Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চিরন্তনেও চির নতুন – কার্ল লগারফেল্ড

 “তুলনার শেষেই স্বকীয় ব্যক্তিত্বের শুরু”

– কার্ল লগারফেল্ড

সাদা-কাল এই দুটি রঙ মানুষের জীবনে চিরন্তন। আর এই দুটি রঙেরই ভিন্ন ভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি ও ধর্মভেদে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ। কিন্তু এই দুটি রঙের আড়ালে থেকে নিজস্ব স্বত্ত্বা তৈরির মাধ্যমে অনেকেই চিরন্তন থাকার পাশাপাশি থাকা যায় চির নতুন- অনেকাংশে অসম্ভব এই কাজটিই গত কয়েক দশক যাবৎ সফলতার সাথে সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের চির প্রতিযোগিতামূলক জগতে নিজেকে অনন্য করে তুলেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লগারফেল্ড। ফ্যাশন জগতে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী, তথা বেশ খানিকটা উদ্ধত ডিজাইনের প্রবর্তন এবং প্রতিনিয়ত ফ্যাশনের বিভিন্ন জনপ্রিয় অনুষঙ্গকে নতুন করে উপস্থাপনার জন্য ভোগ ম্যাগাজিন তাকে ‘মুড অফ দ্য মোমেন্টের অতুলনীয় পরিভাষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার ভাষায়,“শব্দটির অর্থ যা-ই হোক না কেন, সাদা-কাল পোশাকে সবসময়ই ‘আধুনিক’ দেখায়।”

ব্যক্তিগত জীবন

কার্ল ওত্তো লগারফেল্ডের জন্ম জার্মানির হ্যামবুর্গ শহরের এক স্বচ্ছল পরিবারে। কার্ল তাঁর জন্ম তারিখ নিজে কখনোই প্রকাশ করেননি, তারপরেও ১৯৩৩ সালের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখটিই তাঁর জন্মদিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। বাবা ক্রিশ্চিয়ান লগারফেল্ড ও মা এলিজাবেথ বালম্যানের একমাত্র পুত্র কার্ল। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁর নামের বানানের শেষের ইংরেজি ‘t’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে দেন, যেন নামটির বিশ্বজনীন ও বাণিজ্যিক আবেদন আরও বাড়ে, যদিও উক্ত অক্ষরের উচ্চারণটি উহ্যই ছিল। তাঁর বাবা জার্মানিতে কনডেন্সড মিল্কের প্রবর্তনের মাধ্যমে সফলতা ও স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। পরিবারের মাঝে বেড়ে ওঠার সময়েই তিনি সৃজনশীল ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। তাঁর মা একজন প্রতিষ্ঠিত বেহালাবাদক ছিলেন। আর খাবার টেবিলের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল ধর্মীয় দর্শন। ১৯৩০ সালে যখন হিটলার ক্ষমতাসীন ছিলেন, সেসময়েই তাঁর পরিবার উত্তর জার্মানির এক গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। তাই কার্ল ছিলেন নাৎসি সম্পর্কিত সকল প্রকার ঘটনা বা আলোচনা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন তথা ডিজাইনিংয়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সক্রিয়। সপরিবারে ফ্রান্সে অভিবাসনের পরে তিনি লাইস মন্টেন স্কুলে ইতিহাস ও চিত্রাংকন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। শিশু অবস্থায় তিনি বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিনের ছবি কেটে সংগ্রহ করতেন। এমনকি সেসময়েই তাঁর সহপাঠীদের পোশাক নিয়েও গঠনমূলক সমালোচনা করতেন! তবে কিশোর বয়সে তাঁর পরিবার হ্যামবুর্গে ফিরে আসলে পরেই হাই-ফ্যাশনের সাথে তাঁর যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতার শুরু হয়।

আদরের বিড়াল শুপেৎ লগারফেল্ডের সাথে কার্ল; Image: yahoo.com

দেশ-বিদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পারদর্শী কার্ল ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ- এই চারটি ভাষায় দক্ষ হলেও, একান্ত বাধ্য না হলে ফরাসি ছাড়া অন্য ভাষা ব্যবহার করেন না। ফ্যাশন তাঁর জীবনের সাথে এতটাই ওতোপ্রতোভাবে জড়িত যে, তিনি তিন মাসের মধ্যে ৪২ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন যেন ডিজাইনার হেডি স্লিম্যানের ডিজাইন করা পোশাক পরতে পারেন! চিরকুমার এই ডিজাইনার বর্তমানে প্যারিসে তাঁর আদরের বিড়াল শুপেৎ লগারফেল্ডকে নিয়ে বসবাস করছেন।

ফ্যাশন পেশায় পদার্পণ

ক্যারিয়ারের শুরুতে মডেলের সাথে তরুণ কার্ল; Image: pinterest.com

২২ বছর বয়সে কার্ল প্রথমবার ফ্যাশন জগতে তাঁর অনন্যতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হন। ১৯৫৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল উল সেক্রেটারিয়েট আয়োজিত একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি ‘কোট’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন। এখানেই আরেক স্বনামধন্য ডিজাইনার ইভস্ স্যাঁ লরেঁর সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং পরবর্তীতে তাঁরা বেশ ভাল বন্ধু হয়ে ওঠেন। এই প্রতিযোগিতায় জয় লাভের পরপরই তিনি বিশ্বখ্যাত ফরাসি ডিজাইনার পিয়ের বামঅ্যাইয়ের সাথে কাজের সুযোগ লাভ করেন। সেসময় থেকেই তরুণ ও উঠতি ডিজাইনারদের মধ্যে এই সুযোগটির বিপুল চাহিদা ছিল। কার্ল এখানে প্রাথমিকভাবে একজন জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ও পরে অ্যাপ্রেন্টিস্ হিসেবে মোট ৩ বছর কাজ করেন।

শো শেষে কর্ণধার সিলভিয়া ভেনচুরিনি ফেন্ডির সাথে; Image: fashionista.com

১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের সাথে কাজ করেন এবং ১৯৬১ থেকেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ফ্যাশন হাউজ ক্লোয়ীর সাথে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথমদিকে তিনি প্রতি ‍সিজনে কিছু কিছু পোশাক ডিজাইন করলেও পরবর্তীতে পুরো কালেকশনরই ডিজাইন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আরেক ফ্যাশন হাউজ ফেন্ডির সাথে কাজ শুরু করেন। তিনি এখনও ফেন্ডির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

ম্যাচ মেড ইন হেভেন- শ্যানেল্ + লগারফেল্ড

“সকলেই বলেছিল ‘এই কাজটা করো না, ঐ (শ্যানেল্) ব্র্যান্ডটার আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ওটা চিরতরে হারিয়ে গেছে’। কিন্তু ততদিনে তা (শ্যানেল্ এর সাথে কাজ করা) আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।”

– কার্ল লগারফেল্ড (নিউ ‍ইয়র্ক টাইমস্-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের অংশ)

ম্যাদমোয়াজেল শ্যানেলের মৃত্যুর (১৯৭১) সাথেই হাউজ অফ শ্যানেলের জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছিল। এই সময়ে প্রয়োজন ছিল এমন একজন ডিজাইনারের, যিনি এই হাউজটির স্বকীয়তা বুঝে একে নিজের মতো করে নতুন রূপ দিতে পারবেন, যা তৎকালীন ফ্যাশন জগতে যেমন জনপ্রিয় হবে ও চাহিদা লাভ করবে, তেমনি ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে থাকবে। কার্ল সেসময়ের অন্যান্য ডিজাইনারদের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন তাঁর নিজস্বতার কারণেই। তিনি প্রতিটি ফ্যাশন হাউজের স্বকীয়তার কথা মাথায় রেখেই, তাঁর নিজের বিশেষত্ব ‍সফলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম ছিলেন। এই কারণেই ১৯৮২ সালে শ্যানেলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যালেন ওয়ার্থিমার, কার্লকে শ্যানেলের ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব করেন।

শ্যানেল্ রানওয়ে শো; Image: anothermag.com
শ্যানেল্ রানওয়ে শো; Image: independent.co.uk
শ্যানেল্ রানওয়ে শো; Image: bizjournals.com

এটাই ছিল এই দুটি স্বকীয় ব্র্যান্ড- শ্যানেল্ ও লগারফেল্ড (ব্যক্তি ব্র্যান্ড) এর একসাথে পথচলার শুরু। আজ শ্যানেল্ আর কার্ল এই দুটি নাম একসাথেই নেওয়া হয়ে থাকে এবং এরা একে অন্যের পরিপূরক। কোকো শ্যানেলের আদর্শ ও চিন্তাধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই কার্ল প্রতিনিয়ত ব্র্যান্ডটিকে নতুন রূপে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কার্লের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে ব্র্যান্ডটির বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কিছু পোশাক ও অনুষঙ্গ, যার প্রতিটিই ফ্যাশন জগতে ‘ক্ল্যাসিক’ হিসেবে সমাদৃত; যেমন- ব্যুকল্ ট্যুইড, শ্যানেল্ পার্লস্ (মুক্তোর তৈরি এক বা একাধিক স্তর বিশিষ্ট হার), দ্বি-রঙা জুতো ও শ্যানেলের সবচেয়ে বড় পরিচয়- এর লোগো ‘ইন্টারলকিং C’ (বিপরিতমুখীভাবে যুক্ত এক জোড়া ইংরেজি C অক্ষর, যা দ্বারা কোকো শ্যানেল্ নামটিকেই বুঝানো হয়)।

শ্যানেল্ লোগো; Image: pinterest.com
শ্যানেল্ পার্লস; Image: bidsquare.com

বিগত কয়েক বছরে কার্লের তত্ত্বাবধানে ‘শ্যানেল্ মেতিয়ে দ্য’আর্ট’ নামক ফ্যাশন ইভেন্টটি যাত্রা শুরু করেছে। এছাড়াও নিত্যনতুন আঙ্গিকে পোশাক প্রদর্শনের জন্য কার্ল বিখ্যাত। শ্যানেলের বিভিন্ন কালেকশন তিনি বরাবরই ভিন্নতার স্বাদে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ খানিকটা প্রাচ্য ঘরানায় তৈরি পোশাকের প্রদর্শন। কখনো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কখনো প্যারিসের রাজপথ, কখনো স্পেস স্টেশন, আবার কখনো ঘন গহীণ অরণ্যের আঙ্গিকে তৈরি মঞ্চে পোশাকের প্রদর্শন করে কার্ল বরাবরই মিডিয়ার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন। এসকল শো’র মাধ্যমে তিনি শ্যানেলের বিভিন্ন স্বকীয় হস্তশিল্প, যেমন- দেসরু, লাসাজ ও বেরী নিটওয়্যারকে ফ্যাশন জগতে উপস্থাপন করেছেন। এই বিশেষ হস্তশিল্পগুলো বর্তমানে শ্যানেলের প্যারাঅ্যাফেকশন্ নামক উপ-ব্র্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত।

ফ্যাশন হাউজ কার্ল লগারফেল্ড

“নিজের নাম কোনো দোকানের শীর্ষে লেখা থাকবে- জীবনভর এরকম স্বপ্ন আমি দেখিনি। কিন্তু এখন সময় হয়েছে এটা করার আর তাই এটা করছি। যেহেতু আমি এই খ্যাতি অর্জন করেছি, সেটা ব্যবহার করব না-ই বা কেন?”

– কার্ল লগারফেল্ড (ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের অংশ)

প্রায় ২৩ বছর পূর্বে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৪ সালে কার্ল নিজ নামে ফ্যাশন হাউজ গঠন করেন। এই ফ্যাশন হাউজের মূলমন্ত্র ছিল “বুদ্ধিদীপ্ত যৌনতা”। আর এর প্রতিটি পোশাকেই এই বক্তব্যের যথাযথ প্রমাণ বিদ্যমান। এই ব্র্যান্ডের পোশাকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উজ্জ্বল রঙের কার্ডিগ্যান জ্যাকেট। সম্প্রতি এই ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবে দেখা গেছে বিখ্যাত মডেল সিন্ডি ক্রফোর্ডের মেয়ে কায়া জার্বারকে। সাদা-কালোর মিশেলের সেই কালেকশনটি ছিল একইসাথে আধুনিক, ক্ল্যাসিক ও স্টাইলিশ। ২০০৫ সালে তিনি এই ব্র্যান্ডটির স্বত্ত্ব টমি হিলফিগার গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে তিনি এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ডিজাইন সংক্রান্ত সকল কাজের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন। ২০১৫ সালে কাতারের দোহাতে এই ব্র্যান্ডের একটি স্টোর উদ্বোধন করা হয়।

কার্ল লগারফেল্ড হাউজের একটি বিজ্ঞাপন; Image: karllagerfeld.com

কর্মজীবনের অন্যান্য অবদান

“যা আমি কখনোই করিনি, এরকম কাজ করতেই আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি”

– কার্ল লগারফেল্ড

ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও কার্ল একজন প্রখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত ফটোগ্রাফার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি প্রায়ই কোকো শ্যানেলের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন। এছাড়া তিনি নিজেই শ্যানেলের সকল ফটোশুট ও ক্যাম্পেইনের শিল্প নির্দেশনাও করে থাকেন। এমনকি ফেন্ডি ও কার্ল লগারফেল্ড ব্র্যান্ডের জন্যও তিনি ফটোশুট করে থাকেন। ২০০২ ও ২০০৪ সালে তিনি যথাক্রমে ডিজেল ও এইচএণ্ডএম ব্র্যান্ডের সাথে খন্ডকালীন কাজ করেন। ২০১০ সালে তিনি ইতালীয় জুতার ব্র্যান্ড হোগানের জন্য দুটি ভিন্ন ফুটওয়্যার লাইন ডিজাইন করেন। এছাড়াও মারায়া ক্যারির জন্য ‘ভি’ ম্যাগাজিনের কভার আউটফিট, পপি ডেলেভিন, লিলি অ্যালেন সহ কয়েকজন সেলিবেট্রির বিয়ের পোশাকের ডিজাইনও তিনি করেছেন।

ভক্স ওয়াগনের শুটে ফটোগ্রাফার কার্ল; Image: motor1.com
ওরফোরের জন্য নিজস্ব ডিজাইনকৃত কাচের সামগ্রীর সাথে; Image: vimeo.com
কার্লের ডিজাইনকৃত শুউয়েমররা কালেকশন; Image: funsizebeauty.blogspot.com

তাঁর ডিজাইনের ছোঁয়া শুধুমাত্র পোশাক ও বিভিন্ন অনুষঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০১০ সালে তিনি নিজ চরিত্রে ভক্স ওয়াগনের একটি বিজ্ঞাপণে অংশগ্রহণ করেন। একই বছরে তিনি ফ্রান্সে কোকা-কোলা লাইটের জন্য একটি বিশেষ ধরনের বোতল ডিজাইন করেন, যাতে তিনি নিজেরই ছবি ব্যবহার করেন। ২০১১ সালে তিনি কাচের তৈজসপত্র তৈরির সুইডিশ কোম্পানি ওরফোরের জন্য একটি কালেকশন ডিজাইন করেছেন। তিনি ‘মেসি’স’ নামক আমেরিকারন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের জন্যও একটি ক্যাপস্যুল কালেকশন ডিজাইন করেছেন। ২০১২ সালে তিনি জাপানী প্রসাধন ব্র্যান্ড শুউয়েমেরার জন্য একটি হলিডে কালেকশন ডিজাইন করেন। একই বছরে তিনি সুজান বেলপেরোন ব্র্যান্ডের জন্য পিন ও ব্রুচের কালেকশন তৈরি করেন।

পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতি

প্রিয় হাডসনের সাথে একান্ত কথোপকথনে স্নেহবৎসল কার্ল; Image: vanityfair.com

“আমি ভীষণ গর্বিত ও আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার কাজ শেষ হয়নি।”

– কার্ল লগারফেল্ড (গর্ডন পার্কস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পরের বক্তব্য)

কার্ল লগারফেল্ড তাঁর কাজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের জীবনকে বিভিন্নভাবে ছুঁয়ে গেছেন। ফ্যাশন সচেতন সকল মানুষের মনেই তাঁর অবস্থান অনন্য। একজন ডিজাইনার হিসেবে তিনি বিভিন্ন উঠতি মডেল ও অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার গড়তেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। রানওয়ে মডেল বাবার সাথে ফ্যাশন শো দেখতে এসে কার্লের সকল শো-এর মধ্যমণি ছোট্ট হাডসন ক্রোনিংয়ের শিশু-মডেল হয়ে ওঠার গল্প ফ্যাশন জগতের সকলেরই জ্ঞাত। এছাড়াও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, কারা ডেলেভিন, লিলি রোজ ডেপ, কেণ্ডল জেনার, কায়া জার্বার সহ বিভিন্ন কিশোরীর সফল মডেল ও অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম।

বিজ্ঞাপনের শুটে ফটোগ্রাফার ও শিল্প নির্দেশক কার্ল লগারফেল্ড; Image: latimes.com

ফ্যাশন জগৎকে তাঁর জীবনের প্রায় সকটুকুই নিবেদন করার জন্য ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে তাঁকে ‘ফ্যাশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করা হয়। ২০১১ সালে ফ্যাশন ডিজাইন, ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর ভূমিকা ও অবদানের জন্য তাঁকে ‘গর্ডন পার্কস ফাউণ্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।

“আমি সময়ের পরিবর্তন দেখতে ভালবাসি”

– কার্ল লগারফেল্ড

সাদা চুলে কাল ফিতায় বাঁধা ঝুঁটি, কাল চশমা, কাল গ্লোভস্ ও সাদা-কাল পোশাকের এই চিরতরুণ ‍ডিজাইনার আজও নতুন কিছু সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। একাধারে তিনটি ফ্যাশন হাউজের শিল্প নির্দেশনার কাজ করেও তিনি আরও বিভিন্নভাবে এই জগতের সাথে জড়িত রয়েছেন। ফ্যাশন জগৎ এখনও তাঁর কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা রাখে।

চিরতরুণ কার্ল লগারফেল্ড; Image: crfashionbook.com

This article, written in Bengali, describes the entire legacy of Karl Lagerfeld - in brief. Necessary references have been hyperlinked inside.

Feature Image: VIP.de

Related Articles