Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পুরুষবিদ্বেষ বা মিস্যান্ড্রি: কী এবং কেন?

কল্পচিত্র- এক

বিয়ের ব্যাপারে চরম অনাগ্রহী ফারজানা। অফিসে সহকর্মীদের বিবাহিত জীবনের গল্পে তাকে কালেভদ্রে পাওয়া যায়, আর সবসময়ই বিরক্তিসূচক প্রতিক্রিয়া দেন ফারজানা। তবে লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, ফারজানার বিরক্তির সবটা জুড়েই থাকে বর মশাইটি! অর্থাৎ দম্পতির পুরুষ সদস্যের প্রতিই তার যত বিতৃষ্ণা, বিরূপ মনোভাব। সবকিছুতে পুরুষ জাতটাকে শাপ-শাপান্ত না করলে তার শান্তি হয় না।

কল্পচিত্র- দুই

ওদিকে মায়াকে নিয়ে তার পরিবারের মানুষজন ভীষণ বিপাকে পড়ে আছে। মায়ার কথাবার্তা, আচরণে সর্বদা ছেলেদের প্রতি কটাক্ষ স্পষ্ট থাকে! একই কাজে কোনো মেয়ে ভুল করলে মায়ার কাছ থেকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো ছেলে যদি ঐ কাজে সামান্য ভুল করে বসে, মায়া তাকে কথা শোনাতে ছাড়বেই না! এই আচরণের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না মায়ার ঘরের মানুষেরা। কিন্তু তারা বুঝতে চাচ্ছে, মেয়ের সমস্যাটা ঠিক কোথায়। কেন এমন আচরণ তার ছেলেদের প্রতি?

কল্পচিত্র- তিন

নীরা সদ্য বিবাহিত। পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছে তার। নীরার বর নীরাকে বুঝে উঠতে পারছে না। কেন কথায় কথায় নীরা তাকে কটাক্ষ করছে, তার কাজকে নিজের কাজের তুলনায় তুচ্ছজ্ঞান করছে, কোনো প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না! বেচারা বর হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে নতুন বৌয়ের হাবভাব বুঝতে।

পুরুষজাতির প্রতি নারীর এই বিরূপ মনোভাব, ঘৃণা, তীব্র নেতিবাচকতা, এগুলো কি খুব স্বাভাবিক বিষয়?

পুরুষবিদ্বেষ বা মিস্যান্ড্রি

উপরের কল্পচিত্রগুলোর পেছনে কারণটা অহেতুক ভালো না লাগা নয়। আরেকটু বেশি কিছু। আর সেটা হতে পারে পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ , যা চরম অপছন্দ অথবা ঘৃণার সম পর্যায়ের।

পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ, কেন? Source: YouTube

পুরুষজাতির উপর বিদ্বেষ, ব্যাপারটা ঠিক কী? সেটা জানার আগে মনে করিয়ে দেয়া যাক, বিপরীতে আরেকটা ব্যাপার রয়েছে ‘নারীবিদ্বেষ’ বলে, আর এটা বেশ জানাশোনা একটা ব্যাপার। নারীবিদ্বেষী বা নারীর প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে আলোচনার খাতা যতটা পরিপূর্ণ, উল্টোটা সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বলতে হয়।

সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদনে এই ঘৃণার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার মধ্য থেকে কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো। ভিনদেশ বা ভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে হলেও এই কারণগুলো বেশ জোরদার, যা পুরুষবিদ্বেষের বিষয়টাকে বুঝতে সাহায্য করবে।

ক্রিয়ার ফল প্রতিক্রিয়া

বাস্তবিকভাবে এটা বলা হচ্ছে যে নারীবিদ্বেষ তার বিপরীতে পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ জন্ম দেয়। বিষয়টা অনেকটা নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো। আপনি আপনার কাজের সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া অবশ্যই পাবেন। আর তাই আপনার আচরণে যদি নারীবিদ্বেষ থাকে, তবে সেটা আর কারো মনে আপনার প্রতি বিদ্বেষ জন্মাতে যথেষ্ট। হতে পারে আপনার খুব কাছের একজন নারীও ধীরে ধীরে আপনার প্রতি অতিরিক্ত বিরূপ মনোভাব পুষতে আরম্ভ করেছে এবং সেটা তার মনে অন্যান্য পুরুষের জন্যও ঘৃণার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বড় একটা কারণ, যেকোনো বাজে অনুভূতির পেছনেই এটা বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া সবচেয়ে বড় যে ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া এটি হতে পারে, ক্রমশ নারীকে গৃহবাসী করে ফেলা, নারীকে মনোরঞ্জনের বস্তু হিসেবে দেখা ও উপস্থাপন করা, নারীর মানবসত্তাকে দীর্ঘদিন পাথরচাপা করে রাখা ইত্যাদি তার মনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে, সেগুলো হয়তো একটা সময় তীব্র পুরুষবিদ্বেষে রূপ নেয়।

নারীবিদ্বেষ ও পুরুষবিদ্বেষ, ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া! Source: peppychunk.com

ইতিহাসের পাঠগ্রহণ

আমরা ইতিহাস পড়ি, জানি, একই তথ্য গ্রহণ করি কিন্তু সেটার অন্তর্নিহিত পাঠ? মানুষভেদে সে পাঠ পাল্টায় বটে। কারো কাছে ওসামা বিন লাদেন বীর, কারো কাছে সন্ত্রাসী। হিটলারের বেলায়ও একই কথা খাটে, তাকে অপছন্দ করা বহু মানুষের বিপরীতে পছন্দ করা মানুষও আছে পৃথিবীতে। বিশ্বের যুদ্ধবিগ্রহের যত ইতিহাস, তার বেশিরভাগেই খলচরিত্র পুরুষের। আর এটা খুব বড় একটা কারণ হতে পারে অনেক নারীর মনে পুরুষের প্রতি ঘৃণা জন্মানোর। অথচ, খলনায়কদের ভিড়ে বীরদের সংখ্যাও এখানে অনেক! কিন্তু অনেকেই খারাপটাকে যতটা গভীরভাবে অনুভব করে, মনে রাখে বা নিজের ভেতর ধরে রাখে, ভালোটাকে সেভাবে মনে রাখে না। পুরুষদের প্রতি বিরূপ মনোভাব হবার পেছনে এই আচরণকেও কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এখানে।

সমসাময়িক অরাজকতা

সমসাময়িক দুর্ঘটনা নির্দিষ্ট সময় নির্দেশ করে দেখানো হয়েছে যে ঘটমান সিংহভাগ হত্যাকাণ্ড, অরাজকতা পুরুষদের দ্বারা সংঘটিত হয়। এফবিআই এর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়ও পুরুষজাতির সরব উপস্থিতি। পুরুষবিদ্বেষের সূত্রপাত ঘটাতে এসব বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু, অনেকটা ক্ষার ও ক্ষারকের চিরচেনা সেই বাক্যের মতো এটাও সত্য যে, সব হত্যাকারী পুরুষ হতে পারে কিন্তু তাতে সব পুরুষ  হত্যাকারী হয়ে যাচ্ছে না!

অরাজকতায় পুরুষের সম্পৃক্ততা বেশি; Source: NPR

ব্যক্তিজীবনের তিক্ততা

যেটা নারীবিদ্বেষী হবার পেছনেও বড় একটা কারণ, ব্যক্তিজীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা, সেটাই পুরুষবিদ্বেষী হবার জন্য বড় কারণ বটে। একজন নারী যদি ব্যক্তিজীবনে পুরুষের দ্বারা বাজেভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে, শারীরিক এবং মানসিকভাবেও, সে পরবর্তীতে পুরুষবিদ্বেষী হতেই পারে। ভালোবাসার মানুষটা, নিকটাত্মীয়, সহকর্মী কিংবা যেকোনো অচেনা পুরুষ, একজন নারী যে কারো দ্বারাই তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হতে পারে। এবং তারপর তার কাছে সমগ্র পুরুষ জাতিই মন্দ হয়ে যায়! এখানে বিষয়টা এরকম, দোষ একজনই করছে, কিন্তু তার ফলস্বরূপ ঐ জাতির সবাই নারীর কাছে দোষী হয়ে থাকলো।

ব্যক্তিগত তিক্ততা বাজে অনুভূতির জন্ম দেয়; Source: Dear Georgiana

সাইকোলজি টুডের একটি প্রতিবেদনে একজন নারীবিদ্বেষীর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছিলো, তার আলোকে বিপরীতভাবে পুরুষবিদ্বেষীর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে আরেকটি প্রতিবেদনে

পুরুষ অপছন্দ করা একজন নারী প্রাথমিকভাবে কোনো পুরুষের প্রতি মোহনীয় আচরণ করতে পারে। সে চাইতে পারে পুরুষটি তার প্রতি আকৃষ্ট হোক এবং তার অধীনস্থ হয়ে পড়ুক। এবং তারপর ধীরে ধীরে ঐ নারী নিজের কর্তৃত্ব ফলাতে থাকবে, সে প্রায় সবকিছুতেই তার সঙ্গীকে শাসন করার মনোভাব দেখাবে। সঙ্গীকে অসম্মান করার মতো ভাষাও ব্যবহার করবে যখন ইচ্ছা।

পুরুষকে দেয়া কথা রাখার ব্যাপারে এমন একজন নারী উদাসীন থাকবে। এবং তাতেও সে পুরুষকেই দায়বদ্ধ রাখার চেষ্টা করবে। বিষয়টা হাস্যকর বটে! এমন নারী নিজের পুরুষ সঙ্গীকে দেখা করার জন্য অযথা অপেক্ষা করাবে এবং আগে থেকে ঠিক করে রাখা পরিকল্পনা বাতিলও করবে, হতে পারে একদম শেষ মুহূর্তে। এইসব আচরণের পেছনে কারণ সেটাই, পুরুষকে অপদস্থ করা। একজন পুরুষবিদ্বেষী নারীর ভেতরে এই জিনিসগুলো থাকা বেশ স্বাভাবিক।

পুরুষকে অপদস্থ করাই যখন উদ্দেশ্য; Source: Human Resources Online

অপ্রাসঙ্গিক পরিস্থিতিতেও একজন পুরুষবিদ্বেষী নারী নিজেকে কোনো পুরুষের কাছে অরক্ষিত, বিপদগ্রস্ত মনে করবে। এবং সেটা সে প্রকাশ করতেও পারে। কর্মক্ষেত্রে একজন পুরুষকর্মীকে সমতার নজরে দেখাটা তার কাছে স্বাভাবিক হবে না। পুরুষকে মাত্রাতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয়াটা বরং অতি সাধারণ তার কাছে। প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে এরকম একজন নারী নিজের অধীনস্ত পুরুষকর্মীদের অধিক শাসনে রাখতে পছন্দ করবে, তাদের জরুরি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় রাখতে চাইবে না।

পুরুষসঙ্গী যদি তাকে একভাবে দখে, সে তার বিপরীতটা চাইবে। অধিক মনোযোগ দেখালে সে চাইবে সেটা কম হোক, আর পুরুষ কম মনোযোগী হলে সেটাকেই ঢাল বানাবে পুরুষের বিপক্ষে। অর্থাৎ সবকিছুতে পুরুষের বিরুদ্ধাচরণ করাই তার উদ্দেশ্য হবে। পুরুষের বিরোধিতা করাটা ধীরে ধীরে এমন নারীর অভ্যাসে পরিণত হবে এবং এই কাজটি সে উপভোগ করবে।

পুরুষকে অকারণে ‘মেয়েলি’ বলে তাচ্ছিল্য করা, পুরুষের আবেগ দেখানোর স্বভাবকে বিচ্ছিরি বলে অভিহিত করা, একজন পুরুষ ঘরোয়া স্বভাবের হলে তাকে হাসিঠাট্টা করা এসবই পুরুষবিদ্বেষের লক্ষণ। নারীবিদ্বেষীর মতোই পুরুষবিদ্বেষীর সংখ্যাও নিতান্তই কম নয়। খুঁজে দেখলে আশেপাশেই দেখা মিলতে পারে এ স্বভাবের কোনো নারীর, পুরুষরা যার লক্ষ্যে থাকে নিগ্রহ করার বিষয় হিসেবে। এবং বলাই বাহুল্য, বিদ্বেষের এই জিনিসখানা সর্বক্ষেত্রেই খারাপ, হোক তা নারীর প্রতি আর হোক, আর তা পুরুষের প্রতি।

ফিচার ইমেজ: Pinterest

Related Articles