Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজারে যেসব দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে

করোনা ভাইরাসের মহামারী কবে শেষ হবে তা কারো জানা নেই। করোনা-পরবর্তী বিশ্ব কেমন হবে তাও কারো জানা নেই। তবে এটা নিশ্চিত যে, করোনা পরবর্তী বিশ্ব অনেকটাই পাল্টে যাবে। পৃথিবীর সবাই ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিও নর্মাল) জীবনে অভ্যস্ত হবে। অসংখ্য মানুষ চাকরি হারাবে। নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে এটা ধরেই নেওয়া যায় যে, করোনা-পরবর্তী সময়ে চাকরির বাজার কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। এই কঠিন চাকরির বাজারে  শুধু যোগ্যরাই টিকে থাকবে। যোগ্যতার পাশাপাশি প্রমাণ দিতে হবে নানা দক্ষতারও। তাহলে কোন কোন দক্ষতা থাকলে আপনি করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজারে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন? চলুন সেসব দক্ষতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

প্রযুক্তি দক্ষতা

করোনাভাইরাস-পরবর্তী বিশ্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। চাকরির বাজারে কিংবা অফিসে প্রযুক্তি দক্ষতা থাকা প্রার্থী এমনিতেই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন।

Image Source: hotelnewsresource.com

করোনা মহামারী থেকে শিক্ষা নিয়ে সব প্রতিষ্ঠানই চাইছে ভবিষ্যৎ কোনো মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে। যেসব প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অফ থিংস, ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও রোবটিক্স বিষয়ে পারদর্শী সেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক কম। এসব প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যৎ মহামারীতেও ভালো অবস্থানে থাকবে। এজন্য চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইবে প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রার্থীদেরই নিয়োগ দিতে। এমনকি এখনকার প্রায় ৮২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল করে প্রার্থীর প্রযুক্তি দক্ষতা আছে কি না। তাই আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের যে পদেই চাকরি করতে চান না কেন আপনাকে অবশ্যই প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। প্রযুক্তি দক্ষতা না থাকা মানে আপনি অনেকটা ঢাল-তলোয়ার বিহীন যোদ্ধার মতোই। 

অভিযোজ্যতা ও নমনীয়তা

Image Courtesy: Mike Sygula

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগের পৃথিবী আর পরের পৃথিবীর মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য দেখা দেবে। সব প্রতিষ্ঠানই তাদের কাজের ধরনে, নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনবে। ফলে প্রথাগত পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে চলছে। এসব পরিবর্তনের সাথে আপনাকে অবশ্যই অভিযোজন করতে হবে, খাপ খাইয়ে নিতে হবে। লকডাউনে থেকে ইতোমধ্যে আপনি হয়তো বাড়িতে বসে কাজ করেছেন। করোনা-পরবর্তী সময়েও আপনাকে বেশ কিছুটা সময় হয়তো বাড়িতে বসেই কাজ করতে হতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের অফিসে রেখে কাজ করিয়েছে। থাকা-খাওয়া সবই করতে হয়েছে অফিসে। এ ধরনের নতুন পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে নমনীয় থাকলেই আপনি সফল হতে পারবেন। নতুন চ্যালেঞ্জ আর পরিবেশের সাথে টিকে থাকার ক্ষমতা যদি আপনার না থাকে তাহলে চাকরির দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন। 

সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন দক্ষতা

করোনা মহামারীর সময় প্রতিষ্ঠানগুলো টের পেয়েছে দুর্যোগকালে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মহামারীর এ সময়ে রেসিং কার মার্সিডিজ এফ-১ থেকে শ্বাসযন্ত্রের সরঞ্জাম তৈরি করা হয়েছে।

Image Source: leadingedgeonly.com

আরো অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে এসে নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে। সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন দক্ষতার ফলেই এ ধরনের পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এ ধরণের পরিবর্তন ভবিষ্যতেও করতে হবে। ফলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা পরবর্তী সময়ে নিয়োগ দিতে গিয়ে খেয়াল রাখবে প্রার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন দক্ষতা আছে কি না। তাই আপনি যদি করোনা পরবর্তী সময়ে চাকরি পেতে চান তাহলে অবশ্যই সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন দক্ষতাসম্পন্ন হওয়ার চেষ্টা করুন।

ডাটা বিশ্লেষণ

করোনার সময়ে আপনি নিশ্চয়ই প্রচুর পরিমাণ ডাটার (তথ্য) ব্যবহার এবং তার উপস্থাপন কৌশল দেখেছেন। পত্রিকার রিপোর্ট বলেন বা টেলিভিশনের রিপোর্ট কিংবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টই বলেন না কেনো সর্বত্রই ডাটার ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

Image Source: NicoElNino, Getty Images/iStockphoto

শুধু তা-ই নয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি কেমন হচ্ছে, ক্লায়েন্টদের চাহিদা কী, তাদের চাহিদায় কী ধরনের পরিবর্তন আসছে এসব বুঝা যায় ঐ প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ডাটা থেকে। বলা হচ্ছে- আগামীর পৃথিবী হবে ডাটা নির্ভর পৃথিবী। কিন্তু বিগ ডাটা বা সংখ্যার কোনো অর্থ নেই যতক্ষণ না সেটি কেউ সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছেন বা বুঝার উপযোগী করে তুলে ধরছেন। তাই সব প্রতিষ্ঠানই এখন এমন প্রার্থীকে খুঁজছেন যিনি ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। এই দক্ষতাটা শুধুমাত্র নতুন চাকরি-প্রার্থীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় চাকরিরত যে কারো জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ডাটা বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন জানেন না মানে আপনি অন্যদের তুলনায় কয়েকগুণ পিছিয়ে আছেন। তাই যদি এ দক্ষতা আপনার না থাকে তাহলে এখনই নিজেকে প্রস্তুত করুন।

ডিজিটাল এবং কোডিং দক্ষতা

Image Source: ThisisEngineering RAEng

করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই ডিজিটালি চলছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি চালাতে পারছে না সেসব প্রতিষ্ঠান একরকম বন্ধই হয়ে আছে। করোনা-পরবর্তী সময়েও প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল নির্ভরতা আরো বাড়বে। ভবিষ্যৎ কোনো মহামারীর প্রস্ততির অংশ হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠানই পুরোপুরি ডিজিটাল করে নেবে পুরো প্রক্রিয়া। ফলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল দক্ষতা, কোডিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষরাই এগিয়ে থাকবে।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার দক্ষতা

সামাজিক মাধ্যম স্বাক্ষরতা (সোশাল মিডিয়া লিটারেসি) চাকরি পাওয়ার জন্য এখন অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিভিন্ন কোম্পানির বিজনেস স্টাইলের সাথে মিল রেখে নিয়মিত বিভিন্ন ফিচার আনছে। 

Image Source: socialmedia.biz

আবার কোম্পানিগুলোও তাদের প্রচার, প্রসার কিংবা ইমেজ নির্মাণের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে। ডিজি স্টার মিডিয়ার সিইও রবিন কনার বলেন, ‘আমি চাকরিপ্রর্থীর মধ্যে যে পাঁচটি দক্ষতা খুঁজি তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম স্বাক্ষরতা’। আপনি কোন কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন, কীভাবে ব্যবহার করছেন, কী ধরনের আধেয় শেয়ার করছেন এগুলো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে দিবে কিংবা ইন্টার্ভিউতে আপনাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ফলে শুধু বিনোদনের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার না করে যোগাযোগ এবং নিজেকে চাকরি পাওয়ার উপযোগী করে তুলতে পারে এমন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করুন। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানি কীভাবে তাদের প্রচার এবং ব্র্যান্ডিং করে থাকে তা খেয়াল রাখুন। এগুলো আপনাকে চাকরি পেতে সহযোগিতা করবে।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা

নিয়োগকর্তারা এখন এমন কর্মী খোঁজেন যিনি অন্যের আবেগের পাশাপাশি নিজস্ব আবেগ শনাক্ত এবং পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। 

Image Source: smallbizclub.com

ম্যাককিন্সির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত শিল্পকারখানায় আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার চাহিদা ২০১৬ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এই দক্ষতা কর্মীদের অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত করতে, তাদের নিজস্ব শক্তি এবং দুর্বলতা শনাক্ত করতে এবং কোনো কোম্পানির গ্রাহকের মন ও চাহিদা বুঝতে সহায়তা করে। ফলে কোম্পানিগুলো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রার্থী খোঁজে। আর এজন্য আপনিও নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করুন। 

সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা

করোনা-পরবর্তী বিশ্বে সবকিছুকেই নতুনভাবে ভাবতে হবে, ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে হবে। শুধু তা-ই নয় সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকেও ভাবতে হবে। 

Image Source: chronicle.com

করোনা মহামারীর সময় দেখা গেছে যে, বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকার নিজেদের দোষ ঢাকতে, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে, নিজেদের মতো করে ডাটা উপস্থাপন করেছে, তথ্য গোপন করেছে। এসবের মধ্যে যিনি বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে সেসব মূল্যায়ন করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পেরেছেন তিনিই মূল্যায়িত হয়েছেন। এজন্য করোনা পরবর্তী সময়ে কোম্পানি এমন প্রার্থীদের খুঁজবে যিনি তথ্য পেলেই সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য মনে করবেন না বরং সেখান থেকে ক্রিটিকাল চিন্তা করে এমন তথ্য গ্রহণ করতে বলবেন যেটা কোম্পানির জন্য মঙ্গলজনক হবে। সব ধরনের তথ্যের উপরই নির্ভর করা উচিত নয়, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন তথ্যটি গ্রহণ করা উচিত তা বুঝতে কোম্পানিগুলো সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করবে। এজন্য করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরিক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে ক্রিটিকাল চিন্তার দক্ষতা অর্জন করুন।

নেতৃত্ব

কোনো একটি টিম যদি দুর্গম পাহাড়ে আটকে যায় সেখানে হয়তো টিমের অনেকেই ভীত হয়ে পড়বে, হাল ছেড়ে দেবে। কিন্তু যিনি নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে পুরো টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে পারবেন তিনিই প্রশংসিত হবেন।

Image Source: thehubforstartups.com

তেমনই করোনার এই দুঃসময়ে ‍যিনি নেতৃত্ব দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিক গতিতে রাখতে পারবেন তিনি শুধু প্রশংসিতই হবেন না, তার কর্মস্থলের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই প্রচুর টিমওয়ার্ক করতে হয়। এসব টিমের সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারা মানেই সফলতার একেকটি ধাপ অতিক্রম করা। তাই করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে এবং নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলে নেতৃত্বের দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে।

This article is in Bangla languagre. It's about the job skills which will help to succeed in post-corona world. 

Necessary refernces have been hyperlinked inside.

Featured Image © Marten Bjork

Related Articles