Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শীতে দেহের যত্নে যা যা করবেন

আসি আসি করে শীত এসেই গেলো। সাথে নিয়ে আসলো মলিনতা আর রুক্ষতার সংবাদ। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুটি রোদে হীরার মতো চিকমিক করে ওঠে, তাই বলে পুরো প্রকৃতি কিন্তু একইভাবে ঝলমলিয়ে ওঠে না। গাছের ঝরা পাতা, কুয়াশার চাদর আর আবহাওয়ার মলিনতার বার্তা নিয়ে আসে শীত, সেই সাথে আনে ত্বকের মলিনতা, রুক্ষতা আর শুষ্কতা। শুধু মুখের নয়, হাত, পা, এমনকি চুলেরও আর্দ্রতা হারাতে থাকে। ফাটা পা, প্রাণহীন চুল আর মলিন ত্বক যেন এই ঋতুর এক অতি সাধারণ দৃশ্য, তাই নিজের যত্ন নিয়ে উদাসীন মানুষও যেন এই সময় বাধ্য হয় নিজের যত্ন নিতে। আর যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের তো মোটামুটি লড়াই চলে শীতের আবহাওয়ার বার্ধক্যের মতো রুক্ষতার সাথে। এই যখন অবস্থা, তখন আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছি শীতে খুব সহজে নিজেকে যত্নে রাখার কিছু কথা।

প্রথমেই আসা যাক গোসলের কথায়। শুনেই কি ভয় লেগে গেল? শীতে বরফঠান্ডা পানিতে গোসলের কথা তো ভাবাই যায় না, গরম পানিতে গোসলের কথাই বলছি। তবে এখন থেকে আর ভাপ ওঠা পানিতে না, গোসলটা সেরে নিন হালকা কুসুম গরম পানিতে। বেশি গরম পানি শুধু আপনার ত্বকেরই ক্ষতি করে না, আপনার চুলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। এতে চুল প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা হারিয়ে আরো রুক্ষ হয়ে পড়ে, দুর্বল চুলের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় আর সেই সাথে বেড়ে যায় চুল পড়া। সেই সাথে এই সময় গোসলটা ১০ মিনিটেই সেরে নিন, কেননা এই আবহাওয়ায় বেশিক্ষণ গরম পানিতে গোসল ত্বক রক্ষাকারী প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয় আর ত্বককে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কিন্তু তুলনামূলক ঠান্ডা পানিতে অল্পক্ষণের গোসল শীতে ত্বককে আরো সুস্থ করে তুলবে।

শীতের সোয়েটার-চাদর তো আছেই, বেশি শীতে হাতে-পায়ে মোজা পরে নিতেও কিন্তু ভুলবেন না যেন। সন্ধ্যার পরে বা বেশি সকালে শিশির পড়ার সময় ঘর থেকে বের হলে সহজে ভেজে না এমন গরম পোষাক পরিধান করাই শ্রেয়। মাথায় টুপি, ক্যাপ বা স্কার্ফ দিতেও ভুলবেন না। এবার আসি ঘরের ভেতরের কথাতে। ঘরের ভিতরেও চলাচলের সময় ব্যবহার করুন স্যান্ডেল ও দরকার মতো মোজা। আর শীতের সময় পোষাক নির্ধারণেও মানতে হয় কিছু সতর্কতা। কোমল তন্তুর গরম কাপড় বেছে নেওয়াই ভালো। অনেক সময় শীতের পোষাকের সুতা বা তন্তু ত্বকের সাথে ঘষা লেগে ত্বকে অস্বস্তি ও চুলকানির সৃষ্টি করে, অনেক সময় লাল ঘামাচির মতো র‍্যাশও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে উলের কথা। যদিও শরীর গরম রাখতে উলের জুড়ি নেই, কিন্তু উল অনেক সময় ত্বকে অস্বস্তিরও সৃষ্টি করে। তাই উল পরার আগে নিচে পাতলা সুতির কিছু পরে নেওয়া ত্বককে এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়।

রুক্ষতা থেকে হতে পারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা; Source: urbanpost.it

শুষ্কতার এই মৌসুমে সঠিক খাবার খাওয়া আর নিজেকে ভেতর থেকে সতেজ রাখা খুবই জরুরী। পুষ্টিগুণ আর ভিটামিনে ভরপুর সবজি আর ফল আপনার ত্বক, চুল আর স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেবে। আপেল, কমলা, চেরি, টমেটো, শসা, গাজর আর শীতের সবজিগুলো যেন এই উদ্দেশ্যে প্রকৃতিরই দান। এই খাবারগুলো দেহে ইলাস্টিন আর কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। সেই সাথে শরীরে ওমেগা-৩ জোগান দিতে খেতে হবে প্রচুর বড় মাছ, তিসি ইত্যাদি। আর দিনে ৮-১০ গ্লাস পানির কথা তো বলাই বাহুল্য।

এবার আসছি বিভিন্ন প্রসাধনীর কথায়। শীতের সময় কিছু প্রসাধনী প্রায় সবাইকেই ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান শ্যাম্পুর মতো প্রসাধনীগুলো। পেট্রোলিয়াম বা পানিকে মূল উপাদান হিসেবে নিয়ে তৈরী প্রসাধনীর থেকে এই সময় প্রাকৃতিক বিভিন্ন তেলকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে তৈরী হওয়া ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করা ভালো। শীতে ক্লিনজারও বেছে নিন সতর্কভাবে। গ্লাইকোলিক বা সাইক্লিক এসিড সমৃদ্ধ ক্লিনজার বাদ দিয়ে বেছে নিন অধিক ময়েশ্চারাইজিং উপাদান সমৃদ্ধ ক্লিনজার। ত্বক পরিষ্কার করার পর ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ত্বককে আর্দ্রতাহীন অবস্থায় রাখা উচিৎ না। দ্রুতই ব্যবহার করুন কোনো লোশন বা ক্রিম, কারণ গভীরভাবে পরিষ্কারের পর ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় কোনো ময়শ্চারাইজার না পেলে ত্বক হয়ে উঠতে পারে আগের চেয়ে বেশি শুষ্ক। যেহেতু শীতকালে ত্বক ও চুল নিজে থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম তেল তৈরী করে, তাই সাবান ও শ্যাম্পু এমন বেছে নিতে হবে যা কোমলভাবে পরিষ্কার করে ত্বকে স্বাভাবিক তেল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে, রুক্ষতাজনিক ক্ষয় প্রতিরোধ করে। সাথে সতর্কতার সাথে সরিয়ে ফেলতে হবে মৃত কোষগুলোও। আর ময়েশ্চারাইজার তো আবশ্যক। শুধু মুখের নয়, সারা শরীরেই শীতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার আবশ্যক হয়ে পরে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে, বাইরে কাজে যাওয়ার আগে, কাজ থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে- এমন প্রায় সব সময়ই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের বিকল্প নেই। বিশেষ করে হাত-পা, ঠোঁট, কনুই ও হাঁটুর চামড়া এই ঋতুর প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই এদের যত্ন নিতে হয় সবচেয়ে বেশি।

শীতে প্রকৃতির রুক্ষতা পৌঁছে যায় ত্বক অবধি; Source: dooktor.pl

ঠোঁটকে দেয়া আপনার একটু বাড়তি যত্ন আপনাকে বাঁচাবে ফাটা ও শুষ্ক ঠোঁট থেকে। শুষ্ক ঠোঁট আর পায়ের ফাটা গোড়ালি কুয়াশার মতোই আমাদের জীবনে এই ঋতুতে শীতের এক সংযোজন। এই ফাটা ঠোঁটকে পাশ কাটিয়ে গোলাপের পাপড়ির মতো তুলতুলে কোমল ঠোঁটের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন মৃত চামড়া থেকে একে মুক্তি দেওয়া। সহজেই করতে পারেন সেই কাজটি। ঠোঁটে একটু বেশি করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে তার ওপর সামান্য চিনি নিয়ে তুলা দিয়ে হালকা করে ঘষলেই উঠে আসবে মরা চামড়া। অথবা একই কাজ করতে পারে আপনার নরম টুথব্রাশটি। ভেজা ঠোঁটের ওপর ভেজা নরম ব্রাশটি বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই কাজটি করার সময় সতর্ক থাকুন, যদি প্রথমদিন ভালো ফলাফল না পান তবে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিন্তু অবশ্যই দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য ঠোঁটের নমনীয়তার কোনো ক্ষতি করবেন না। পরের কাজটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- ঠোঁটের আর্দ্রতা রক্ষা বা ময়েশ্চারাইজিং। ব্যবহার করুন পেট্রোলিয়াম জেলি এবং সাথে ভালো কোনো লিপবাম, আর এই ঋতুতে এই দুটোরই ব্যবহারের অভ্যাস বানিয়ে ফেলুন। কেননা ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি বাইরের খারাপ আবহাওয়া থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষা দেয়, কিন্ত আর্দ্রতার কাজটা পুরো করতে পারে না। ভালো কোনো লিপবাম এই  সমস্যার একটি সহজ সমাধান।

এ তো গেলো ঠোঁটের কথা। কিন্তু হাত-পায়ের অবস্থাও এই সময় যথেষ্ট করুণ হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নিই এই সমস্যা সমাধানে কিছু সহজ ও সাধারণ কথা। হাতের চামড়া শরীরের বেশিরভাগ অংশের চামড়া থেকে বেশি পাতলা হওয়ায় আবহাওয়ার প্রভাব তাতে পড়ে খুব সহজেই। ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজার বা হাতের বিশেষ ক্রিম হাতের রুক্ষতা দূর করবে খুব সহজেই। সকালে ও রাতে ব্যবহার ছাড়াও মনে করে হাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত প্রত্যেকবার হাত ধোয়া ও বাইরে যাওয়ার সময়। হাতে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রাতে ঘুমানোর সময় পরতে পারেন সুতির হাত মোজা। তাতে আরো ভালো ফলাফল পাবেন সহজেই। আর পায়ের কথা? পা ফাটার মতো সমস্যাগুলো এই সময়ে সবচেয়ে বেশি হয় মৃত চামড়া জমা হয়ে। তাই দরকার মৃত চামড়া অপসারণ করা ও পায়ের ত্বক কোমল রাখা। তাছাড়া ময়েশ্চারাজার ও মোজার ব্যবহার অনেকটা হাতের মতোই। মাসে দুই বা তিনবার পেডিকিওর করা এই সময় আপনাকে পায়ের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েল, গ্লিসারিন- এগুলো সবই পায়ের জন্য খুবই ভালো ময়েশ্চারাইজার।

শীতের সবজিগুলো যেন প্রকৃতির দেওয়া রক্ষাকবচ; Source: picquery.com

শীত কি তবে শুধু বিরহ আর বিষণ্ণতার সময়? নাকি সংগোপনে নতুনের আর সৌন্দর্যের বার্তাও নিয়ে আসে শীত? ভাবুন তো। পুরাতনকে বিদায় না জানিয়ে কীভাবে আসবে নতুন? আর এই বাংলায় তো শীত মানে পিঠাপুলির উৎসব, খেজুর রসের নিমন্ত্রণ। এমনি জীবনের স্বাদে ও সৌন্দর্যে ভরে উঠুন আপনিও।

ফিচার ইমেজ- redbookmag.com

Related Articles