Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে গড়ে উঠছে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তকের সংস্কৃতি

‘দত্তক নেওয়া’ কথাটির সাথে বোধহয় সবাই পরিচিত। বাংলাদেশে এর নজির বেশ কম হলেও, সারা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নিঃসন্তান দম্পতিদের মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের স্বাদ আস্বাদন করার উপায় দত্তক বা পোষ্য নেয়া। অনেকে অনূঢ় থেকেও দত্তক নেন। তবে দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে শিশু অথবা খুব বেশি হলে কিশোর বয়সের সন্তান দত্তক নেয়ার ঘটনাই ঘটে থাকে সচরাচর। কারণটাও বেশ স্পষ্টই। একজন যুবক বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে কীভাবে দত্তক নেয়া যায়? তাকে নিজের সন্তান হিসেবে ভাবা যায় কি?

হয়তো কিছুকাল আগেও যেত না। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন বিশ্বের অনেক দেশেই প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ দত্তক নেয়ার ঘটনা ঘটছে। এবং এর পেছনে কাজ করে অনেক আগ্রহোদ্দীপক মনস্তাত্ত্বিক, কারণ যা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।

জাপানের মুকোইয়োশি: পারিবারিক ব্যবসার পোষ্য উত্তরাধিকার

জাপানে বেশ সুন্দর একটি ব্যাপার রয়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রায় দশ-বারো প্রজন্মের পারিবারিক ব্যবসা। আপনি হয়তো জাপানের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গলির মুখে একটা ছোট কেক শপ দেখলেন, সেটাও হয়তো প্রায় একশ-দুশো বছর ধরে বড় দাদা-দাদা-বাবা-ছেলের হাত ধরে চলে আসছে। এরকম অনেক পারিবারিক ব্যবসা এখন বিভিন্ন খাতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পারিবারিক ব্যবসায় নেমে পড়া জাপানে সামাজিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সম্মানের সাথেও এটা জড়িত। যোগ্য উত্তরাধিকার কিংবা আর্থিক কারণে পারিবারিক ব্যবসা তুলে দেয়ার চেয়ে অনেক জাপানী মৃত্যুকেও শ্রেয় বলে মনে করেন।

তো, এহেন অবস্থায় কোনো পরিবারে যদি পুত্রসন্তান না হয় কোনো প্রজন্মে (জাপানে ঐতিহ্যগতভাবে প্রথম পুত্রসন্তানই উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবারের ব্যবসার হাল ধরে), বা পুত্রসন্তান ব্যবসার হাল ধরার যোগ্য না হয়, তাহলে কী করা যায়? ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া অসম্ভব, এর মতো অসম্মান আর হয় না।

এক্ষেত্রে যদি বিবাহযোগ্য কন্যাসন্তান থাকে, তাহলে তাকে সুযোগ্য পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে পাত্রকে ঘরজামাই করে আনা হয়, তাকে দেয়া হয় ব্যবসার উত্তরাধিকার। এ পাত্রকে নিতে হয় কন্যার পারিবারিক নাম। এ ধরনের পাত্রকে বলা হয় মুকোইয়োশি। ঘরজামাই শুনে অনেকে হয়তো নাক সিঁটকাতে পারেন, মুকোইয়োশিদের কিন্তু অনেক পরীক্ষা দিয়ে পাত্রীর পরিবারে আসতে হয়। যদি পরিবারের গৃহপতি তাকে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরার যোগ্য মনে না করেন, তাহলে এ বিয়েই হবে না। আর এ প্রথার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কন্যার পরিবার পাত্রের পরিবারের চেয়ে সামাজিক মর্যাদায় উচ্চস্তরের হয়।

এমনকি এমন পরিবারে যদি কন্যাসন্তান না থাকে, তবে কাউকে দত্তক নিয়েও পারিবারিক নাম দেয়া হয়, এবং তাকে পরিবারের বাইরের কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়, যাকে বলে ফুফুইয়োশি। এই মুকোইয়োশি প্রথা বেশ কয়েক শতাব্দী প্রাচীন, এবং বিশ্ববিখ্যাত সুজুকি, টয়োটা (হ্যাঁ, আমরা যাদের বানানো গাড়িতে চড়ে বেড়াই তারাই) এবং আরও অনেক পরিবার বিভিন্ন সময়ে এভাবে পুরুষ উত্তরাধিকার দত্তক নিয়েছেন, পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।  

osamu suzuki
ওসামু সুযুকি, সুজুকি পরিবারের বর্তমান কর্ণধার এবং একজন মুকোইয়োশি; Image Source: autocarindia.com

যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার হার

পশ্চিমে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ঘটনাটি নতুন হলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যেই আইনগতভাবে দুই বা ততধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দত্তক নেয়ার মাধ্যমে পিতামাতা-সন্তান সম্পর্কে জড়াতে পারেন। এমনকি অনেক রাজ্যে এমন আইনও রয়েছে, যাতে আপনি আপনার দত্তক নেয়া সন্তানের চেয়ে বয়সে ছোট হলেও অসুবিধা নেই!

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর অ্যাডপশন ২০১৩ সালে হিউস্টন প্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হিসাব দিয়েছিল, আমেরিকায় বছরে প্রায় কয়েক ডজন প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। সে তুলনায় হয়তো ১ লাখ ৩৫ হাজার সংখ্যাটি (সেই বছর শিশু দত্তক নেয়ার সংখ্যা) বিশাল, তবে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার হারও ক্রমশ বাড়ছে।    

অনেক উন্নত দেশে অবশ্য এখনও প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। যেমন- যুক্তরাজ্যের অ্যাডপশন অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাক্ট ২০০২ অনুযায়ী,

যেকোনো পোষ্য গ্রহণের দরখাস্ত করতে হলে, পোষ্যের বয়স দরখাস্ত জমাদানের তারিখে অনূর্ধ্ব আঠারো বছর হতে হবে।

আবার অনেক জায়গায় প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়া গেলেও তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার দেয়া যায় না।

প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার কারণসমূহ

প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, অর্থনৈতিক বা সামাজিক (মুকোইয়োশির মতো) অথবা মনস্তাত্ত্বিক কারণও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার সবচেয়ে প্রচলিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে আসল পিতামাতার অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই দত্তক নেয়া। আঠারো বছর বয়সের উপরে কাউকে দত্তক নিতে হলে তার আসল পিতামাতার সম্মতি লাগে না, ফলে আইনি জটিলতাও থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে দত্তক নিতে চাইলে তাতে অভিভাবকের সম্মতি থাকে না, সেক্ষেত্রে যিনি দত্তক নেবেন তার শুধুমাত্র অপেক্ষা করতে হয় শিশুটির আঠারো বছর বয়সে পা দেয়ার জন্য। এবং এক্ষেত্রে দত্তক নেয়াটা অনেক সহজ আর কম খরচে করা যায়।

অনেকে দত্তক নেন একাকিত্ব দূর করার জন্য। এক্ষেত্রে সাধারণত অবিবাহিত এবং বৃদ্ধ মানুষদেরই দত্তক নেয়ার হার অনেক বেশি। কথা বলার মানুষ কার না লাগে? তবে সবাই তো আর বিয়ে করে সংসারী হতে চায় না। আবার বেশি ছোট বাচ্চা একা পালন করাটাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নিলেই হয়। তবে এ ধরনের কেস বেশ দুর্লভ, অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনকও। অনেক সময়েই যাকে দত্তক নেয়া হয়েছে সে শুধু সম্পত্তির লোভে রাজি হয়।

তবে এ ধরনের দত্তক নেয়ার পেছনে সবারই কোনো না কোনো কাহিনী থাকে। অধিকাংশ সময়েই পূর্বপরিচিত মানুষেরাই এভাবে দত্তক নেন, এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে দত্তক নেয়ার আগে থেকেই অনেকদিন ধরে হয়তো পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্কই চলছিলো। দত্তক নেয়ার মাধ্যমে একে সমাজ সমর্থিত সম্পর্কে পরিণত করতেও চান অনেকে। অনেকে নিজের বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো না হলে, বা পরিবার থেকে বিতাড়িত হলেও অন্য পরিবারে দত্তক হয়ে আসেন। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার কারণ পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক।

অনেক ক্ষেত্রে আবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পরিবারের বাইরের কাউকে দেয়ার জন্যও দত্তক নেয়া হয়। অনেকেই নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকলে তাদের সম্পত্তির ভাগ দিয়ে যেতে চান না, সেক্ষেত্রে নিজের প্রিয়ভাজন কাউকে দত্তক নিয়ে তার নামে সম্পত্তি লিখে দেয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে অনেক।

প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ায় কি পরিবারে সমস্যা হতে পারে?

আগেই বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক। আরও সহজ করে বললে, ভালোবাসা। কারণ ভালোবাসা ছাড়া হঠাৎ করে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারী দত্তক নিয়ে তাকে পরিবারের অংশ হিসেবে ভাবাটা খুব সহজ নয়। এবং অনেক সময় পরিবারের বাকিরাও এটা মেনে নিতে পারে না, তাকে নিজের আত্মীয় হিসেবে কল্পনা করতে পারে না। এ কারণেই হয়তো প্রাচ্যে এখনও প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ব্যাপারটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এমনকি কেউ কেউ এই কথা ভাবলে আঁতকে উঠতে পারে, কারণ এখানে রক্তের বন্ধনের সামাজিক গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে ভালোবাসা সব কিছু জয় করতে পারে, তাই বিশ্বে ক্রমেই প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ঘটনা বাড়ছে।

আরেকটি বড় সমস্যা হয় জালিয়াতি নিয়ে, প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে। অনেক ক্ষেত্রে যিনি দত্তক নেন তিনি দত্তক নেয়া পুত্র বা কন্যাকে সম্পত্তির অংশ দেন না। ধনী পরিবারে এ ঘটনা অনেক বেশি ঘটে থাকে। অনেককে দত্তক নেয়া হয় পরিবারের কোনো সমস্যার বোঝা তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য। যেমন- পরিবারে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য থাকলে ট্যাক্স আইনগুলোর ফাঁকফোঁকর ব্যবহার করা যায় অনেক রাজ্যে।

আবার সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার আগেও প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ঘটনা চালু ছিল, সমকামী দম্পতিরা পিতা-পুত্র বা মাতা-কন্যা পরিচয়ে একসাথে থাকতেন। আবার অনেকে বিদেশে যাওয়া অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অর্থখরচ এড়ানোর জন্যও এই পন্থার আশ্রয় নেন। সেক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আবার আসল অভিভাবক দত্তক ফেরত নেন। বেশ জটিল প্রক্রিয়া মনে হচ্ছে শুনে, তাই না? অনেক আইনবিদের মতে, এমন কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং লজ্জাজনক, কারণ এক্ষেত্রে দত্তক নেয়া পিতা-মাতার সাথে সন্তানের কোনোরকম আবেগের সম্পর্ক নেই, শুধুমাত্র টাকা বাঁচানো আর কিছু সুবিধা লাভের জন্য করা হচ্ছে।

তবে সব কেস তো আর এরকম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালোবেসেই সবাই প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়, এবং পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক দত্তক নেয়ার পরে আরও ভালো হয়। এ ব্যাপারটি ক্রমেই একটি ট্যাবু থেকে বের হয়ে আসছে, এবং আরও বেশি পরিমাণে প্রাপ্তবয়স্ক দত্তক নেয়ার ঘটনা ঘটছে।

Featured Image: wiernickiadoptionlaw.com
References: The sources are hyperlinked inside the article.
Description: This is a Bangla article about how adults are being adopted in many families around the world.

Related Articles