Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানুষ নয়, বিয়ের জন্য ভালোবেসে অন্যকিছুকে বেছে নিয়েছেন যারা!

কোন মানুষের সাথে সারাজীবন কীভাবে কাটাবেন সেটা বুঝতে পারছেন না? তাহলে আর মানুষ কেন, অন্যকিছুকেই নাহয় বিয়ে করে ফেলুন! এমন কিছুকে, যে না পারবে নড়তে, না পারবে আপনার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলতে। তার জন্য মাসে মাসে টাকা আয় করতে হবে না, খাবার রান্না করতে হবে না, মান ভাঙাতে মানসিক চাপে থাকতে হবে না। ভাবছেন ঠাট্টা? একদম নয়। এমন কাজ বাস্তবেই যারা করেছেন তারা নিশ্চয়ই কোনো ঠাট্টা করেননি। একেবারে সত্যিকারভাবেই বিয়ে করেছেন তারা বস্তু কিংবা এমন কিছুকে, যার নাম শুনলে চোখ কপালে উঠে যায়। অবশ্য, তাদের সবার মানুষের সাথে থাকতে অসুবিধা ছিল না। একেকজনের এমন উদ্ভট বিয়ের পেছনে আছে একেক রকম মজার গল্প। চলুন না, এমন কিছু মানুষ আর তাদের জীবনসঙ্গীকে দেখে আসি।

লিন্ডা ডোচার্মে: নাগরদোলার সাথে সুখের সংসার যার

নাগরদোলার সাথে লিন্ডা; Source: NY Daily News

২০১৫ সালে টিএলসি’র ‘মাই স্ট্রেঞ্জ অ্যাডিকশন’ অনুষ্ঠানে প্রথম আসেন লিন্ডা ডোচার্মে। নিজের কোনো অদ্ভুত শখ আছে বলে অবশ্য মানতে চাননি তিনি। কী-ইবা আর করেছেন লিন্ডা? কেবল ২০১২ সালে কার্নিভালের এক নাগরদোলাকে বিয়ে করেছেন তিনি। তবে হুট করে নয়, টানা ৩০ বছর প্রেম করার পর সারাজীবন ব্রুস নামের এই ২১ মিটার লম্বা নাগরদোলাকে স্বামী হিসেবে মেনেছেন লিন্ডা। তাদের প্রথম দেখা হয় ১৯৮২ সালে। তখন থেকেই প্রেমের শুরু। এরপর প্লেন এবং ট্রেন এসেছিল লিন্দার জীবনে ভালোবাসা হিসেবে। তবে টিকে গিয়েছে কেবল ব্রুস। তাই ২০১২ সালে নিজের জীবনসঙ্গী করে নেয় লিন্ডা ব্রুসকে। সারাজীবন পাশে থাকার কথা দেয়। আর সেই কথা লিন্ডা রেখেছেনও। ঝড়ে ভেঙে যাওয়ার পর নিজের কাছে নিয়ে আসেন লিন্দা ব্রুসকে। এজন্য খরচ করেন প্রায় ১,০০,০০০ ডলার। সুখের সংসার তাদের। মাঝেমাঝে ক্যান্ডেললাইট ডিনারও করেন তাঁরা।

ঝ্যাং জিয়াজিয়া: রোবট যার স্ত্রী

ঝ্যাং ও তার রোবট বউ; Source: South China Morning Post

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করেন চীনের ঝ্যাং জিয়াজিয়া। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইঞ্জিনিয়ার ঝ্যাং বেশ ঝামেলায় পড়ে যান যখন পরিবার থেকে বারবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সম্প্রতি চীনে সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি তুলে নেওয়া হলেও এই আইনের কারণে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় দেশের পুরুষদের এখন অবধি। পুরুষের তুলনায় বিবাহযোগ্য নারীসংখ্যা অপ্রতুল। তাই এই সমস্যা থেকে বাঁচতে একদম নিজের পছন্দসই এক নারী রোবটকে তৈরি করেন ঝ্যাং ২০১৬ সালে, আর তার সাথে বিয়েটাও সেরে নেন। ইংইং নামে ঝ্যাংয়ের স্ত্রী খুব বেশি কথা ও কাজ জানে না। ছবি দেখে চিনতে পারে অবশ্য। ভবিষ্যতে বউকে ঘরের সাধারণ কাজ শিখিয়ে দেওয়া আর সারা ঘর চালাতে পারার মতো তৈরি করার পরিকল্পনা আছে ঝ্যাং জিয়াজিয়ার।

ব্যাবিলোনিয়া আইভেজ: ‘সমলিঙ্গ’ বিয়ে নিয়ে সমালোচনায় পড়েছিলেন যিনি

গুদামঘরের সাথে বিয়েতে ব্যাবিলোনিয়া আইভেজ; Source: Seattle PI

সিয়াটলের আইভেজ ভালোবাসতেন এক ১৭০ বছর বয়সী গুদামঘরকে। সেবার খুব কাছে চলে এসেছিল গুদামঘরটি ভেঙে ফেলার সময়। কিন্তু আইভেজ পিছপা হননি। নিজেদের ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে ২০১২ সালে সবার সামনে আয়োজন করে বিয়ে করেন তিনি গুদামঘরটিকে। একদিকে গুদামঘর লিঙ্গের দিক দিয়ে নারী, আইভেজও একজন নারী। তাই এই পুরো ব্যাপারটিকে ‘সমলিঙ্গের বিয়ে’ বলে অনেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সেসবে কান না দিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলেন আইভেজ। পরবর্তীতে গুদামঘরটিকে অনেক চেষ্টায়ও বাঁচাতে পারেননি তিনি। গুদামঘরের বিধবা হয়েই জীবন কাটছে তার।

ট্রেসি এমিন: পাথরকে বিয়ে করেই খুশি নারী

ট্রেসি এমিন; Source: artnet News

নানারকম আলোচনা-সমালোচনায় প্রায়ই অংশ হন লন্ডনের ট্রেসি এমিন। বিয়ের ব্যাপারেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ২০১৫ সালে একটি প্রাচীন পাথরকে বিয়ে করেন ট্রেসি। এ ব্যাপারে ট্রেসি এগিয়েছেন পোপ দ্বিতীয় জোন পল এবং অ্যানা তেরেসার মধ্যকার প্রেমের পত্রালাপগুলো পড়ে। নিজেদের প্রতি শারীরিক নয়, বরং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তারা। সেই ভাবনা থেকেই পাথরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন ট্রেসি এমিন। যা-ই হোক না কেন, পাথর স্বামী সবসময় ট্রেসির পাশে থাকে, কোথাও যায় না। নিজের কষ্টের সময়গুলোতে পাথরটিকে মনে করেন ট্রেসি। নিজের বিবাহিত স্বামীকে অবশ্য সাধারণ পাথর নয়, বরং প্রাচীন পাথর হিসেবে পরিচিত করতে পছন্দ করেন এই নারী।

রিচার্ড টোরেস: বিয়ে করছেন একের পর এক গাছ

রিচার্ড টোরেসের গাছ বউ; Source: NY Daily News

প্রকৃতিকে সবাই ভালোবাসেন, কিন্তু প্রকৃতির মধ্য থেকেই কাউকে বিয়ে করতে পারেন ক’জন? পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড পরিবেশকে, গাছকে ভালোবাসেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই এমন এক কাজ করেন তিনি। ২০১৩ সালে পেরুতে এক গাছকে বিয়ে করে এই অন্যরকম সচেতনতার শুরু করেন টোরেস। এরপর ব্যুয়েন্স আয়ার্সে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরেকটি গাছকে বিয়ে করেন তিনি। পরের বছর কলোম্বিয়ার বোগোটাতে একটি গাছকে বিয়ে করেন আবার। ২০১৬ সালে মেক্সিকোর সাইপ্রেস গাছকে বিয়ে করলেও টোরেসের সবচাইতে বড় বিয়েটি হয় গুয়েতামালা সিটিতে। টোরেসের এই বিয়ে আপাতত থামবে বলে মনে হচ্ছে না।

লরেন অ্যাডকিন্স: কার্ডবোর্ডের তারকাই যার জীবনসঙ্গী

লাস ভেগাসে হানিমুন সারেন লরেন; Source: Daily Mirror

তারকাদের প্রতি ভালোবাসা অনেকেরই থাকে। কিন্তু সেটা বাস্তবে কতখানি টিকে থাকে, কিংবা কতদিন পর্যন্ত বজায় থাকে? লরেনের ব্যাপারটি অবশ্য আর দশটা তারকাপ্রেমীর মতো নয়। ভালোবাসার তারকাকে মনে রেখেই অনেকে বিয়ে করেন বাস্তব জীবনে। লরেন সেটা করেননি। টোয়ালাইটের অ্যাডওয়ার্ড কালেন নামের চরিত্রটির প্রেমে অনেকদিন ধরেই মুগ্ধ ছিলেন লরেন। টোয়ালাইট পর্দায় চলে আসলে এই চরিত্রটির অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসনকে এতোদিন ধরে নিজের জমিয়ে রাখা সব ভালোবাসা দিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু কেবল তারকাকে ভালোই বাসেননি লরেন, এটিও বুঝেছেন যে, আর যা-ই হোক, প্যাটিনসনকে কখনোই পাবেন না তিনি। সেই চেষ্টাও করেননি তাই। তার বদলে, কার্ডবোর্ডে তার ভালোবাসার মানুষটির ছবি কেটে দ্বিমাত্রিক এই রবার্ট প্যাটিনসনের সাথে ২০১৪ সালে লাস ভেগাস ওয়েডিং চ্যাপেলে ৫০ জন সাক্ষীর সামনে বিয়ে সেরে ফেলেন ২৫ বছর বয়সী লরেন। বিয়ের পর লস এঞ্জেলসে মধুচন্দ্রিমাতেও গিয়েছিল এই নবদম্পতি।

ক্যারোল সান্তা ফে: যার জীবনসঙ্গী আস্ত একটা স্টেশন

ক্যারোল এবং তার জীবনসঙ্গী; Source: Dagospia

সে অনেক বছর আগেকার কথা। ক্যারলের বয়স তখন মাত্র নয়। সেসময় তার দেখা হয় দায়েদ্রার সাথে। দায়েদ্রা মূলত, সান দিয়াগোর একটি রেল স্টেশন। যার আসল নাম সান্তা ফে ডিপো। একে অন্যকে দেখেই প্রেমে পড়ে যান তাঁরা। অবশ্য সেই প্রেমের প্রকাশ হয়েছিল অনেক পরে। আর বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছিল ২০১৫ সালে, পরিচয়ের ৩৬ বছর। সঙ্গীটিকে অসম্ভব ভালোবাসেন ক্যারোল। প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট সময় এসে স্টেশনে কাটান তিনি। কথা বলেন, নিজের সারাদিনের কথাগুলো বলে ফেলেন। তবে সেসবের সময় খুব সতর্ক থাকেন ক্যারোল। একসময় এরিকা আইফেলকে (আইফেল টাওয়ারকে বিয়ে করেছিলেন যিনি) আইফেল টাওয়ারের কাছে যেতে না করা হয়েছিল, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাকে। ক্যারোলের ভয় তাকে এভাবে স্টেশনের সাথে কথা বলতে দেখলে হয়তো একসময় এখানে তাকে আসতে বাঁধা দেওয়া হবে। এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্রেক হোক তা চান না ক্যারোল। আর তাই নিজের ভালোবাসাকে সবার থেকে লুকিয়েই যতটা সম্ভব ভালোবাসেন তিনি।

ফিচার ইমেজ: thehooknew

Related Articles