Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অতিরিক্ত ঘুমানো থেকে নিজেকে বাঁচাবেন যেভাবে

আমাদের আশেপাশে এমন অনেককেই দেখি, যারা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে চায়। আজকে সকালে হয়তো একটি সাক্ষাৎকার আছে। কিন্তু দেখা গেলো যার সাক্ষাৎ করার কথা, সেই ভদ্রলোক ঘুমিয়ে আছেন! এমন অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই আছে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য দিনে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম অবশ্যই জরুরি। কিন্তু এটা যদি ৮ ঘন্টা পার হয়ে ৯-১০ ঘন্টা কিংবা এর চেয়েও বেশি হয়ে যায়, তবে সেটাকে অতিরিক্ত ঘুম বলাই উচিত। এই অতিরিক্ত ঘুম শরীর সুস্থ রাখার বদলে বরং শরীরকে আরো নষ্ট করে ফেলে। আমাদের মধ্যে যারা এই অতিরিক্ত ঘুমের শিকার, তারা জানেন এজন্য প্রতিদিন কত রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

ঘুমের জন্য দেরি হওয়া; Image source: Living Intentionally

তাহলে আসুন আজকে এই অতিরিক্ত ঘুমানো এবং এর থেকে কীভাবে নিস্তার পাওয়া যায় সেটার কিছু উপায় খুঁজে বের করা যাক।

অতিরিক্ত ঘুমানো কাকে বলে?

বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমানোর আদর্শ সময়সীমা ৭-৯ ঘন্টা। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক বলতে বোঝানো হয়েছে যাদের বয়স ১৮-৬৪ বছর। অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘুমের এই আদর্শ সময়সীমা প্রযোজ্য না। আমরা এখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ঘুম নিয়েই আলোচনা করবো। অর্থাৎ কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ঘুম যদি দিনে ৯ ঘন্টার বেশি হয়ে যায়, তখন সেটিকে অতিরিক্ত ঘুমানো বলতে হবে। তবে এর মানে এই না যে, আপনি সপ্তাহে কিংবা মাসে একদিন ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমিয়ে ফেললে সেটিকে অতিরিক্ত ঘুমানো বলতে হবে। আপনি যদি প্রায় প্রতিদিনই ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমিয়ে থাকেন, তখন সেটিকে অতিরিক্ত ঘুম বলতে পারেন।

ঘুমানোর আদর্শ সময়সীমা; Image source: amerisleep.com

আমরা কেন অতিরিক্ত ঘুমাই?

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, অতিরিক্ত ঘুমানোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি রোগ হিসেবে দেখা হয় এবং এর একটি নামও আছে। নামটি হলো “হাইপারসোমনিয়া”। দিনে ঘুমের আদর্শ সময় পার করার পরেও যারা আরও ঘুমাতে চায়, তাদের এই রোগটি আছে বলে ধরা হয়। যাদের এই হাইপারসোমনিয়া আছে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। যেমন –

· কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা
· শরীরে শক্তি কম থাকা
· স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা থাকা

এগুলো নিদ্রাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা আমাদের অতিরিক্ত ঘুমাতে বাধ্য করে। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়, যা অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুমানোর চাহিদা তৈরি করে।

তবে সাময়িক অসুস্থতার জন্য কারো ঘুম অনেক বেশি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে শরীর সুস্থ হবার পাশাপাশি এই অতিরিক্ত ঘুমানোর চাহিদাও দূর হয়ে যায়। এছাড়া মাদকজাত দ্রব্য সেবন করলে কিংবা হীনম্মন্যতায় ভুগলেও অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস দেখা যায়।

অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য যে সকল শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়

শুরুতেই বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এটি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক উভয়দিক থেকেই বিপর্যস্ত করে তোলে। তাহলে আসুন এখন অতিরিক্ত ঘুমানোর কিছু ক্ষতিকর দিকের সাথে পরিচিত হই।

হৃদরোগ

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা দিনে ৮ ঘন্টার বেশি ঘুমায়, তাদের সাধারণের চেয়ে অ্যাজাইনায় (হৃদযন্ত্রে রক্তের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে যে ব্যথা অনুভূত হয়) আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ থাকে এবং অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ১০% বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত ঘুমের জন্য হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া; Image source: SHUTTERSTOCK

৭১,০০০ মধ্যবয়স্ক নারীকে নিয়ে করায় একটি পরীক্ষায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, যারা দিনে ৯-১১ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমায়, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৮% বেশি থাকে।

স্ট্রোক

বয়স ১১ বছরের বেশি এমন ৯,৭০০ ইউরোপীয় নিয়ে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা চালায়। সেখানে দেখা যায়, যারা দিনে ৮ ঘন্টার বেশি ঘুমায়, তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৪৬% বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস

একটি কানাডীয় গবেষণায় ২৭৬ জন মানুষের জীবনের ধরণ ৬ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে দেখা যায়, যাদের ঘুম আদর্শ সময়ের চেয়ে কম বা বেশি হয়, তাদের শরীরের গ্লুকোজের অসাম্যতার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। যাদের ঘুম আদর্শ সময় মতো হয় না, তাদের ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে ২০% এবং যদি নিয়মিতভাবে ঘুমের আদর্শ সময় মানা না হয়, তবে দ্বিতীয় শ্রেণীর ডায়াবেটিস হবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

শরীরে গ্লুকোজের ভারসম্য নষ্ট হওয়া; Image source: Everyday Health

ওজন বৃদ্ধি

আগের পর্যবেক্ষণ থেকেই জানা যায় যে, ৬ বছরে অতিরিক্ত ঘুমানো ব্যক্তিদের ওজন বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক সময় ধরে ঘুমানো ব্যক্তিদের চেয়ে ২১% বেশি হয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত ঘুমানো আপনার শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়, যা আমরা অনেকেই পছন্দ করি না।

ব্যথার সৃষ্টি হওয়া

দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের কোনো নড়াচড়া না হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পিঠের ব্যথা প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়। লম্বা সময় ধরে সঠিক নিয়মে না শুয়ে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য মাথাব্যথারও সৃষ্টি হয়।

মানসিক ভারসাম্যহীনতা

অনেক পুরনো একটি প্রশ্ন করা যাক। ডিম আগে নাকি মুরগি আগে? ঘুমের কম-বেশির সাথে ডিম-মুরগির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এই প্রশ্নটির সাথে আছে। হীনম্মন্যতা আগে নাকি অতিরিক্ত ঘুম আগে? আমরা সবাই জানি, হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকলে ঘুমের চাহিদাও বেড়ে যায়। কিন্তু এই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হীনম্মন্যতা আরো বেড়ে যায়। এখানে আমরা অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। আসলে অতিরিক্ত ঘুম শরীর ও মন কোনোটির জন্যই ভালো নয়।

অলস মস্তিষ্ক

বলা হয়ে থাকে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এখানে শয়তানের কারখানা না হলেও, অতিরিক্ত ঘুম যে আপনাকে দৈনন্দিন কাজ থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে, তা আর বলতে বাকি রাখে না। আপনের ঘুমের চাহিদা যত বেশি হবে, মস্তিষ্কের কাজ করার শক্তিও তত কম হবে।

মস্তিষ্কের কাজ করতে না চাওয়া; Image source: freeminds – DeviantArt

অতিরিক্ত ঘুম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?

আমরা যারা নিজেদের এবং আশেপাশের লোকজনের এই অতিরিক্ত ঘুমানো নিয়ে বিরক্ত, তারা প্রায় সবাই এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজে থাকি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত খুঁজে পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য এবং সাহায্য করতে পারে এমন কয়েকটি মত এখানে তুলে ধরা হলো।

· আপনার কখন ঘুম থেকে ওঠা জরুরি তার উপর ভিত্তি করে ১-২টি অ্যালার্ম ঠিক করে রাখুন। প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।
· অ্যালার্ম ঘড়িটি হাতের থেকে দূরে রাখুন। এতে অ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য হলেও আপনাকে বিছানা ছেড়ে ওঠা লাগবে।
· যখন অ্যালার্ম বাজবে তখনই উঠে পড়বেন। ৫ মিনিট বেশি ঘুমানোর জন্য আপনার ১ ঘন্টার দেরি হয়ে যেতেই পারে!
· খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই নাস্তা করতে চাই না। কিন্তু বলা হয়, যদি আপনি ঘুম থেকে ওঠার ৩০ মিনিটের মধ্যে সকালের নাস্তা সেরে ফেলেন, তাহলে আপনি সারাদিনের জন্য কিছু বাড়তি শক্তি পাবেন এবং এটি আপনাকে রাতে ভালো মতো ঘুমাতেও সাহায্য করবে।
· রাতে ১-২ ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন শুয়ে পড়বার চেষ্টা করবেন।
· সাধারণত সপ্তাহের বন্ধের দিন আমরা একটু বেশি ঘুমাই। এই অভ্যাসটি না করাই ভালো। এটি আপনার নিয়মিত ঘুমের ধারায় ব্যাঘাত আনতে পারে।
· নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এটি আপনার শরীর ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
· সকালের সূর্য দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
· কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা বা হীনম্মন্যতার মধ্যে থাকলে তার আসল কারণ খুঁজে বের করুন। এটি কীভাবে সমাধান করা যায় তা আগে ঠিক করুন। কারণ দুশ্চিন্ত আর হীনম্মন্যতা আপনাকে ঠিকমতো ঘুমাতে দেবে না।

সকালের সূর্য দেখার অভ্যাস গড়ুন; Image source: Flickr

এগুলো ছিলো অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার কিছু উপায়। তবে বড় ব্যাপার হলো, এখানে নিজের ইচ্ছাশক্তি সবথেকে বেশি কাজ করে। আপনি যদি এই বদভ্যাস ত্যাগে নিজে উদ্যোগী না হয়ে থাকেন, তবে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।

Feature image: Archery Kid

Related Articles