sources of information have been hyperlinked inside the article.

Feature image: chrispitner.wordpress.com

Related Articles