Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জীবনটা চাপমুক্ত রাখুন

বাসা থেকে বের হলে যানজটের চাপ, অফিসে কাজের চাপ, ছাত্রজীবনে পরীক্ষার চাপ। সারাজীবন শুধু চাপের ছড়াছড়ি! এই চাপ সামলাতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজেদের সামালই ধরে রাখতে পারি না। এই চাপ সামলাবেন নাকি জীবনটাকে উপভোগ করবেন?

অতিরিক্ত চাপ নেবার ফলে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে মাথায় যন্ত্রণা, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, ক্ষুধামন্দা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং হৃদরোগ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা প্রকট থাকে। তাই সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই আমাদের চাপ সামলাতে হবে।

চাপের মুখে কাজের গতি হারিয়ে ফেলা; Image source: ibtdi.com

আমাদের একটি অভ্যাস হলো, যখন আমাদের হাতে অনেক কাজ জমা পড়ে থাকে, তখন আমরা কাজের কাজ না করে অন্য সকল কাজ করতে থাকি। যেমন ধরে নিন আপনার আগামীকাল একটি বড় পরীক্ষা আছে। বইয়ের ৬টি অধ্যায় পড়ার বাকি। কিন্তু আপনার কিছুই পড়া হয়নি। এদিকে রাত হয়ে গিয়েছে। আমাদের যেখানে পড়া উচিত, সেটা না করে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে যাই! ঘুমিয়ে গিয়ে নিজেকে এটা বুঝ দিই যে, পড়ে তো আর শেষ করতে পারবো না। তাই ঘুমিয়ে শরীরটা একটু ঠিক রাখি! কিন্তু পরের দিন যে পরীক্ষার হলে ধরা খেতে হবে, সেটা আর আমাদের মাথায় আনতে চাই না। এধরনের অনেক পরিস্থিতিতেই আমাদের পড়তে হয়।

তো এরকম চাপের মুহূর্তে আমাদের কী করা উচিত, আসুন সেটা নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক।

একটি নিয়ম মেনে কাজ করুন

আমাদের হাতে যখন অনেক কাজ একসাথে জমা পড়ে যায় এবং সেই কাজগুলো শেষ করার সময় থাকে না, তখন আমরা যেই ভুলটা করি তা হলো, একসাথে সব কাজের দিকে নজর দেয়া। যেহেতু আমাদের হাতে সময় নেই, তাই আমাদের মেনে নিতে হবে সব কাজ শেষ করা সম্ভব না। কোন কাজগুলো অবশ্যই সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে আর কোন কাজগুলোর সময় বাড়িয়ে নেয়া যাবে, তা আগে ভাগ করে নিন। যেই কাজগুলো আগে শেষ করা লাগবে, সেগুলোর মধ্যে দেখুন কোন কাজটি তুলনামূলক বেশি সহজ। সহজ থেকে কঠিন কাজের দিকে এগোতে থাকলে মনে একধরনের মানসিক তৃপ্তি কাজ করে। আপনার এটা মনে হতে থাকবে যে, আপনি কাজ করছেন এবং শীঘ্রই কাজ শেষ হয় আসবে। এই পদ্ধতি পড়ালেখার ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারেন।

শরীর ও মনের খেয়াল রাখুন

গৃহস্থালী কাজ যাদের নিত্যনৈমিত্তিক রুটিন, তারা অনেকসময়ই হাঁপিয়ে উঠেন। রান্নাবান্না এবং ধোয়ামোছার কাজ শেষে তারা নিজেদের প্রশান্তির জন্য গোসল করে নেয়া উচিত। এতে শরীর ও মন দুটোই প্রশান্তি পায়। বাইরে থেকে এসেও এই কাজ করা উচিত। এতে সাময়িকভাবে হলেও মানসিক চাপ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়।

সারাদিনের কাজ শেষে অনেক সময় শরীর ব্যথা করতে থাকে। শরীর আর চলতে চায় না। তখন এক কাজ করতে পারেন। বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। শরীরকে মাথা, ঘাড়, কাঁধ, হাত, বুক, পেট, পা, গোড়ালি এ সকল ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতিটি ভাগে ভিতর থেকে সামান্য চাপ তৈরি করে আবার ছেড়ে দিন। এভাবে করতে থাকুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার শরীরের প্রতিটি অংশ ব্যথামুক্ত হয়। এরপর সুন্দর করে একটি ঘুম দিন। এটা আপনার পরবর্তী কাজের জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তি যোগাবে।

নিজেকে মানসিকভাবে চর্চার মধ্যে রাখুন

যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন, তা যে ধর্মেরই হন না কেন, তাদের প্রতিদিনের কাজের একটি অংশ থাকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা। নিয়মিত প্রার্থনা করলে নিজের মনে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি কাজ করে। এছাড়াও আপনি চাইলে যোগব্যায়াম করেও নিজেকে মানসিক চর্চার মধ্যে রাখতে পারেন। এটি আপনার কাজের গতি বাড়িয়ে দিতে এবং চাপ সামলানোর মানসিকতা তৈরিতে অনেক সহায়তা করবে।

নিজেকে মানসিক ব্যায়ামের মধ্যে রাখুন; Image source: The Chopra Center

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান

বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এতটাই ঘরকুনো হয়ে পড়েছি যে, বন্ধুদের সাথে দেখা করে একটু সময় কাটানোর প্রয়োজনটাও বোধ করি না। ঘরে বসেই সব খোঁজ খবর নিয়ে ফেলি। কিন্তু বাস্তবে এটি আমাদের মাঝে সম্পর্কের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান কিংবা বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাশা করে কিছু সময় কাটান। এটি আপনাকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত করবে এবং একইসাথে সবার সাথে সুসম্পর্কও বৃদ্ধি করবে।

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান; Image source: Best Of Our Magical Planet

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন

আপনি যত সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন, দিনে কাজ করার জন্য তত বেশি সময় হাতে পাবেন। তাছাড়া সকালবেলা হাঁটার অভ্যাস থাকলে তো আরও ভালো। সকালে দ্রুত ওঠা হয়তো অনেকের জন্য কঠিন। তবে একথাও সত্য যে, কোনো কাজে দেরি করে ফেললে তা অনেক পীড়াদায়ক! তাই চেষ্টা করুন, হাতে কোনো কাজ ফেলে না রেখে তা আগেভাগে শেষ করে ফেলার।

সকালের ঘুম থেকে ওঠা শরীর ও মনের জন্য ভালো; Image source: TeluguOne.com

নিজেকে কিছু উপহার দিন

সারাজীবন ধরে কি কেবল কাজই করে যাবেন? পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য তো অনেক কিছুই করলেন। নিজের জন্য কিছু করবেন না? আপনার পরিশ্রম এবং চাপ সামলানোর উপহার হিসেবে নিজের জন্যও কিছু করুন। হতে পারে নিজে ভালো কোথাও খেতে গেলেন কিংবা নিজের জন্য কিছু কিনলেন। নিজেকে এই উপহারটি দিন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ থেকে রেহাই দিতে অনেক সাহায্য করবে।

নিজেকে কিছু উপহার দিন; Image soource: The Body Book

অপ্রয়োজনীয় জিনিস দূরে সরিয়ে রাখুন

কাজের মাঝে আমাদের টেবিলে অনেক জিনিস জমতে থাকে, যা আমাদের কোনো দরকার নেই। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব দূরে সরিয়ে ফেলা উচিত। তাই দিনে ২০-৩০ মিনিট সময় দিন এসকল আবর্জনা দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। এগুলো চোখের সামনে থাকা মানেই একধরনের চাপ অনুভব করা। যখনই এগুলো দূরে সরিয়ে ফেলবেন, তখনই নিজেকে অনেকটা চাপমুক্ত মনে হবে।

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কিছু অর্থ সঞ্চয় করুন

সব পরিবারেই বিশেষ সময় বেশ মোটা অংকের অর্থ খরচ করতে হয়। হতে পারে পরিবারের কারো বিয়েতে খরচ করতে হবে কিংবা কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার জন্য করতে হবে অথবা ভবিষ্যতে সন্তানদের কথা মাথায় রেখে অনেক বাবা-মা টাকা সঞ্চয় করতে থাকেন। যে কারণেই হোক না কেন, প্রয়োজনের সময় আর্থিক চাপ সামলানোর জন্য এখন থেকেই অর্থ সঞ্চয় করতে থাকুন। এটা আপনাকে পরবর্তীতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঞ্চয় করা; Image source: bettertexasblog.org

জীবনে চলার পথে একটি জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে যে, জীবনে উত্থান-পতন আসবেই। এসকল পরিস্থিতিতে নিজেদের মানসিকভাবে শক্ত রাখতে হবে। জীবনে যত চাপই আসুক না কেন, সব সামলে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই এগুলো সামলে নিতে হবে। মনে রাখবেন, জীবন তো একটাই। জীবনটাকে ভালোমতো উপভোগ করুন।

ফিচার ইমেজ: paper.asrdigital.ir

Related Articles