Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানসিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমরা প্রায়ই মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যাই। চারদিকের কোলাহল, শহুরে একঘেয়েমি জীবন এসবের মধ্যেই আমরা নিজেদের খুঁজে বেড়াই। এরকম সময়েই মানসিক ভারসাম্য হারানোর ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে, যা আমাদের জন্য কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু নিজেকে তো আগে ঠিক রাখতে হবে। কী করতে পারেন এ সময়? নিজেকে সময় দেয়া, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, শহর থেকে বের হয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসা। এগুলো অবশ্যই আপনাকে কাজের মধ্যে মানসিক চাপ থেকে রক্ষা দেবে। চলুন আজ এরকমই কিছু বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক, যা আমাদের মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে সাহায্য করবে।

১. নিজেকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন

একটানা কাজ করে গেলে স্বাভাবিকভাবেই একঘেয়েমি চলে আসে জীবনে। অনেক সময় কাজ ভালো জানার সুবাদে নিজেকে অনেক কাজ একা করতে হয়। হতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্রের প্রধান আপনাকে অধিক পছন্দ করে বলে আপনাকে বেশি কাজ দিতে চায়। অথবা এটাও হতে পারে যে, কোনো দলগত কাজে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে সেভাবে সহায়তা করছে না। তাই সব কাজ আপনার একাই সামলাতে হচ্ছে। আপনি কাজ ভালো জানেন বলে এই না যে, সব কাজ আপনি নিজেই করবেন।

আগে নিজের দিকে দেখুন। কাজের চাপে পড়ে যদি নিজেকেই অসুস্থ করে ফেলেন, তবে ভালো কাজ জেনে লাভটা কোথায়? আগে নিজের শরীর ও মনের দিকে গুরুত্ব দিন। শরীর ও মনে যতদূর কাজ নিতে পারবেন, ততটুকুই করুন। এর বেশি করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করে ফেলার কোনো মানে হয় না।

একাই অধিক কাজ করা; Image source: Youtube

২. “হ্যাঁ” এর চেয়ে অধিক “না” বলতে শিখুন

আগের বিষয়টির মতো এখানেও আপনার নিজেকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। আপনাকে শুধু কাজ দিয়েই যাবে আর আপনি করেই যাবেন, এমন তো হতে পারে না। তাই না? কাজের চাপ অধিক মনে হলে বরং নতুন কাজ ফিরিয়ে দিন। আগে যেগুলো শেষ করার দরকার সেগুলো শেষ করুন।

এখানে অবশ্যই আপনার নিজের দিকে আগে খেয়াল দিতে হবে। তবে তার মানে এই না যে, সব কাজেই আপনি না বলবেন। এটা আবার কাজের প্রতি আপনার অনীহা প্রকাশ করে। তাই পরামর্শ হলো, যতদূর কাজ করতে পারেন করুন। অধিক কাজ মনে হলে সেটা ফিরিয়ে দিন।

কাজ বেশি হয়ে গেলে “না” বলে দিন; Image source: Yoyo Chinese

৩. কাজ শেষ করার জন্য একটি বাস্তবসম্মত তারিখ ঠিক করুন

বলা হয়, আমাদের মস্তিষ্ক তখনই ভালো কাজ করে, যখন আমাদের সামনে একটি নির্দিষ্ট তারিখ থাকে। অর্থাৎ আমাদের যখন কাজ শেষ করার তাড়া থাকে, তখনই আমাদের কাজ সবচেয়ে বেশি আগায়। তাই আপনার হাতে এখন যেসব কাজ বাকি পড়ে আছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির জন্য একটি তারিখ ঠিক করে দিন যে, এই তারিখের মধ্যে আপনি কাজ শেষ করবেন। তাহলে দেখবেন আপনার কাজ অনেক দ্রুত এগোবে আর অতিরিক্ত কাজের চাপে আছেন বলেও মনে হবে না।

এই উপায়টি পড়ালেখার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যায়। আপনি একটি অধ্যায় শেষ করার জন্য একটি সময় ঠিক করে দিন। দেখবেন আপনার পড়াও অনেক দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছে।

সময়সীমা; Image source: Time

৪. সকল বাঁধা দূরে সরিয়ে রাখুন

আপনি একমনে কাজ করে যাচ্ছেন, এমন সময় আপনার পাশে থাকা মুঠোফোনে কোনো একটি বার্তা আসলো। আপনি তা দেখার জন্য গেলেন আর এর মধ্যেই আপনার ১০ মিনিট চলে গেলো!

এরকমটা আমাদের অনেকের সাথেই হয়েছে। আসলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের কাজে মনোযোগ দিলে যে সময়টি আমাদের নষ্ট হয়, তা কল্পনারও বাহিরে। মনে হতে পারে যে, একটি বার্তা দেখতে ২ মিনিট সময়ই তো নষ্ট হলো। এ আর তেমন বেশি কোনো সময় নাকি! কিন্তু এর সাথে আগের কাজের প্রতি মনোযোগ ফিরে পেতে যে আরো ১০ মিনিট সময় চলে যায় সেদিকে কি আমরা খেয়াল করি? বোধহয় না!

তাই আমাদের উচিত হবে, যে জিনিসগুলো আমাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তা যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখা।

কাজের মাঝে সময় নষ্ট করা; Image source: Metro

৫. সবসময় লোকে কী বলবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না

আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন আর মনে করছেন যে মানুষজন আপনাকে লক্ষ্য করছে আপনি কীভাবে চলছেন। অথবা কর্মক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোনো জায়গায় আপনি কী করছেন তা মানুষজন লক্ষ্য করছে বলে আপনার মনে হয়। এতে আপনি কিছু একটা করতে গিয়েও চিন্তা করেন, এটা করা উচিত হবে কি না। লোকে কী বলবে!

চিন্তা করবেন না। এরকম ধারণা আপনার একার না। আমাদের অনেকেই এই ধারণা পোষণ করি। কিন্তু আসলে আমরা কেউই কাউকে সেভাবে লক্ষ্য করি না। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই পরেরবার থেকে নিজের মতো করে চলতে থাকবেন। চারপাশের পরিবেশ উপভোগ করবেন। দেখবেন জীবনটা আরো সুন্দর লাগবে।

৬. নিজের দুর্বলতা জানুন

আমাদের যদি সময় খারাপ যেতে থাকে, তবে বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের চারপাশের পরিস্থিতিকে দোষ দিয়ে থাকি। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, সমস্যাটা আমাদের নিজেদের মধ্যে। একটু সময় দিয়ে চিন্তা করলেই কিন্তু আমরা সমস্যাটা বের করে ফেলতে পারি।

মাথা ঠাণ্ডা করে বসুন। একটু ভাবুন যে সমস্যাটা আসলে কী নিয়ে। দরকার হলে উপকারী কারো সাথে কথা বলুন। দেখবেন একটা না একটা সমাধান বের হয়ে গিয়েছে।

৭. নিজেকে পুরস্কৃত করুন

আপনি অনেক বড় একটি কাজ সামলিয়েছেন। এখন নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। ভালো জিনিস। মনকে চাঙ্গা করার জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন। হতে পারে কোথাও ঘুরতে যাওয়া কিংবা ভালো কোথাও খেতে যাওয়া। দলগতভাবে কাজ করে থাকলে, সবাই একসাথে কোথাও বেড়াতে চলে যান। এতে সবারই ভালো লাগবে।

কঠিন কোনো কাজ করার পরে নিজেকে চাঙ্গা রাখার জন্য এটুকু তো করতেই পারেন।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন; Image source: BrighterMonday

৮. নিজের ভুল-ত্রুটি শুধরানো

আমরা কেউই শতভাগ শুদ্ধরূপে সব কাজ করতে পারি না। আসলে আমরা কেউই শতভাগ শুদ্ধ নই। সবারই ভুল-ত্রুটি আছে। তাই নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য লজ্জিত হবার কিছু নেই। পরেরবার যাতে এই ভুলগুলো না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। নিজের ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হওয়া খারাপ কিছু নয়। এটা ভালো এবং এই গুণটি আপনাকে সামনে যথাসম্ভব শুদ্ধরূপে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

বন্ধুদের সাথে সময় কাটান; Image source: Metro

কাজের চাপে আমরা অনেকসময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। এ সময় নিজেকে একাকীত্বের মাঝে ঠেলে দেয়া উচিত না। বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। তাদের সাথে হাসি-কান্নার গল্প নিয়ে আড্ডা দিন। সুযোগ হলে দূরে কোথাও ঘুরতে যান। এতে আপনার সময় ভালো কাটবে আবার একই সাথে কাজের প্রতি একঘেয়েমিটা দূর হবে। সবচেয়ে বেশি যেদিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হলো, নিজের শরীর। নিজেকে সুস্থ রাখুন। কারণ “সুস্থ দেহে সুন্দর মন” এটা তো আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি। নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন। তাহলে দেখবেন আপনার সব কাজই সুন্দরমতো হচ্ছে।

Feature image: Youtube

Related Articles