Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একাকিত্ব নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

বর্তমান সামাজিক মাধ্যমের পৃথিবীতে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক মেসেজ, ইমেইল, ফেসবুক ইত্যাদি নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকি। শুধু এটিই নয়, বরং সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন মানুষের সাথে সামনাসামনি আমরা অনেক কথা বলি এবং সাক্ষাৎ করি। এই ব্যস্ত সময়ে মনে হয় একাকিত্বকে কেউ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইবে না। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত আমাদের ভিন্ন কিছুই বলে। আর এটা সত্যি যে আমাদের জীবনের যেকোনো একটি পর্যায়ে এসে আপনার-আমার প্রত্যেকেরই মনে হবে যে আমরা একা। আর এই সমস্যাটি বর্তমানে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করার জন্য একাকিত্ব বিষয়ক একজন মন্ত্রীও নিয়োগ দিয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমাদের চারপাশে এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান। আসুন দেখে নিই সেই ভুল ধারণাগুলো, যেন আমরাও এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারি।

১. বিচ্ছিন্নতা মানেই একাকিত্ব

নিঃসঙ্গতা এবং একাকিত্ব সত্যিকার অর্থে এক নয়। একাকিত্বের অনুভূতি অনেকটা সংযোগহীনতার মতো। এটি এমন একটি অনুভূতি যখন আপনার মনে হবে আপনার পাশে এমন কেউ নেই যে সত্যিকার অর্থে আপনাকে বুঝতে পারে এবং কারো সঙ্গে আপনার এমন অর্থপূর্ণ সংযুক্তি নেই যা আপনি পছন্দ করেন। নিঃসঙ্গতা একাকিত্বের একটি অন্যতম উপাদান, কিন্তু এটি একমাত্র কারণ নয়। আপনি যেমন অনেক ভিড়ের মাঝেও একাকিত্বে ভুগতে পারেন, ঠিক তেমনই আপনি পরিপূর্ণভাবে সুখী, চিন্তামুক্ত হয়ে একাকী কিছু সময় পার করতে পারেন। যখন ২০১৬ সালে বিবিসি আরামদায়ক কাজের একটি পরিসংখ্যান করেছিলো, তখন প্রথম পাঁচটি কাজই এমন ছিলো যা শুধুমাত্র একাকী করা সম্ভব। মাঝে মাঝে আমরা নিঃসঙ্গ কিছু সময় কাটাতে চাই। কিন্তু যখন আমাদের বোঝে এমন কারো সঙ্গে আমরা সময় কাটাতে চেয়েও পারি না ঠিক তখন সেটা একাকিত্ব।

একাকিত্ব আর বিচ্ছিন্নতা এক নয়; ছবিসূত্র: drjoe.net.au

২. একাকিত্ব বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে

কোনো সন্দেহ নেই যে, একাকিত্ব এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে পূর্বের কয়েক বছরের তুলনায় এখন অধিক হারে মানুষ একাকিত্ব অনুভব করে। ১৯৪৮ সাল থেকে জরিপ করে ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টিনা ভিক্টর দেখিয়েছেন, বয়ষ্ক লোকদের মাঝে যারা প্রতিনিয়ত একাকিত্বে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে একাকিত্বের অনুভূতি ৭০ বছর পর্যন্ত মোটামুটি একই রকম থাকে; আর এদের মাঝে ৬-১৩% মানুষ বলেছেন তারা অধিকাংশ সময় বা সবসময় একাকিত্বে ভোগেন । কিন্তু এটাও সত্য যে, সঠিক সংখ্যার একাকী মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। জনসংখ্যা বেড়ে চললে একাকী মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সকলেই একা নয়; ছবিসূত্র: bethratzlaff.com

৩. একাকিত্ব সবসময়েই খারাপ

একাকিত্ব অনেক কষ্টদায়ক। কিন্তু সুসংবাদ হচ্ছে বেশিরভাগ সময়ে এটি সাময়িক এবং একে সম্পূর্ণ নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত নয়। আবার আমরা একাকিত্বকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারি, আমরা ধরে নিতে পারি যখন আমরা একাকিত্বে ভুগি, এর মানে হচ্ছে এখন সময় হয়েছে নতুন বন্ধু খুঁজে নেবার বা আমাদের বর্তমান সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে ভিন্নভাবে উন্নততর করা উচিত।

সামাজিক স্নায়ুবিজ্ঞানী জন ক্যাসিওপ্পো এর মতে, আমরা অন্য মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বজায় রাখতে একাকিত্বের সঙ্গে বিবর্ধিত হয়েছি। তিনি এর সঙ্গে পিপাসার তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, যদি আমাদের পিপাসা লাগে তাহলে আমরা পানির খোঁজ করি। তেমনিভাবে যখন আমরা একা থাকি, আমরা সঙ্গ খুঁজি। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ গোত্রবদ্ধ হয়ে নিরাপদে থেকেছে, সুতরাং এ থেকে বলা যায় বেঁচে থাকার তাগিদেই আমরা অন্যের সাথে সংযুক্ত হই। যদিও একাকিত্ব খুব সাময়িক সময়ের, তবুও বারবার এই অনুভুতি ফিরে এলে সেটাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর ফলাফলস্বরূপ আমাদের মধ্য থেকে ভালো স্বভাব হারিয়ে যায়, ঘুম নষ্ট হয়, আমাদের দুঃখবোধ বাড়ে। এমনও দেখা যায় যে, একাকিত্বে ভুগতে ভুগতে একটা সময়ে সে সমাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলে এবং তার একাকিত্ব আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, একাকিত্বে ভোগা মানুষগুলো খুব সহজেই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।

এতকিছুর পরেও বলা চলে, একাকিত্বের কিছু ভালো দিকও রয়েছে। এটি সবসময়েই বিষণ্ণতার উদ্রেক করে না, বরং সম্পর্কের পিপাসা জোগায়।

একাকিত্ব সবসময় খারাপ নয়; ছবিসূত্র: hbr.org

৪. একাকিত্ব অসুস্থতার কারণ

এই বিষয়টি একটু জটিল। আপনারা হয়ত প্রায়ই শুনে থাকবেন একাকিত্ব মানুষের শরীর এবং মনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। এমনকি এটি হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ায়। এগুলো হলো এর সম্ভাব্য খারাপ ফলাফলসমূহ। কিন্তু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই খারাপ ফলাফলগুলোও ১০০ ভাগ নিশ্চিত নয়। এটাও হতে পারে যে, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোই তুলনামূলকভাবে কম অসুস্থ হয়, আবার বিপরীতটাও হতে পারে। মানুষ অসুস্থতার কারণেও বিচ্ছিন্ন হতে পারে। মোট কথা, একাকিত্বই অসুস্থতার কারণ না হয়ে অসুস্থতাই একাকিত্বের কারণ হতে পারে।

৫. অধিকাংশ বৃদ্ধই একা

যৌবনের চেয়ে বৃদ্ধ বয়সেই একাকিত্ব সাধারণত বেশি দেখা যায় বলে আমাদের একটা ধারণা রয়েছে। কিন্তু ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পামেলা কোয়েল্টার তার একটি রিভিউতে দেখিয়েছেন যে, কৈশোরেও একাকিত্বের একটি চূড়ান্ত অধ্যায় রয়েছে। পাশাপাশি আরো কিছু পরিসংখ্যান আমাদের দেখায় যে ৫০-৬০% বৃদ্ধ আসলেই একাকী নন।

বার্ধক্য মানেই একাকিত্ব নয়; ছবিসূত্র: fortune.com

৬. বিবাহিত মানুষ একাকী নয়

অনেকেই মনে করেন, দাম্পত্য জীবন একাকিত্বের নয়। অনেকে আবার শুধুমাত্র একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য বিয়ে করে থাকেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। যদি দাম্পত্য জীবনে সংঘর্ষ এবং ঝগড়া থাকে তবে এর বিপরীত কথাটিই তখন সত্য হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায় যে, এক-তৃতীয়াংশ বিবাহিত মানুষ তাদের স্বামী বা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও একাকিত্বে ভোগেন। অর্থাৎ আপনি যদি বিবাহিত হন তবে আপনার হাতের অনামিকায় যে সুন্দর আংটিটি রয়েছে তা আপনাকে একাকী মনে হওয়া থেকে রক্ষা করবে না। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রতিদিনই আপনার বিয়েকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং প্রতিটি মুহূর্তে আপনার স্বামীর সঙ্গে বা স্ত্রীর সঙ্গে জীবন উপভোগ করুন।

বিবাহিত অনেক মানুষই একা; ছবিসূত্র: huffingtonpost

৭. অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা বেশি একাকী

আমরা অনেকক্ষেত্রে মনে করি, যারা অন্তর্মুখী স্বভাবের তারা অনেক বেশি একা। এর কারণ যারা অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ তারা অনেক মানুষের মাঝে থাকার চেয়ে একা থাকতেই একটু বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু আসলে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা একা থাকেন তাদের সময়টা একটু বেশি ভালোভাবে কাটানোর জন্য এবং তারাও খুব নির্বাচিত বন্ধুদের দ্বারা তাদের একাকিত্ব কাটান। অন্যদিকে যারা বহির্মুখী স্বভাবের মানুষ, তারা সামাজিকভাবে খুব সক্রিয় এবং তারা যখন নিঃসঙ্গতায় ভোগেন তখন সামাজিকভাবেই তা সমাধান করতে চান, যা হয়তো ওই মুহূর্তে পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। তখন একাকিত্ব মোচন করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

আসলে একাকিত্ব সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না। আমরা যতটুকু জানি তা দিয়েই অজানা অংশের শূন্যস্থান পূরণ করে নিই। একাকিত্ব সম্পর্কে আপনি যা যা জানতেন আর এখানে যে সমস্ত তথ্য পেলেন তার মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি? কখনোই আমরা একা হতে চাই না। একা থাকাকে আমরা ভালো নজরে দেখিও না। একা থাকতে পছন্দ করা মানুষগুলোকে আমাদের খুব একরোখা মনে হয়। কিন্তু একাকিত্বও কখনো কখনো হয়ে উঠতে পারে আপনার দারুণ সঙ্গী। একাকিত্বকে উপভোগ করুন, ইতিবাচক চিন্তা করুন। নিজেকে আবিষ্কার করার জন্য একাকিত্বের চেয়ে বড় কোনো সুযোগ নেই।

ফিচার ছবিসূত্র: viralnovelty.net

Related Articles