Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিডলাইফ ক্রাইসিস: জীবন মধ্যাহ্নের ভুল সমীকরণে ভুগছেন না তো আপনিও?

অফিস থেকে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হলো সজলের (ছদ্মনাম)। কেন ফেসবুক কমেন্টে অযথা তর্ক জড়াতে গেল স্বল্প পরিচিত মেয়েটির সাথে? আলিফ (ছদ্মনাম) কেন এখনো পানি নিয়ে আসছে না, তা নিয়েও রাগ হতে লাগলো। জীবনের ৩৮টি বসন্ত কেটে গেল, অথচ কেউ যেন তাকে কোনোদিন ভালোই বাসেনি।

কিন্তু স্ত্রী আলিফের সাথে তার বোঝাপড়া এতটাই ভালো ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে সবার ঈর্ষার পাত্র ছিল তারা। হঠাৎ করে সবকিছু কেমন যেন পানসে লাগছে সজলের, কোথায় যেন একটা সুর কেটে গেছে কোনো কিছুর। কী হয়েছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। সারাক্ষণ খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বসে থাকতে তারও তো ভালো লাগে না। তাহলে কেন এই সংকট চলছে তার জীবনে? কী রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে?

Image Source: cloudfront.net

আপনি হয়তো শিরোনাম দেখেই ভাবছেন, “আমার সাথে জীবনেও এমন কিছু হবে না”। তবে আজ হোক বা কাল হোক, এ কথা ভাবতে ভাবতেই হুট করে একদিন হয়তো টের পাবেন, আপনিও পড়ে গেছেন জীবন মধ্যাহ্নের কুচক্রে। গত কয়েক দশক ধরে যে জিনিসগুলো, যে মানুষগুলো আপনার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল, যারা ছিল আপনার বেঁচে থাকার সবটুকু অবলম্বন, আজ হয়তো তাদের সংস্পর্শে এসে নিজেই নিজেকে দুষছেন- কেন যে এদের পাল্লায় পড়েছিলাম? জীবনে কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম, এই হিসেব মেলাতে মেলাতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার নামই ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’। লিঙ্গ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ সবাই ভুগতে পারেন এই সংকটে।

আপনার সাথেও যদি এমন কিছু ঘটে, তবে জেনে রাখা ভালো, আপনি একা নন। এই একই ধরনের সংকটে যুগে যুগে ভুগেছে অনেক মাঝবয়সী জনতা। শেষ পর্যন্ত নিজের সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরে তারা ঠিক বাতলে নিয়েছে ভালো থাকার পথ। মাঝবয়স বলতে সাধারণত ত্রিশের কোঠার শেষদিক থেকে পঞ্চাশের শুরুর দিক পর্যন্ত সময়টুকু বোঝায়।

Image Source: pacificwomenscenter.com

জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনের কাউন্সিলররা জানিয়েছেন, মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগার লক্ষণগুলো আসলে কী কী। আগে তাহলে জেনে নেয়া যাক কী দেখলে বুঝবেন যে আপনি মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন, আর তা থেকে উত্তরণের পথটি আসলে কেমন।

উদাসীনতা ঘিরে ধরেছে আপনাকে

আশেপাশে যা কিছু ঘটছে, তা তো ঘটবেই, তাতে আমার কী? এই যদি হয় আপনার মতামত, সবকিছুতে যদি বলে ওঠেন- “ধুর ছাই, তাতে আমার কী?” তাহলে লক্ষণ কিন্তু খুব একটা সুবিধের নয়। জীবনকে আপনি যেভাবে চালাতে চান, জীবন সেভাবেই চলবে। চারপাশের প্রতিটি ঘটনা নাহলেও অনেক কিছুই কিন্তু আপনার জীবনকে প্রভাবিত করে। সেই কথাটি মাথায় রেখে আপনার প্রাত্যহিক জীবনকে সাজিয়ে ফেলুন নিজের ছাঁচে।

Image Source: rewireme.com

বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে চলুন। অতীতকে ছুঁড়ে ফেলুন পেছনে। বর্তমানটাই সত্যি, ভবিষ্যতই আপনার লক্ষ্য। কাজেই গা বাঁচিয়ে না চলে একটু একটু করে পাল্টে ফেলুন নিজের চারপাশ, একদিন টের পাবেন বিষণ্ণতা আপনার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে সেই কবে!

বিছানা ছাড়তেই অজানা আতঙ্ক আপনাকে গ্রাস করে নিচ্ছে

ঘুম ভাঙতেই মনে হচ্ছে- কেন? কেন আমি এই ফাঁদে আটকা পড়লাম? এই জীবন তো আমি চাই না! কিংবা হয়তো বিছানা ছাড়তেই মন চাইছে না আপনার। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে নিদ্রাদেবীর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে মন চাইছে। ঘুমিয়েই যদি জাগতিক সব সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়, তাহলে তো ঘুমই ভালো! কিন্তু আসলেই কি তা-ই?

Image Source: rewireme.com

বিছানা ছাড়ার কথা ভাবতেই যদি আপনি শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, তবে জেনে রাখুন, নিকট ভবিষ্যতেই কিছু পরিবর্তন আপনার একান্ত প্রয়োজন। মিডলাইফ ক্রাইসিস নিয়ে গবেষণা করছেন এমন কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী বলেছেন, বাসা বা গাড়ি পাল্টে নতুন করে উদ্যমী হওয়া যায়। গৎবাঁধা কোনো গণ্ডির মধ্যে আটকে পড়লে মাঝবয়সে বিরক্তি চলে আসতেই পারে। কাজেই শৈশব থেকে কোনো কিছু শেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সময়-সুযোগের অভাবে শেখা হয়ে ওঠেনি, এমন কোনো সৃজনশীল কাজে মন দিতে পারেন। হতে পারে সেটা গিটার শেখা কিংবা নতুন কোনো ভাষা শেখা। নিজেকে রিচার্জ করতে সব বয়সী মানুষের জন্যই এটি দারুণ কার্যকর।

তর্ক করে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না

কর্মক্ষেত্রে কিংবা সংসারে অসংখ্য ভুল-ত্রুটি আপনার চোখে পড়ছে। মুখের উপর হয়তো ভুলটি ধরিয়ে দিচ্ছেন, হাজারো তর্ক করছেন, কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর জন্য আপনি নিজে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। যেকোনো পরিবর্তনের ধর্মই হচ্ছে এটি শুরু হয় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে। বাকিরা তাদের ভুল শুধরে নেবে, এটা মনে করে তাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে নিজে স্রোতে গা ভাসাবেন, তাহলে কখনোই কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না।

Image Source: trendingposts.net

ব্যবহারে পরিবর্তন আনুন। তর্ক না করে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে নিজের অবস্থান নিয়ে ছোটখাট একটা গবেষণা করুন। বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী বা বিশ্বস্ত কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে কথা বলুন। নিজের আইডিয়া শেয়ার করুন। যুক্তি দিয়ে ভুলটা কেন ভুল, তা বুঝিয়ে দিন, ভুল সংশোধনের রাস্তা বাতলে দিয়ে নিজেও সেই পথেই হাঁটুন। যত বেশি মানুষের সাথে মিশবেন, কথা বলবেন, তত বেশি শিখতে পারবেন। চলার পথে প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু শিখিয়ে যায়, আর কোনো শিক্ষাই ফেলনা নয়।

আপনার জীবন চলে গেছে অটোপাইলটের হাতে

বিমানে বসে পাইলটরা রুট, গতিসীমা নির্ধারণ করে অটোপাইলটের হাতে বিমান ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকেন। ঠিক তেমনি আপনারও যদি মনে হয় জীবনে আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, যেভাবে চলছে চলুক না, তাহলে নড়েচড়ে বসুন মশাই! গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে মধ্যবয়স বলতে ৩৫-৫০ বছরকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশিদের গড় আয়ু যেহেতু ৭১ বছর, জীবন তো এখনও অনেকখানি বাকি, এখনই হাল ছেড়ে দিলে চলবে?  

Image Source: stockfresh.com

একটু শান্ত হোন, ধৈর্য ধরুন। জীবনের কাছ থেকে আপনার কী পাওয়ার ছিল, আজন্ম লালিত সেই সাধগুলোর তালিকা তৈরি করুন। নিজেকে নিজে উৎসাহিত করুন, ভালো বই পড়ুন, মুভি দেখুন, ঘুরতে বেরিয়ে যান, পছন্দের মানুষদের সাথে সময় কাটান। মনের ভেতর জমে থাকা মেঘগুলো এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিন।

এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন

মধ্যবয়সের অন্যতম একটি সমস্যা হলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কগুলো থেকে পা পিছলে ফেলা। ঘরে হয়তো আপনার এক সময়ের খুব কাঙ্ক্ষিত প্রিয়জনই জীবনসঙ্গী হিসেবে রয়েছে, তবুও কীসের যেন অভাব বোধ করছেন সারাক্ষণ। বাইরে কোনো নর/নারীকে দেখে জেগে উঠছে কামনা। আপনি জানেন এটা ঠিক হচ্ছে না, অথচ বেরিয়ে আসার কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনার জন্য বিব্রত হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিও।

Image Source: cloudfront.net

খুব প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো- ওয়াদা, বিশ্বাস এবং মানুষের হৃদয় কখনো ভাঙতে হয় না। কাজেই নিজের লক্ষ্য স্থির করুন, কী চান, কাকে চান মন ঠিক করুন। কে কী ভাবছে, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি আপনি কী ভাবছেন। তবে আপনার ভাবনার জন্য কেউ যেন ভুক্তভোগী না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে সিদ্ধান্ত নিন। প্রতিদিনকার একঘেয়ে রুটিন থেকে বেরিয়ে প্রিয়জনের হাতটি ধরে বেরিয়ে পড়ুন খোলা প্রান্তরে আর মন খুলে গেয়ে উঠুন-

“চলো না ঘুরে আসি অজানাতে…”।

কিছুই চলছে না পরিকল্পনামাফিক

আপনি যে আসলেই মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন, তার অন্যতম প্রমাণ হলো কোনো কাজই পরিকল্পনামাফিক না চলা। নিজের জন্য এতদিন ধরে যা যা সাজিয়েছেন- চাকরি, প্রাত্যহিক রুটিন, সঙ্গী- সবকিছুই কি এখন গলা টিপে ধরতে চাইছে?

Image Source: mirror.co

যদি এমনটাই হয়, তবে নিজের প্রতি একটু মায়া করুন। সময় দিন নিজেকে। নিজের কাছ থেকে অনুমতি নিন ট্র্যাক পাল্টে নতুন কিছু করার। এই বয়সে কী করলে সবচেয়ে ভালো হয়, তা নিয়ে কথা বলুন বয়োজ্যেষ্ঠ কারো সাথে। অভিজ্ঞ মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি তার অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু জ্ঞান ধার নিয়ে নতুন করে শুরু করুন জীবন মধ্যাহ্ন।

আপনার সাথে যায় না এমন সব কাজ করা শুরু করেছেন

সবার কিছু জন্মগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। সেই বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসলে বুঝে নিতে হবে চলছে কোনো সংকট। পরিবর্তন খুব একটা খারাপ কিছু নয়। তবে সেটা ইতিবাচক পরিবর্তন না নেতিবাচক পরিবর্তন, তা লক্ষ করতে হবে। আপনার জন্য কারো ক্ষতি হবে, তা তো মেনে নেয়া যায় না।

Image Source: mirror.co

মন খুলে এমন কারো সাথে কথা বলুন যে আপনাকে বিচার করবে না, আপনার কোনো কথা শুনে নাক কুঁচকাবে না, কটু কথা বলবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনার কথায় কিছু যাবে আসবে না এমন কারো সাথে কথা বললে, সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হলে। পরিবর্তনের গল্পগুলো বলতে বলতে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন, ভালো হচ্ছে নাকি মন্দ!

অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন

যখন আপনি বেশ সময় নিয়ে অন্য কারো অতীত নিয়ে গবেষণা করবেন, নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা ছেড়ে সে কার সাথে ঘুরছে, তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ করবেন, মনে রাখবেন, এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে ঐ ব্যক্তি এমন কিছু বাগিয়ে নিচ্ছে যা অর্জন করার সুযোগ আপনার হাতেই ছিল। তা না করে আপনি সময়টুকু নষ্ট করেছেন অন্যের অর্জন আর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে।

এখনই সময় অন্যের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে ছেড়ে নিজের জীবনের গতিপথ ঠিক করার, নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার। দিনশেষে নিজের কৃতকর্মের জন্য আপনি ভুগবেন না গর্বিত হবেন- তা ঠিক করার দায়িত্ব একান্তই আপনার।

Image Source: mirror.co

কোনো কাজের শেষটা আগে থেকে জেনেও দুশ্চিন্তা করতে বসে যাওয়াও মিডলাইফ ক্রাইসিসের অন্যতম একটি লক্ষণ। যে কাজে সফল হবেন না, জেনেশুনে সেদিকে পা বাড়াতে যাবেন না। মাঝে মাঝে সবকিছু গোলমেলে ঠেকতেই পারে, তাই বলে মাথা গরম করে উল্টোপাল্টা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, হাল ছেড়ে দেবেন না। সফল হলেও অনেকে সন্তুষ্টি খুঁজে পায় না। নিজের প্যাশনের দিকে মন দিন।

“আমি সত্যিই কোন কাজে ভালো?”– এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলে সন্তুষ্টি নিজে থেকেই চলে যাবে। সবসময় জেতার চেষ্টা করবেন না, তবে অপমানিত যেন না হতে হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। দ্বিধাবোধ না করে পূর্ব অভিজ্ঞতার জের ধরে এগিয়ে চলুন সোজা উপরের সিঁড়ি বেয়ে। সর্বোপরি নিজের উপর ভরসা রাখুন, দিনশেষে সফলতা আপনারই আসবে, লিখে রাখতে পারেন।

This article is in Bangla language. It is based on midlife crisis, its syptoms and solution. References have been hyperlinked inside the article.

Feature Image: cloudfront.net

Related Articles