Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: গর্ভবতী মায়েদের যে রোগ নিয়ে জানা জরুরি

গর্ভবতী নারীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস) বলা হয়। সাধারণত, সন্তান জন্মদানের পর এই ধরনের ডায়াবেটিস চলে যায়। এই ডায়াবেটিস গর্ভকালীন যেকোনো সময়েই হতে পারে। তবে ২য় অথবা ৩য় ট্রাইমেস্টারে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। ইনসুলিন নামক হরমোন যখন মায়ের দেহে প্রয়োজনমাফিক তৈরি হতে পারে না, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের আবির্ভাব ঘটে। ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ৮-১৩ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। 

ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ৮-১৩ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন; image source- GETTY IMAGES

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ

অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে। বেশিরভাগ সময় এই ধরনের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে গর্ভকালীন রুটিন চেকআপের সময়। তবে কিছু কিছু সময় লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যেমন- 

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা,
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব করা,
  • মুখ শুকনো হয়ে থাকা,
  • দুর্বলতা,
  • চোখে ঝাপসা দেখা,
  • যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া, 
  • অতিমাত্রায় ক্ষুধাবোধ হওয়া এবং আগের তুলনায় বেশি খাওয়া।

তবে উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো যে সবসময় গর্ভকালীন ডায়াবেটিসেরই লক্ষণ হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক সময় গর্ভকালীন সাধারণ লক্ষণ হিসেবেও এগুলো প্রকাশ পেতে পারে। 

যেসব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে

  • বিএমআই (বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ভর)-এর মান ৩০-এর ওপর চলে গেলে,
  • গর্ভবতী মায়ের বয়স ৪০ বছরের উপরে হলে,
  • যদি গর্ভবতী মায়ের পূর্ববর্তী সন্তানের  জন্মকালে তার ওজন ৪.৫ কেজি কিংবা তারও অধিক হয়,
  • আগের কোনো গর্ভকালে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের রেকর্ড থাকলে,
  • বাবা, মা বা ভাই-বোনদের কারো ডায়াবেটিস থাকলে,
  • গর্ভবতী দক্ষিণ এশীয়, কৃষ্ণাঙ্গ, আফ্রিকান ক্যারিবীয় বা মধ্যপ্রাচের হলে, 
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে,
  • উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অধিক কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ইত্যাদি আগে থেকেই থাকলে,
  • আগে গর্ভপাত ঘটে থাকলে।

যেসব জটিলতা হতে পারে

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে মা ও শিশু উভয়েরই ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সন্তানের ক্ষেত্রে

  • অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ; ৯ পাউন্ড বা তারও অধিক ওজন, 
  • নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ,
  • গুরুতর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা,
  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া, 
  • স্থূলতা এবং পরবর্তী জীবনে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া,
  • জন্মদানের পূর্বে বা জন্মদানের পরে মৃত্যু।

মায়ের ক্ষেত্রে

  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া,
  • গর্ভকালীন খিঁচুনি হওয়া,
  • বাচ্চা প্রসবের সময় সিজারিয়ান সেকশনের দরকার হওয়া, 
  • সন্তান জন্মদান-পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস হওয়া,
  • পলিহাইড্রামনিওস বা গর্ভের ভেতরে শিশুকে ঘিরে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড নামক একধরনের তরল তৈরি হতে পারে, যার ফলে নির্দিষ্ট  সময়ের আগেই প্রসববেদনা শুরু হওয়া এবং প্রসবের সময় জটিলতার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। 
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে মা ও শিশু উভয়েরই ঝুঁকি বেড়ে যায়; image source: diabeteseducator.org

যেভাবে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায়

  • চিকিৎসক বা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, 
  • নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখা। যেমন- ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি ইত্যাদি, 
  • অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী না হওয়া,
  • নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ চেক করা,
  • গর্ভের শিশুর মনিটরিং করা,
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া।  

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

গর্ভকালের শুরুতেই চিকিৎসকের নিকট থেকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ব্যাপার সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। চিকিৎসকও তার রুটিন চেক হিসেবে ব্যাপারটি দেখবেন। অনেক সময় গর্ভকালীন সাধারণ লক্ষণের সাথে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ মিলে যেতে পারে। তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে কি না সেটা জানার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েই যায়, তবে নিয়মিত চেকআপের দরকার হতে পারে। বিশেষ করে শেষ তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে ভীত হবার কিছু নেই।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি; image source: Getty Images

চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে অনেক গর্ভবতীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন এবং নিজেও সুস্থ থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে একজন মা একটি সুস্থ, স্বাভাবিক বাচ্চার জন্ম দিতে পারেন। 

Language: Bangla
Topic: Gestational diabetes
References:
1. Gestational diabetes - NHS
2. Gestational diabetes - Mayo Clinic
3. Gestational Diabetes - Web MD

Related Articles