Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেকোনো মানুষের পক্ষে কি ব্যাটম্যান হয়ে ওঠা সম্ভব?

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একজন হিরো রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত আমাদের কাজে-কর্মে, চলাফেরায় প্রভাব বিস্তার করে। আমরা তাদের অনুকরণ করতে ভালোবাসি। অনুসরণ করার মাধ্যমে তাদের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় সুপার-হিরো? তাহলে হয়তো আমরা এমন কাউকে বেছে নেবো যার কোনো সুপার-পাওয়ার নেই। স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তিটি ব্রুস ওয়েন, অর্থাৎ ব্যাটম্যানের মতো কেউ হবে! কিংবা স্বয়ং ব্যাটম্যানই হবে! এবং স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, কিছুটা হলেও এই কিংবদন্তীর মতো হয়ে ওঠার সুযোগ সাধারণ মানুষের রয়েছে।

‘দ্য ডার্ক নাইট’ মুভিতে ব্যাটম্যান হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান বেল; Image Source: Warner Bros Production 

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ব্যাটম্যানের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং সামর্থ্যের ব্যাপারে।

ব্যাটম্যানের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও সামর্থ্য

ম্যাথিও কে. ম্যানিংয়ের ‘দ্য ব্যাটম্যান ফাইলস’ বইয়ের কল্যাণে আমরা ব্যাটম্যানের ক্রস-মোডাল ট্রেনিঙয়ের প্রতি আগ্রহের কথা জানি। যা বডি-ওয়েট জিমনাস্টিক ট্রেনিং, অলিম্পিক ওয়েট লিফটিং, ম্যারাথন দূরত্বের দৌড়, হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং (HIIT) সহ ট্র্যাডিশনাল ওয়েট লিফটিং পর্যন্ত ছাড়িয়েছে।

‘ব্যাটম্যান বনাম সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস’ মুভিতে ব্রুস ওয়েন হিসেবে ট্রেনিংরত বেন অ্যাফ্লেক; Image Source: Warner Bros Production  

ব্যাটম্যান অসংখ্য মার্শাল আর্টে পারদর্শী। কারো কারো মতে, তিনি সব রকমের মার্শাল আর্টের যেকোনো ফর্ম, যেকোনো স্টাইলের ব্যাপারে বিজ্ঞ। যদিও পৃথিবীব্যাপী কারাতে, কুংফু, জিউ-জিতসুসহ জানা-অজানা অসংখ্য মার্শাল আর্ট ফর্ম, স্টাইল রয়েছে। সেগুলোর সাব-ফর্ম, সাব-স্টাইলও অসংখ্য। শুধুমাত্র কারাতে থেকেই শিতো-রিও, শোতোকান-রিও, গোজো-রিও, ওয়াদো-রিও, উচি-রিও, শোরিন-রিওসহ অসংখ্য স্বীকৃত স্টাইল জন্ম নিয়েছে। এছাড়াও দিন দিন ক্রাভ মাগা, জিৎ কুন দু, কেইসি’র মতো মডার্ন মার্শাল আর্টও পুরনোগুলোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এমনকি ক্রিস্টোফার নোলানের ‘দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি‘তে কেইসি ফাইটিং মেথড ব্যবহার করা হয়।

ব্যাটম্যান অসংখ্য মার্শাল আর্ট নিয়মিত অনুশীলন করেন এবং সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে সবচাইতে কার্যকরী মার্শাল আর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম; Image Source: DC Comics

অর্থাৎ, আমাদের ধরেই নিতে হবে ব্যাটম্যান অসংখ্য মার্শাল আর্ট নিয়মিত অনুশীলন করেন এবং সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে সবচাইতে কার্যকরী মার্শাল আর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।

পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত করে, কিংবা বেশ কয়েকটি মার্শাল আর্টে পারদর্শী হয়ে হয়তো কিছুটা হলেও ব্যাটম্যানের মতো শক্তিশালী, মারামারিতে ওস্তাদ হয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু তিনি তার চাইতেও বেশি কিছু।

তিনি তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি, চারিত্রিক ধীরতার বদৌলতে এমন একজন হয়ে উঠেছেন, যিনি এলিয়েন, ঐশ্বরিক শক্তিমত্তার অধিকারীদের পক্ষে লড়েন, তাদের বিরুদ্ধে লড়েন। মানুষটি কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, বায়োলজি, দর্শন, অ্যানাটমি, সাইকোলজি, ম্যাথমেটিকস, মিথোলজি, হিস্টোরি এবং জিওগ্রাফির মতো নানা বিষয়ে পারদর্শী। শার্লক হোমসের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন মেকানিক, প্রযুক্তিবিদ, ক্রিমিনোলজিস্ট, ক্লাইম্বার, যুদ্ধাস্ত্রের কারিগর, সফল মার্ক্সম্যান, বহুভাষাবিদ, হ্যাকার, কৌশলী, স্কাউট এবং শ্রেষ্ঠ গুপ্তচর। তাছাড়াও তার উন্নত বোধশক্তি, পরিস্থিতিগত সচেতনতা, নিজের মনস্তত্ত্বের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ তাকে অনন্য করে তুলেছে।

কল্পকাহিনীতে শার্লক হোমসের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা হিসেবে ব্যাটম্যানকে অবহিত করা হয়ে থাকে; Image Source: DC Comics

কমিকে তাকে ‘পিক হিউম্যান’ বা এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, যিনি মানুষের সক্ষমতার সবচাইতে উঁচু শৃঙ্গে পৌঁছে গিয়েছেন। অর্থাৎ, ব্যাটম্যানই একমাত্র সুপার-হিউম্যানের কাল্পনিক প্রতিকৃতি, যাকে অনুকরণ করার মাধ্যমে রেডিওএক্টিভ মাকড়সার কামড় না খেয়েও কিছুটা হলেও সুপার-পাওয়ারের অধিকারী হওয়া সম্ভব।

কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে ব্যাটম্যানের মতো কতটুকু দক্ষ, পারদর্শী হওয়া সম্ভব? কীভাবেই বা সম্ভব?

ব্যাটম্যান হতে হলে যা প্রয়োজন

ব্যাটম্যানের মতো পলিম্যাথ বা বহুবিদ্দ্যাজ্ঞ হতে হলে আপনাকে অসাধারণদের চাইতেও বেশি পরিশ্রম করার পাশাপাশি আরো বেশি কৌশলী হতে হবে। নানা বিষয়ে অতিরিক্ত সময় বিনিয়োগের পাশাপাশি দ্রুত শেখার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কিন্তু সেগুলো ব্রুস ওয়েন, অর্থাৎ সত্যিকারের ব্যাটম্যান কীভাবে করতেন? আপনিই বা কীভাবে করবেন?

পর্যাপ্ত সময় তৈরি করে নেওয়া

ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য ইমাজিনারি অ্যাক্সিস’ ব্যাটম্যানের অরিজিনের উপর করা এক ভিডিওতে, ব্যাটম্যানের ‘উবারম্যান স্লিপ শিডিউল’য়ের ব্যাপারে বর্ণনা করেন। সেখানে দেখানো হয় ব্যাটম্যান কীভাবে ‘পলিফ্যাজিক স্লিপ সাইকেল’ বজায় রেখে ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে নিজের কাজে জন্য সময় তৈরি করে নেন।

অর্থাৎ, আমাদের সুপার-হিরো, সত্যিকারের ব্যাটম্যান একেবারে ছয় থেকে আট ঘণ্টা একটানা না ঘুমিয়ে, পুরো দিনে চার থেকে ছয়বার মাত্র ৩০ মিনিট করে দুই থেকে তিন ঘণ্টার ন্যাপ নেন। যদিও অনেকে মনে করেন, পলিফ্যাজিক স্লিপ মেথড একটানা ঘুমানোর মতোই কার্যকর। কিন্তু নানা গবেষণার কল্যাণে আমরা জানি, এই পরিমাণ ঘুম যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সময় কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন এই অপর্যাপ্ত ঘুমের মহড়া চলতে থাকলে হৃদরোগ, স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ব্যাটম্যান ঘুমান না। তিনি ধ্যানে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; Image Source: DC Comics

কিন্তু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া করা ব্যাটম্যানের জন্য সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাকে রোগে-শোকে ভোগাও চলবে না। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, ব্যাটম্যানের ঘুমের প্রয়োজন কম। সেক্ষেত্রে যুক্তি সংগত কারণ হতে পারে, তিনি ঘুমের প্রয়োজন কমিয়ে আনার জন্য ‘মোডাফিনিল’য়ের মতো নটরোফিক ড্রাগ ব্যবহার করেন। নয়তো, ভাগ্যক্রমে তার শরীরে ‘ডিইসি-২‘য়ের মতো জিনের প্রভাব রয়েছে, যা বহুলাংশে মানুষের ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ব্রুস ওয়েন উত্তরাধিকারসূত্রে ‘ওয়েন ইন্ট্রারপ্রাইজ‘য়ের মালিক হওয়ায় দরুন অনেক সম্পত্তি, টাকা-পয়সার মালিক। বিলাসিতার মধ্যে বসবাস করেন। সে কারণে চাকরি, ব্যবসায় সময় দিতে হয় না। পুরো সময়টাই উনি ব্যাটম্যান হয়ে ওঠার কাজে বিনিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে নানা জিনিস শেখার কাজে অতিরিক্ত সময় তৈরি করে নেওয়ার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে অনেক সম্পত্তির মালিক না হতে হলেও, আপনাকে এক বা একাধিক প্যাসিভ ইনকামের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। 

অন্যদিকে, অতিরিক্ত সময় বিনিয়োগ করতে হয়, এমন সম্পর্ক, অভ্যাস, শখগুলোকেও হয়তো সে সময় বিসর্জন দিতে হতে পারে।

দ্রুত শেখার দক্ষতা অর্জন

এখন আপনি নানা জিনিস শেখার পাশাপাশি বডি বিল্ডিং, মার্শাল আর্টে পারদর্শী হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় তৈরি করে নিয়েছে। কিন্তু, তবুও নানা জিনিসে দক্ষতা অর্জনের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। কানাডিয়ান জার্নালিস্ট ম্যালকম গ্লাডওয়েলের বই ‘আউটলায়ার: দ্য স্টোরি অফ সাক্সেস’য়ে উল্লেখিত ‘দশ হাজার ঘণ্টা নীতি’ অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে দক্ষ হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন দশ হাজার ঘণ্টা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, এই নীতি অনুযায়ী, সপ্তাহে যদি আপনি ২০ ঘণ্টা করেও বিনিয়োগ করেন, তাহলে প্রায় দশ বছর লাগবে ঐ একটি বিষয়ে দক্ষ হতে। যদিও অনেক গবেষক মনে করেন, শুধু এই দীর্ঘ সময়ের অনুশীলন কোনো বিষয়ে আপনাকে সুদক্ষ করে তুলবে না। অন্যদিকে আপনি হয়তো অনেকের তুলনায় আরো কম সময়ে নানা জিনিস শিখতে পারেন। কিন্তু ব্যাটম্যানের মতো সর্ব কাজে কাজী হওয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

দ্য ফাইনম্যান টেকনিক; Image Source: Farnam Street

এক্ষেত্রে অল্প সময়ে নানা জিনিসে দক্ষ হওয়ার জন্য অ্যাকসেলারেটেড লার্নিং স্ট্র্যাটেজিগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের ‘দ্য ফাইনম্যান টেকনিক’য়ের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেখানে তিনি কোন জিনিস শেখার জন্য চারটি কৌশল বাৎলে দিয়েছেন। ফাইনম্যান মনে করতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত একটি বিষয়ে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ঐ বিষয়টি একেবারে আনাড়ী কাউকে বুঝাতে না পারছেন। অন্যদিকে টিম ফ্যারিসের ডিএসথ্রি লার্নিং স্ট্র্যাটেজিও দ্রুত কোনো জিনিস শিখতে সাহায্য করতে পারে।

আমাদের সত্যিকারের ব্যাটম্যান কোনো বিষয়ে দ্রুত ও সম্যক ধারণা পেতে এবং সেগুলো মনে রাখতে মাঝে মাঝেই স্পিড-রিডিংয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের মেমোরি-টেকনিক ব্যবহার করে থাকতেন।

কোনো বিষয়ে দ্রুত ও সম্যক ধারণা পেতে ব্যাটম্যান স্পিড-রিডিং টেকনিক ব্যবহার করেন; Image Source: chrisspeck.wordpress.com 

ব্যাটম্যান অরিজিনের কিছু কিছু সংস্করণে দেখা যায়, অনুসন্ধানে সাহায্য করবে এমন সব নির্দিষ্ট বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভের জন্য ইউরোপ জুড়ে অবস্থিত নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণও করেছেন। বর্তমানে অবশ্য ইন্টারনেটের সাহায্যে যেকোনো বিষয়ের উপর যথেষ্ট রিসোর্স সংগ্রহ করা যায়, নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে উপস্থিত থাকা যায়। অর্থাৎ, এদিক দিয়ে ব্যাটম্যানের চেয়েও কোনো জিনিসের ব্যাপারে আরো দ্রুত জ্ঞান লাভের সুযোগ আপনার রয়েছে।

এছাড়া ‘ব্রেইন প্লাস্টিসিটি’ বা মস্তিষ্কের প্লাস্টিকত্ব বাড়িয়ে নিয়েও মস্তিষ্ককে নানা জিনিস শেখার কাজে আরো বেশি উপযোগী করে তোলা সম্ভব।

সাধারণভাবে বলতে, যেকোনো পরিবর্তনে মস্তিষ্কের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই ব্রেইন প্লাস্টিসিটি। আমরা যখন কোনো নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করি, কোনো নতুন অভ্যাস গড়ে তুলার চেষ্টা করি, তখনই আমাদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক উপাদানের ক্ষরণ হয় এবং মস্তিষ্কে সাময়িক পরিবর্তন সাধিত করে। এবং বারবার ঐ একই জিনিস করার ফলে সেটি স্থায়ীভাবে মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনে, মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে; অর্থাৎ, মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্ককে আরো বেশি উপযোগী করে তোলে।

আমরা চাইলেই মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্ককে আরো বেশি উপযোগী করে তুলতে পারি; Image Source: Be Brain Fit

নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় শেখা, শারীরিক কসরত, পুষ্টিকর খাবার, মেডিটেশন মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়া, ম্যাগনেসিয়াম থ্রেওনেটসহ নানা ধরনের সাপ্লিমেন্ট ও নটরোপিক্স ব্যবহার করেও ব্রেইন প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি সম্ভব।

এ পর্যায়ে এসে আপনি নানা বিষয় শেখার জন্য যথেষ্ট সময় তৈরি করে নিয়েছেন। মার্শাল আর্ট শেখা, জিমে যাওয়াসহ পুরো সময়টা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শেখার জন্য বিনিয়োগ করছেন। আপনি এটাও জানেন, কীভাবে আপনি আপনার দ্রুত শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। এখন জানা যাক, ব্যাটম্যানের শারীরিক সক্ষমতাগুলোর ব্যাপারে।

শারীরিক সক্ষমতা

অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি ব্যাটম্যান চরিত্রটির সবচাইতে বড় অংশ হচ্ছে তার শারীরিক সক্ষমতা। তার শক্তিমত্তা, গতি এবং এনডুরেন্স। আর এজন্য তিনি নিয়মিত নানা ধরনের কঠিন সব শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে যান।

‘দ্য ব্যাটম্যান ফাইলস’ বই অনুসারে ব্যাটম্যানের একদিনের সাধারণ ওয়ার্কআউট রুটিনেই অলিম্পিক লিফটিংয়ের স্যাঞ্চ এবং ক্লিন-জার্ক ছাড়াও ক্যালেসথ্যানিক্স, এনডুরেন্স ট্রেনিং, এমনকি টানা আধঘণ্টা দৌড়ানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। আর এসব ব্যাটম্যানকে করতে হয় ক্রাইম-ফাইট করাসহ পূর্বে উল্লেখিত নানা জিনিস শেখার সময়েই।

‘দ্য ব্যাটম্যান ফাইল’য়ে উল্লেখিত ব্যাটম্যানের কাল্পনিক ওয়ার্ক-আউট রুটিন; Image Source: thebioneer.com

অর্থাৎ, এ ধরনের ওয়ার্কআউট রুটিন যেকোনো মানুষের জন্যই অতিরিক্ত এবং পর্যাপ্ত রিকভারির সুযোগ না থাকার ফলে যে কেউ খুব সহজেই আঘাত পাওয়ার পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাহলে কীভাবে এ ধরনের ট্রেনিং রুটিনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া সম্ভব?

প্রথমত, এব্যাপারে স্টেরয়েড বেশ কাজে আসতে পারে। যদিও কিছু কিছু কমিকে ব্যাটম্যানকে ‘ভ্যানম’ নামক শক্তি-বৃদ্ধিকারী সুপার-স্টেরয়েড ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু ব্যাটম্যান স্টেরয়েডের উপর নির্ভরশীল না। তাছাড়া স্ট্রেংথ-স্টেমিনা বৃদ্ধি, দ্রুত রিকভারিতে সাহায্য করলেও দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেহের স্বাভাবিক স্টেরয়েড নিঃসরণের ছন্দপতন ঘটে। ফলে হঠাৎ স্টেরয়েড ব্যবহার ছেড়ে দিলে দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথাসহ নানা ধরনের প্রাণঘাতী শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাহলে?

কিছু কিছু কমিকে ব্যাটম্যানকে ‘ভেনম’ নামক শক্তি-বৃদ্ধিকারী সুপার-স্টেরয়েড ব্যবহার করতে দেখা যায়; Image Source: DC Comics

বিকামিং ব্যাটম্যান: দ্য পসিবিলিটি অফ সুপার হিরো’ বইয়ে লেখক ই. পাউল জেহর উল্লেখ করেছেন, পর্যাপ্ত রিকভারিসহ অন্যান্য শারীরিক এক্টিভিটি বজায় রাখার জন্য ব্যাটম্যান প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪০০০ ক্যালরি গ্রহণ করেন, যেখানে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে অতিরিক্ত ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করেন।

দ্রুত আরোগ্যলাভের জন্য ব্যাটম্যান লম্বা সময় ধরে আইস-বাথ, অথবা কনট্রাস্ট বাথ থেরাপির সাহায্য নিয়ে থাকেন। পাশাপাশি এনার্জি লেভেল বৃদ্ধির জন্য তিনি নানা ধরনের সাপ্লিমেন্টের শরণাপন্ন হোন।

কমিকে ব্যাটম্যানকে ‘টমো ম্যাডিটেশন’য়ের প্রশিক্ষন নিতে দেখা যায়; Image Source: DC Comics

অন্যদিকে দ্রুত আরোগ্যলাভ তো বটেই, মানসিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য তিনি মেডিটেশন করে থাকেন। কমিকে তাকে ‘টমো মেডিটেশন’য়ের প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যায়। মেডিটেশনের এই পদ্ধতির সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা এবং হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আর মজার বিষয় হচ্ছে, উইম হফ নামের একজন ডাচ অ্যাথলেট এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডার মাঝেও দিব্যি খালি গায়ে বসে থাকাসহ দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস ধরে রাখতে পারেন। শুধুমাত্র শর্টস পরে উত্তর মেরুতে ম্যারাথন দৌড়ের রেকর্ডসহ তার আরো ২৩টি ওয়ার্ল্ড-রেকর্ড রয়েছে। 

উপরোক্ত প্রটোকলগুলো মেনে হয়তো আপনি কিছুটা হলেও ব্যাটম্যানের মতো নানা ধরনের এক্সট্রিম ওয়ার্ক-আউট রুটিনে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম হয়ে উঠতে পারবেন।  

এত বেশি বিসর্জন, উন্মাদনা ছাড়াও কীভাবে ব্যাটম্যান হয়ে ওঠা সম্ভব?

আপনি হয়তো উপরোক্ত ব্যাপারগুলোকে সাধনার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। নিজের শারীরিক, মানসিক সীমা অতিক্রম করে কিছুটা হলেও ব্যাটম্যানের মতো হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু এজন্য আপনাকে আপনার শখ, সম্পর্কসহ পুরো জীবন বিসর্জন দিতে দিতে হতে পারে। শত হলেও, ব্যাটম্যানের মতো আপনি কোনো কমিক ক্যারেক্টার নন। 

ব্যাটম্যানের ট্রেনিং রুটিন যেকোনো মানুষকে মৃত্যুর দিকে ছুড়ে দিতে পারে; Image Source: DC Comics

তাহলে, এত বেশি বিসর্জন, উন্মাদনা ছাড়াও কীভাবে ব্যাটম্যান হয়ে ওঠা সম্ভব?

প্রথমত, আপনাকে অনেক সময় উৎসর্গ করতে হবে। এমন একটি ক্যারিয়ার বেছে নিন, যেখানে অল্প সময় বিনিয়োগ করেও ভালো আয় হয়। অতিরিক্ত সময়গুলো সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি দেখায় ব্যয় না করে কোনো একটি বিষয়ে পড়াশোনা করুন, নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের কাজে লাগান। নানা জিনিস শেখার ব্যাপারে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। এতে আপনার মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি পাবে, নতুন কিছু শেখার কাজটা আরো সহজ হয়ে যাবে।

নিয়মিত মেডিটেশন করুন। মেডিটেশন আপনার ব্রেইন প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক শৃঙ্খলা, প্রশান্তি বৃদ্ধির কাজটিও করবে। তাছাড়া টেস্টোস্টেরনের বৃদ্ধিসহ অ্যাড্রেনাল ফ্যাটিগ, নানা ক্লান্তি দূর করে আরো বেশি মনোযোগী হতে করডিসেপস মাশরুম, লুটেইনের মতো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

জ্যাসন টডের সাথে জিউ-জিৎসু ট্রেনিংকালে ব্রুস ওয়েন; Image Source: DC Comics

কোনো একটি মার্শাল আর্ট শেখায় সময় দিন। প্রাথমিকভাবে মুই থাই, কিক-বক্সিং, ক্যারাতে এবং পরে পার্কোর, জিও-জিৎসু’র মতো মার্শাল আর্টগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিংবা মিক্সড মার্শাল আর্ট হতে পারে আপনার প্রাথমিক পছন্দ। কিছুটা দক্ষ হওয়ার পর আপনি ক্রাভ মাগার মতো মিলিটারি সেলফ ডিফেন্স বেসড মার্শাল আর্টে সময় দিতে পারেন।

বক্সিং, ফেন্সিং, জুডোর মতো মার্শাল আর্টগুলোতেও আপনি সময় দিতে পারেন; Image Source: DC Comics

যেহেতু আপনার পরিকল্পনা ব্যাটম্যানের মতো দ্রুত, শক্তিশালী এবং ফ্লেক্সিবল হয়ে ওঠার, সেহেতু আপনি ক্রস-মোডাল ট্রেনিংগুলো করে যেতে পারেন। ওয়েট লিফটিংয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের ফাংশনাল মুভমেন্ট, স্টেডি স্টেট কার্ডিও, হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং, লং ডিসটেন্স রানিংসহ নানা ধরনের কম্পাউন্ড ওয়ার্ক-আউটগুলো বেশ কাজে আসতে পারে। রক ক্লাইম্বিং, মার্শাল আর্টেও এসব আপনাকে সাহায্য করবে।

ব্যাটম্যানের একক, দৃঢ় মানসিকতাই তাকে যেকোনো বাঁধা অতিক্রম করে সামনে চলার, শত্রুর মোকাবেলা করার, নিজেকে ব্যাটম্যান হিসেবে তৈরি করার প্রেষণা যোগায়; Image Source: pinterest.com

তবে ব্যাটম্যান হয়ে ওঠার জন্য দৃঢ় সংকল্পের পাশাপাশি এমন কিছু প্রয়োজন যা আপনাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি জোগায়। ব্যাটম্যানের একক, দৃঢ় মানসিকতাই তাকে যেকোনো বাঁধা অতিক্রম করে সামনে চলার, শত্রুর মোকাবেলা করার, নিজেকে ব্যাটম্যান হিসেবে তৈরি করার প্রেষণা যোগায়। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তার সুপার-পাওয়ার। কিছুটা হলেও ব্যাটম্যানের মতো হতে চাইলে এই জিনিসগুলো আপনার অবশ্যই প্রয়োজন। 

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন এই বইটি

১) Dark Night: A True Batman Story

This article is in Bangla. It's about the possibilities of becoming Batman. Necessary links are hyperlinked.

Featured Image: hdqwalls.com

Related Articles