Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হিউম্যান কেন ডল: মানুষ হয়েও যারা বেছে নিয়েছেন পুতুলের জীবন

বার্বি পুতুলের কথা কম বেশি আমরা সবাই জানি। পুতুলটি সর্বপ্রথম বাজারে আসে ১৯৫৯ সালে। কাল্পনিক এই চরিত্রের নির্মাতা ম্যাটেল কোম্পানি অনুভব করেন, বার্বি নিঃসঙ্গতায় ভুগছে এবং তার জন্য সঙ্গী দরকার। এই ভাবনা থেকে ১৯৬১ সালে বাজারে আসে কেন (Ken) পুতুল। কাল্পনিক এই পুতুল চরিত্রের নাম রাখা হয়েছিল রুথ হ্যান্ডলারের (যিনি ছিলেন ম্যাটেল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা) ছেলে কেন হ্যান্ডলারের নাম অনুকরণে।

বিশ্বজোড়া খ্যাতি এই বার্বি-কেন দম্পতির। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের পাশাপাশি তাদের ভক্তের তালিকায় নাম আছে অনেক পূর্ণ বয়স্কদেরও। কিন্তু ভালো লাগার সীমা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় কিংবা আসক্তি যখন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়,তখন মানুষ নিজের চেহারার পরিবর্তে হতে চায় আসল বার্বি বা কেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় বা ছুরি-কাঁচির নিচে অগণিত প্লাস্টিক সার্জারিও তাদের আসক্তির সামনে হার মানে। জেনে নেওয়া যাক এমনি কিছু কেন পুতুলের কাহিনী, মানুষরূপী হয়েও পরবর্তীতে যারা রুপান্তরিত হয়েছে কেন পুতুলে। তাদেরকে বলা হয় বাস্তব জগতের কেন পুতুল (Real Life Ken Doll)।

রডরিগো অ্যালভেস

৩৪ বছর বয়সী রডরিগো ছোটবেলা থেকেই তার চেহারা নিয়ে হীন্মন্যতায় ভুগতেন। তিনি দাবি করেন, তার জন্ম হয়েছিল ভুল শরীরে, যে শরীর নিয়ে তিনি কখনোই খুশি হতে পারেননি। তাই নিজের শরীরের খুঁত দূর করতে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্লাস্টিক সার্জারি এবং ১০৩টির অধিক কসমেটিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছেন। ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া যুক্তরাজ্যের এই মডেল এখন পর্যন্ত প্রায় ৫,০৮,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যয় করেছেন, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকা। তিনি ২০০৪ সালে প্রথম প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নিজের অবয়ব পরিবর্তন করেন।

রডরিগো অ্যালভেস, source: canoe.com

প্রশ্ন আসতে পারে এত বিপুল অর্থের উৎস কী? রডরিগোর পরিবার ৪০ দশকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্রাজিলে পাড়ি জমায়। সেখানে তারা চাষাবাসের সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে তাদের ব্যবসা আরো বিস্তার লাভ করে এবং বর্তমানে সুপার মার্কেট এবং শপিং সেন্টার সহ অনেক কিছুর মালিক তারা। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ অজানা থাকলেও তিনি তার দাদার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন, যার সিংহভাগ এই প্লাস্টিক সার্জারির পেছনেই খরচ করেছেন। তার কাছে পুরুষদের জন্য সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী জানতে চাইলে বলেন, পুরুষের সৌন্দর্য নিহিত আছে তার শরীরের প্রতিসাম্যতায়। বিস্তৃত কাঁধ,  পাতলা গড়ন, চোয়াল, অ্যাবস এবং বুকের অনুপাত ঠিক হতে হবে। এই যেমন আমার সিক্স প্যাক।

Source: roaylthings.com

তার লক্ষ্য হচ্ছে জনসাধারণের মাঝে প্লাস্টিক সার্জারি এবং বিভিন্ন কসমেটিক পদ্ধতি নিয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে সবার মাঝে যে নেতিবাচক মনোভাব তা দূর করতে চান রডরিগো। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬টি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি হাজির হয়েছেন তার এই বক্তব্য সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

Source: thesun.co.uk

প্লাস্টিক সার্জারির আগে তার চেহারা কেমন ছিল তা নিয়ে সবার মাঝে কৌতূহল কাজ করে।

কৈশোরে রডরিগো; source: thesun.co.uk

সার্জারির আগে এবং পরে রডরিগো; source: intouchweekly.com

তিনি মনে করেন, কিশোর বয়সে তিনি দেখতে মোটেও সুন্দর ছিলেন না। তাই নিজেকে সুন্দর করে তুলতে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন, যদিও তার এই চেষ্টাকে অনেকেই সমর্থন করেন না। তাই তিনি আশা করেন অচিরেই মানুষ এই সাহসের জন্য তার প্রশংসা করবে।

অস্ত্রোপ্রচারে আসক্ত রডরিগো সম্প্রতি তার চারটি পাঁজরের হাড় অপসারণ করেছেন কোমর আরো সরু করার জন্য। ৩৬ ইঞ্চি কাঁধের রডরিগোর কোমর এখন ২০ ইঞ্চি।

পাঁজরের হাড় অপসারণের পর সরু কোমরে রডরিগো; source: thesun.co.uk

এই জটিল অস্ত্রপ্রচারের পর অনেকেই বলছেন কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন রডরিগো। কিন্তু তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তার। অতি শীঘ্রই রডরিগো তার লিঙ্গ পরিবর্তন করে কেন থেকে বার্বি হবেন এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

জাস্টিন জেডলিকা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জন্ম নেওয়া জাস্টিন ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি নিজেও কোনো একদিন কেন পুতুলের মতো চেহারার অধিকারী হবেন। তার এই আসক্তি শুরু হয় ‘৯০ এর দশকে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যার নাম ছিল Lifestyle of the rich and famous। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ছোটবেলায় এই অনুষ্ঠান দেখে তার মনে হতো, তার বাবা-মায়ের যদি আরো অর্থ থাকত, তাহলে তিনিও ধনীদের মতো প্লাস্টিক সার্জারি করতেন এবং নিজের চেহারা বদলে ফেলতেন। তবে তার এই আফসোস মিটেছে বলা যায়। প্রায় ৪,০০,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যয় করেছেন (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা) এখন পর্যন্ত এবং ১৯০ বার ছুরি-কাঁচির পোঁচে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী জাস্টিন সর্বপ্রথম ১৮ বছর বয়সে প্লাস্টিক সার্জারি করেছিলেন নিজের নাকের আকৃতি ঠিক করার জন্য।

Source: thesun.co.uk

ছোটবেলায় সহপাঠীদের তিরস্কারের শিকার হওয়া জাস্টিন আরো বলেন, সুপার হিরোদের মতো চওড়া কাঁধ আর সরু কোমর আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। মাইকেল জ্যাকসন, ডলি পার্টন তারা আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। আমার নিজের শরীর হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের জায়গা। আমি জন্ম নিয়েছিলাম এক নিম্নবিত্ত পরিবারে। তাই আমাকে আমার সাধ পূরণে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রোপ্রচারের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে এবং এই ব্যাপারটি আমার জন্য গর্বের।

সার্জারির আগে জাস্টিন, source: concannonplasticsurgery

এক ব্যবসায়ীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জাস্টিন। তবে ২০১৬ সালে বিয়ের তিন বছরের মাথায় বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাদের। পরবর্তীতে বাস্তব জীবনে বার্বি পিক্সি ফক্সের সাথে দীর্ঘদিন থাকার পর এই সম্পর্কেরও ইতি ঘটে। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে জাস্টিন পিক্সির প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিকে দায়ী করেন।

হিউম্যান কেন পুতুল জাস্টিন; source: thesun.co.uk

রিয়েল লাইফ বার্বি এবং কেন; source: pinterest

সেলসো সানটেবেন্স

১৬ বছর বয়সে মডেলিং প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর থেকে সেলসো প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তার মতে, ছোটবেলায় তার বাবা-মা বলতেন তিনি দেখতে নাকি পুতুলের মতো। তাদের এই কথা তাকে কেন হতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। প্রায় ৩০,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড খরচ করেছেন তিনি প্লাস্টিক সার্জারির পিছনে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, দীর্ঘ ৫ মাস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে হার মানেন এই মডেল এবং মাত্র ২০ বছর বয়সে সেলসো মারা যান।

কেনের সাথে সেলসো সানটেবেন্স; source: lifeandstylemag.com

source: cidadeverde

এত বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে নিজের চেহারা পরিবর্তনের যৌক্তিকতা কতখানি- এই প্রশ্নের উত্তর কেবলমাত্র কেন পুতুলদের কাছেই পাওয়া যেতে পারে। নিজেকে নিয়ে হীমনন্যতা থেকে শুরু হয় হতাশা। আর এই হতাশাই মানুষের মাঝে অদ্ভুত সব সখের সৃষ্টি করে। তাদের দেখে যতই পুতুলের মতো মনে হোক না কেন, এতগুলো সার্জারির পেছনের কাহিনী যে মোটেও সুখকর নয় তা অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ছবি দেখলেই বুঝা যায়। প্রতিটি মানুষ নিজে অনন্য। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের প্রত্যেকেই নিজে স্বতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রত্যেকেই আলাদা। তাই নিজের এই অনন্যতাকে মেনে নেওয়াই হবে সকলের জন্য মঙ্গলজনক।

ফিচার ইমেজ: instyle.com

Related Articles