Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রক্ত শীতল করা অমানবিক কিছু সামরিক প্রশিক্ষণ

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার কিছু ব্রত থাকে। কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারী/বেসরকারি চাকরি অথবা ব্যবসার মাধ্যমে নিজ জীবনের সাফল্য হেতু দেশের উন্নয়ন সাধনে প্রয়াস করে থাকেন, আবার অনেকে দেশ রক্ষার গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে জন্মভূমির সেবক ও রক্ষক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করে থাকেন। দেশসেবার জন্য নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ থেকে সামরিক সদস্য হিসেবে রুপান্তরের পথটা কখনোই তেমন সহজ ছিল না। দড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া, বুকে ভর দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, কাদা পানির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে অগ্রসর হওয়া সহ নানা রকম প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া দেখে থাকি বা এসব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আমরা।

এ তো গেল সাধারণ প্রশিক্ষণের কথা, বিশ্বে এমন কিছু সামরিক বাহিনী রয়েছে যেখানে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলে পার করতে হয় এক অমানবিক প্রশিক্ষণ পর্ব। দেশমাতার সুরক্ষার্থে কিছু মানুষ সেই অমানবিক ও অসহনীয় অধ্যায়ের পর্বগুলো একে একে পার করে নিজেকে বিশ্ব সেরা লড়াকু সৈন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে থাকেন। আসুন জেনে নেয়া যাক রক্ত শীতল করা সেই প্রশিক্ষণ পর্বগুলো সম্পর্কে।

স্পেটসনাজ বাহিনী

Source: russian-sales.com

প্রথমেই বলতে হয় রাশিয়ার স্পেটসনাজ বাহিনীর কথা। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভীক সৈন্য হিসেবে তাদের গণ্য করা হয়। প্রশিক্ষণের সময় তাদের সম্ভাব্য সকল ধরনের অসহনীয় পীড়াদায়ক কাজ দেয়া হয়ে থাকে, যাতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কোনো আঘাত যেন তাদেরকে দুর্বল করতে বা পিছু হটাতে বাধ্য না করে।

স্পেটসনাজ বাহিনী; Source: usshunkalphateam.deviantart.com

কাঁটাতার ভর্তি পুকুর সাঁতরে পার হওয়া বা ট্রাকের পিছনের তাকে বেঁধে দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো ট্রেনিং এর তালিকায় রয়েছে। শুধুই কী তা-ই! চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে বেসবল ব্যাট দিয়ে ধুন্ধুমার পিটুনি দেয়ার মতো অমানবিক সব প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও রয়েছে।

কাইবিলস

Source: imgrum.org

গুয়াতেমালার বিশেষ সামরিক বাহিনী কাইবিলস। সামরিক যুদ্ধের পাশাপাশি জঙ্গল যুদ্ধ ও জঙ্গী বিদ্রোহ অপারেশনে এই বাহিনী বিশেষ পারদর্শী। বছরে দু’বার নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। সামরিক ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। নিয়োগ প্রশিক্ষণে প্রায় ৬০ জনকে সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে এবং অবিশ্বাস্যভাবে কেবলমাত্র ১০ জন বা কখনো ৮ জনের অধিক কখনোই সেই পরীক্ষা পর্বে উত্তীর্ণ হতে পারে না। পুরো দুই মাস জুড়ে তাদের নির্মম প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে থাকে যে, তা একজন সৈন্যের মানসিক ও শারীরিক স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসকে পুরোপুরিভাবে গুঁড়িয়ে দিয়ে এক নতুন বিশ্বাসের আলোকে গড়ে তোলে।

কাইবিলস; Source: 2ndmaw.marines.mil

প্রশিক্ষণের ধরণ অনেকটা এমন– বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে কাঁটা ছড়িয়ে দেয়ার পর পুরো জায়গা জুড়ে অর্ধনগ্ন হয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার জন্য সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের শরীর আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায় এবং কাঁটা বিঁধতে থাকে অনবরত। অসহনীয়তার কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে নির্দেশ মোতাবেক তাদের নিজেদেরকেই নিজেদের মেডিক্যাল সেবা দিতে হয়। আমরা প্রায় সময় বলে থাকি মানুষের জীবন কণ্টকময়, কিন্তু এই প্রশিক্ষণে মানুষের শরীর কন্টকাবৃত হয়ে যায়। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের সহনীয়তার মাত্রাকে এক চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ‘দ্য ইনফার্নো’ নামের একটি পরীক্ষা নেয়া হয়। এ পরীক্ষায় সৈন্যদেরকে টানা দুদিন আকন্ঠ পানিতে ডুবে থাকতে হয় এবং সম্পূর্ণ নির্ঘুম অবস্থায়।

এবার আসি মানসিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের কথায়। প্রশিক্ষণের শুরুতেই প্রত্যককে একটি করে কুকুর ছানা দেয়া হয়। নির্দেশনাটা অনেকটা এরকম– দু’মাস যাবত কুকুর ছানাকে যত্ন আত্তি করতে হবে এবং ট্রেনিংয়ের শেষপর্যায়ে এসে পালিত এই কুকুরটিকে মেরে ফেলতে হবে। এখানেই শেষ নয়, মেরে ফেলার পর তার মাংস ভক্ষণ করতে হবে। বিষয়টি প্রচন্ড রকমের অমানবিক। কিন্তু এ থেকে সৈন্যদের এটাই শেখানো হয় যে, যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকাটাই মুখ্য আর এজন্য যা করণীয় তা-ই করা উচিত।

কমান্ডো হুবার্ট

Source: gasimli.info

চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত শহর ফ্রান্সে রয়েছে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী, কমান্ডো হুবার্ট। সমুদ্রের নিচে দাপিয়ে বেড়ানো কিছু অকুতোভয় ডাইভারকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বাহিনী। প্রায় ১২ জন দক্ষ সামরিক ডাইভারকে নিয়ে ২৭ সপ্তাহের যাত্রাপথে মোট ১৭টি ধাপে একজন সাধারণ মানুষকে পুরোপুরি দুমড়ে মুচড়ে এক নতুন মানুষে রুপান্তরিত করা হয়। যার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়, সামনের সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে সুনির্দিষ্ট কার্য সমাধা করা। এদেরকে বলা হয় ফ্রগম্যান।

কমান্ডো হুবার্ট; Source:tech.wp.pl

প্রশিক্ষণ চলাকালে তাদেরকে দিক ঠিক রেখে অন্ধকার পানির নিচে দীর্ঘসময় সাঁতার কাটতে হয়। বিভিন্ন জাহাজে অতর্কিতে সফলভাবে হামলা করা এবং নীরবে বিস্ফোরক পুঁতে রেখে আসার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় এবং একজন সৈন্যকে কোনোভাবেই ধরা পড়া যাবে না। যদি সে ধরা পড়ে যায় বা কোনো এক পর্যায়ে একটি ছোটখাটো ভুল করে ফেলে, তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ বাদ দিয়ে দেয়া হয়।

স্টর্ম কর্পস

উত্তর কোরিয়ার এক শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নাম স্টর্ম কর্পস। স্টর্ম কর্পসের প্রতিটি সদস্যকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে তারা প্রত্যেকে দশজন অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষকে অনায়াসে কুপোকাত করে ফেলতে পারে। আর এজন্য তাদের দুটি হাতই যথেষ্ট। একজন সৈন্যকে এভাবে তৈরি করতে হলে নিরন্তর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

স্টর্ম কর্পস; Source: entertales.com

প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রত্যেক সৈন্যকে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি গাছকে মোটা রশি দিয়ে আবৃত করে দেয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক প্রত্যেককে ৫,০০০ বার করে রশি আবৃত এই গাছে অনবরত ঘুষি মেরে নিজেদের হাত শক্ত করতে হয়। এরপর শুরু হয় ভাঙ্গা-চোরা বড় বড় টিনের কৌটায় ঘুষি মেরে নিজের হাত রক্তাক্ত করার পালা এবং সবশেষে রক্তাক্ত অবস্থায় লবণের ঢিবিতে ঘুষি মেরে মেরে সহ্য শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া। শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হাত পাকিয়ে নিতে এমন প্রশিক্ষণের বিকল্প হয়তো আর কিছুই হয় না।

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স; Source: ribalych.ru

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স, বেলারুশের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী যেখানে প্রত্যেকটি সৈন্যকে আগুনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয়। বিপদসংকুল ও ভয়াবহ প্রশিক্ষণ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একেকজন সদস্যকে। জ্বলন্ত আগুনের মাঝে পুড়তে থাকা টায়ারের ওপর দিয়ে দৌড়ে যেতে হয় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। শরীরের চামড়া দগ্ধ হতে থাকে, কিন্তু এক কদম পিছনে ফেরার কোনো উপায় নেই। এমনটা করলে মুহূর্তেই প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে। গনগনে আগুনের মধ্যে থাকা যেকোনো কংক্রিটের ব্লককে মাথা দিয়ে ভেঙে ফেলার মতো বিপদসংকুল কাজেও দক্ষতা তৈরি করে ফেলতে হয়।

ফোর্স ব্রিগেড বাহিনী

ফোর্স ব্রিগেড বাহিনী; Source: craveonline.com

বিশ্বের দুরূহ সামরিক বাছাইপর্বের একটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্স ব্রিগেড বাহিনীর বাছাই এবং প্রশিক্ষণ পর্ব। সম্পূর্ণ অনাহারে এবং নির্ঘুম থেকে শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরে যুদ্ধে কিভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে এই বাহিনীর সদস্যদের। প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৈন্যদের সম্পূর্ণ অনাহারে এবং নির্ঘুম রাখা হয়। মুহূর্তের জন্যও ঘুমের কাছে পরাস্ত হওয়া চলবে না। এই পরিস্থিতির মেয়াদকাল ১-৭ দিন পর্যন্তও হতে পারে। তবে ৭ দিন মেয়াদকাল হলে ৫ম দিনে তাদের কিছু খাদ্য সরবরাহ করা হয়। কখনো আবার রাতের বেলা গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় এবং এ অবস্থায় একজন সৈন্য ঘুমাতে পারবে। হাতে গোনা খুব কম সংখ্যক লোকই পারে এই সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফোর্স ব্রিগেড বাহিনীর একজন সদস্য হতে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্স

দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্স; Source: storypick.com

একজন সৈন্যের কাছে শীত-গ্রীষ্মের কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয় এবং যেকোনো পরিবেশে যেকোনো অবস্থায় দেশের হয়ে লড়তে হবে– এমনটা বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা প্রায় -৩০° সেলসিয়াস আবহাওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বরফাবৃত এলাকা পিয়ংচ্যাং এ। প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় বরফের ওপর দিয়ে বুকে ভর করে চলতে হয় এবং তাদের হাত দুটো পিছনে বেঁধে দেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এভাবে করে বুকে ভর দিয়ে চলতে হয়। অতঃপর নির্দেশ মোতাবেক উদম গায়ে সৈন্যদের একে অন্যের গায়ে বরফের টুকরো ছোড়াছুঁড়ি করতে হয় এবং কুস্তি খেলার আয়োজনও থাকে। এমন তাপমাত্রায় যেখানে সাধারণ মানুষ গায়ে ৫/৬টি মোটা শীতের কাপড় জড়িয়ে ঘরের বাইরে বের হয়, সেখানে খালি গায়ে এমন কার্য সম্পাদন সাধারণ মানুষের কর্ম নয়। প্রশিক্ষণ চলাকালে অনেকে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রশিক্ষণ ময়দান ছাড়তে বাধ্য হন।

ফিচার ইমেজ: businessmensedition.com

Related Articles