Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেনারেশান গ্যাপ নাকি উন্নয়নের ধুম্রজাল?

ওহ! মা, তুমি অত শত বুঝবে না।

মনে করে দেখুন তো এমনতর কথাটি কেউ তার জীবনের কোথাও না কোথাও ব্যবহার করেছেন কিনা?

সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়স বেড়ে যায়, বাড়ে জ্ঞানের পরিধি। পরিণত বয়সেই কেবল একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ বুঝতে পারে যে তার ছেলেবেলা পেরোনোর সময়কার বাবা-মায়ের কথাগুলোই কতটা না খাঁটি ছিল! অথচ টগবগে বাড়ন্ত বয়সের ছেলে-মেয়েরা কম বেশি সকলেই ভেবে থাকে যে, তাদের বাবা-মায়েরা টেকনোলজিক্যাল সীমানা থেকে বহু দূরে বা কাছে থাকলেও নিশ্চয়ই তাদের আমলের চিন্তা-ভাবনাগুলোর সাথে বর্তমান আমলের ধ্যান-ধারণার বিশাল তফাৎ। আসলেই কি তা ঘটে? নাকি এর পেছনে অন্য কারণও কাজ করে?

টেকনোলজির দ্রুত উন্নয়নই জেনারেশন গ্যাপের অন্যতম একটি কারণ বলে অনেকেরই অভিমত

এটি মূলত ঘটে কয়েকটি কারণে। তার মাঝে প্রধান যে কারণ সেটি হলো জেনারেশান গ্যাপ। দ্বিতীয়ত, টেকনোলজির মানের দ্রুত উন্নয়ন। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক জেনারেশান গ্যাপ আসলে কী?

প্রায় ৩০ বছর আগেকার হংকং শহরের অবস্থার কথা টেনে আনা যাক। জরিপে উঠে আসে, উন্নয়নের ছোঁয়ায় হংকং শহরের প্রায় ৬৭% পরিবারের অভিভাবক যুক্ত হয়ে পড়েন কর্মক্ষেত্রে। রোজ কর্মব্যস্ত জীবন কাটিয়ে তাদের নিজেদের সময় দেওয়া তো দূরে থাক, তারা সন্তানদের জন্যেও সময় খুঁজে পেতেন না। এভাবেই ক্রমশ দূরত্ব সৃষ্টি হতে শুরু করে পিতামাতা ও সন্তানদের মাঝে যা জেনারেশন গ্যাপ নামেই অভিহিত করা হয়।

এই জেনারেশন গ্যাপ মূলত দ্রুত গতির উন্নতির ফল মাত্র। আগেকার সময়ে উন্নয়ন ঘটতো ধীর গতিতে। দুই বা তিন প্রজন্মের জীবন ধারার ধরণ অনেকটাই কাছাকাছি হতো। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়ন ধারা অতি দ্রুত গতির হওয়াতে বিশেষত প্রবীণ বা বয়োজ্যেষ্ঠরা এই ধারার সাথে তাল মিলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ার কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাপ। একেই আমরা জেনারেশান গ্যাপ বা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের পার্থক্যও বলতে পারি। সমস্যা তো থাকবেই, সাথে সমাধানও রয়েছে। জেনারেশান গ্যাপ সৃষ্টির কারণ এবং সমাধান দুটো নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল।

জেনারেশন গ্যাপ পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে দূরত্বের দেয়াল তৈরি করে

জেনারেশান গ্যাপ আধুনিক যুগের একটি চিরাচরিত প্রধান সমস্যা। এই সমস্যাটি নিয়ে বাবা-মায়েরা সচেতন না হলে কিন্তু সূক্ষ্ম সমস্যা বিকটাকার ধারণ করতেই পারে। এমনও হতে পারে আপনার সেই ছোট্ট সোনামনি বড় হতে হতেই আপনার চোখের সামনেই বখে যাচ্ছে, অথচ আপনার একটু সতর্কতা তার পথ চলার রাস্তা আরও সুন্দর করে দিতে পারতো বৈকি।

প্রথমেই জেনে নিই কিছু সাধারণ নালিশ যা মূলত উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মা সম্পর্কে করে থাকে।

  • কর্মজীবী বাবা-মায়েদের সন্তানের কাছ থেকে প্রায়শ শোনা যায় যে তাদের বাবা-মা বাসাতেও অফিসের এক গাদা কাজ নিয়ে আসেন।
  • অথবা বাবা-মা বাসায় থাকলেও হয়তোবা ল্যাপটপ নয়তোবা টেলিভিশানের সামনেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।

সন্তানকে সময় দিতে অপারগ ব্যস্ত বাবা-মা

  • কোনো কারণেও যদি সন্তানরা সেই ব্যস্ত বাবা-মায়ের সামনে পড়ে যায়, তবে একগাদা শাসন মাখানো লেকচার সন্তানদের গলধঃকরণ করা বৈ উপায় থাকে না।
  • কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে অফিস ফেরার পর বাবা-মায়ের কাছ থেকে এমনও শোনা যায়, “বাবা রে, আমি খুব ক্লান্ত, আমাকে এখন বিরক্ত করো না। মন দিয়ে তোমার পড়াশুনা শেষ করে নাও। পরে শুনবো তোমার কথা।
  • তাছাড়া কিছু কমন অভিযোগ বাবা-মা কিছুতেই সন্তানদের মনের কথা বোঝে না।
  • বাবা-মা তাদের মনের না পাওয়া ইচ্ছেগুলোর আস্ফালন ঘটাতে চান তাদের স্নেহের সন্তানদের উপর।
  • বাবা-মায়েরা সন্তানদের কথা মন দিয়ে শোনা অপেক্ষা নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতেই বেশি পছন্দ করেন।
  • বাবা-মায়েরা বন্ধুসুলভ নন।

সময়ে-অসময়ে পিতামাতার ইচ্ছে সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে তৈরি হয় দূরত্ব

  • সন্তানদের স্বাধীনতা দিতে চান না।
  • সন্তানদের কোনো রকম মতামতে আগ্রহ দেখাতে চান না।
  • সন্তানদের ভুল থেকে শিখতে দেওয়ার পক্ষপাতী নন।
  • সব ক্ষেত্রে কড়া শাসন আর নজরদারীতেই বিশ্বাসী।
  • সন্তানদের নিজেদের মতো করে সময় দেওয়ার মতো সময় থাকে না অনেক বাবা-মায়ের।

কর্মব্যস্ত সফল পিতা-মাতার সন্তানের সাথে তৈরি হয় না সম্পর্কের নিবিড় বন্ধন

এরকম ১০১টা নালিশ আপনি পাবেন যা এই যুগের বাচ্চারা তাদের বাবা-মা সম্পর্কে করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি হন একজন কর্মব্যস্ত সফল পিতা-মাতা, তবে আপনার মনেও কিছু প্রশ্ন এসে থাকতে পারে। আপনি বলতেই পারেন-

  • সন্তান কিছু চাওয়ার আগেই তা আপনি এনে দিচ্ছেন।
  • মোটা অংকের টাকা খরচ করে সন্তানকে নামীদামী স্কুলে পড়াচ্ছেন, টিউটর দিচ্ছেন।
  • বিলাসবহুল জীবন যাপনের আয়োজনে আপনি কোনো দিক থেকেই কমতি রাখছেন না।
  • বছর শেষেই ছুটিতে দেশের বাইরে বিলাসী আয়োজনে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন।

সন্তানের সব আবদার মেটানোই পিতামাতার দায়িত্ব বলে অনেকেই ভেবে নেন যা এক ধরণের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক

মোটকথা, যত রকম আর্থিক সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন তার কোনোটাতেই আপনার কমতি নেই। সুতরাং প্রশ্ন আপনার মনে আসতে বাধ্য- কেন সৃষ্টি হবে এই জেনারেশান গ্যাপ?

বিজ্ঞানীরা এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রধানত ৫টি কারণ চিহ্নিত করেছেন যা এই সমস্যা সৃষ্টির পেছনে দায়ী।

১) বাবা-মায়েরা সন্তানদের দৃষ্টিতে তাদের মতো করে কথা বলেন না বা শুনতে চান না।

২) বাবা-মায়েরা কেবল সন্তানদের দোষ খুঁজে বের করতেই উঠে পড়ে লেগে থাকেন।

৩) সফল বাবা-মায়েরা চান তাদের সন্তান যেন তাদেরই জেরক্স কপি হয়।

৪) বাবা-মায়েরা সর্বদা ব্যস্ত থাকেন তাদের নিজেদের সন্তানদের সাথে অন্যদের তুলনা করার মাঝেই।

৫) সন্তানদের সাথে বাবা-মায়ের কথা বার্তায় বিস্তর তফাৎ থাকা।

এগুলো খুব সাধারণ সমস্যা। সুতরাং সমাধানও আপনারই হাতে।

দূরত্ব কমাবে স্পর্শ

সন্তান বড় হয়ে গেলে পিতা-মাতা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। প্রতিদিন অন্তত একবার আপনার সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন বা বুকে জড়িয়ে ধরুন। আপনার মমতা মাখানো স্পর্শ দূরত্ব কমাতে দারূণভাবে আপনাকে সাহায্য করবে।

মমতা মাখানো স্পর্শ সন্তানের সাথে পিতামাতার দূরত্ব কমাতে দারুণ সহায়ক

পছন্দের সমর্থন

সন্তানদের পছন্দ-অপছন্দ বাবা-মায়ের চেয়ে ভিন্ন হতেই পারে। সেটিকে নেতিবাচক ভঙ্গিতে না দেখে আপনার সন্তানকে বুঝতে চেষ্টা করুন। সে যদি ভুল হয়, তবে ধীরে ধীরে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। টিনএজ বয়সে সন্তানের ব্যতিক্রমধর্মী অদ্ভুত চিন্তাগুলোকে হেলা না করে মূল্যায়ন করুন। এ সকল চিন্তাগুলো তাকে লিখে রাখতে উৎসাহীত করুন। একইসঙ্গে তার পছন্দের যে জিনিসগুলো আপনার কাছে ভাল লাগে তা প্রকাশ করুন।

বকাঝকা না করে সন্তানকে বোঝানোর মাধ্যমে পরষ্পরের বন্ধন গভীর হয়

নিজের ইচ্ছে কখনও সন্তানের উপর চাপিয়ে দেবেন না। অনুরূপভাবে সন্তানদেরও মাথায় রাখা খুব জরুরি যে পৃথিবীতে একমাত্র বাবা-মা ব্যতীত আর কেউ সন্তানদের ভালো বৈ খারাপ কখনই চাইতে পারেন না। সুতরাং সন্তানদের উচিত পিতা-মাতা কোনো কাজে নিষেধ করলে তা কেন করছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করা এবং মানিয়ে চলা।

সময় সচেতনতা

সন্তানকে নিয়ে বাবা-মার চিন্তার শেষ নেই। বর্তমান সময়ে প্রত্যেক শিশুকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আপনার কর্মব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা সময় সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এই সময় দেয়াটাই আপনার সন্তানকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠতে ম্যাজিকের মতন কাজ দেবে। সন্তানের সাথে গল্প করুন, খেলা করুন, বাজারে যান; তাতে সামাজিকতাও সে আপনার কাছ থেকেই শিখে নেবে।

কর্মব্যস্ত দিনের পর সন্তানের সাথে আনন্দকর কিছু ভালোবাসার মুহূর্ত জেনারেশন গ্যাপ কমিয়ে আনতে পারে

বিশ্বাস ও আস্থাবান হোন

যেকোনো সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ভিত হলো বিশ্বাস৷ বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়৷ আপনি যদি তাদের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস না করতে পারেন তাহলে সম্পর্ক ভালো হবে কীভাবে? তাছাড়া এই বিশ্বাসের ভিত এমনভাবেই গড়ে তুলুন যাতে আপনার সন্তানও তা বুঝতে পারে।

সন্তানকে সময় দিন, পরষ্পর পরষ্পরের ভালবাসা অর্জন করুন

আলোচনায় উৎসাহী হোন

সবসময় দরকারি কথাই যে বলতে হবে তা কিন্তু নয়, মাঝে মাঝে অদরকারি কথাও বলুন সন্তানের সাথে। তাতে দূরত্ব কমে। তাছাড়া এতে সন্তানের মানসিক, শারীরিক অবস্থাও আপনার অগোচোরে থাকবে না। তবে বারবার একই রকম কথা থেকে বিরত থাকুন।

পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনে

বাস্তববাদী হোন

প্রতিদিন নতুন নতুন খেলনা কেনা নয়। সন্তান চাওয়ার সাথে সাথেই সব কিনে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। দেখুন সেটা সন্তানের প্রয়োজন আছে কিনা? প্রয়োজন বুঝে বিচার করুন।

ভুল থেকে শিক্ষা

বাবা-মায়েদের মাথায় রাখা উচিত আপনার সন্তানও দোষে-গুণে একজন মানুষ। সুতরাং সন্তান ভুল করলেই বকা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভুল করা মানে হেরে যাওয়া নয়, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি।

আচরণ প্রধান হাতিয়ার

বাবা-মায়েরা অন্য কোনো মানসিক চাপের ফল সন্তানের উপর ফলাতে যাবেন না। কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার আচরণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সন্তানকে অধিক শাসন করা থেকে বিরত থাকুন। একইভাবে সন্তানদেরও এই ব্যাপারে মনে রাখা জরুরী যে ছোঁড়া তীর আর মুখের কথা কখনও ফেরত আসে না। শত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও কথাবার্তায় মার্জিতভাব রাখা অতীব জরুরি।

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে জেনারেশন গ্যাপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব

বন্ধু নির্বাচনে দৃষ্টি রাখুন

বাড়ন্ত বয়সে সন্তানেরা অনেক সময় বাবা-মায়ের চেয়েও বন্ধুকাতর হতে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে সন্তানকে বন্ধু বাছাইয়ে সহযোগিতা করুন। সন্তানরা হয়তোবা কৌতুহলপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে বিতর্কিত, ব্যতিক্রম বন্ধুত্বে। সরাসরি বাঁধা তৈরি না করে বরং কিভাবে সুস্থ বন্ধুত্ব মানুষকে সহযোগীতা করে, কী কী উপকার হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। সন্তানরা কাদের সাথে মিশছে সে বিষয়েও সচেতন থাকুন।

সন্তানের বন্ধু তৈরিতে বাঁধা নয় বরং বন্ধু তৈরিতে সহায়তা করার মাধ্যমে পরষ্পরের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পায়

বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সন্তানকে সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি সর্বদা তার পাশে আছেন তা বুঝতে সন্তানকে সাহায্য করুন। এতে করে বাবা-মা ও সন্তানের মাঝে কখনও দূরত্বের ধুম্রজাল এসে বাসা বাঁধতে পারবেই না। সন্তানও থাকবে সঠিকপথে।

তথ্যসূত্র

১) prokerala.com/kids/parenting/generation-gap.htm

২) theparentszone.com/parenting-skills/5-tips-to-bridge-the-generation-gap-between-parents-and-children/

৩) breezystorm.com/5-top-reasons-for-generation-gap-with-your-children/

৪) lists10.com/10-ways-bridge-generation-gap-father/

৫) edu4sure.com/7-ways-to-bridge-the-generation-gap

৬) yummymummyclub.ca/blogs/jeni-marinucci-panic-button-years/20140401/bridging-the-generation-gap

৭) prokerala.com/kids/parenting/generation-gap.htm

৮) breezystorm.com/5-top-reasons-for-generation-gap-with-your-children/

৯) choihung.edu.hk/www.choihung.edu.hk/ch-engl/7BKwokTszKit.pdf

Related Articles