Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেনে নিন নানারকম মাংসের পুষ্টিগুণ

ইতোমধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মুসলমানরা কোরবানি করেছেন। কোরবানির পর মাংস গরীব-দুঃখী মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ধর্মীয় বিধি পালনের পাশাপাশি তারা লাভ করেছেন ত্যাগের আনন্দের অনুভূতি ।

মানুষের ঘরে ঘরে এই ঈদে অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় খাওয়া-দাওয়া। ঈদের আনন্দ ভিন্ন মাত্রা পায় মাংসের বাহারী সব রান্নায়। মাংসের নানারকম সুস্বাদু এবং জিভে জল এনে দেওয়া লোভনীয় ব্যঞ্জনে বিভোর থাকতেই কেটে যায় ঈদ পরবর্তী ক’টা দিন। এই সময় আমাদের অনেকেরই মাথায় থাকে না খাবারের পুষ্টিগুণ কিংবা অতিরিক্ত খাওয়ার অপকারিতার কথা। ঘরে বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় বিচিত্র চেহারা আর স্বাদের মাংসের ভিড়ে আমাদের মনেই থাকে না কোন মাংসটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, আর কোনটি ক্ষতিকর; কোনটি বেশি উপকারী, কোনটি কম উপকারী।

তাজা মাংস; source: youronestophalalshop.com

মাংস রাসায়নিকভাবে প্রোটিন, চর্বি, বিপুল পরিমাণ পানি নিয়ে গঠিত। প্রাপ্তবয়স্ক কোনো স্তন্যপায়ী জীবের মাংসে সাধারণত ৭৫ শতাংশ পানি, ১৯ শতাংশ প্রোটিন, ২.৫ শতাংশ চর্বি, ১.২ শতাংশ শর্করা এবং ২.৩ শতাংশ এমিনো এসিড সহ অন্যান্য নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। মাংসে বিদ্যমান প্রধান দুটি পেশী প্রোটিন হচ্ছে- এক্টিন ও মায়োসিন। এছাড়া আছে কোলাজেন এবং ইলাস্টিন নামক প্রোটিন।

মাংসকে মোটা দাগে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- রেড ও হোয়াইট মিট। মাংসে মায়োগ্লোবিনের (এক ধরনের প্রোটিন) উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মূলত এই শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। যেসব মাংসে মায়োগ্লোবিন বেশি থাকে, সেসব মাংসের মায়োগ্লোবিন বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে লাল অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে, ফলে মাংসটি লালচে বর্ণ ধারণ করে। এজন্যই এদের রেড মিট বলা হয়। গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি সব স্তন্যপায়ীর মাংসই রেড মিট। মুরগীর মাংস হচ্ছে হোয়াইট মিট। ঈদে যেহেতু স্তন্যপায়ী প্রাণীই কোরবানি করা হয়, তাই আমাদের আলোচনায় রেড মিটই থাকছে।

গরুর মাংস

গরুর মাংসের স্বাদ আর ঘ্রাণ দুটোই অতুলনীয়। উপলক্ষ্য যখন কোরবানির ঈদ, তখন গরুর মাংসের আবেদন যেন আরও বেশি বেড়ে যায়। গরুর মাংস খাওয়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়তে চান না কেউই।

কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও গরুর মাংস আসলেই খুব স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে ২১৭ ক্যালরি শক্তি। পাতলা স্লাইসের গরুর মাংসে আমিষের পরিমাণ ২৬-২৭ শতাংশ। গরুর মাংস প্রাণীজ আমিষের সমৃদ্ধ উৎস। এতে ৮টি প্রয়োজনীয় এমিনো এসিডের প্রত্যেকটিই থাকে, যা দেহের বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশ কিছু বিষয়ের উপর নিভর করে। যেমন- গরুর বয়স, লিঙ্গ, কেমন খাবার খাওয়ানো হয়েছে প্রভৃতি। মাংসে চর্বির উপস্থিতি মাংসের ঘ্রাণ আনার সাথে সাথে ক্যালরির পরিমাণও বাড়ায়। চর্বি কম থাকলে সেই মাংসকে বলা হয় Lean Meat। সাধারণ মাংসে চর্বি যেখানে থাকে প্রায় ১৬ ভাগ, সেখানে এই লিন মিটে চর্বি থাকে মাত্র ৫-১০ ভাগ।

রান্না করা গরুর মাংস; source: pinterest.com

গরুর মাংসে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ প্রায় সমান সমান থাকে। এতে উপস্থিত ফ্যাটি এসিডের মধ্যে রয়েছে স্টিয়ারিক এসিড, ওলিক এসিড ও পামিটিক এসিড। গরুর মাংসে ট্রান্স ফ্যাটও রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কনজুগেটেড লিনোলেয়িক এসিড। এই ফ্যাটি এসিডটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত চর্বি খাওয়া সবসময়ই খারাপ। এতে বিপাকীয় বিপর্যয়ে পড়তে হতে পারে আপনাকে।

গরুর মাংস খনিজ লবণের চমৎকার উৎস। এতে রয়েছে জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং বিপুল পরিমাণ লৌহ। গরুর মাংস গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনেরও উৎস। ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ প্রভৃতি ভিটামিনের সরবরাহ পেতে পারেন গরুর মাংস থেকে।

ভাবছেন, এতকিছু বলা হলো গরুর মাংস নিয়ে, কিন্তু যে কোলেস্টেরলের জন্য বিখ্যাত এটি, সেটা গেল কই! হ্যাঁ, গরুর মাংসে কোলেস্টেরল থাকে। আপনি যদি ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত কোলস্টেরলের বদান্যতায় ফ্যাটি লিভারের শিকার না হয়ে থাকেন, তাহলে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। খাবারের মাধ্যমে এই কোলেস্টেরল গ্রহণ করা হয় বলে এটি শরীরে তেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে না।

গরুর মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমন ধারণার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, রেড মিট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তবে সেটা প্রক্রিয়াজাতকৃত হলে। তাজা মাংস খেলে এই ঝুঁকি একটু হলেও কম থাকে। আবার কোনো কোনো গবেষণায় গরুর মাংস খাওয়ার সাথে হৃদরোগের সম্পৃক্ততার তেমন জোরালো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে চর্বিযুক্ত গরুর মাংস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়, আর কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে বিপদ ঘটতেই পারে। সব মিলিয়ে বলা যায়, গরুর মাংস খেতে পারেন, তবে চর্বি থেকে দূরে থাকুন।

ছাগলের মাংস

রান্না করা ছাগলের মাংস; source: foodgawker.com

ছাগলের মাংসে গরুর মাংসের তুলনায় কিছুটা কড়া ঘ্রাণের কারণে স্বাদে একটু পিছিয়ে থাকলেও পিছিয়ে নেই পুষ্টিগুণে। বরং গরুর মাংসের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ছাগলের মাংস। ছাগলের মাংসে গরুর মাংসের তুলনায় ক্যালরি, সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকটাই কম হওয়ায়, তেমন কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই এর। তাই আপনি ইচ্ছেমতো ছাগলের মাংস খেতে পারেন। ছাগলের মাংসে চর্বি এমনিতে কম হওয়ায় পাতলা স্লাইস করে লিন মাংস বানাতে হয় না। সম্পৃক্ত চর্বি কম বলে রক্তে এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে আপনাকে বিপদে ফেলতেও পারবে না। এছাড়া ছাগলের মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে, পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এই গুণটি খাদ্য হিসেবে ছাগলের মাংসের স্বাস্থ্য উপকারিতা বাড়িয়ে দিয়েছে ।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে থাকে ১২২ ক্যালরি শক্তি, ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ২.৫৮ গ্রাম চর্বি। এছাড়া রয়েছে উচ্চমাত্রার লৌহ, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

ভেড়ার মাংস

ভেড়ার মাংসের কারি; source: foodtolove.com.au

ভেড়ার মাংস উচ্চমাত্রার ক্যালরি সমৃদ্ধ উন্নতমানের আমিষ জাতীয় খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম ভেড়ার মাংসে থাকে ২৫৮ ক্যালরি শক্তি। রান্না করা পাতলা টুকরোর ভেড়ার মাংসে ২৫-২৬ শতাংশ আমিষ থাকতে পারে। ভেড়ার মাংসে চর্বির পরিমাণ গরুর মাংসের চেয়েও বেশি, ১৭-২১ শতাংশ। সম্পৃক্ত চর্বির আশঙ্কাজনক মাত্রার ফলে ভেড়ার মাংস হার্ট এটাক, স্ট্রোক, হাইপারটেনশন প্রভৃতি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ আর ভিটামিনের উপস্থিতিও ভেড়ার মাংসে লক্ষ্যণীয়

উটের মাংস

উটের মাংস; source: mimzmart.com

উটের মাংস যেকোনো মাংসের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ। ঘন সন্নিবেশিত যোজক কলার মাঝখানে শক্ত আঁশের আমিষ নিয়ে গঠিত উটের মাংসে সম্পৃক্ত চর্বি গরু বা ভেড়ার মাংসের তুলনায় একেবারেই কম থাকে। তবে এতে অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি পরিমাণে থাকে বলে, এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। ভিটামিন সি, ডি, লৌহ এবং অন্যান্য খনিজ লবণের চমৎকার উৎস হিসেবে উটের মাংস খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীই হবে বলা যায়।

মহিষের মাংস

মহিষের মাংসের স্টেক; source: fullcirclebisonranch.com

পরিমিত পরিমাণের ক্যালরি ও কোলেস্টেরল এবং উচ্চমাত্রার ভিটামিন ও খনিজ লবণ নিয়ে গঠিত মহিষের মাংস সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের মাংসে ১৪০ ক্যালরি শক্তি থাকে। চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ অবিশ্বাস্য কম হওয়ায় নির্দ্বিধায় আপনি মহিষের মাংস খেতে পারেন।

যে মাংসই খান না কেন, রান্নার প্রকিয়াটি হওয়া চাই স্বাস্থ্যকর। খুব বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে মাংসের পুষ্টিগুণ তো নষ্ট হবেই, সাথে সাথে উড়ে এসে জুড়ে বসবে কিছু বিষাক্ত, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। তাই রান্না করতে হবে অল্প আঁচে, ধীরে ধীরে। অতিরিক্ত রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলুন।

স্বাস্থ্যকর রান্না আর একটু সচেতনতাই পারে ঈদের এই আনন্দঘন সময়ে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে। পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবারের আয়োজনে আপনাদের ঈদ হোক আনন্দময়।

ফিচার ইমেজ- taste.com.au

Related Articles