Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডায়েট কন্ট্রোল সম্পর্কে যত ভ্রান্ত ধারণা

নিজেকে সুন্দর দেখতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু নির্দিষ্ট বা আকর্ষণীয় ফিগার ধরে রাখাটা সবসময় হয়ে ওঠে না। কর্মব্যস্ত জীবনে তো ডায়েট আরেক ভয়াবহতার নাম! তারপরও অনেকেই নিয়ম কানুন মেনে চলেন। নিজেকে সুন্দর আকৃতিতে রেখে অন্যের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছেন এমন মানুষ বিশ্বে যেমন কম নয়, তেমনি তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে চোখ-মুখ শুকিয়ে, গাল ভেঙে এক মাসেই চেহারা পাল্টে ফেলেছেন এমন সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সঠিকভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ না করার জন্য অনেকেরই প্রয়োজনীয় মেদ কমে আসে, শরীরে তৈলাক্ততা ও মসৃণতা কমে যায়, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা যায়। যারা স্বাস্থ্য কমাতে চাইছেন, তাদের ডায়েট নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা দূর করতেই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

১. ওজন কমানো মানেই একেবারে অনেক ওজন কমিয়ে ফেলা

ধরুন আপনি বিএমআই মেপে দেখলেন আপনার প্রায় ৩০ কেজি ওজন কমাতে হবে। এখন যদি আপনি মনে মনে পণ করেন মাসে ১০ কেজি করে কমিয়ে ফেলবেন, তাহলে ব্যাপারটা আপনার জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর হবে না। এক মাসে সাধারণত ৫-৭ কেজি কমানোই আদর্শ ওজন কমানোর পরিমাপ বলা যায়।

ধীরে ধীরে ওজন কমান; ছবিসূত্র: scientificamerian.com

২. মিষ্টি একেবারেই খাওয়া যাবে না

এটা ভীষণ ভুল একটি ধারণা। প্রতিটি মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি প্রয়োজন। তাতে অবশ্যই শর্করা, প্রোটিন এবং স্নেহ পদার্থের ভাগ থাকে। শর্করার অংশটুকু হিসেব করে অবশ্যই মিষ্টি খাওয়া যাবে

মিষ্টি খাওয়াই যায়; ছবিসূত্রঃ businessinsider.com

৩. কী খাচ্ছেন তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কতটুকু খাচ্ছেন

প্রকৃত নিয়ম হচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো। কতটুকু খাচ্ছেন তার দিকে মনোযোগ না দিয়ে কী খাচ্ছেন তার দিকে মনোযোগ দিন। এক বাটি ভাতে যতটুকু ক্যালরি আছে, নিঃসন্দেহে এক স্লাইস পিজ্জায় তার থেকে বেশি ক্যালরি আছে। সুতরাং এক বাটি ভাত না খেয়ে কষ্ট করে এক স্লাইস পিজ্জা খেয়ে ক্ষুধা নিয়ে থাকলেন, কিন্তু মাস শেষে ওজনটা কমলো না, ব্যাপারটা মোটেও সুখকর নয়। তাই পরিমাণ নয়, খাদ্যের মানের দিকে নজর দিন।

৪. ব্যায়াম করতে পারলে সব খাওয়া যাবে

ওজন কমাতে দুটোই সমান ভূমিকা পালন করে। যা খাবেন তার থেকে বেশি ক্যালরি খরচ করতে পারলে অবশ্যই আপনার ওজন কমবে, কিন্তু তাই বলে ভারী খাবার খেয়ে দুই ঘণ্টা ব্যায়াম বেশি করলেই আবার ঠিক হয়ে যাবে এই ধারণাও সঠিক নয়। তাই পরিমিত খান, পরিমিত ব্যায়াম করুন। এটাই স্বাস্থ্যসম্মত

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পরিমিত খান; ছবিসূত্র: wikihow.com

৫. একবেলা কম খেলে তাড়াতাড়ি ওজন কমে

সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং প্রতিদিন যা তিন বেলায় খেতেন, তাকে ভাগ করে ছয় বেলায় খেতে পারলেই শরীরের মেটাবলিজম বেশি ভালো থাকবে। তাছাড়া একবেলা না খেলে পরের বেলায় সেটা ঠিক করার জন্য অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই কোনোমতেই একবেলা কম খাওয়া যাবে না।

৬. কখনোই ফাস্টফুড খাওয়া যাবে না

কখনোই কিছু করা যাবে না বলতে কোনো নিয়ম এখানে নেই। তবে যেকোনো কিছু পরিমিত থাকাই ভালো। দুই-একদিন দাওয়াত, বন্ধু-বান্ধবের জন্মদিন কিংবা কারো বিয়েতে মজার মজার খাবারগুলো নিশ্চয়ই বাদ দেয়া যাবে না!

ফাস্টফুড খাওয়া যাবে না এমনটি কোথাও বলা নেই; ছবিসূত্র: pexelsfoods.com

৭. সবজিই শুধুমাত্র ওজন কমাতে সাহায্য করে

একদমই সত্য নয়। শুধুমাত্র সবজিতে আপনি কখনোই সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদানগুলো পাবেন না যা আপনাকে সারাদিন সচল রাখবে। তাই শুধুমাত্র শাকসবজি নয়, বরং সাথে কিছু শর্করা এবং প্রাণীজ প্রোটিনও রাখুন।

শুধু সবজিই সুষম খাদ্য নয়; ছবিসূত্র: thespruce.com

৮. ঠাণ্ডা পানি, ডেটক্স পানি, জিরাপানি, চিরতার রস পানে ওজন কমে

পানি অবশ্যই ওজন কমাতে সহায়ক। খাবার কিছুক্ষণ আগে পানি পানে খাবার চাহিদা কমে আসে। কিন্তু পানি কখনোই প্রত্যক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে না। জিরাপানি বা চিরতার পানি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এর সাথে ওজন কমার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই

ডেটক্স পানিতে ওজন কমে না; ছবিসূত্র: budgetsavvydiva.com

৯. দুপুরে ঘুমালে ওজন বাড়ে

একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য সারাদিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সেটা যেকোনো সময়েই হতে পারে। দুপুরে একটু ঘুম যদি সারাদিনের ক্লন্তি কমিয়ে আনে, তাহলে ঘুমিয়ে নিন। শরীর ক্লান্ত থাকলে ডায়েট আরো কঠিন হবে।

ক্লান্তিতে দুপুরে ঘুমিয়ে নিন; ছবিসূত্রঃ betterbeliever.com

১০. যত বেশি ব্যায়াম, তত বেশি উপকার

দিনে কখনোই ২ ঘন্টার বেশি ব্যায়াম করা উচিত নয়। এতে শরীরের পেশীতে ভাঙন, ডিহাইড্রেশন সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

১১. রাতের খাবার ৭টার পর খাওয়া উচিত নয়

রাতের খাবার মূলত খেতে বলা হয় ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে। এতে করে শরীরে বাড়তি মেদ জমার সুযোগ পায় না। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে ঠিক ঐ সময়ের মধ্যে না খেলে ডায়েট হবে না। যাদের একটু রাত করে ঘুমাতে যাবার অভ্যাস আছে, সেভাবে সময় মিলিয়ে নিলেই হয়ে যায়। তা না হলে সন্ধ্যায় খাবার পর ঠিক ঘুমের সময়ের আগে তার খিদে পেয়ে যেতে পারে এবং ওই সময় হালকা কিছু খাওয়া মানেই এক বেলায় দুইবার কিছু খাওয়া, যা সারারাত শরীরে জমে থাকবে।

১২. ঘাম না ঝরলে মেদ ঝরে না

ঘামের সাথে মেদ কমার আদৌ কি কোনো সম্ভাবনা আছে? নেই। অনেকেই আছেন যারা খুব অল্পে ঘেমে যান, আবার কেউ কেউ সারাদিনই ফ্রেশ থাকেন। তাই বলে কি যিনি ফ্রেশ আছেন তিনি মেদ ঝরাতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। ঘামের সাথে মেদ ঝরার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বলা যেতে পারে হৃদপিণ্ড সচল থাকলেই মেদ ঝরতে থাকে। সেক্ষেত্রে কেউ কেউ ঘামতে পারেন, কেউ কেউ না-ও ঘামতে পারেন।

এরকম আরো বেশ কিছু ভুল ধারণা অনেকের মধ্যেই প্রচলিত আছে। এসব ধারণার কারণে ডায়েট তাদের কাছে বিরাট যুদ্ধ করার মতো কিছু মনে হয়। সত্যিকার অর্থে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেও তেমন কঠিন কিছু নয়। শুধুমাত্র অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং বাড়তি চিনি খাওয়া বাদ দিলে সারাদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডেই ওজন কমিয়ে আনা সম্ভব। দিনে প্রয়োজন মতো পানি পান করলে এবং ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমালে একজন মানুষের বাড়তি খাওয়ার ইচ্ছা অনেকাংশে কমে আসে।

ওজন যত সময় নিয়ে ঝরবে ততই দীর্ঘস্থায়ী হবে। দ্রুত ওজন কমাতে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়, যার কারণে ডায়েট ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এমনও হতে পারে যে, আপনাকে চিকিৎসাধীন হতে হলো এবং কিছু ঔষধ দেয়া হতে পারে, যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং শরীরে বাড়তি কিছু ভিটামিন যোগ করে। তাই সবদিক ভেবে এবং সঠিকটা জেনেই ডায়েট শুরু করা উচিত। প্রয়োজনে একজন ভালো বিশেষজ্ঞ দ্বারা ঠিক করে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় ডায়েট প্ল্যান। তাহলে বানিয়ে নিন আপনার পছন্দের চার্ট এবং আসছে বছরে শুরু করে দিন আপনার যথাযথ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ তালিকা।

ফিচার ইমেজ- sweetlyraw.com

Related Articles