Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী – বৈচিত্র্যের এক অনন্য উপাখ্যান

আমা দেশ-সান এদক দো-ল
নিত্য আঝিম মুই,
বিঝু অক্তত হোগিল ডগরন
কুহু কুহু কুহু
(চাকমা গান)

বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে রয়েছে নানান ভাষা, বুলি ও জাতিগত আচারের মিশেল। বাংলার আপামর জনসাধারণের মধ্যে বাঙ্গালীর পাশাপাশি সমাবেশ ঘটেছে নানা আদিবাসী জাতির। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও আচারে যেমন রয়েছে সাধারণ বাঙ্গালীর বলিষ্ঠ অবদান, তেমনি বৈচিত্র্যের রঙ ছড়িয়েছে আদিবাসী ও আদিবাসী সম্প্রদায়। ভিন্ন জীবনধারা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর অনন্য শিল্পশৈলীর অফুরান মিশ্রণে ঘেরা এই সকল জনগোষ্ঠী। এই লেখনীর আবেষ্টনীও এই আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোকে ঘিরেই।

এদেশের আদিবাসী বা আদিবাসীরা মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের আচার, ভাষা, প্রথা ও সংস্কৃতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মূল বাঙ্গালী জাতির চেয়ে আলাদা হলেও তারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। এদের যেমন রয়েছে নিজস্ব জীবনধরণ তেমনি স্বকীয় সমাজব্যবস্থা। এই সকল জনগোষ্ঠী মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব, উত্তরপশ্চিম, উত্তর-মধ্য এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের অধিবাসী। এই অঞ্চলের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম; সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশে মোট আদিবাসী জাতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, বিভিন্ন সমীক্ষা ও মতামত অনুযায়ী প্রায় ৪৫-৫০ টির মতন ছোট-বড় জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং এরা প্রায় ২৬ টির মত ভিন্ন নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে। এদের মধ্যে চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, রাখাইন, ত্রিপুরা, খাসিয়া, হাজং, কুকি, মণিপুরী, মুরং, তঞ্চঙ্গা, ওঁরাও, মুন্ডা, কোচ, রাজবংশী, হাদী, লুসাই, মালো, মাহাতো, খুমী, খিয়াং, খজন, জৈন্তিয়া, খেয়াং, পাংখোয়া, বাউম , চাক, মং, টিপরা, রানা, বোনাজ, পাঙ্গান, রাঞ্জোয়ার, পালিয়া, পাহান, ডালু প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চলে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, কোচ, রাজবংশী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী, ময়মনসিংহের মান্দি (গারো), হাজং, কোচ ও হাদি; সিলেটের মণিপুরি, খাসিয়া, ত্রিপুরা, লুসাই; বরিশালের রাখাইন; খুলনা অঞ্চলের মালো, মাহাতো এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে খিয়াং, খুমী, চাক, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, ত্রিপুরাসহ মোট ১২টি পার্বত্য জাতিগোষ্ঠী প্রায় ৫০০ বছর ধরে বাস করে আসছে।

১৯৮০ সালের হিসেব অনুযায়ী এদের প্রায় ৪৪ শতাংশ বৌদ্ধ, ২৪ শতাংশ হিন্দু, ১৩ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং ১৯ শতাংশ অন্য ধর্মাবলম্বী। সাধারণ বাঙ্গালীর থেকে যেমন তাদের জীবনশৈলী আলাদা তেমনি নানা নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বিশ্বাস, খাদ্য, উৎসব, জীবন-জীবিকার মাধ্যম, জন্ম-মৃত্যু হার, সামাজিক-পারিবারিক ও বিবাহ প্রথা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা একে অপরের থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। পাঠক চলুন তাহলে ঘুরে আসি বাংলাদেশের প্রধান কিছু আদিবাসীদের জীবনযাত্রার জগত থেকে যার পরতে পরতে আছে বর্ণিল উপাখ্যান আর রকমারি বৈশিষ্ট্যের হাতছানি।

চাকমা

চাকমা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আদিবাসী জাতি। তাদের দৈহিক গড়ন ছোটোখাটো এবং মঙ্গোলয়েড ধরনের, এরা চ্যাপ্টা নাকবিশিষ্ট এবং গাত্রবর্ণ উজ্বল। এরা থেরাবাদী বৌদ্ধ মতাবলম্বী। চাকমা সম্প্রদায় নিজেদের গৌতমবুদ্ধের উত্তরসূরী বলে মনে করে। অনেকের মতে, গৌতমবুদ্ধের নাম ছিলো শাক্যমুনি, তাই চাকমাদের আদি নাম ছিলো শাক্য মানব, সেখান থেকে ভাষার পরিবর্তন হেতু শাক্যমা এবং শাকমা হয়ে বর্তমান চাকমা নাম এসেছে।

cf3

আবার অনেকের মতে, সংস্কৃত শব্দ ‘শক্তিমান’ থেকে চাকমা নাম এসেছে। চাকমাদের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ‘কিয়াং’ নামক বৌদ্ধমন্দির আছে। চাকমাদের কেউ কেউ আবার পুরোপুরি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী নয়, এদের উপর হিন্দুধর্মেরও প্রভাব বিদ্যমান। চাকমাদের ‘ওঝোপাথ’ নামক নিজস্ব বর্ণমালা ও ভাষা রয়েছে (চাকমা ভাষা), তবে তারা বাংলায়ও কথা বলে। চাকমা পুরুষের পোশাক ধুতি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী ও শার্ট। চাকমা মহিলারা কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা ‘পিনন’ এবং উপরিভাগে ‘হাদি’ নামক বস্ত্র পরিধান করে। পিনন এবং হাদি হাতে বোনা এবং নানা রকমের হয়। এগুলোর নকশা প্রথমে যে কাপড়টার উপরে করা হয় তাকে আলাম বলে। মহিলারা রূপার গহনা পছন্দ করে । পুরুষ এবং মহিলারা উভয়েই মাথায় ‘খাবাং’ নামের কাপড় বাঁধে।

চাকমাদের আবাসস্থল

চাকমাদের আবাসস্থল

চাকমাদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে- বুদ্ধপূর্ণিমা, বিজু, আল্পালনি এবং কঠিন চীবর দান উল্লেখযোগ্য। বুদ্ধপূর্ণিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই দিনে তারা তাদের সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক এবং অলঙ্কারাদি পরিধান করে উপাসনালয়ে যায়, দান করে এবং বিশেষ উপাদেয় খাবার রান্না করে। বিজু একটি তিনদিনব্যাপী উৎসব যা কিনা বাংলা বছরের চৈত্রমাসের শেষ দুদিন এবং নতুন বছরের প্রথমদিন পালন করা হয়। চৈত্রের শেষ দুদিন কে ফুল বিজু এবং নতুন বছরের প্রথম দিনকে মূল বিজু বলা হয়। এ উৎসবে বিজু নাচের চল রয়েছে।

cf1

বিজু উৎসব

আল্পালনি প্রায় ২৫০০ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে চাকমাদের মধ্যে, এদিন ফসল তোলার সময় শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষিকাজ থেকে বিরতি নেয়। চাকমারা হাতে কাপড় বোনে, বাঁশের ঝুড়ি ও অন্যান্য জিনিস তৈরি করে এবং পাহাড়ী ঢালে জুম চাষ করে। চাকমাদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। তারা মাচার উপর বাঁশের তৈরি বাড়ি-ঘরে বসবাস করে। চাকমাদের খাবারের মধ্যে বাঁশ অন্যতম যা কিনা তাদের কাছে ‘বাচ্চুরি’ নামে পরিচিত। এছাড়াও তারা ‘সিদল’ নামের উপাদান অনেক খাদ্যে ব্যবহার করে যা চিংড়ি দিয়ে তৈরি।

cf4

চাকমারা ভাত, ফলমূল ও সবজি খায় এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তারা মাছ, মাংস এবং শূকরের মাংসও খেয়ে থাকে। পূর্ণিমা, গ্রহণ, অমাবস্যার সময় চাকমাদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। তাদের খেলাধূলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – গুদু হারা (হাডুডু), ঘিলে হারা এবং নাদেং হারা। চাকমা লোকসাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ , তাদের লোকগাথা কে বলা হয় ‘উবগীদ’। এছাড়াও চাকমা গেংখুলী গীদ, রাধামন-ধনপুদি, সান্দবীর বারমাসী প্রভৃতিও চাকমা লোকসাহিত্যের অংশ। চাকমা সম্প্রদায়ের অনেকাংশই এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে।

খাসিয়া

বাংলাদেশের সিলেট এবং ভারতের আসামে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বাস। খাসিয়া রা মন-খেম জাতি থেকে আগত, এরা খাসি ভাষায় কথা বলে এবং নিজেদের ‘কি হ্যেনিউ ত্রেপ’ নামে আখ্যায়িত করে। এদের সমাজব্যাবস্থা মাতৃতান্ত্রিক, বিয়ের পর পুরুষ মেয়ের বাড়িতে গিয়ে বসবাস করে এবং পুরুষরা কোন সম্পত্তির অধিকার পায় না। খাসিয়ারা পান ও সুপারি খেতে পছন্দ করে এবং তাদের উৎপাদিত পান বেশ জনপ্রিয়। তারা পান, সুপারি এবং কমলার চাষ করে। খাসিয়া ভাষায় এদের গ্রামকে বলে পুঞ্জি।

ph2

খাসিয়াদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ এবং বিয়ে না করা পাপ। তারা বিশেষ কারণ সাপেক্ষে একাধিক স্বামী ও উপপতি রাখতে পারে যদিও এর হার কম। বিয়ের সময় প্রধান খাবার হলো ভাত ও শুটকি এবং তিন টুকরা শুটকি দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে নৈবেদ্য হিসেবে দেয়া হয়। তাদের বিশ্বাস থ্যু ব্লৌউ প্রথমে পৃথিবী, এরপর একজোড়া নর-নারী সৃষ্টি করেন এবং মা থেকেই মানব জাতির উদ্ভব এবং বিবাহ ও সন্তান প্রসবের সময় মৃত শিশু ও পূর্বপূরুষের আত্মা ঘরে আসতে পারে।

ph1

This article is in Bangla language. It's about the culture and lifestyle of different tribal people of Bangladesh.

 

References:

১) http://www.ebbd.info/indigenous-communities.html

২) বাংলাদেশের নৃ-গোষ্ঠী নাট্য - ড. আফসার আহমদ

৩) http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-23/news/103414

৪) http://www.thedailystar.net/news-detail-46025

৫) http://mirrorofbd2012.blogspot.com/2012/04/tribal-of-bangladesh-chakma.html#.WEL5RX2IVKE

৬) http://nijhoom.com/tribal-people-bangladesh/

৭) https://wonderfulbangladesh.net/2012/10/05/

৮) http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF

৯) https://wonderfulbangladesh.net/2013/06/2

 

Featured Image: livecht.com

Related Articles