Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চুলের নানা সমস্যা ও তার প্রতিকার

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা!

মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অংশ চুল। মেয়েদের ঘন, কালো, দীর্ঘ চুল যেমন তাদের সৌন্দর্যে এক আলাদা মাত্রা যোগ করে, তেমনি ছেলেদের মাথাভর্তি ঘন চুল তাদের বয়স ধরে রাখে অনেক বছর। ভাইকিং নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আর দীর্ঘ চুলের অধিকারীদেরকে সবচেয়ে সুন্দরী বলে মনে করা হতো। ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্দর চুলকে তো নারীর অন্যতম অলংকার হিসেবেই ধরা হয়। এত যেই চুলের কদর, সেই চুল নিয়ে নিত্যদিন নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় মানুষ। তাই আজ পাঠকদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি চুলের সবচেয়ে সাধারণ কিছু সমস্যা, কারণ এবং তার সমাধানের কথা।

যখন থেকে মানুষ সৌন্দর্যকে মূল্যায়ন করতে শিখেছে তখন থেকেই গুরুত্ব দেয়া হয় চুলকে। প্রাচীনকালের গল্প, উপন্যাস আর কবিতায় তাই সুন্দর চুলের কাব্যিক বর্ণনা প্রায়ই দেখা যায়। আগেকার দিনের মানুষজন এখনকার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের অধিকারী হতেন। শুধু বইয়ের পাতার নায়ক-নায়িকা বা ইতিহাসের পাতার রাজকুমারীরা নয়, কয়েক প্রজন্ম আগে আমাদের নানী-দাদীরাই সহজে এবং কম যত্নেই দীঘল কালো চুলের অধিকারী হতেন। কিন্তু এখন মানুষ চুলের সে সৌন্দর্য ধরে রাখতে গিয়ে সম্মুখীন হচ্ছে হাজারো সমস্যার। বিশেষ করে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষেরা পরিবেশের দূষণ, খাবারের ভেজাল আর মুক্ত, বিশুদ্ধ আলো-বাতাসের অভাবে নানাবিধ স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি চুলেরও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। সেই সাথে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকের সাথে সাথে চুলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। এর মধ্যে আছে চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারানো, চুল পড়া, রুক্ষ, মলিন, নিষ্প্রাণ ও ভঙ্গুর চুল। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ও খনিজ পদার্থ না থাকাও চুলের স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান একটি কারণ। খাবারের মধ্যেও এমন কিছু খাবার আছে যা চুলের জন্য বেশ ক্ষতিকর, যেমন- ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয়। এমনকি দুধে যদি অ্যালার্জি থাকে, তবে তা-ও হতে পারে চুলের জন্য মারাত্মক।

মাথাভর্তি ঝলমলে চুলের আশা থাকে সবারই; liasalon.ru

চুলের সাধারণ সমস্যাগুলো

রুক্ষ, প্রাণহীন চুল

সবচেয়ে সাধারণ চুলের সমস্যা মনে হয় এটাই। চুলে প্রয়োজনীয় তেল আর ময়েশ্চারাইজারের অভাব রুক্ষ, শুষ্ক চুলের প্রধান কারণ। রুক্ষ চুল মানেই চুল পড়া, চুলের আগা ফাটা, চুল ভেঙ্গে যাওয়ার মতো আরো হাজারো সমস্যার আরম্ভ। চুলে সূর্যালোক ও খারাপ আবহাওয়ার প্রভাব, পুষ্টিহীনতা, কৃত্রিম উপায়ে চুল শুকানো, কৃত্রিম রঙের ব্যবহার এই সমস্যার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করা চুলকে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার ফিরে পেতে সাহায্য করে।  সেই সাথে একদম ভেজা চুল আঁচড়ানো বাদ দিতে হবে। অলিভ অয়েল আর নারকেল তেলের ব্যবহারও বেশ উপকারী। অতিরিক্ত রুক্ষ চুল অবশ্যই ভেজা অবস্থায় আঁচড়ানো উচিত নয়। আবার বাদামের তেল, নারকেলের তেল, জলপাইয়ের তেল ও ক্যাস্টর অয়েলের মিশ্র ব্যবহারও দিতে পারে দারুণ ফলাফল। সবগুলো তেল একসাথে কুসুম গরম করে মাথার ত্বকে দিন। রাতভর রেখে দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। আর তারপর? সকালের শুরু হোক ঝলমলে, প্রাণবন্ত চুল দিয়ে। মেয়েদের ক্ষেত্রে রুক্ষ চুলে লেয়ার বা স্টেপ স্টাইলে চুল কাটা পরিহার করাই ভালো।

তৈলাক্ত বা চিটচিটে চুল

চুল অতিরিক্ত রুক্ষ হওয়া যেমন সমস্যা, তেমন চিটচিটে, নিস্তেজ চুলও অনেককে খুবই ভোগায়। কে না চায় তার চুল ঝলমলে, উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত হবে? দেহে আয়রনের ঘাটতি, পুষ্টিহীনতা, থাইরয়েডজনিত সমস্যা, এমনকি হরমোনের কারণেও চুলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে চুলের গ্রন্থিগুলো নিজেরাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তেল নিঃসরণ করে। অনেক সময় অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার এই সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

এক্ষেত্রে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে যা কোমলভাবে চুল থেকে তেল ও ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি চুলকে আরো মজবুত ও ঝরঝরে হতে সাহায্য করবে। যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে চুল নিজেই সেবাম নামের প্রাকৃতিক তেল অতিরিক্ত নিঃসরণ করে, তাই শুধু চুলের আগায় কন্ডিশনার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। সেবাম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণকারী শ্যাম্পুর ব্যবহার করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

প্রাণহীন সাদা চুল

কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া সারা পৃথিবীব্যাপী মানুষের চুলের প্রধান সমস্যাগুলোর একটি। আগেরদিনের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখনো নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারেননি এর পিছনে। তবে সাধারণত হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, বংশানুক্রমিক ধারা, খাদ্য তালিকায় কপার, আয়রন, আয়োডিন ও ভিটামিন বি এর অভাবের মতো কারণগুলো এর জন্য দায়ী হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার, কেমোথেরাপি সহ অনেক সময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চুলের সাদা হওয়া তরান্বিত করে।

কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যা এখন অনেকেরই; tweetcs.com

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং খাবারের তালিকায় কপার, আয়োডিন, প্রোটিন ও বিটামিন বি এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এই সমস্যা রোধে প্রথম পদক্ষেপ। ধূমপান সহ সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করা উচিত। এছাড়া মুলতানি মাটির ব্যবহার ত্বকের সাথে সাথে চুলের সাদা হয়ে যাওয়া সমস্যা রোধেও বেশ কার্যকর বলে ধরা হয়। চুলে ব্যবহারের সাধারণ প্যাকগুলোর সাথে সামান্য মুলতানি মাটির ব্যবহার চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চুলের আয়ু বৃদ্ধি করে।

খুশকি

বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় চুলের গোড়ায় খুশকি ও মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রায় সবারই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেক সময় তা চুলকানির সৃষ্টি করে। এটি ত্বকের এক প্রকারের সমস্যা যাকে সাধারণ শুষ্কতা বলে উপেক্ষা করা উচিত নয়।

মাথার ত্বকে উষ্ণ নারিকেল বা জলপাইয়ের তেলের মালিশ সাময়িকভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিলেও তা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বিশেষজ্ঞের দ্বারা অনুমোদিত, আপনার মাথার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ভালো কোনো খুশকি নিয়ন্ত্রক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে নারকেল তেলের সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হালকা গরম করে তা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই মিশ্রণের ব্যবহার ধীরে ধীরে আপনার খুশকি কমাতে সাহায্য করবে। অথবা শ্যাম্পুর পরে লেবু-জল মাথার ত্বকে ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলাও বেশ উপকারী।

চুলের আগা ফাটা

এই সমস্যার সম্মুখীন সাধারণত মেয়েরা হয়, যখন তারা তাদের চুল দীর্ঘ করতে চায়। চুল যতো বড় হতে থাকে চুলে প্রাকৃতিক তেল তত কমতে থাকে। এই সমস্যা রোধে চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করার কোনো বিকল্প নেই। একবার আগা ফেটে গেলে যেহেতু তা আর ঠিক করার কোনো পথ নেই, তাই ৮-১২ সপ্তাহ পরপর চুলের আগা ছেটে ফেলা উচিত। আগা ফাটা রোধে সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করা যেতে পারে। ভেজা চুল শুকাতে তোয়ালে দিয়ে ঘষা বা ঝারা অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিত। সেই সাথে দীর্ঘ চুলের ক্ষেত্রে বড় খিলানের নরম চিরুনি ব্যবহার করা ভালো। এখন বাজারে এমন অনেক কাঠের চিরুনিও পাওয়া যাচ্ছে।

চুল পড়ে যাওয়া

চুলের সমস্যাগুলোর মধ্যে এখন বেশিরভাগ মানুষের কাছে মুখ্য সমস্যা এটিই। একজন মানুষ দৈনিক ১০০টি চুল স্বাভাবিকভাবেই হারায়। কিন্তু যখন হারানো চুলের সংখ্যা এই পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় তখন সমস্যার শুরু হয়। তবে নারী ও পুরুষের মাথায় চুল পড়ার ধরন আলাদা আলাদা হয়। সাধারণত ছেলেদের কপালের ও মাথার সামনের অংশ থেকে চুল পড়ে তা ঘোড়ার খুরের মতো আকার ধারণ করে। এই ধরনের চুল পড়ার সমস্যা সাধারণত বংশানুক্রমিক এবং ছেলেদের টেস্টোটেরন হরমোন এর পিছনে কাজ করে। মেয়েদের মধ্যে চুল পড়ার ধরন সাধারণত আলাদা হয়, তাদের মাথার মাঝ থেকে পিছনের দিকের চুল বেশি পড়ার সমস্যা দেখা যায়।

চুল পড়া এখন চুলের মূখ্য সমস্যা; greycis.com

অপুষ্টি, দুশ্চিন্তা, অসচেতনতা আর বংশানুক্রমিক ধারা ছাড়াও হরমোনের চিকিৎসা, কেমোথেরাপি, দুশ্চিন্তা ও উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ঔষুধ সেবন, মাথার ত্বকের সংক্রমণ, গর্ভনিরোধক ওষুধ গ্রহণ, গর্ভধারণ ও সন্তানের জন্মদানের সময়ের শারীরিক পরিবর্তন- এ সকল কারণেও মানুষ ব্যাপকহারে চুল পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়।

তবে বর্তমানে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ভালো ফলাফল দিচ্ছে। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে নারকেল তেল ও নারকেলের দুধ নতুন চুল গজানোর জন্য দারুণ দুটি উপাদান। নারকেলের দুধে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এক্ষেত্রে টনিকের মতো কাজ করে। এই দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে ১-২ ঘন্টা রেখে ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া আমলকি, ডিম, জবা, ক্যাস্টর অয়েল, বাদাম ও জলপাইয়ের তেল, পেঁয়াজের রস নতুন চুল গজানো ও চুল পড়া রোধে প্রকৃতির অনন্য সব আশীর্বাদ।

নিজের যত্নে সচেতন হোন, সুন্দরভাবে বাঁচুন।

ফিচার ইমেজ- obatantibiotik.com

Related Articles